উত্তর কাশীর সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকদের উদ্ধারে কী ফের শাবল, গাঁইতি, কোদালে ফিরছে প্রশাসন। কারণ, এই উদ্ধারে গত কয়েকবার বারবার ধাক্কা খেয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্র। তাই নতুন করে ভিতরে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারে এমনটাই ইঙ্গিত উত্তরাখণ্ড সরকার। যদি উদ্ধার কাজে প্রাচীন পন্থায় ফিরতে হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর জেরে উদ্ধার আরও দেরি হতে পারে।
গত বাহাত্তর ঘণ্টায় বারবার থমকে গিয়েছে উত্তর কাশীর সুড়ঙ্গে শ্রমিকদের উদ্ধারের কাজ। ইতিমধ্যে ৫৭ মিটার পথ খুঁড়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে। বাকি রয়েছে এখনও কয়েক মিটার। সেই কাজ করতে গিয়েই বারবার হোঁচট খেতে হচ্ছে।
সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে অগার যন্ত্রে যান্ত্রিক ত্রুটিোর কারণে কাজ বন্ধ করতে হয়। যন্ত্রটি যে উঁচু জায়গার উপর রেখে খননের কাজ চালানো হচ্ছিল, সেই জায়গাটিতেও নাকি আবার ফাটল দেখা দিয়েছে। গত ১২ নভেম্বর উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। সুড়ঙ্গটি সাড়ে আট মিটার উঁচু এবং প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ। কিন্তু কখন ওই ৪১ কর্মীকে উদ্ধার করা যাবে? সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় প্রশাসন।
উত্তরাখণ্ডের সিল্কারার সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিক আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্যের আলো দেখতে পারেন বলে আশা করছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। তাঁরা জানিয়েছেন, উদ্ধারকার্য প্রায় শেষের মুখে। সেই সঙ্গেই টানেলের সামনেই আনা হয়েছে এম্বুলেন্স, ব্যাবস্থা করা হয়েছে অস্থায়ী হাসপাতালের।
জোজিলা সুড়ঙ্গের প্রোজেক্ট হেড এবং উদ্ধারকারী দলের সদস্য হরপাল সিং জানিয়েছেন, আশা করা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে সুড়ঙ্গে আটক শ্রমিকদের বের করে আনা সম্ভব হবে।
আমেরিকায় তৈরি অত্যাধুনিক খননযন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে উদ্ধারকাজে। অক্সিজেন মাস্ক পরে পাইপের মাধ্যমে সুড়ঙ্গে ঢুকেছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা। ঘটনাস্থলে রয়েছে ২০টি অ্যাম্বুল্যান্স। শ্রমিকরা বেরিয়ে এলেই তাঁদের পাঠানো হবে হাসপাতালে।
এবারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ (Explosion) হল একটি ইস্পাত কারখানায়। ঘটনাটি বুধবার রাতে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে ঘটেছে। সূত্রের খবর, হরিদ্বারে রুড়কির মুন্ডিয়াকি গ্রামে একটি ইস্পাত কারখানায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক ভাবে পুলিস জানতে পেরেছে, কারখানার বয়লারে বিস্ফোরণ হয়েছে। এই বিস্ফোরণের ফলে ঝলসে আহত হয়েছেন ১৭ জন শ্রমিক। এই বিস্ফোরণের পরই গোটা গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিস সূত্রে খবর, বুধবার হরিদ্বারের মুন্ডিয়াকি গ্রামের গায়ত্রী স্টিল সার্ভিস নামের ইস্পাত কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। কারখানায় বয়লারে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, বুধবার যখন কারখানায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে, তখন কারখানায় একাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। আচমকা জোরালো আওয়াজে চমকে যান তাঁরা। তাঁদের মনেই হয়েছিল এটি কোনও বিস্ফোরণের আওয়াজ। এর পরই তাঁরা আতঙ্কে কারখানা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁরা বাইরে এসে বুঝতে পারেন বিস্ফোরণ কারখানার ভিতরেই হয়েছে। সেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই দেখা যায় চারিদিকে পড়ে রয়েছেন বেশ কয়েক জন শ্রমিক। আগুনে ঝলসে তাঁরা গুরুতর আহত।
এর পর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জানা গিয়েছে, প্রথমেই তাঁরা পুলিসে খবর দেননি। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর সেখান থেকেই পুলিসে খবর দেওয়া হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
মনি ভট্টাচার্য: উত্তরাখণ্ডে (Uttrakhand) ধস (Landslide) নতুন কিছু নয়। এবার ধসটা নামলো বদ্রীনাথের (Badrinath) রাস্তায়। বদ্রীনাথের পথে যোশীমঠের পাশে একটি গ্রাম হেলেঙ। সেখানে রাস্তায় ধসের জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বদ্রীনাথ যাত্রা বন্ধ ছিল। যদিও এই ধসে কোনও মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে খবর।
কেদারনাথ-বদ্রীনাথ মন্দির কমিটির সভাপতি অজেন্দ্র অজয় সিএন-ডিজিটালকে জানিয়েছেন, 'যোশীমঠের আগে হেলেঙ নামক জায়গায় ধস নেমেছিল। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।'
এ বিষয়ে চামোলী জেলার পুলিস সুপার প্রমেন্দ্র দোভাল সিএন-ডিজিটালকে বলেন, 'যোশীমঠের আগে হেলেঙ গ্রামে ধসের কারণে বৃহস্পতিবার দীর্ঘক্ষণ রাস্তা বন্ধ ছিল। উত্তরাখণ্ড পুলিসের অগ্রিম প্রস্তুতি থাকে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। বর্তমানে বদ্রীনাথ যাওয়ার রাস্তা খোলা আছে। পুণ্যার্থীদের কোনও অসুবিধা হবে না বদ্রীনাথ যেতে।'
মণি ভট্টাচার্য: উত্তরাখণ্ড (Uttrakhand) ভারতের এক টুকরো স্বর্গ। উত্তরাখন্ডে যাওয়ার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে, উত্তরাখণ্ডকে এককথায় দেব ভুমি (Dev Bhoomi) বলা হয়। বিশেষত উত্তরাখণ্ডের চারধাম (Char Dham) যাত্রা ভীষন পুণ্য একটি যাত্রা। এই যাত্রায় প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ পুণ্য অর্জনে যান। ২০২৩ মরশুমে অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই শুরু হতে চলেছে চারধাম যাত্রা। এই চার ধাম যাত্রায় গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ দর্শন করেন পুণ্যার্থীরা।
পাহাড় প্রেমীরা অনেকে এই চারধামকে ভালো ট্রেকের জন্য বেছে নেয়। শুধু পাহাড় প্রেমীরা নয় পুণ্যার্থীরাও এই পথে হেঁটে যাতায়াত করেন। এছাড়া এই পথে ঘোড়া এবং চপারের ব্যবস্থা রয়েছে। এই চারধামের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় ধাম হলো কেদার ও বদ্রী ধাম। প্রতিবছর এই দুই ধামে লক্ষাধিক যাত্রী ভিড় করে।
বছরের ৬ মাস বরফে ঢাকা থেকে এই দুই ধাম। বছরের প্রথম দিকের তিন মাস ও শেষের দিকে তিনমাস। এই মরশুমের কেদার ও বদ্রী যাত্রা নিয়ে ওই মন্দির কমিটির সভাপতি অজেন্দ্র অজয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সিএন ডিজিটালের প্রতিনিধি। তিনি কী কী জানালেন এবারের কেদার-বদ্রী যাত্রা নিয়ে, জেনে নিন।
অজেন্দ্র বাবু জানিয়েছেন, ২০২৩ মরশুমে ২২ এপ্রিল থেকে গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রীর দরজা খুলে দেওয়া হবে। কেদারনাথের দরজা খুলবে চলতি মাসের ২৫ তারিখ এবং বদ্রীনাথ খুলবে এপ্রিলের ২৭ তারিখ। আজ অর্থাৎ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে কেদারনাথ যাওয়ার কপ্টার বা চপার বুকিং। এবার কেদারনাথ যাওয়ার চপার বুকিং করা যাবে আইআরসিটিসি অ্যাপস থেকে। এছাড়া কিছু বেসরকারি সংস্থার চপার ব্যবস্থা থাকছে। তবে গত বছরের থেকে বেশি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ আগেরবার চপার ভেঙে দুর্ঘটনায় ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে যারা কেদার যাত্রায় যেতে চাইছেন তাঁরা এখনই চপার বুক করে ফেলুন আইআরসিটিসি থেকে।
এছাড়া অজেন্দ্র অজয় জানান, 'দর্শনার্থীরা এবার একটা অন্যতম ঘটনার সাক্ষী হবেন। কেদারনাথের গর্ভগৃহ সোনা দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে।' এছাড়া এবার যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গৌরিকুণ্ডে থাকবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। এছাড়া যারা পায়ে হেঁটে কেদার যাত্রা করবেন তাদের জন্য, ৫ কিমি অন্তর স্বাস্থ্যশিবির থাকবে। যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে অক্সিজেনের পরিষেবা দেওয়া হবে। এছাড়া কেদারনাথ মন্দিরের কাছে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা আরও উন্নত করা হয়েছে। এমনটাই জানান রুদ্রপ্রয়াগের পুলিস সুপার।
সূত্রের খবর, গতবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে চারধাম যাত্রায় প্রায় ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এই যাত্রায় মৃত্যু এড়াতে বয়স্কদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে উত্তরাখণ্ড ট্যুরিজমের ওয়েবসাইট থেকে সবিস্তার তথ্য ও পরিচয় দিয়ে চারধাম যাত্রার পাস রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।