কলকাতার ওয়াটগঞ্জে প্লাস্টিকের ব্যাগে মহিলার ছিন্ন বিচ্ছিন্ন দেহাংশ উদ্ধারের ঘটনায় মৃতার ভাসুরকে গ্রেফতার করল পুলিস। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা ৪৫ নাগাদ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত মহিলার নাম দুর্গা সরখেল। ধৃতের নাম নীলাঞ্জন সরখেল। তবে মৃতার স্বামীর খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। এদিন ধৃত নীলাঞ্জন সরখেলকে আলিপুর পুলিস আদালতে পেশ করা হয়।
পুলিস সূত্রে খবর, ২০০৭ সালে বিয়ে হয় দুর্গার সঙ্গে ধনী সরখেলের। তাঁদের ১৬ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। দুর্গার স্বামী বেশ কয়েক বছর ধরে রিহ্যাবে থাকেন। গত রবিবার সকালবেলা ফিরে এসে বউকে মারধর করে। দুর্গার দেহ কাটাকাটি এবং প্লাস্টিকে ভরে ফেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল তাঁর ভাসুর নীলাঞ্জন সরখেল ও ননদের। আপাতত ননদকে ওয়ার্ডগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ ছিল দুর্গা সরখেল। বিভিন্ন খবরের কাগজ এবং সংবাদ মাধ্যমে সেই খবর দেখে দুর্গার সরখেলের বাপের বাড়ির লোকজনেরা যোগাযোগ করেন ওয়েস্ট পোর্ট থানায়।
পুলিসের অনুমান, একাধিক ব্যক্তি এই খুনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। মহিলার বিরুদ্ধে পারিবারিক এবং আর্থিক কিছু বিষয়ে প্রায়শই বিরোধ ছিল। দুর্গার পেটে পাওয়া গিয়েছে অ্যালকোহলের নমুনা। প্রশ্ন উঠছে অ্যালকোহল দিয়ে বেহুশ করে খুনের পরিকল্পনা করেছিল স্বামী? বৃহস্পতিবার দুর্গার মৃতদেহ শনাক্ত করেন বাপের বাড়ির সদস্যরা।
মঙ্গলবার দুপুরে ওয়াটগঞ্জের কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের একটি পরিত্যক্ত গোডাউনে প্লাস্টিকের মধ্যে মহিলার দেহাংশ উদ্ধার হয়। দেহের মাথা থেকে বুক এবং কোমর থেকে পা মিললেও পেট, দুই পায়ের পাতা এবং দুই হাত এখনও উদ্ধার করা যায়নি। খণ্ডবিখণ্ড দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনও মহিলার দেহ সনাক্ত করা যায়নি। বুধবার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিসের তরফে।
প্রসঙ্গত, অন্যান্য থানায় কোনও মিসিং রিপোর্ট দায়ের হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার পাশাপাশি স্থানীয় এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার কাজও শুরু করেছে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিস। দেহাংশের হদিশ পেতে স্নিফার ডগও আনা হয় ঘটনাস্থলে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাও দেহাংশের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত গোডাউনটিতে ঢোকার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে ওয়াটগঞ্জ থানার তরফে।
যে প্লাস্টিকের মধ্যে মুড়ে দেহাংশ ফেলে আসা হয়েছিল তার ভিতর থেকে ভারী ইট উদ্ধার হয়েছে। যা থেকে পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, মহিলার দেহাংশ জলাশয়ে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আততায়ী। তবে পোর্ট এলাকা জনবহুল হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। বুধবার দুপুরে এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দেহাংশের ময়নাতদন্ত হয়। দেহাংশের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসবে, অনুমান লালবাজারের হোমিসাইড শাখার আধিকারিকদের। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ঠিক করবে লালবাজার। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুন এবং ২০১ ধারায় তথ্য প্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু করেছে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিস।