সৌমেন সুর: ঈশ্বরচন্দ্র যখন কলকাতা ছেড়ে বীরসিংহ গ্রামে যান, কারো বাড়িতে আদ্যশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হলে তাঁর ওপর নিমন্ত্রণের কবিতা লেখার ভার পড়ে। নিমন্ত্রণের আসা পণ্ডিত তাঁর সঙ্গে ব্যাকরণের বিচার করেন। বিচারকালে ঈশ্বর সংস্কৃত ভাষায় কথা বলেন। পণ্ডিতরা ঈশ্বরের পাণ্ডিত্য় দেখে অবাক হয়ে যান। কখনও কখনও সাহিত্য দর্পণের ব্যাখ্যা শুনে পণ্ডিতরা বলেন, 'এই বালক বড় হযে বাংলার এক অদ্বীতিয় লোক হবে।' ১৮৪১ সালের ৪ ডিসেম্বর কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজের সার্টিফিকেট পেলেন ঈশ্বর। সংস্কৃত কলেজে পড়ার সময়েই তাঁর নামের শেষে জুড়ে যায় একটা উপাধি। উপাধি বিদ্যাসাগর।
পরবর্তীকালে বিখ্যাত হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামে। মানুষের ছেলেবেলা তাঁর সমগ্র জীবনের ভিত তৈরি করে। মা বাবা এবং সামগ্রিক পরিবেশ এক শিশুর মনে চারিত্রিক দৃঢ়তা এনে দেয়। বিদ্যাসাগরের মা ভগবতী দেবীর পরোপকারী মন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পরের কষ্ট দেখলেই তিনি বিচলিত হয়ে উঠতেন। ঠাকুরদাসের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ পূর্ণতা পেয়েছিল ছেলে ইশ্বরচন্দ্রের মাধ্যমে। মা বাবার সাহয্যেই। ছোট্ট ঈশ্বর পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিলেন দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর। (সমাপ্ত) তথ্যঋন-দেবশ্রী ভট্টাচার্য
সৌমেন সুর: মানুষের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় হলো শৈশব। কোন পিছুটান নেই। শুধু খেলা, মজা আর আনন্দ। তবে সবার জীবন সমান নয়। কারো কারো জীবনে আনন্দের লেশমাত্র নেই। প্রখ্যাত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলা কেমন ছিল সেটাই আজ আলোচনা করবো। প্রথম পর্বের পর...
ঈশ্বর দেখতে ছোট্টখাট্টো। কিন্তু মাথাটি দেখতে তুলনায় বড়। সহপাঠীরা তাই ঠাট্টা করে বলে, 'যশুরে কৈ,কসুরে জৈ'। ঈশ্বর শুনে রেগে যান। যত বেশী রাগেন ততবেশী সবাই একই কথা বলতে থাকে। যশোর জেলার কই মাছের মুন্ডু নাকি অনেক বড় হয়, তাই এমন নাম। এত ঠাট্টা ইয়ারকি সত্ত্বেও ঈশ্বর যখন বৃত্তি পেত, তখন তার প্রথমেই মনে পড়তো গরীব বন্ধুদের কথা। প্রতিবছর ঈশ্বর বৃত্তির টাকা পেয়ে তাদের কাপড় কিনে দিত।
রোজ রাতে বাবার কাছে পড়া দিতে হয়। পড়ায় ভুল হলে রক্ষে নেই। লেখাপড়া ছাড়াও তার কাজের শেষ ছিল না। রোজ সকালে বাজার যেতে হতো। মাছ কাটতে হতো, তরকারিও কাটতে হতো। তারপর রান্না করতে হতো। খাওয়া হয়ে গেলে সবার বাসন মেজে তারপর কলেজ যেতেন। ঠাকুরদাসের উর্পাজন খুব একটা ভাল ছিল না। কোনমতে সংসার চলতো। রোজ দুবেলা ভাত ঠিকমতো জুটতো না। অনেকসময় নুন দিয়েও ভাত খেতে হতো তাকে।
কোনওদিন যদি মাছ জুটতো তাহলে সেটা পুরো খাওয়া হত না। অর্ধেক রেখে দেওয়া হত পরের দিনের জন্য। সংস্কৃত কলেজে ঈশ্বর পাঁচটাকা বৃত্তি পেতেন। বৃত্তির টাকা তিনি বাবার হাতে তুলে দিতেন। ঠাকুরদাস সেই টাকা নিয়ে বললেন, 'তোমার এই টাকায় জমি কিনবো। দেশে একটা টোল খুলবো। যারা লেখাপড়া শিখতে পারছে না, তাদের তুমি দেখবে'। শেষপর্যন্ত ঠাকুরদাস তার কথামতো কাজটা করেছিলেন। (চলবে)