আগে থেকে কোনও খবরও দেওয়া হয়নি। সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শনে হঠাৎই হাজির রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতালে হাজির হয়ে তাঁর একটাই কথা মনে হয়েছে, এটি চিকিৎসকের চেম্বার নাকি বাড়ির শোওয়ার ঘর?
দীর্ঘদিন ধরে পাটনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছিল। তাই মঙ্গলবার রাতে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব আচমকাই হাজির হন হাসপাতালে। সুপারের অফিসে গিয়ে দেখলেন, রোগী দেখার বদলে অফিসেই মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করছেন। হাসপাতালের যত্রতত্রে পড়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। রোগীরা শুয়ে রয়েছেন হাসপাতালের মেঝেতে। কুকুর, বিড়াল অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছেন বলেই সাংবাদিদের জানান নীতীশ কুমার মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী তেজস্বী।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা মন্ত্রীর কাছে হাসপাতালের ব্যবস্থা, অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার, চিকিৎসক-ওষুধ অমিল থাকার মতো নানা অভিযোগ জানান। মহিলারা জানান, হাসপাতালের শৌচাগার এতটাই নোংরা যে তাদের বাইরের পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। হাসপাতালের ফার্মেসিতে অধিকাংশ ওষুধই অমিল থাকে, তাই বাইরে থেকেই ওষুধ কিনতে হয়। পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে।
হাসপাতালগুলির বেহাল দশার কথা বলতে গিয়ে তেজস্বী বলেন, 'স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো হাসপাতালে আসেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে রাজ্যের আগের সরকার যে মিথ্যা দাবি করত, তা ধরা পড়ে গিয়েছে। আমাদের সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফিরিয়ে আনবে।' এমনকি তিনি কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ ওঠা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসূন গুপ্ত: সদ্য মহাজোটের সরকার গঠন হয়েছে বিহারে। আরজেডির নেতৃত্বে নীতিশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রিত্বে সরকার গঠন বাংলার পড়শি রাজ্যে। নীতিশ এবার তাঁর সরকারকে সমর্থন করছে, এমন সব দলের বিধায়কদের মন্ত্রিসভায় রাখতে চেয়েছিলেন। বামেদের ১৬ বিধায়ক অবশ্য বাইরে থেকে মহাজোটের সরকারকে সমর্থন করছে।
তবে বামেরা চাইছে শাসক জোটের সব দলের বিধায়করা সতর্ক হোক। সে প্রসঙ্গে লালুর দল অর্থাৎ আরজেডিকে সতর্ক করেছে তারা। বামেরা বলেছে, যে ভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি বিরোধী সরকারের উপর কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে চাপ তৈরি করা হচ্ছে, তাতে বিহারের উপরেও চাপ আসবে। বামেদের এই পরামর্শে সহমত হয়েছেন তেজস্বী যাদব। কারণ নীতীশের বর্তমান মন্ত্রিসভায় অন্তত দু'জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই দু'জন আবার আরজেডি বিধায়ক। বর্তমান বিহার মন্ত্রিসভায় আরজেডি ছাড়াও রয়েছে নীতীশের জনতা দল (ইউনাইটেড), নির্দল এবং জিতনরাম মাঝির হাম দল। এর মধ্যে জিতনরামের দলের সঙ্গে সারা ভারতে বিজেপির সম্পর্ক খুবই খারাপ। ফলে এদেরও সতর্ক করেছেন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব।
তেজস্বী কড়া বার্তা দিয়েছে দলের বিধায়কদের এবং দলের কর্মী নেতাদেরও। মূলত স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রাখার জন্য। তেজস্বী বুদ্ধিমান ছেলে, তিনি জানেন দুর্নীতিতে জড়িয়ে তাঁর বাবা লালুর দুর্দশার কথা। বর্তমানে দিল্লির এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তেজস্বীর আশংকা ফের নতুন করে তাঁর দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে, চব্বিশের ভোটের আগে বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে এই মুহূর্তে বিজেপির ব্যাডবুকে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। ফলে সতর্ক থাকতে হচ্ছে তাঁর দলকেও। তেজস্বী তাঁর দলের বিধায়কদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, রাজ্যের কোনও নাগরিকের প্রণাম নেওয়া চলবে না। হাত জোর করে বা সেলাম করে প্রণাম বা আদাব জানাতে হবে।
কোনও কাজ ফেলে রাখা যাবে না মন্ত্রীদের। সর্বোপরি এই মুহূর্তে ফাইল থেকে অন্য কাগজ দেখেশুনে সই করতে হবে। অর্থাৎ বার্তা অনেকটাই পশ্চিমবঙ্গের মতো। সতর্কবার্তার মধ্যে সবথেকে তাৎপর্য ভাবে তেজস্বী জানিয়েছেন, কেউ নতুন গাড়ি কিনতে পারবেন না বা নিতে পারবেন না উপঢৌকন নিতে পারবেন না।
পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অষ্টমবারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী (Bihar CM) হিসেবে শপথ নিলেন নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। আর তাঁর ডেপুটি হিসেবে শপথ নিলেন তেজস্বী যাদব (Tejaswi Yadav)। বুধবার দুপুরে রাজ ভবনে আধ ঘণ্টার অনুষ্ঠানে এই দু'জনকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল ফাগু চৌহান। মঙ্গলবারই আরজেডি, কংগ্রেস (RJD-Congress)-সহ অন্য দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার দাবি জানাতে রাজ ভবনে গিয়েছিলেন নীতীশ-তেজস্বী।
সেই সাক্ষাৎ শেষে বেড়িয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে নীতীশ কুমার দাবি করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে ১৬৪ বিধায়কের সমর্থন আছে। বুধবারই শপথ নেবে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। সেই ঘোষণা মোতাবেক এদিন দুপুর দুটো নাগাদ রাজ ভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রী এদিন শপথ নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, প্রথমবার ২০০০ সালে এনডিএ শরিক হিসেবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। লালুপ্রসাদ যাদবের দাপট কমিয়ে সেবার প্রথম যাদব পরিবারের বাইরে থেকে মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিল বিহার। তারপর ২০১৫ অবধি পরপর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন বিহারের এই কুর্মি নেতা।
যদিও ২০১৫-তে আরজেডি কংগ্রেসের সঙ্গে গড়া জোট সরকার মাত্র দুই বছর স্থায়ী হয়েছিল। সেই মহাজোট ভেঙে বেড়িয়ে ফের বিজেপির হাত ধরে নীতীশ। ২০১৭ সালে ফের একবার এনডিএ শরিক হিসেবে মাজপথেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। ২০২০-র বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েই লড়েন নীতীশ। যদিও রাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জেডিইউ।
তাও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতীশ কুমারকেও সমর্থন করে বিজেপি। কিন্তু দুই বছর বাদে ফের ডিগবাজি নীতীশের। এবার আবার মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অষ্টমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন তিনি।