উত্তর সিকিমের লোনক হ্রদে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যয়। তিস্তার করালগ্রাসে চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সিকিমে। কমপক্ষে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। অসমর্থিত সূত্রের খবর, এখনও নিখোঁজ ১০২ জন। বৃহস্পতিবার উদ্ধার হল সেনার ট্রাক। তিস্তার স্রোতে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে ট্রাকগুলি।
সিকিমের চুংথাম, ডিকচু, সিংতাম, রংপোর মতো একাধিক এলাকা গ্রাস করেছে তিস্তা। সিকিমের বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটে প্রায় ৩০০০ পর্যটক আটকে আছে। ২ বছর আগের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জিওমরফোলজি জার্নালের গবেষণা কিন্তু আগেই জানিয়েছিল, এমন বিপদসঙ্কুল স্থানে দাঁড়িয়ে আছে সিকিম।
২০২১ সালে জিওমরফোলজি জার্নালের একটি গবেষণা জানিয়েছিল, গত কয়েকবছর ধরে লোনক হ্রদ আকারে, আয়তনে বেড়ে যাচ্ছে। হিমবাহের পরিমাণ ও হিমবাহের গলনের প্রবাহে এই হ্রদ ভেঙে যেতে পারে। বুধবার ভোররাতে এই হ্রদের জলই ভেঙে তিস্তায় গিয়ে মেশে। এরপরই ফুলে ফেঁপে ওঠে।
ভয়াল রূপ ত্যাগ করে শান্ত হচ্ছে তিস্তা। ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। ভয় নেই আর আশ্বস্ত করছেন মন্ত্রী, তিস্তা পারের বাসিন্দারাও একটু স্বস্তিতে। তবু খচখচ করছে ভয়ের কাঁটা। উত্তাল প্রকৃতি নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে গোটা মানবজাতিকে। বুধবার সব শেষ হওয়ার ভয়টাকে খুব কাছ অনুভব করেছে বঙ্গের উত্তর। সিকিমের লোনক হ্রদে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে তিস্তার উথাল পাথাল স্রোতে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় ভেসে এসেছিল ৩ টি মৃতদেহ। গজলডোবার উঠতি পর্যটন কেন্দ্র রাজ্য সরকারের স্বপ্নের প্রকল্প ভোরের আলো নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই। বৃহস্পতিবার সেই গজলডোবার হাওয়া মহলেই বিশেষ বৈঠকে বসলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী।
শুধু সেচমন্ত্রী নয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়, প্রতিমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল নেত্রী মহুয়া গোপ সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের নজর এখন শুধুই তিস্তার মাতাল স্রোতে। ঘাড়ের ওপর ৪৮ ঘণ্টার অশনি সংকেত। যদি আবার বাড়ে জল? তবে বৃহস্পতিবার একটু হলেও ভরসা দিচ্ছে তিস্তা। বুধবারের ভয়াল রূপ ত্যাগ করে স্রোতস্বিনী এখন ধীর প্রবাহিনী। ভয়ের কাঁটা খচখচ করছেই। খামখেয়ালি প্রকৃতির কখন আবার কি মর্জি হয়!