সাপ্তাহিক কাজের হিসাব না পাওয়ায় কড়া পদক্ষেপ রাজভবনের (Raj Bhavan)। রাজ্য ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে শো-কজ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Cv Anand Bose)।
মঙ্গলবার রাজভবনের চিঠি যায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠানের আচার্য হিসাবে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সাপ্তাহিক কাজের একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ আরও সহজ করা এবং ছাত্রছাত্রীদের বৃহত্তর স্বার্থেই এই রিপোর্ট তলব। কিন্তু তেমন কোনও হিসাব রাজ্যপালকে পাঠাননি উপাচার্য। কেন আচার্যের নির্দেশ মানা হল না, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সেই কারণ জানাতে বলেছে রাজভবন।
রাজভবন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়-সহ মোট ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা রাজ্যপালের এই শো-কজ চিঠি পেয়েছেন। চিঠিতে তাঁদের রিপোর্ট না পাঠানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এই চিঠি পেতে পারে।
অপসারিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের (University) উপাচার্য (Vice Chancellor) সাধন চক্রবর্তী। তাঁকে সরিয়ে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (Chancellor) সিভি আনন্দ বোস। বেশ কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আন্দোলন চালাচ্ছেন পড়ুয়াদের বড় অংশ, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা। উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের দাবি করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। সেই দাবি মেনেই শনিবার উপাচার্যের পদ থেকে সাধনকে সরিয়ে দিলেন আচার্য। বিশ্ববিদ্যালেয়র রেজিস্ট্রারের তরফে ই-মেল মারফত সাধনকে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, শনিবার কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সহ আন্দোলনকারীদের কথোপকথনের জন্য ডেকেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু উপাচার্য আসেননি। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ সব শুনে উপাচার্যকে অপরসারণের সিদ্ধান্ত নেন সিভি আনন্দ বোস। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতির আখড়াতে পরিণত করেছেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মাণ কাজের জন্য বহু মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। মোট প্রায় প্রায় ২৬ লক্ষ টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ছিল সাধনের বিরুদ্ধে। এসবের বিরুদ্ধে ১৪ মার্চ থেকে সাধনের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধরনা অবস্থানে বসেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশ। রেজিস্ট্রারও সরব হওয়ায় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারকে সেই পদে বহাল করা হয়।
বেশ কয়েকবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও পারেননি উপাচার্য। পরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। সেই মামলায় হাইকোর্ট প্রশাসনিক ভবনের ৫০ মিটারের বাইরে পদ্ধতি মেনে আন্দোলন করার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি বলা হয়, তাঁরা কোনও আধিকারিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে কেলেঙ্কারিতে ভরা রাজ্য সরকার। এবার কি সেই কেলেঙ্কারিও রুখতে চান রাজ্যপাল (Governer)! শুক্রবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (University) উপাচার্যদের (Vice Chancellor) বৃহস্পতিবার একটি কড়া নির্দেশিকা পাঠালেন। যা শুধু অভিনব নয়, নজিরবিহীনও। যে নির্দেশিকার পর রাজনৈতিক টানাপোড়েন রাজ্যজুড়ে। এই নির্দেশিকা নিয়ে সরব হয়েছে শাসক দলও।
সূত্রের খবর, নির্দেশিকায় মূলত তিনটি কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি কোনও আর্থিক লেনদেন করে তার আগে আচার্য হিসাবে রাজ্যপালের অনুমোদন নিতে হবে। নইলে তা করা যাবে না। দ্বিতীয়ত বলা, প্রতি সপ্তাহের শেষে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ই-মেল করে রাজ্যপালকে জানাতে হবে কী কাজ হল। পাশাপাশি জগদীপ ধনকর রাজ্যপাল জমানায় উচ্চশিক্ষা দফতর নিয়ম করেছিল, তাঁদের মাধ্যমে আচার্য-উপাচার্যদের রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অর্থাত্ সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে না। শুক্রবারের নির্দেশিকায় রাজ্যপাল বলেছেন, উপাচার্যরা সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন, তাদের যোগাযোগের জন্য কোনও মাধ্যম লাগবে না। ঠিক একইভাবে রাজ্যপালও আচার্য হিসাবে উপাচার্যদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখবেন। এছাড়া ওই নির্দেশিকায় লেখা আছে, রাজভবনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বিষয় দেখভাল করবেন ও সহযোগিতা করবেন আইএএস দেবাশীষ ঘোষ।
এ নির্দেশিকার পর শিক্ষা মহলের মতে, রাজ্যপাল এদিনের নির্দেশিকায় আগের সেই নিয়মটাই তুলে দিলেন। এতে ফাইল আটকে থাকবে না। দ্রুত কাজ হবে বলে মত রাজ ভবনের। রাজ্যপালের এই নির্দেশিকা নিয়ে শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'আমরা দ্বৈরথ চাই না, এই চিঠির বিষয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে, তবে ওনাকে বলব এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নিতে, এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।' এছাড়া তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষা দফতরকে অন্ধকারে রেখে রাজভবন এই চিঠি দিয়েছে।' এ প্রসঙ্গে পাল্টা বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, 'রাজ্যপালের এক্তিয়ার আছে, শিক্ষাক্ষেত্র থেকে তো লুটেপুটে খেয়েছে, এবার রাজ্যপাল ও বুঝে যাবে ওরা কীভাবে লুটপাট চালিয়েছে।'
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়-সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বদল। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বদলের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এখনও পর্যন্ত যতদূর জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ছিলেন সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। ১৮ই মার্চ তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই রাজ্যপালের কাছে চিঠি দিয়ে উপাচার্য পদ থেকে সরে দাঁড়ান সব্যসাচীবাবু। তাই তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য করা হলো নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তীকে। তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোজফি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক।
এমনকি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়েও উপাচার্য পরিবর্তন করা হয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের উপাচার্য ছিলেন শিবাজীপ্রতিম বসু। তবে তিন মাসের জন্য অন্তবর্তীকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিক্সের অধ্যাপক পবিত্র কুমার চক্রবর্তীকে।
এদিকে ডায়মন্ডহারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর জায়গায় নতুন করে উপাচার্য করা হয়েছে কাজল দে-কে।
প্রায় ১০ ঘণ্টা পর ঘেরাওমুক্ত বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (Vice Chancellor Vidyut Chakraborty)। খবর পেয়ে শান্তিনিকেতন ও বোলপুর থানার পুলিস (police) এসে তাঁকে উদ্ধার করে। উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গাঁইতি, শাবল, বাঁশ নিয়ে আসেন নিরাপত্তারক্ষীরা। গেট ভাঙতে শুরু করে৷ তখনই আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। প্রসঙ্গত, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা দীর্ঘদিন ধরেই পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, কর্মীদের বড় অংশ করছে৷ সদ্য পূর্বের আন্দোলনকারীরা পড়ুয়াদের ভর্তি না নেওয়া, গবেষণারত পড়ুয়াদের পাঠে বাধা দেওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছেন। এমনকি, আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ তুলে বুধবার বিকেল ৪ টে থেকে ঘেরাও করা হয় উপাচার্যকে৷ বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিজ দফতরেই ঘেরাও করা হয় উপাচার্যকে৷ সেই সময় পড়ুয়াদের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি হয় বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের। আহত হন দুই পড়ুয়া-সহ এক নিরাপত্তারক্ষী।
জানা গিয়েছে, "দীর্ঘক্ষণ দফতরে ঘেরাও থাকার পর নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি, হেনস্থা করা হয়েছে," এই অভিযোগে বীরভূম পুলিস সুপারকে ইমেল করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী৷ বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ২ টো নাগাদ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে আসে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা৷ গাঁইতি, শাবল, বাঁশ দিয়ে গেট খোলার চেষ্টা করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে শুরু হয় জোর ধস্তাধস্তি। পরিস্থিতি উত্তাল হওয়ার খবর পেয়ে শান্তিনিকেতন ও বোলপুর থানার পুলিস এসে পড়ুয়াদের বুঝিয়ে উপাচার্যকে উদ্ধার করে৷ প্রায় ১০ ঘণ্টা পর ঘেরাও মুক্ত হন উপাচার্য।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Calcutta University) উপাচার্য পদে সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুনর্বহাল খারিজ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। এবার উচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টে (Spureme Court) যাচ্ছে রাজ্য। মঙ্গলবার হাইকোর্টের রায় সামনে আসতেই বৈঠক করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং শিক্ষামন্ত্রী। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (Vice Chancellor) রাখতে শীর্ষ আদালতে দরবার করবে তাঁরা।
এদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় দফার নিয়োগ অবৈধ। মঙ্গলবার এই রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে সরানোর নির্দেশ আদালতের।
২০২১ সালের ২৭ অগাস্ট তাকে পুনরায় উপাচার্য পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা দফতর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সিদ্ধান্ত খারিজ করলো হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এদিন এই নির্দেশ দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় উপাচার্য হিসেবে সোনালীদেবীর পুণরায় নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অনিন্দ্যসুন্দর দাস। তাঁর অভিযোগ, 'নিয়োগ প্রক্রিয়া মেনে দ্বিতীয় দফায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনরায় বহাল করা হয়নি। এই নিয়োগ নিয়ে অজ্ঞাত রাজ্যপালও।'
যদিও বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষের আইনজীবী তাঁদের মতো করে যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু মামলাকারীদের যুক্তি এবং তথ্য-প্রমাণকে মান্যতা দিয়ে পুনরায় নিয়োগ খারিজ করে মহামান্য আদালত।