সৌমেন সুর: ভগিনী নিবেদিতা (Sister Nivedita) বাগবাজার-এর এক সংকীর্ন গলিতে প্রতিষ্ঠিত তাঁর প্রাণের স্কুলটির নাম দিয়েছিলেন 'রামকৃষ্ণ স্কুল ফর গার্লস।' তবে বাগবাজারের (Bagbazar) মানুষের কাছে 'সিস্টারের স্কুল' বলেই প্রচার হয়েছিল। যাই হোক স্কুল খোলার আগে বাগবাজারের মতো রক্ষনশীল জায়গা থেকে মেয়ে জোগাড় করা শুরু হয়ে গেছিল। বলরাম বসুর বাড়িতে এ ব্য়াপারে একটা সভার আয়োজন করা হয়। নিবেদিতা তার বক্তৃতায় এই স্কুল সম্পর্কে সবাইকে সুন্দরভাবে ব্য়াখ্য়া করেন। স্বামীজী (Swami vivekananda) ছিলেন উপস্থিত। সভার শেষ প্রান্তে বসেছিলেন। নিবেদিতা আবেদন করেন প্রত্য়েক বাড়ির মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে। স্বামীজী নিবেদিতার বক্তৃতায় মূল্য় দিতে সবাইকে ঠেলতে থাকেন, বলতে থাকেন- 'তোমরা বলো আমাদের বাড়ির মেয়েদের স্কুলে পাঠাবো। আমরা রাজি আছি।' কেউ সাহস করে বলতে পারে না। অবশেষে বিবেকানন্দ বলে ওঠেন, 'Miss Noble, these gentlemen offers this girls to you' নিবেদিতা স্বামীজির এই কথা শুনে বাচ্চাদের মতো উচ্ছ্বাসে তালি দিয়ে ওঠেন। প্রাচীন পন্থী বাগবাজার পল্লীবাসীবৃন্দের কাছে নিবেদিতা তার বিশ্বাস ও আস্থাভাজন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ধীরে ধীরে নিবেদিতার স্কুলে একটি দুটি করে বালিকা, বাল্য়বিধবা, বধূরা ভিড় করতে থাকে। বড় স্নেহের সঙ্গে নিবেদিতা ও অন্য় শিক্ষিকারা ভালবেসে মন দিয়ে পড়াতেন। নিবেদিতা কেবলমাত্র বাগবাজারে সীমাবদ্ধ থাকেন নি।স্বামীজির ইচ্ছায় বেলুড়মঠের দীক্ষিতদেরও শিক্ষাদান শুরু করেন। সরলবালা সরকার 'নিবেদিতা বিদ্য়ালয় ও তাহার আদর্শ' প্রবন্ধে লেখেন, 'এমন একটি জিনিস সেই বিদ্য়ালয়ে ছিল যাহা অন্য়ত্র দুর্লভ। সেটি ছাত্রীদের ওপর আন্তরিকতা ও ভালবাসা। ভালবাসার পবিত্র আবহাওয়ায় দরিদ্র নিবেদিতা বিদ্য়ালয় আনন্দের নিকেতন হইয়া উঠিয়াছিল।' নিবেদিতা এই বিদ্য়ালয়ের জন্য় মনপ্রাণ সম্পূর্ন সঁপে দিয়েছিলেন।
বর্তমান বাগবাজারের এই স্কুলটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্য়োগে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের তত্ত্বাবধানে। এখন সেদিনের নিবেদিতার সংকল্পের ছোট্র বীজটি আজ মহীরুহে পরিনত হয়েছে। আয়ারল্য়ান্ডবাসী মার্গারেট নোবেল ব্রক্ষ্মচর্য পালনের পর 'নিবেদিতা' নামটি সার্থক হয়ছে একথা বলাই বাহুল্য়। তথ্য়ঋণ-প্রবাজিকা নির্ভীকপ্রানা।
সৌমেন সুরঃ স্কুলে নরেন ক্লাসে মন দিয়ে শিক্ষকের পড়া শুনতেন। এত ইনভলভ্ হয়ে যেতেন যে, মাঝে মাঝে শিক্ষকেরই ভ্রম হয়ে যেতো। শিক্ষক মহাশয় মনে করতেন নরেন বুঝি ঘুমাচ্ছে। যখন বলতেন, এতক্ষণ কি বললাম বলো তো? নরেন শিক্ষকের সবটুকু lesson আগাগোড়া নির্ভুলভাবে বলে দেয়। শিক্ষক মহাশয়, নরেনের স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। যার গুনে একটা গোটা বই একবার গভীরভাবে চোখ বোলানোর পর পুরো বই নির্ভুলভাবে বলতে পারতেন। ছেলেবেলায় নরেন তার বন্ধুদের নিয়ে একটা বাগানে খেলতে আসতেন। সেই বাগানের মালিক এদের খেলা বন্ধ করবার জন্য একটা ফন্দি আটেন। যখন ছেলেরা আসে তখন বাগানের মালিক ছেলেদের বলে, এখানে খেলাধূলা তোমরা কোরো না। ঐ গাছে একজন দৈত্য আছে, সে যদি দেখে, তোমাদের বারণ করা সত্ত্বেও তোমরা খেলছ- তাহলে দৈত্য রেগে গিয়ে তোমাদের চরম ক্ষতি করে দিতে পারে। এই কথা শুনে সবাই ভয়ে চলে যায়। কিন্তু নরেন ভয় পায় না। মালিকের বয়ান দেওয়া ঐ গাছে সত্যি দৈত্য আছে কিনা তা পরখ করবার জন্য সারারাত গাছে উঠে বসে থাকে। কিন্তু কোনো দৈত্যের দেখা পাই নি। এই ব্যাপারটা যখন মালিক জানতে পারে তখন উনি খেলার অনুমতি দেন। এখান থেকে আমরা দেখতে পাই- নরেনের সাহসিকতাও অকুতোভয়।
আর একটা ছবি আমরা দেখতে পাই- ছোটবেলা থেকে তার নেতৃত্ব দেবার শখ। তাঁর সমস্ত বন্ধুদের মধ্যে লীডারশীপ নরেনের। নরেনকে সবাই নেতা হিসাবে মান্য করতো। নরেন যা বলতো, তা অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য ও মনোমুগ্ধকর। বিবেকানন্দের নেতা হওয়ার পিছনে ছিল, সবাইকে সমদৃষ্টিতে দেখা, সকলের প্রতি আন্তরিকতা এবং অন্যকে ছোট না করার মনোবৃত্তি, এগুলো প্রতিভাত হওয়ার দরুন বিবেকানন্দর নেতা হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছিল। উ্রনবিংশ শতাব্দীর যুৃব সমাজের পথপ্রর্দশক সেজে উঠেছিলেন ভবিষ্যতের জন্য। বিলে থেকে বিবেকানন্দ হয়ে উঠতে যে শ্রম, অধ্যবসায়, দৃঢ়তা, ইচ্ছাশক্তির দরকার ছিল, তা তাঁর শরীরের Out & out বিদ্যমান। নরেন জানতো, কিভাবে ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ব দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায়। এই ভ্রাতৃত্ববোধ মানুষের মনে গাঁথতে পারলেই সারা বিশ্বকে গেঁথে নেওয়া একদম সহজলভ্য হয়ে দাঁড়াবে। এই মনোভাব ছিল বলেই তিনি একদিন যুব নেতা থেকে বিশ্বনেতা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সৌমেন সুর : যখন ভারতবর্ষ দারিদ্রতায় ডুবে যাচ্ছে, ধর্ম যখন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, শিক্ষিত মানুষজন অপরের অনুকরণে ব্যস্ত-সারা দেশ এক চরম অস্তিরতায়, সঠিক পথটা কি, কি করলে মানুষ একটু স্বস্তি পাবে, এইরকম পটভূমিকায় উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রীটে জন্মগ্রহণ করেন নরেন। বিখ্যাত দত্ত পরিবারে। আসল নাম নরেন্দ্র নাথ দত্ত। শৈশবকালের নাম বীরেশ্বর ওরফে বিলে। এই নরেনই হলেন ভারত জাগরনের অন্যতম পথিক। নরেনের পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন হাইকোর্টের নামকরা অ্যাটর্নী। মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী ছিলেন ধর্মপ্রাণ মহিলা। ছেলেবেলা থেকেই বীরেশ্বর আধ্যাত্বিকপ্রবন ছিলেন। এই সিমটম তাঁর মায়ের জন্যই সম্ভব হয়েছে। ছোট থাকতেই মা বিলেকে রামায়ন মহাভারত পড়ে শোনাতেন। এই ধর্মগ্রন্থের কাহিনি শুনতে শুনতে বীরেশ্বরের ধর্মের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। এই আধ্যাত্বিক প্রবণতার জন্য বিলের মা ভুবনেশ্বরী দেবী বিলেকে মানসিকভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।
নরেনের ছোট বেলায় আমরা দেখতে পাই--ওর ধ্যানগম্ভীর ভাব। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ধ্যান ধ্যান খেলা। এই খেলায় সবাই যখন মগ্ন। তখন বন্ধুরা দেখছে, বীরেশ্বরের সামনে একটা সাপ ফনা তুলে রয়েছে। বন্ধুরা সবাই পালিয়ে যায়। দূর থেকে বন্ধুরা নরেনকে ডাকতে থাকে। কিন্তু সে ডাক কখনই নরেনের কানে পৌছয় না। কিছুক্ষণ বাদ সাপটি আপনা আপনি চলে যায়। এমনই ছিল নরেনের একাগ্রতা। ছোটবেলা থেকে নরেন সন্ন্যাসী সাজতে ভালবাসতেন। মাঝে মাঝে মাকে বায়না করতেন সন্ন্যাসী সাজিয়ে দেবার জন্য। কখনো কখনো নরেন সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে মাকে বলতেন- কেমন লাগছে? এই দৃশ্য দেখে ভুবনেশ্বরী দেবী মনে মনে ভয় পেতেন। কারণ নরেনের ঠাকুরদা সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করে সংসার থেকে একদিন বিদায় নিয়েছিলেন। তেমন কোনো ঘটনা কি নরেনের জীবনে ঘটবে নাকি!
নরেন ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। যাকে তাকে হুট করে বিশ্বাস করতেন না। পরিস্থিতি বিচার করে তারপর রায় দিতেন। (চলবে)।
সৌমেন সুর: বিবেকানন্দ শিক্ষা চিন্তার মূলে রয়েছে বাস্তবতার প্রেক্ষিত। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, জনগণের সার্বিক দুরাবস্থার একমাত্র প্রতিকার করতে পারে যথার্থ শিক্ষা। তিনি বলছেন, এমন শিক্ষা চাই যাতে ভেতরে নিদ্রিত শক্তি জাগ্রত হয়। ভিতরে শক্তিকে তিনি বলেছেন ধর্ম। বিবেকানন্দ উক্ত ধর্মকে বলেছিলেন শিক্ষার ভিতরকার জিনিস। তার ভাষায় ধর্মটা যেন ভাত, আর সবগুলো তরকারি। শুধু তরকারি খেলে হয় বদহজম, শুধু ভাতেও তাই।
অর্থাৎ শিক্ষাকে প্রথমে ধর্মমুখী হতে হবে। না হলে সব কিছুই ব্যর্থ হয়ে যাবে। বিবেকানন্দ কথিত ধর্ম কোন রিচুয়াল আচারসর্বস্ব পুজোআচ্চা নয়। আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে যে অনন্ত শক্তি নিদ্রিত আছে, তাকেই তিনি ধর্ম বলেছেন। ধর্ম হচ্ছে মানুষের ভিতরে যে ব্রহ্মত্ম প্রথম থেকে আছে, তারই প্রকাশ। আর শিক্ষা মানুষের ভিতরে যে পূর্ণতা প্রথম থেকেই বিদ্যমান, তার প্রকাশ।
অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যে মানুষের ভেতর যে অনন্ত শক্তি আছে, তার পূর্ণ প্রকাশ হলো আমাদের প্রকৃত শিক্ষা। এই শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারলে শুধু দৈহিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশ হয় না, জীব থেকে মানব, মানব থেকে মহামানব এবং শেষ পর্যন্ত দেবত্বের পূর্ণ প্রকাশ ঘটে।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এখানে গোড়ায় গলদ। ভিতরের অনন্ত শক্তি জাগানোর বিজ্ঞানসম্মত প্রয়াস আজও অবহেলিত। বিবেকানন্দ বলছেন, মানুষের ভিতরেই সব কিছু আছে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে মানুষ যতটা জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে ততটাই আবিষ্কার করে।
যে যত নিজের মনের আবরণ উন্মোচন করতে পারে সে ততখানি শিক্ষিত। স্বামীজি আত্মনির্ভরশীলতার শিক্ষা দিতে বলেছেন। শিক্ষাব্যবস্থায় যদি আত্মনির্ভরতার চর্চা না থাকে, তাহলে মানুষের ভেতরে বাসা বেঁধে থাকা সুপ্ত লোভ কখনই প্রশমিত হবে না। বিবেকানন্দের কাছে ধর্ম হলো মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত পূর্ণ শক্তির প্রতীক। সে পূর্ণ শক্তি সম্পূর্ণ প্রকাশ হলো শিক্ষা।
তথ্যঋণ: স্বপন কুমার ঠাকুর
প্রসূন গুপ্ত: আজকের কর্পোরেট দুনিয়াতে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ তা নিয়ে কে আর এতো ভাবে? পৃথিবী নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক বাজার এতটাই ভয়ঙ্কর যে সাধারণ মানুষ মন ভালো রাখবে তার উপায় কী। সংসার চালাতেই মানসিক চিন্তা চেপে ধরে। অবশ্য কেউ বলতেই পারে, সময়ের সঙ্গে অর্থনীতিও এগিয়ে চলে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আজকের মানুষ সঞ্চয় করতে পারছে না। কাজেই মানুষের মানসিক চাপ বেড়েই চলেছে। এই চাপের সঙ্গে শরীরের নানা সংকট। রক্তচাপ থেকে রক্তে শর্করা, মানুষের আয়ু বৃদ্ধি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকা ততদিন সময়ের সঙ্গে লড়াই করে যেতেই হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আজ বিশ্বে মানসিক রোগ বাড়ছে। আগে এই সমস্যা ছিল আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলিতে। যদিও তা সর্বদা অর্থনৈতিক নয়, কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে এই মানসিক রোগ হচ্ছে। অনেকটাই বর্তমান অবস্থায় বেঁচে থাকার তাগিদে। কিন্তু উপায় কী এর থেকে সরে আসার?
কেউ বলবে পরিবারকে সময় দাও, কেউ বলে চলো বেড়িয়ে আসি কিংবা নেশায় বুঁদ হয়ে থাকো বা সিনেমা-ওটিটি দেখে চালাও। মানসিক শান্তি ফেরাতে এর কোনওটাই দীর্ঘস্থায়ী নয়। আজ স্বামী বিবেকানন্দের ১৬১তম জন্মদিবস। তিনি মাত্র ৩৯ বছর বেঁচে ছিলেন। তাঁর অবদান এই সমাজের জন্য লিখে শেষ করা যাবে না। বিবেকানন্দ কোনওদিন নিজের জন্য ভাবেননি। উৎসর্গ করেছিলেন নিজেকে সমাজের জন্য। তিনি কাউকে ধর্ম নিয়ে উপদেশ দেননি তবে ব্যতিক্রম একটিই, ধ্যান।
ধ্যান করা মানে শুধুই ঈশ্বর চিন্তা নয়। স্বামীজী আত্মোপলব্ধি করায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বলতেন সকলেই কোনও না কোনও সময়ে ধ্যান করেন, যখন একা থাকে। হয়তো ঘুমোতে যাওয়ার সময়। ওই যা আমরা একান্তে ভাবি এক মনে তাই ধ্যান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন খারাপ হলে একা থাকতে এবং কোনও একটি বিশেষ বিষয়ে, যদি তা কোনও সমস্যা হয়ে থাকে তাও, এক মনে ভাবতে এবং ওই ভাবনা থেকেই বেরিয়ে আসবে সমস্যার সমাধান।
সৌমেন সুর: সব ধর্মই সত্য। সব পথ দিয়েই তাঁকে পাওয়া যায়। আসলে ছাদে ওঠা নিয়ে কথা। তা তুমি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারো, আবার কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারো। মই দিয়ে উঠতে পারো, দড়ি বেয়ে উঠতে পারো। ওঠার জন্য ব্যাকুলতা থাকলেই হল। তার উদ্দেশ্যে ফুল ফেলছে কেউ গড বলে, কেউ আল্লাহ বলে, কেউ ঈশ্বর বলে। কিন্তু সব ফুল গিয়ে পড়ছে এক জায়গাতেই। কেউ বলছে জল, কেউ বলছে পানি, কেউ বলছে ওয়াটার। পুকুরের জল সকলেরই তৃষ্ণা দূর করে।
আমরা সকল ধর্মকে যেমন শ্রদ্ধা করি, তেমনি সত্য বলেও মানি। বিবেকানন্দ বলছেন যে, জাতি পৃথিবীর সকল ধর্মের ও সকল জাতির নিপীড়িত ও আশ্রয়প্রার্থী জনগণকে চিরকাল আশ্রয় দিয়ে এসেছে। আমি সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি।
আমরা জানি সকল ধর্মই অসীমকে উপলব্ধি ও অনুভব করার বিভিন্ন চেষ্টা মাত্র। স্বামীজি স্বপ্ন দেখতেন এমন একদিন আসবে যখন পৃথিবীতে কোন জাতি থাকবে না। এই বদ্ধ জলার মত গতিহীন ধর্মহীন দেশে স্বামীজীর মতো একজন মহা মানুষের পুন আবির্ভাব বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। কারণ রাজনীতির ক্ষুদ্র স্বার্থে ধর্ম বিদীর্ণ হচ্ছে। ভাতৃঘাতী যুদ্ধে দেশে দেশে রক্ত ঝরছে বলে মনে হয়।
ধর্ম সম্পর্কে স্বামীজীর বক্তব্য, এক ব্যক্তি সারা জীবনেও একটা দর্শন শাস্ত্র পাঠ করেননি, তিনি হয়তো সারা জীবন একবারও ঈশ্বরের কাছে কোনও প্রার্থনা জানাননি। কিন্তু যদি কেবল সৎ কর্মের শক্তি তাকে এমন অবস্থায় নিয়ে যায়, যেখানে তিনি পরার্থের তার জীবন ও যা কিছু আছে সব ত্যাগ করতে উদ্যত হন, তাহলে বুঝতে হবে জ্ঞানী জ্ঞানের দ্বারা এবং ভক্ত উপাসনার দ্বারা সে অবস্থায় উপনীত হয়েছেন, তিনিও সেখানেই পৌঁছেছেন। অজ্ঞরাই কর্ম ও জ্ঞানকে পৃথক বলে থাকে, কিন্তু জ্ঞানীরা জানেন শেষ পর্যন্ত এই দুই পথ মানুষকে পূর্ণতা রূপ এক লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়।