বড়দিনে জোর ধাক্কা রাজ্যের। জামিন পেলেন চার চাকরিপ্রার্থী। নিয়োগের (Recruitment) দাবিতে প্রতিবাদ করায় ইন্টারভিউ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের হয়েছিল হাজতবাস। আদালতের রায়ে মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের অন্তর্বতী জামিন হওয়ার পর অবশেষে জামিন পেলেন পুরুষ চাকরিপ্রার্থীরাও। দু'হাজার টাকার বন্ডে শর্তশাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন তাঁরা। তবে সহযোদ্ধা হলেও সেদিন তাঁরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি বলে দাবি চাকরিপ্রার্থীদের।
নিয়োগের দাবিতে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন ইন্টারভিউ বঞ্চিত ২০১৪ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু প্রতিবাদ শুরু হতেই চাকরিপ্রার্থীদের দিকে ধেয়ে আসে পুলিসি বাধা। গ্রেফতার করা হয় ৫৯ জন চাকরিপ্রার্থীকে।তবে শনিবারই অন্তর্বর্তী জামিন পান ৫৫ জন মহিলা চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু জামিন মেলেনি পুরুষ চাকরিপ্রার্থীদের। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা ঝুলছিল তাঁদের উপর। এরপর আজ সোমবার তাঁদের জামিন দিল আলিপুর আদালত। মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় বিক্ষোভ দেখানোর ফলে তাঁদের ফের পুলিসি হেফাজতে আবেদন করে রাজ্য পুলিস। কিন্তু এদিন আন্দোলনকারীদের আইনজীবী জানান, 'কোনও ডেভেলপমেন্ট নেই। জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কোনও আবেদন পুলিসের নেই। তাই আমরা জামিন চাইছি।' এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন, 'বিভিন্ন স্কুলে শূন্য পদ পরে রয়েছে। ইন্টারভিউয়ের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়েছিল। মূলত এটা মহিলা চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলন ছিল। যে চারজন আছে জেলে। এদের দু'জনকে চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে এসেছে পুলিস। সিকিউরিটি ভাঙার কোনও বিষয় ছিল না। কিছুই রিকভারি হয়নি নতুন করে। আগের দিন ৫৫ জন জামিন পেয়েছেন। তাহলে এদের চার জনের কেন হবে না?' এরপরই তাঁদের ওই চার চাকরিপ্রার্থীর জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।
এবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ায় পৌঁছে গেলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের বিক্ষোভ ঘিরে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি কালীঘাটে। শুক্রবার চাকরির দাবিতে আন্দোলন এবার কার্যত পৌঁছে গেল মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায়। অন্তত আধঘণ্টা পুলিস-চাকরীপ্রার্থীর টানাপোড়েনে শীতের শহরের উত্তাপ বাড়ল। দ্রুত নিয়োগের দাবিতে প্রতিবাদ ইন্টারভিউ বঞ্চিত আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীদের। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরেই চাকরিপ্রার্থীরা অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করতেই পুলিস সক্রিয় হয়ে ওঠে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির নিচে অবস্থানে থাকা চাকরীপ্রার্থীদের টেনেহিঁচড়ে ভ্যানে তোলা হয়। এতেই পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে।
দীর্ঘ ৫৫৫ দিন ধরে অবস্থানে আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা। ইন্টারভিউতে পাশ করার পরেও এখনও নিয়োগ অধরা। দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনা নিয়ে মাতঙ্গিনী হাজরার পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। তাঁদের দাবি দ্রুত ও স্বচ্ছ নিয়োগ করতে হবে। এরই পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হোক। আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু নিয়োগ করা হচ্ছে না কেন? এই দাবিতেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরতেই এই বিক্ষোভ।
আবার বিক্ষোভস্থলে পুলিস বাধা দিলে চাকরিপ্রার্থীরা পুলিসের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরপরই চাকরিপ্রার্থীদের চ্যাংদোলা করে টেনে-হিঁচড়ে সরানো হয় রাস্তা থেকে, তোলা হয় প্রিজন ভ্যানে। পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী আহত হন। এরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েন তাঁরা।
পুজোর আগেই আপার প্রাইমারিতে (Upper Primary) নিয়োগের দাবিতে চাকরিপ্রার্থীদের (Job Seekers) আন্দোলনে উত্তপ্ত করুণাময়ী চত্বর। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন তাঁদের নিয়োগের দাবিতে। এদিনও কিছু ব্যতিক্রম হল না। বুধবার উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা পুজোর আগেই তাঁদের নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ-আন্দোলন করেন। কিন্তু এই বিক্ষোভের সময়ই পুলিসি বাধার মুখে পড়ে চাকরিপ্রার্থীরা। পুলিসের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয়। কার্যত তাঁদের টেনে-হিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। চাকরিপ্রার্থীদের হুঁশিয়ারি, পুজোর আগেই তাঁদের নিয়োগ করতে হবে। নইলে এই আন্দোলন আরও বৃহত্তর হবে। শুধুমাত্র করুণাময়ীতে নয়, কালীঘাটেও বিক্ষোভ দেখান চাকরিপ্রার্থীরা।
২০১৫ সালে আপার প্রাইমারির পরীক্ষা হলেও নিয়োগ এখনও অধরা। নিয়োগের দাবিতে করুণাময়ীতে প্রতিবাদে সরব চাকরির প্রার্থীরা। সূত্রের খবর, বুধবার উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা করুণাময়ী মেট্রো স্টেশন থেকে বের হতেই তাঁদের পুলিসি বাধার সম্মুখীন হতে হয়। পুলিসের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। কিছু চাকরিপ্রার্থীদের টেনে-হিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তাঁদের হাতে ঘট ও গঙ্গাজল নিয়ে এক অভিনব উপায়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছে।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সভা থেকে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও তাঁদের নিয়োগ হয়নি। দীর্ঘদিন তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভ করেও সুরাহা হয়নি। তাই তাঁদের হুঁশিয়ারি, পুজোর আগে নিয়োগ-কাউন্সিলিং-এর নোটিস দিতে হবে, নইলে এই আন্দোলন বৃহত্তর আকার নেবে। তবে এদিন তাঁদের পুলিসি বাধার সম্মুখীন হতে হলেও তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।
করুণাময়ীর পাশাপাশি এদিন কালীঘাটেও বিক্ষোভ দেখান আপার প্রাইমারির চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই পুলিসি বাধার মুখে পড়ে তাঁরা। কালীঘাট থানার পুলিসের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এর পর তাঁদেরও টেনে-হিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
নিয়োগের দাবিতে আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীদের (Upper Primary) বিক্ষোভে ধুন্ধুমার সল্টলেক করুণাময়ী (Karunamoyee) এলাকা। ২০১৪ সালের আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা উত্তীর্ন হয়েও ইন্টারভিউয়ে ডাক পায়নি। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে তাঁরা বঞ্চিত, কোনও নিয়োগ নেই। এই অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এসএসসি ভবন (SSC Bhawan) অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন প্রায় ৫০০ চাকরিপ্রার্থী। ঘোষিত এই কর্মসূচি নিরস্ত্র করতে করুণাময়ী (Saltlake) চত্বরে পুলিসি ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতোন। সেক্টর ফাইভ থেকে তাঁরা মিছিল করে আচার্য ভবনের সামনে আসতেই তাঁদের আটকায় পুলিসের ব্যারিকেড।
সেখানেই অবস্থানে বসে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা। পুলিস কার্যত বলপূর্বক তোলার চেষ্টা করলে ধুন্ধুমার কাণ্ড করুণাময়ী এলাকায়। যদিও পুলিসের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, যে এলাকায় তাঁরা অবস্থান করছেন, সেটা ১৪৪ ধারা কার্যকর। কিন্তু সেই ঘোষণায় কর্ণপাত করেননি বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। এতেই শুরু হয় ধরপাকড়। আন্দোলনকারীদের টেনে প্রিজন ভ্যানে তোলে পুলিস। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফাঁকা করে দেওয়া হয় এলাকা।
এমনকি অবস্থানে থাকা অনেক চাকরিপ্রার্থীকে পুলিসের তরফে মাইকিং করে সহযোগিতার আবেদন করা হয়। এদিকে, মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোনোর সময় কিছু চাকরিপ্রার্থীকে আটক করে পুলিস। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না পেয়ে তাঁরা এই অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। এমনটাই সংবাদ মাধ্যমের সামনে জানান ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের কাতর আর্তি, 'শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও পুলিস টেনে-হিঁচরে প্রিজন ভ্যানে তুলেছে। আমরা উচ্চশিক্ষিত, বিএড করা। সাদা খাতাও জমা দিইনি। আমরা কী চোর, দেখুন পুলিস কী ব্যবহার করছে।'
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। শুরু হল উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া (Primary teacher recruitment process)। এবার ৮ বছরের অপেক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হল আপার প্রাইমারিতে (upper primary)। ইন্টারভিউতে (Interview) বসার সুযোগ পেয়েছেন ১,৫৮৫ জন। শুক্রবার অর্থাৎ ২১ অক্টোবর থেকে আচার্য সদনে (Acharya Sadan) ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই ১২ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া শেষ হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১,৫৮৫ জনের ইন্টারভিউ শুরু হচ্ছে। মোট আটটি টেবিল রয়েছে। আটটি টেবিলে এই ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে ২০০ করে। ইন্টারভিউ হবে ৪ তারিখ পর্যন্ত। জানা যায়, সকাল ১০ টা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, প্রথমদিন ১১টা নাগাদ এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং চলেছে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে আপার প্রাইমারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। ২০১৫ সালের পরীক্ষা হয় ২০১৬ সালের রেজাল্ট বের হয়। ৬ বছর কেটে গেল এখনও কোনও নিয়োগ হয়নি। ২০২০ সালে একবার প্যানেল প্রকাশিত হয় দুর্নীতির দায় হাইকোর্ট সেই প্যানেল বাতিল করে। ২০২১ সালে একবার ইন্টারভিউ হয়, কিন্তু মেরিট লিস্টে নাম থাকায় যারা ইন্টারভিউতে ডাক পায়নি তাঁরা আবার হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রিভেন্স সেলে নির্দিষ্ট নথি জমা দেয়। এরপর ১৫৮৫ জনের আজ থেকে ইন্টারভিউ শুরু।
এদিকে, ২০১৪ টেট নট ইনক্লুডেড চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মাঝেই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রথমিক শিক্ষা পর্ষদের। আজ থেকেই ১১৭৬৫ শূন্যপদের জন্য আবেদন করতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিকেল ৪টে থেকে অনলাইন করা যাবে আবেদন। ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত করা যাবে আবেদন। সঙ্গেই জেলাভিত্তিক শূন্যপদের তালিকাও প্রকাশ করেছে পর্ষদ।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর (CISF) তত্ত্বাবধান থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) ডেটা রুমের দায়িত্ব হাতে পেয়ে নিয়োগের তৎপরতা শুরু। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের (Job Aspirants) তালিকা তৈরি করছে এসএসসি। চলতি সপ্তাহেই তা তুলে দেওয়া হবে শিক্ষা দফতরের (Education Department) হাতে। ইতিমধ্যেই পুরনো প্যানেলের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। ৬৮৬১টি শূন্যপদেরও অনুমোদন মিলেছে। এবার ডেটা রুম হাতে পাওয়ার পর নবম,দশম, একাদশ, দ্বাদশ, গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি-সহ একাধিক যে নিয়োগ আটকে, তাতে গতি আনতে চায় কমিশন।
স্কুলশিক্ষা দপ্তরে তালিকা পাঠানোর পর কোন স্কুলে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা ঠিক করা হবে। এদিকে, পুজোর আগে উচ্চ প্রাথমিক বা আপার প্রাইমারির বাকি আসনে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। ২০১৬ সালে ১৪,৩৩৯ জন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এখন ১৬০০ জনের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া বাকি।
এই প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে চায় কমিশন। আদালতের অনুমতি পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করবে কমিশন।