
আভাস ছিল পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে মে-র কোনও এক সময়ে, সম্ভবত মাসের শেষে। সেই ভাবেই বিরোধী দলগুলির হয়তো ভাবনা ছিল, কিংবা হয়তো ভাবনা ছিলই না। শোনা গিয়েছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো বা সেই ঘোষণাটি করতে পারেন ২৮ এপ্রিল। কিন্তু রবিবার ৭ মে অবধি কোনও ঘোষণা রাজ্য নির্বাচন কমিশন বা রাজ্য প্রশাসন কিছু জানাননি। ভোট ঘোষণার ২১ দিনের মাথায় ভোটের দিনক্ষণ ধার্য হয়ে থাকে। বিগত মমতা সরকার কিন্তু দু'বার মে মাসেই ভোটের ব্যবস্থা করেছিলেন। এবারের ভোট কিছুতেই যে মে তে হচ্ছে না তা পরিষ্কার। কারণ প্রস্তুতির একটি বিষয় রয়েছে নিশ্চিত। দুটি বিষয় নিয়ে খটকা রয়েছে।
প্রথমত, শনিবার পঞ্চায়েতমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এখনই ভোট সম্ভবত হচ্ছে না। পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন যে, এখনও রাজ্য নির্বাচন কর্তার সঙ্গে ভোট নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। কাজেই ধরে নেওয়া হতেই পারে অবিলম্বে ভোট হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু'মাসের জেলা সফরে বের হয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বাংলার উত্তর ভাগের সফর শেষ করে মধ্য বাংলায় পৌঁছিয়েছেন। এরপর সমগ্র দক্ষিণ বাংলা তো রয়েছে। অভিষেক জানিয়েছিলেন, এই সফর তাঁর দু'মাসের। কাজেই কোনও ভাবেই মে-র শেষ বা জুন অবধি প্রচার চলবে। এটা তো বাস্তব, অভিষেক কোনও একটি পরিকল্পনা নিয়েই প্রচারে বার হয়েছেন। তাঁর গলার অবস্থা খুব ভালো নয়। অনেকেই বলেছিলেন অভিষেকের উচিত কলকাতায় ফিরে কোনও ভালো চিকিৎসককে দেখানো। তাঁর কিন্তু এ বিষয় কোনও সারা মেলে নি। সুতরাং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান অভিষেকের সফরের শেষে হয়তো বা ভোটের দিন ঘোষণা হতে পারে।
এখন কথা হচ্ছে জুনের শেষে বা জুলাইয়ে বাংলায় বৃষ্টি শুরু হয়। কাজেই এমন অনুমানও করা হচ্ছে যে, বৃষ্টির মরশুম শেষ হলে ভোট হতে পারে। তাই যদি হয় তবে কোনও ভাবেই অক্টবরের মধ্যে কি ভোট হবে? তখন তো পুজোর মরশুম চলবে। তাহলে কি নভেম্বরে? জানা যাচ্ছে না।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে খুলল ডুয়ার্সের কোহিনূর চা বাগান (Teagarden)। প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ ছিল এই চা বাগান। শাসকদলের তৎপরতায়, একগুচ্ছ প্রশ্ন রেখেই পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat vote) আগেই তড়িঘড়ি খুলে দেওয়া হল ইস্টার্ন ডুয়ার্সের কোহিনূর চা বাগান। আর এই পদ্ধতিতে বাগান খুলে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কারণ আগের মালিকের লিজ (Lease) বাতিল না করেই খুলে দেওয়া হল কোহিনূর চা বাগান।
শ্রমিক সূ্ত্রে খবর, চা বাগান খুলে যাওয়াতে একদিকে যেমন সুবিধা হয়েছে। অপরদিকে, শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের প্রাপ্য পিএফ, গ্র্যাচুইটির কোনও সমাধান না করেই তড়িঘড়ি পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে কোহিনূর চা বাগান খুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওঁরাও-এর দাবি, পঞ্চায়েত ভোট মিটে গেলে ফের বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে এই বাগানের।
উল্লেখ্য, শুক্রবার মেরিকো এগ্রো ইন্ডাস্ট্রির হাত ধরে খুলে দেওয়া হয়েছে কোহিনূর চা বাগান। বাগান খোলার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বুলু চিক বড়াইক, জেলা তৃণমূল সভাপতি প্রকাশ চিক বড়াইক সহ একঝাঁক তৃণমূল নেতা।
দু'মাসের সফর নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) শুরু করেছেন দলের প্রচার। প্রচার অবশ্যই পঞ্চায়েত ও লোকসভাকে কেন্দ্র করে। তিনি প্রচার শুরু করেছেন ডুয়ার্স অঞ্চল থেকে এবং এখন রয়েছেন উত্তর-মধ্য বাংলায় অর্থাৎ বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর সেরে মালদহের পথে। তাঁর এই দুই মাসের সফরে কোনও রিসোর্ট বা হোটেল ভাড়া করা হচ্ছে না, থাকছেন তাঁবুতে।
ডুয়ার্স অঞ্চলে বারবার অভিষেক যাচ্ছেন এই কারণে যে, বিগত লোকসভাতে উত্তর বাংলা অঞ্চলের সবকটি আসন হারিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিধানসভা অঞ্চলে দিনাজপুরের দুটি জেলাতে মোটামুটি ফল ভালোই হয়েছিল গত বিধানসভার ভোটে। যেহেতু ডুয়ার্স অঞ্চল অর্থাৎ আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এই চার জেলাতে কিন্তু বিধানসভায় ফের ফল খুবই খারাপ হয়েছিল তৃণমূলের। ফলে অভিষেক ডুয়ার্স অঞ্চলের খোল নলচে পাল্টে ফেলতে চাইছেন। তিনি অভিনব একটি পদ্ধতি চালু করেছেন। দলের অন্দরের ব্যালট পেপার তৈরি করে বিভিন্ন সভায় সাধারণ জনতার কাছ থেকে ভোট মারফত জানতে চাইছেন যে, কে কে উপযুক্ত প্রার্থী। যদিও এই ব্যালট পদ্ধতিতে বেশ কিছু জাইগায় ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যেই এলাকার ভোটারদের পালস বুঝে নিচ্ছেন অভিষেক।
মঙ্গলবার জনসভায় তিনি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন যে, মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। লোক দেখানো নেতাগিরি চলবে না। তিনি বলেছেন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তিনি বুঝেছেন, পঞ্চায়েত নেতা, বিধায়ক বা অন্য নেতাদের কিছু মানুষ কোনও যোগাযোগ রাখেন না এলাকার মানুষের সঙ্গে, এমনকী ফোন করলে তাও ধরেন না। এইভাবে চলবে না। জনসংযোগ বাড়াবার কথা বারবার বলা হচ্ছে। তিনি বলেন টিকিট কারা পাবে ভোটে তা ঠিক করবে এলাকার ভোটাররা, কাজেই ভোট নেওয়া হচ্ছে। যদিও এটা বাস্তব বিরোধীদের মধ্যে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী রয়েছেন। কিন্তু সিপিএমের এখনও কোনও প্রচারের উপযুক্ত মুখ তৈরি হয়নি। অন্যদিকে, বিজেপির প্রচারক আছে, ঠিকই কিন্তু এখনও তারা মাঠেই নামেননি। ফলে যতই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকুক তৃণমূলের মধ্যে বিরোধীদের হুঁশিয়ারি এখনও আসে নি।
পঞ্চায়েত ভোটকে (Panchayat Vote) শিয়রে রেখে জনসংযোগ বাড়াতে সম্প্রতি জোড়া কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। নাম দেওয়া হয়েছে 'জনজোয়ার' ও 'গ্রাম বাংলার মতামত।' অভিষেকের এই কর্মসূচির প্রথম সভাস্থল কোচবিহারের সভার আগেই বড় ভাঙন তৃণমূলে। সূত্রের খবর, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে তৃণমূলের দুই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য-সহ প্রায় এক হাজার কর্মী শাসকদল ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) নাম লিখিয়েছেন।
যার পরে সিএন-ডিজিটালকে কোচবিহারের বিজেপি জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, 'শুরুর আগেই ভাটা জোয়ারে!' যদিও এসবকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি সোমবার সিএন ডিজিটালকে বলেন, 'এসব করে বা প্রচার করে বিজেপি কিছুই করতে পারবে না। চক্রান্ত করে অভিষেকের সভা বানচাল করার ধান্দা বিজেপির, আর কিছুই না।'
পঞ্চায়েতের আগে ‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ এই নতুন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী মঙ্গলবার কোচবিহার থেকে এই কর্মসূচির শুভ সূচনা। ঠিক তার আগে কোচবিহারের হাজারের অধিক কর্মী, তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিলেন বিজেপিতে। মেখলিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মৃত্যুঞ্জয় রায় ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সঞ্জীব চন্দ্র রায় গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। এই ঘটনায় যথেষ্টই অস্বস্তিতে শাসকদল।
প্রসূন গুপ্ত: বেশ কিছুদিন ধরে বাংলায় বিরোধীদের মধ্যে কোথাও একটা একতা বা পরোক্ষ জোটের বাতাবরণ দেখা যাচ্ছে। রাজ্যের বিরোধী নেতা একপ্রকার এতে সিলমোহর দিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক রাজ্যের বেশ কিছু সমবায় ভোটে সিপিএম ও বিজেপির জোট প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে। দু-তিনটি সমবায় দখলও করেছে এই জোট, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাজিত হতেও হয়েছে। এই জোটের ফায়দা সব থেকে ভালো তুলেছে সিপিএম। কারণ কমিউনিস্ট পার্টি চিরকাল এই পদ্ধতিতে বিশ্বের নানা দেশে ক্ষমতায় এসেছে।
যদিও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছিলেন, কোনও ফ্যাসিস্ট শক্তির সঙ্গে বামপন্থীরা জোট করবে না। অন্যদিকে বিজেপির তরফে সম্প্রতি 'নো ভোট টু মমতা' স্লোগান উঠেছে। প্রাথমিকভাবে দলের অনেকের এই স্লোগানে সম্মতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত দিল্লির নেতৃত্বের কাছে ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে বলেই খবর।
বৃহস্পতিবার বিধাননগরের এক সাংস্কৃতিক মঞ্চে আসন্ন পঞ্চায়েত বিষয়ে এক আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, প্রধান পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) আমিতাভ চক্রবর্তী। এছাড়া সাংসদ ও নির্বাচন বিষয়ক প্রস্তুতি কমিটির কনভেনর দেবশ্রী চৌধুরী। এছাড়াও অগ্নিমিত্রা পল ইত্যাদি নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সংঘ ঘনিষ্ঠ দেবশ্রী পরিষ্কার বার্তা দেন যে, বিজেপি বিরোধী দল। বিধানসভায় সিপিএম বা কংগ্রেসের অস্তিত্ব বলে কিছু নেই। কাজেই কারও সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জোট করবে না দল। কেউ যদি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে চান তবে তাঁকে বিজেপির সিম্বল নিয়েই লড়তে হবে। কংগ্রেস বা বামেদের সঙ্গে জোটের প্রশ্নই নেই। তাঁর বার্তায় চূড়ান্ত সম্মতি।
একইসঙ্গে দিল্লিতে নাকি এমন প্রশ্ন উঠেছে যে সাগরদিঘিতে কোন গড়াপেটায় কংগ্রেস একটি আসন পেয়ে গেল। কেনই বা বিজেপির ওই কেন্দ্রে ১৯ হাজার ভোট কমে দল তৃতীয় স্থানে চলে গেলো। অন্দরের কথা দলের ভিতরে উভয়পন্থী নেতাদের কথা মানা হবে না। বিজেপির সর্বভারতীয় দল তাঁরা কোনওভাবেই কংগ্রেস বা কমিউনিস্টদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে না।
প্রসূন গুপ্তঃ পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে নানান জল্পনা রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যে। অনেকেই ভেবেছিলেন এ বছর ফেব্রুয়ারিতে হয়তো হতে পারে। তেমনভাবেই প্রচার শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নভেম্বর থেকে কিন্তু সেই আশায় জল ঢালা হয়ে গিয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ইত্যাদি পরীক্ষা সময়ে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হয়েছেও তাই। এরই মধ্যে দলের সভায় মমতা জানিয়েছিলেন যে, দুয়ারে সরকার থেকে লক্ষীর ভাণ্ডার ইত্যাদি প্রকল্পগুলি নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করতে হবে। কাজের দায়িত্ব নেতা-মন্ত্রী থেকে বিভিন্ন সভাপতিকে পথে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্র। সেই মোতাবেক কাজে নেমেছিলেন তৃণমূল নেতারা। এরই মধ্যে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে।
ত্রিপুরা থেকে সাগরদিঘির উপ-নির্বাচনে অখুশি তৃণমূল সুপ্রিমো। পাশাপাশি সংখ্যালঘু ভোট, যা কিনা মমতার নিশ্চিত ছিল, তা কিন্তু বাম/কংগ্রেসের দিকে কিছু সরে গিয়েছে। ফলে দুয়ারে সরকারের মতো প্রকল্পগুলির প্রচার ৩০ এপ্রিল অবধি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাজেই নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার, রাজ্য সরকারের অনুমোদন পেলে অনুমোদনের দিন থেকে ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ভোটের দিন ধার্য করতে পারবে। মনে রাখতে হবে এই ভোট কিন্তু রাজ্য সরকার পরিচালনা করবে অর্থাৎ রাজ্য পুলিস দিয়ে ভোট হবে। ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে বিজেপির বিরোধী নেতা কোর্ট-কাছারি করেছিলেন, কিন্তু আদেশ তাঁর বিরুদ্ধেই যায়।
এবারের প্রশ্ন কবে নাগাদ দিন ঠিক হতে পারে। অন্দরের খবর মে মাসে হচ্ছে না বলেই ধারণা। সেক্ষেত্রে জুন মাসে হতে পারে। কিন্তু জুনে হলে কবে নাগাদ হবে। মনে হয়ে প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে। রাজ্যজুড়ে প্রচন্ড দাবদাহ চলেছে এবং অন্য বছরের তুলনায় বেশি গরম এ বছর পড়তে পারে বলেই শোনা গিয়েছে। অন্যদিকে জুনের ৮ তারিখ থেকে এ রাজ্যে বর্ষা শুরু হয়, এই সময়ে কি ভোট সম্ভব? উঠতে পারে প্রশ্ন। তৃণমূলের অন্দরের বক্তব্য দাবদাহে হিট স্ট্রোক হতে পারে, কাজেই গরম একটু না কমলে ভোট দিতেই আসবে না মানুষ। তাঁদের হাতেই ক্ষমতা , তাঁদের ইচ্ছাতেই ভোট।
প্রসূন গুপ্ত: একেকটি ভোট মানে একেক রকম প্রস্তুতি। লোকসভায় প্রচার মানে জাতীয় রাজনীতি। থাকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, চিন-পাকিস্তান কিংবা গত ৫ বছরের সার্বিক প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে তরজা। তেমনই বিধানসভায় থাকে রাজ্যের উন্নয়ন, আইন-শৃঙ্খলা, নারী নিরাপত্তা বা কর্মসংস্থান। পুরো বা পৌরসভা মানে এলাকার জল, রাস্তা ইত্যাদি নিয়ে প্রচার। সেরকম পঞ্চায়েত ভোটের সিংহভাগে থাকবে গ্রামের কথা, জমির বা ফসলের কথা এবং অবশ্যই ভূমিহীনদের জন্য অন্য কাজে রোজগারের কথা। তবে ভারত মূলত কৃষি প্রধান এবং শ্রমনির্ভর দেশ। তাই কৃষক এবং শ্রমিক যেদিকে, জয় সেদিকেই হয়ে থাকে। এই হিসাব দেখে সরকারি দল বা বিরোধীরা চেষ্টা করে যেভাবেই হোক বিভিন্ন পঞ্চায়েত দখল করা। দখল করা বললেও কাজটি কঠিন।
প্রতিদিনের লড়াই থেকে এ দেশের কৃষকরা বেঁচে থাকার তাগিদ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে। ব্যতিক্রম নয় এ বাংলাও। সামনে পঞ্চায়েত ভোট কাজেই উচিত প্রচার অভিযানে সমস্ত দলের নেমে যাওয়া, মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। তৃণমূল বেশ কিছুদিন হলো প্রচার অভিযানে নেমেছে পক্ষান্তরে। এদিকে এখনও প্রস্তুতিতেই রয়েছে প্রধান বিরোধী বিজেপি। অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রচার এখনও শুরুই হয়নি এবং সিপিএম অতি গোপনে তাদের আস্তিনের তাস বের করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন প্রসারের দায়িত্বে যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সপ্তাহ থেকেই প্রচারে নেমেছেন। খোঁজ নিচ্ছেন সেই অঞ্চলগুলি, যেখানে গত লোকসভা এবং বিধানসভায় তাঁদের দল খুব খারাপ ফল করেছে। যথা ডুয়ার্স বা বাঁকুড়া-পুরুলিয়া। বাঁকুড়ায় লোকসভার দুটি আসনই বিজেপির দখলে, সাথে বিধানসভার অধিকাংশ আসনও। যদিও গত পৌরসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার সবকটি পুর ভবন তৃণমূলের হাতে। কিন্তু পঞ্চায়েতে জয় না আসলে লোকসভায় তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। কাজেই কাল বিলম্ব না করে অভিষেক দুর্বল কেন্দ্রগুলিকে বেছে নিচ্ছেন।
বুধবার বাঁকুড়ার ওন্দাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক তুরুপের তাস হিসাবে তুলে ধরলেন ১০০ দিনের কাজের কথা। তিনি জানেন, এই বাঁকুড়া জেলা প্রবল গরমে খরার কবলে পরে। তিনি বক্তব্যে জানালেন যে , ধর্ম নয় বাঁচতে গেলে দরকার অর্থ। এই ১০০ দিনের কাজে শ্রমিকরা টাকা পাচ্ছেন না এবং তাই দিল্লিতে দরবার করতে হবে এবং কোটি প্রতিবাদ পত্র নিয়ে তিনি দিল্লিতে যাবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা প্রকল্পে যে বাঁকুড়া অধিবাসী সুবিধা পাচ্ছেন তাও জানালেন অভিষেক যদিও ট্রাম্প কার্ড ওই ১০০ দিনের কাজ।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় রাস্তার বেহাল (Road problem) দশা নিয়ে অভিযোগ আগেই ছিল। এবার হুগলি (Hooghly) ও মুর্শিদাবাদ, দুটি আলাদা জেলার বহু রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে অভিযোগ স্থানীয়দের। অভিযোগ, দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও মেরামত করা হচ্ছে না প্রয়োজনীয় রাস্তা। পথশ্রী প্রকল্প-সহ জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতের কোনও ফান্ডের মাধ্য়মে তাদের রাস্তা পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) গুধিয়া থেকে মনিহারপুর ঘাট পর্যন্ত সাড়ে তিন কিমি রাস্তায় বেহাল দশা। যার কারণে ধুঁকছে পর্যটনের শহর মুর্শিদাবাদ।
কুড়ি বছর আগে রাস্তাটি নির্মাণ হলেও এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়নি পাকা রাস্তা। প্রথমদিকে রাস্তার কাজ শুরু হলে সেখানে মোরাম দিয়ে কাজ চালানো হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার বেহাল দশা স্পষ্ট, ফলে কঙ্কালসার রাস্তায় বেড়িয়ে গিয়েছে মাটি। অভিযোগ, 'বর্ষাকালে নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হয় স্থানীয়দের।'
ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, 'এই রাস্তায় প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজারের বেশি লোক যাতায়াত করে এবং আশেপাশের দশটির বেশি গ্রাম এই রাস্তার উপর নির্ভরশীল। স্কুল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে সমস্ত পরিষেবা নিতে গেলে এ রাস্তাটিকে ব্যবহার করতে হয়। ওই সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশায় রয়েছে। সেই কারণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।' স্থানীয়দের একটাই দাবি, রাস্তা ঠিক করতে হবে।
পাশাপাশি অভিযোগ, 'নিম্নমানের মাল সামগ্রী দিয়ে পথশ্রী প্রকল্পের রাস্তা তৈরি হচ্ছে। রাস্তাটি চওড়ায় ও উচ্চতায় সরকারি পরিকাঠামো অনুযায়ী করছেন না ঠিকাদার। রাস্তা তৈরিতে ব্য়বহৃত বালি-সিমেন্টের পরিমাণ নিয়েও। যার ফলে রাস্তা তৈরির একদিনের মধ্যেই রাস্তায় ফাটল দেখা দিচ্ছে।' এই ঘটনাটি ঘটেছে গোঘাটের বালি পঞ্চায়েতের জগতপুর এলাকায়। অভিযোগ, 'জগতপুর থেকে সাঁকরা মেলাতলা পর্যন্ত যে দেড় কিলোমিটার রাস্তার কাজ হচ্ছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের মাল সামগ্রী দিয়ে করা হচ্ছে। সেই অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দেয় গ্রামের মানুষ।' অভিযোগ, 'সেই রাস্তা গ্রামের মানুষের সুবিধার জন্য করে দেওয়া হয়েছে। ওটা কোনো টেন্ডার হয়নি।'
জাতীয় দলের (National Party) তকমা হারানোর পরদিনই পদত্যাগ সাংসদ(Mp) লুইজিনহোর। তৃণমূল (Tmc) সূত্রে খবর, মঙ্গলবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ লুইজিনহো ফেলেইরো রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিলেন। সূত্রের খবর, জাতীয় দলের মর্যাদা হারানোর পরদিনই, তিনি উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড়ের দফতরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন। ইস্তফা দেওয়ার খবর স্বীকারও করে নিয়েছেন ফেলেইরো।
সূত্রের খবর, ২০২১ সালের কংগ্রেস ছেড়ে ফেলেইরো নাম লেখান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে। ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সদবদলে তৃণমূলে যোগদান করেন ফেলেইরো। নভেম্বর মাসেই তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তিনি। পাশাপাশি সর্বভারতীয় সংগঠনে তাঁকে সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় জানানো হয়েছিল, রাজ্যসভার সাংসদ হলেও, গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেলেইরো ভোটে লড়েননি। তৃণমূল সূত্রে খবর, ফেলেইরোর ইস্তফা প্রসঙ্গে কোনও খবর ছিল না তৃণমূলের কাছেও।
আজ অর্থাৎ সোমবার দুপুর ৩টের সময় রাজ্যের, সমস্ত যুব এবং মাদার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা ও ব্লক, সভাপতিদের নিয়ে ভার্চুয়াল মিটিং করবেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। আর কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হবে এই মিটিং। এই ভার্চুয়াল মিটিং পঞ্চায়েত ভোটের আগে, দলের নিচু স্তরে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
এখনও দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও দ্রুত পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পর্কে ঘোষণা করতে পারে রাজ্যের নির্বাচন কমিশন৷ সেই কারণে শাসক-বিরোধী সবপক্ষই নির্বাচনের প্রস্তুতিতে পুরোপুরি লেগে পড়েছে৷ আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সোমবার জরুরি সাংগঠনিক বৈঠকে বসতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ তৃণমূল সূত্রে খবর মিলেছে, সমস্ত জেলার জেলা সভাপতি, বিধায়ত ও ব্লক সভাপতিরা থাকবেন সেই বৈঠকে৷ সেখানেই নির্বাচনের একাধিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে৷
এছাড়া আলিপুরদুয়ারে দলীয় সভা থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন বিজেপি অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ১ কোটি চিঠি প্রদান করবেন তিনি। এই মিটিংয়ে কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনাকে হাতিয়ার করে স্বাক্ষর গ্রহণ ও পঞ্চায়েতের প্রস্তুতি শুরু করবেন বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর। এছাড়া এ ধরণের মিটিংয়ে দলের নিচু স্তর ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও যে জনসংযোগ বাড়বে সেটা বলাই বাহুল্য।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার আগেই ক্যানিংয়ে (Canning) বিধায়কের নেতৃত্বে দেওয়াল লিখন তৃণমূলের (TMC)। রাজ্যে এখনও ঘোষণা হয়নি পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ। কিন্তু তার আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিংয়ে ভোটের প্রচার ও দেওয়াল লিখন শুরু করল তৃণমূল।
জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে ক্যানিংয়ের দীঘিরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাসের হাত ধরে শুরু হল দেওয়াল লিখন। সঙ্গে দিনভর চলেছে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারও। এদিন সকালে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিধায়ক ক্যানিং এলাকার বেশ কয়েকটি দেওয়ালে দলের প্রতীক চিহ্ন নিজেই আঁকেন। পাশাপাশি প্রখর রোদ উপেক্ষা করে একটি মিছিলও করেন দলের কর্মীদের নিয়ে।
সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ভালো ফল করবে বলে আশাবাদী বিধায়ক। রবিবার ভোটের প্রচার ও দেওয়াল লিখনের সময় বিধায়ককে রাস্তা ও জলের দাবিও জানানো হয় এলাকার সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে। এমনকি সেই দাবি দ্রুত মেটানোর প্রতিশ্রুতিও দেন বিধায়ক।
এই বিষয়ে বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন, "একটি রাস্তা উদ্বোধন করতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে তৃণমূলের কর্মীদের দেওয়াল লিখন ও প্রচার করতে দেখি। তারপরই আমি গাড়ি থেকে নেমে তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে কয়েকটা দেওয়াল লিখেছি। এমনকি দলের হয়ে গ্রামের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটও চেয়েছি।"
পাঁচ বছর ধরে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বহরমপুরের হাতিনগর অঞ্চলে এলাকার দীর্ঘ দুই কিলোমিটার রাস্তায় বেহাল (Road Problem) অবস্থা। অভিযোগ, পথশ্রী প্রকল্প চালু হলেও সেখানে নাম আসেনি হাতিনগর অঞ্চল এলাকার। স্থানীয়দের একটাই দাবি রাস্তার বেহাল অবস্থা ঠিক করতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষাকালে রাস্তায় এত পরিমাণ জল জমে যায় যে, স্কুলপড়ুয়ারা (School Students) ওই রাস্তা দিয়ে স্কুল যাওয়ার পথে জল-কাদা মেখে আবার বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়। এমনকি রাস্তা দিয়ে কোনো গাড়ি গেলেই রাস্তার আশেপাশের বাড়িগুলিতে ধুলোবালি ঢুকে যায়। হাতিনগর অঞ্চলের এই রাস্তার উপর নির্ভর করে রয়েছে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল। যার কারণে এলাকাবাসীরা প্রতিনিয়ত সমস্য়ার সম্মুখীন হচ্ছে।
অভিযোগ, বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও সমস্য়ার সমাধান মেলেনি। স্কুল কলেজ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র এই রাস্তার উপর দিয়ে যেতে হয়। আশেপাশের বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। মালপত্র আনতে নিতে অসুবিধার মুখে পড়তে হয়। বর্ষাকালে একহাঁটু পর্যন্ত জল জমে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এই এলাকার উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রাস্তা। কবে ঠিক হবে রাস্তা সেই অপেক্ষায় রয়েছে এলাকাবাসী।
তৃণমূলের (TMC) বুথ কমিটির সভা শেষে চললো গুলি। গুলিবিদ্ধ চার জনের মধ্যে মৃত ২। দলুয়া হাসপাতাল থেকে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে (Islampur Hospital) আনার পথে এক গুলিবিদ্ধর মৃত্যু হয়েছে। অপর গুলিবিদ্ধকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে (North Bengal Medical College) নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে চোপড়ার দিঘাবানা এলাকার এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক গ্রাস করেছে। জানা গিয়েছে, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayet Vote) টিকিট পাওয়াকে কেন্দ্র করেই শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ। গুলিতে আরও কয়েকজনের জখম হওয়ার খবর মিলেছে। মৃত দু'জনের নাম হসু মহম্মদ ও ফইজুল রহমান।
জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী হিসেবে নাম ছিল ফইজুল রহমানের। যার জেরেই শুরু এই দ্বন্দ্ব। এমনকি সেই দ্বন্দ্বকে ঘিরেই চলেছে এই গুলি। যাঁরা গুলি চালিয়েছে এবং যারা মারা গিয়েছে; দু'পক্ষই শাসক দলেরই কর্মী। এমনটাই নাকি মৃতের পরিবারের অভিযোগ। মৃতের পরিবারের আরও অভিযোগ, 'মূলত পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট পাওয়াকে কেন্দ্র করেই এই দ্বন্দ্ব।'
ইতিমধ্যেই চোপড়ার দিঘাবানা এলাকায় বিশাল পুলিসবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কারা কারা এই হামলায় জড়িত, তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এমনটাই পুলিস সূত্রে খবর।
ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা আন্দোলন (DA Agitation), নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ড, স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে লাগাতার ধর্না আন্দোলন। পাশাপাশি সাগরদিঘির (Sagardighi Bye Poll) ফল এবং একের পর এক তৃণমূল নেতার (TMC Leader) জেল যাত্রা। এই আবহে সামনেই কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Vote)। আর তাই অনুব্রত-হীন বীরভূমের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)। যেহেতু বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তাই দলের ত্রুটি-বিচ্যুতি ঢাকতে তৃণমূলকে এবার বাড়তি সময় দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটের বৈঠকে (Kalighat Meeting) এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, জেলা ধরে ধরে প্রতি শুক্রবার হবে সাংগঠনিক বৈঠক। এদিন দলের সুপ্রিমো একাধিক দায়িত্ব ভাগ করে দেন। আগামি পঞ্চায়েত ভোট ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ার ডাক দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিনের বৈঠকে যুব সংগঠন শক্তিশালী না করতে পাড়ার ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ। এদিন সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, মালা রায় এবং বিধায়ক অতীন ঘোষ, পরেশ পালকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন মমতা। পুরনো ফরম্যাট মেনে জেলাভিত্তিক পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব এদিন ভাগ করে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি জেলা দেখার দায়িত্বে গৌতম দেব। কোচবিহার জেলা বিশেষভাবে দেখার জন্য পার্থপ্রতিম রায়, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং উদয়ন গুহকে নির্দেশ। সাগরদিঘি ভোটের প্রভাব তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলে। তরুণ মোশারফ হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘু সেলের সভাপতির দায়িত্ব। উত্তর দিনাজপুর মালদা-মুর্শিদাবাদ দেখার দায়িত্বে দুই সংখ্যালঘু মুখ সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও মোশারফ হোসেন।
বিশেষ দায়িত্বে রয়েছেন সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনও। দক্ষিণ দিনাজপুর দেখবেন তাপস রায়, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়ার দায়িত্বে মলয় ঘটক। মানস ভুঁইয়া দেখবেন দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা। জানা গিয়েছে, ফিরহাদ হাকিম দেখবেন হাওড়া-হুগলি, উত্তর দিনাজপুর আর বীরভূম দেখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। বর্ধমান, দার্জিলিংয়ের সঙ্গে নদীয়া জেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে অরূপ বিশ্বাস। এই প্রসঙ্গে দলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান , এঁরা কেউ অবজারভার নয়। এঁদের উপর সংগঠন দেখার দায়িত্ব।
প্রসূন গুপ্ত: শুক্রবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশেষ সভা ডেকেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেক বিধায়ক, সাংসদ ও বিশিষ্ট নেতাদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বক্তা ছিলেন। আশা করা গিয়েছিল তিনি হয়তো বিশেষ বার্তা দেবেন, হলো তাই। তাঁর বিশেষ বার্তার মধ্যে অন্যতম, রাজ্য সরকারের সামাজিক প্রকল্পের প্রচার যাতে প্রতি ঘরে পৌঁছয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
মমতা সাগরদিঘি থেকে পঞ্চায়েত হয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তথা দলের ভাবমূর্তি নিয়েই কথা বলেছেন বলেই সূত্রের খবর। তিনি পরিষ্কার জানান, 'প্রতি মাসে তিনি জেলা ধরে ধরে পর্যালোচনা বৈঠক করবেন। জেলার সর্বস্তরের সমস্যা দেখবেন নিজেই। দলের মধ্যে কোনও বেচাল সহ্য করা হবে না।'
তৃণমূল সূত্রে খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব ইমেজ আজকেও স্বচ্ছ, তিনি অতি সাধারণ জীবনযাত্রা করেন। তাঁর সততার ভাবমূর্তি আজকেও অটুট, কাজেই তিনি চান সকলের মধ্যে সেই পরিবেশ আসুক। অন্যথায় দল থেকে বেড়িয়ে যেতে পারেন। এই বার্তাও ঠারেঠোরে দিয়েছেন দলের সুপ্রিমো।
তিনি জানান, 'আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে হবে একসঙ্গে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মানা হবে না।' তিনি পরোক্ষে নাকি জানান, 'সাগরদিঘি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ভোট বিচার করা যায় না। আজকেও সংখ্যালঘু ভোটাররা তাঁর সঙ্গেই আছে। তাঁর কাছে ধর্মের কোনও ভেদাভেদ নেই। তিনি যেমন সংখ্যালঘু উন্নয়নে কাজ করছেন সেভাবেই চালিয়ে যাবেন। সংখ্যালঘু বন্ধুরা যদি বিদেশযাত্রা করতে চান তবে তারও ব্যবস্থা করা হবে। সমস্যা হলে তিনি বিষয়টা নিজেই দেখবেন।'
এছাড়া সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তিনি সম দূরত্ব বজায় রাখবেন বিজেপি ও কংগ্রেস থেকে। তিনি মনে করেন, বিজেপি চাইছে রাহুল বিরোধী মুখ হোক এতে পদ্মশিবিরের সুবিধা। তবে তিনি এও জানান, 'যে যে রাজ্যে যে দল অধিক শক্তিশালী তিনি তাদেরই সহযোগিতা করবেন।' এবিষয়ে তাঁর সঙ্গে এসপি নেতা অখিলেশ যাদবের কথা চলছে। অন্যান্য দলের কথাও উল্লেখ করেন যথা বিজু জনতা দল। ২৩ মার্চ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার বৈঠক হওয়ার কথা। অর্থাৎ কোথাও ভোটের আগে দলের ব্যাটন নিজের হাতেই রাখলেন মমতা।