মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির এক অনুষ্ঠানে প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের (Zakir Hossain) পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)। সম্প্রতি জঙ্গিপুরের তৃণমূল বিধায়কের (TMC MLA) বাড়িতে ম্যারাথন আয়কর অভিযান (IT Raid) চলেছে। প্রাক্তন এই মন্ত্রীর অফিস-বাড়ি থেকে ১১ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন জাকির হোসেন। তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার টাকার অংশ বিড়ি শ্রমিকদের বেতন। এমন দাবি সংবাদ মাধ্যমের কাছে করেন জাকির হোসেন। এবার তিনি পাশে পেলেন দলের সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে।
সাগরদিঘির সভায় মমতা বলেন, 'জাকির একজন বিড়ি শিল্পপতি। দোষ থাকলে নিশ্চয় আইনত ব্যবস্থা করবে। কিন্তু জাকির শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস করে বলে, তাঁর যে ২০ হাজার বিড়ি কর্মচারী আছে, তোমরা সেটা দেখো না! তাঁদের বেতন কি ব্যাঙ্কে দেবে? কটা বিড়ি শ্রমিকের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে? আধার কার্ড দাও, প্যান দাও, এনআরসি দাও, এসব করে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নাও। জাকির নিজেরটা বুঝে নিতে সাবলম্বী, ওকে তো প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল।'
এদিন মুখ্যমন্ত্রী নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করেছেন। তিনি জানান,'আমার দুর্ভাগ্য, কোনও একজনকে এখানে দলের পক্ষ থেকে কাজ করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি তৃণমূলের কোন লোকটা শক্তিশালী বের করে তাঁদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। চ্যারিটি বিগিন্স অ্যাট হোম। আগে নিজের বাড়িতে সিবিআই,ইডি, ইনকাম ট্যাক্সের অভিযান চালান। তারপর তৃণমূলের বাড়িতে করবেন।'
সোমবারও মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, একজন-দু'জন খারাপ হলে সবাই খারাপ নয়। এখনও কোনও খারাপ কাজ করলে মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিন। কারও থেকে কিছু নিয়ে থাকলে গিয়ে ফেরত দিন। পাশাপাশি একশো দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে, এদিন ফের অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। একশো দিনের কাজের টাকা কেন পাবে না গরিব মানুষ? বিজেপি-সিপিএম জবাব দাও। রাম-বাম-শ্যাম এক হয়েছে এই কটাক্ষের সুরে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি এবং সিপিএমকে এভাবেই তোপ দাগেন মমতা।
এবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) জাকির হোসেনের বাড়ি, অফিস এবং কারখানায় টাকার পাহাড়! জঙ্গিপুরের তৃণমূল বিধায়কের (Zakir Hossain) বাড়ি-অফিসে বুধবার দিনভর তল্লাশি (IT Raid) চালিয়ে নগদ ১১ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে আয়কর দফতর। এই অর্থের মধ্যে শুধুমাত্র ৯ কোটি টাকা প্রাক্তন মন্ত্রীর মুর্শিদাবাদের অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে। আয়কর দফতর সূত্রে খবর, দেশের মোট ২৮ জায়গায় একযোগে তল্লাশি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আয়কর দফতর। তল্লাশি চলেছে প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের বাড়ি, অফিস, কারখানা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।
রাজ্যের প্রাক্তন শ্রম প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি-অফিসে মিলিয়ে বুধবার রাতভর তল্লাশি অভিযান চালিয়ে মোট ১১ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অন্য জায়গাগুলোয় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে বাকি অর্থ। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে খবর, শ্রম দপ্তরের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে গরু পাচার-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের যোগসূত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
জাকিরের বাড়ি-অফিসে তল্লাশি চালিয়ে আয়কর দফতরের উদ্ধার হওয়া অর্থ আদতে কোন পথে এসেছে, সেটা জানতে জাকিরকে তলব করতে পারে সিবিআই। সূত্র অনুযায়ী, এই অর্থ জাকিরের বিড়ি কারখানায় ব্যবহার হয়েছে কিনা, তা জানতে চায় ইডি। এত পরিমাণ নগদ কী কাজে বাড়ি-অফিসে রাখা ছিল, সেটা জানতে তৃণমূল বিধায়ককে জেরা করতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থা।