ফেঁপে ওঠা তিস্তার জলের তোড়ে ভেসে এল মর্টার শেল। ভেসে আসা ওই সেলের বিস্ফোরণেই মৃত্যু হল একজনের। আহত ছয় জন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সকলকেই জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলার চাঁপাডাঙ্গায়। ঘটনার তদন্তে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জলের তোড়ে একাধিক জিনিস ভেসে এসেছে সমতলের দিকে। সেরকমই হড়পা বানে সেনা ছাউনির মর্টার শেল ভেসে আসে। জানা গিয়েছে, স্থানীয় এক যুবক মাছ ধরতে গিয়েছিলেন নদীতে। সেই সময় মর্টার শেলটি কুড়িয়ে পান তিনি। বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। পরিষ্কার করে খেলা করার সময় আচমকাই বিস্ফোরণ হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তবিবর রহমান নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় মৃত্যু হয় একজনের। এই ঘটনায় আইনুর আলম, লাকু আলম, তসমিরা বেগম, রমজান আলি, লতিফা খাতুন, গোমের আলি এই ছয় জন গুরুতর জখম হয়েছেন।
উত্তর সিকিমের লোনক হ্রদে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যয়। তিস্তার করালগ্রাসে চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সিকিমে। কমপক্ষে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। অসমর্থিত সূত্রের খবর, এখনও নিখোঁজ ১০২ জন। বৃহস্পতিবার উদ্ধার হল সেনার ট্রাক। তিস্তার স্রোতে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে ট্রাকগুলি।
সিকিমের চুংথাম, ডিকচু, সিংতাম, রংপোর মতো একাধিক এলাকা গ্রাস করেছে তিস্তা। সিকিমের বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটে প্রায় ৩০০০ পর্যটক আটকে আছে। ২ বছর আগের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জিওমরফোলজি জার্নালের গবেষণা কিন্তু আগেই জানিয়েছিল, এমন বিপদসঙ্কুল স্থানে দাঁড়িয়ে আছে সিকিম।
২০২১ সালে জিওমরফোলজি জার্নালের একটি গবেষণা জানিয়েছিল, গত কয়েকবছর ধরে লোনক হ্রদ আকারে, আয়তনে বেড়ে যাচ্ছে। হিমবাহের পরিমাণ ও হিমবাহের গলনের প্রবাহে এই হ্রদ ভেঙে যেতে পারে। বুধবার ভোররাতে এই হ্রদের জলই ভেঙে তিস্তায় গিয়ে মেশে। এরপরই ফুলে ফেঁপে ওঠে।
ভয়াল রূপ ত্যাগ করে শান্ত হচ্ছে তিস্তা। ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। ভয় নেই আর আশ্বস্ত করছেন মন্ত্রী, তিস্তা পারের বাসিন্দারাও একটু স্বস্তিতে। তবু খচখচ করছে ভয়ের কাঁটা। উত্তাল প্রকৃতি নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে গোটা মানবজাতিকে। বুধবার সব শেষ হওয়ার ভয়টাকে খুব কাছ অনুভব করেছে বঙ্গের উত্তর। সিকিমের লোনক হ্রদে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে তিস্তার উথাল পাথাল স্রোতে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় ভেসে এসেছিল ৩ টি মৃতদেহ। গজলডোবার উঠতি পর্যটন কেন্দ্র রাজ্য সরকারের স্বপ্নের প্রকল্প ভোরের আলো নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই। বৃহস্পতিবার সেই গজলডোবার হাওয়া মহলেই বিশেষ বৈঠকে বসলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী।
শুধু সেচমন্ত্রী নয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়, প্রতিমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল নেত্রী মহুয়া গোপ সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের নজর এখন শুধুই তিস্তার মাতাল স্রোতে। ঘাড়ের ওপর ৪৮ ঘণ্টার অশনি সংকেত। যদি আবার বাড়ে জল? তবে বৃহস্পতিবার একটু হলেও ভরসা দিচ্ছে তিস্তা। বুধবারের ভয়াল রূপ ত্যাগ করে স্রোতস্বিনী এখন ধীর প্রবাহিনী। ভয়ের কাঁটা খচখচ করছেই। খামখেয়ালি প্রকৃতির কখন আবার কি মর্জি হয়!
দোলা সেন (সাংসদ, রাজ্যসভা): মঙ্গলবার রাতেই অতি তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলাম দিল্লি থেকে। ১০০ দিনের কাজের ও রাজ্যের টাকার দাবি নিয়ে আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমাদের দিল্লি সফর ছিল এবং বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েও কয়েক হাজার শ্রমজীবীদের নিয়ে আমরা দিল্লি গিয়েছিলাম। দুটি দিন ছিল আমাদের প্রতিবাদের। রাজঘাটে গান্ধী জয়ন্তীতে যেমন বাঁধা পেলাম তেমনই মঙ্গলবার মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের দফতরেও পেলাম বাঁধা। দেখাই করলেন না মন্ত্রী। উপমন্ত্রী আবার জানালেন যে মাত্র ৫ জনের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। বাধ্য হয়েই আমরা অবস্থান শুরু করি কিন্তু সময় যেতে না যেতেই আমাদের টেনে হিচঁড়ে পুলিসের গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক সরকারি কর্মকান্ডের শিকার হতে হলো। কাজেই আমরা ঠিক করেছি ৫ অক্টোবর রাজভবন অভিযান করবো লক্ষাধিক অবহেলিত শ্রমিক এবং কর্মীদের নিয়ে কিন্তু এরই মাঝে উত্তবঙ্গ থেকে বুধবার সকালে এলো আর এক ভয়ঙ্কর খবর।
উত্তর সিকিমের লনক হ্রদে মেঘভাঙা বৃষ্টির তোড়ে শান্ত তিস্তা নদী ভয়ঙ্করী হয়ে দুকূল ঝেঁপে ছুটেছে জলপাইগুড়ির দিকে অর্থাৎ ডুয়ার্স তরাইএর দিকে। শুনলাম নদীর দু'কূলে যত জায়গা আছে সবই ভেসে যাচ্ছে জলের স্রোতে। তিস্তা স্রোতে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিশাল অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। জানতে পারছি সিকিমের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভারত। জল বাড়ছে ১৫ থেকে ২০ ফুট। জলপাইগুড়িতে জল এতটাই বেড়েছে যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে বন্যার পরিস্থিতে দাঁড়িয়েছে। সব থেকে চিন্তার বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে জলপাইগুড়ির গজলডোবার ব্যারেজ থেকে প্রায় ৭০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, যা কিনা এ বছরের সর্বোচ্চ কাজেই সমস্ত চাপ এসে পড়ছে জলপাইগুড়িতে। খবর পেলাম সিকিম অঞ্চলে সেনা ছাউনির ৪১টি গাড়ি ভেসে গিয়েছে এবং খোঁজ নেই ২১ জওয়ানের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশংকার বার্তা দিয়ে অবিলম্বে সচিব মহলের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রী সহ অফিসারদের উত্তরবঙ্গের দিকে পাঠাচ্ছেন। জানি না উত্তরবঙ্গের মানুষগুলির কি অবস্থা। যারা সিকিমে বেড়াতে গেছেন, তাদেরও কি অবস্থা! দার্জিলিং-এর নিচু জমি থেকে মানুষদের উঠিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এমত অবস্থায় আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাই না কোনও দিনও। (অনুলিখন-প্রসূন গুপ্ত)