বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে মুখোমুখি জেরা করতে সোমবার তাঁর বাংলোয় গেল শান্তিনিকেতন থানার ওসি সহ পুলিস কর্মীরা। উপাচার্য থাকাকালীন নানা ইস্যুতে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সম্প্রতি শান্তিনিকেতন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ জমা পড়েছে। জানা গিয়েছে, গোটা জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের ভিডিও রেকর্ডিং হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই এই পদক্ষেপ নিল বীরভূম জেলা পুলিস।
উল্লেখ্য, সোমবার শান্তিনিকেতন থানার ওসি ও পুলিস আধিকারিকরা বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বাংলো ‘পূর্বিতা’য় পৌঁছন। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, পাঁচটি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় আজ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আগামী ২২ তারিখ বাকি দুটি মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাঁচটি মামলায় তদন্তের জন্য শান্তিনিকেতন থানার পুলিস নোটিস ধরিয়েছিল। কিন্তু প্রাক্তন উপাচার্য সেই হাজিরা এড়িয়ে যান। উপরন্তু এফআইআর খারিজের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। সেই মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে স্বস্তিও পান। আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছিল, তাঁকে আপাতত গ্রেফতার করা যাবেনা। সেই নির্দেশের পর আজ ফের জেরার মুখে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য।
উল্লেখ্য, শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পত্তিতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকে অবমাননা করে ফলক বসানো থেকে শুরু করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে কটূক্তির জেরে অভিযোগ দায়ের হয়। বাঙালি কাঁকড়ার জাত-সহ দুর্গাপুজো প্রসঙ্গেও স্পর্শকাতর মন্তব্য করেছিলেন বিদ্যুৎ।
ফলক বিতর্কের মাঝেই এবার কর্মক্ষেত্রে প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন বিশ্বভারতী (Vishva Bharati) বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবনের স্পেশাল অফিসার নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সকালেই সোশ্যাল মিডিয়ায় স্থানীয় প্রশাসন, পুলিস, বোলপুর ও শান্তিনিকেতনবাসীর (Santiniketan) কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন তিনি। পোস্ট মুহূর্তেই শেয়ার হয়ে যায়। হইচই পড়ে যায় পোস্ট ঘিরে।
নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, বৃহস্পতিবার তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন, রাতে বাড়ি ফিরেছেন। এরই মাঝে বিশ্বভারতীর উচ্চপদস্থ আধিকারিকের নির্দেশ অনুযায়ী দু'জন অধ্যাপক তাঁকে ফোন করে জানান, শুক্রবার অফিসে না যেতে। উচ্চপদস্থ কর্তারা মৌখিকবার্তাও দেন। নীলাঞ্জনবাবু এর পর লেখেন, 'তাঁরা অনুরোধ করেন, আমি যেন শুক্রবার কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ না করি। সম্পূর্ণ দূরে অন্য এক বিভাগে গিয়ে আজকের দিনটা বসে থাকি। আমি এই রহস্যময়, অনৈতিক, কুরুচিকর, অপেশাদার এবং সন্দেহজনক প্রস্তাবের কোনও কারণ অথবা যুক্তি খুঁজে পাইনি। ফলে তাঁদের জানাই যে, এই মর্মে আমাকে যথাযথ মাধ্যমে কোনও লিখিত নির্দেশ না দিলে আমি আমার নিজের কাজের জায়গায় শত বাধা বা বিপদ থাকলেও যাব।'
পাশাপাশি তিনি আরও লেখেন, 'তা সত্ত্বেও আমি আজ সকাল সাড়ে ন'টায় আমার কর্মক্ষেত্রে রোজকার মতোই ঢুকব। ওখানে আমি ওই উচ্চপদস্থ কর্তা অথবা তাঁর নিযুক্ত কোনও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিবর্গের হাতে আমার প্রাণহানির আশঙ্কা করছি।' নিরাপত্তা চেয়ে পুলিস প্রশাসন এবং বোলপুরবাসী ও অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।