সৌমেন সুর: আমাদের জীবনে এমন কতকগুলো দিন আসে যেগুলো নতুন ভাবে আমাদের উজ্জীবিত করে। অনুপ্রাণিত করে। সেদিন মনে হয় আমাদের অন্তরের শুদ্ধিকরণ হল। জাগরণ হল শ্রদ্ধাবোধের। মানুষ গড়ার কারিগরদের প্রতি সেদিন আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন। ৫ই সেপ্টেম্বর এমনই একটা মহান দিন। মহান সাধক ও মহান শিক্ষক সর্বোপরি ড. রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিবস উপলক্ষে ৫ই সেপ্টেম্বর 'শিক্ষক দিবস' রূপে দেশ ও জাতির কাছে চিহ্নিত হয়। শিক্ষক জাতির মেরুদন্ড। তারা সমাজের প্রণম্য। একমাত্র তারাই শিক্ষার্থীর মনের অন্ধকার দূর করে জ্বালিয়ে দেন জ্ঞানের প্রদীপ। শিক্ষকরাই দেশ ও জাতির অগ্রগতির উৎস। সমস্ত বিভাগীয় শিক্ষকদের কাছে ৫ই সেপ্টেম্বর তারিখটি উজ্জ্বলতার অনন্য নির্যাস।
১৮৮৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন অনন্য প্রতি ভাই প্রদীপ্ত সাধক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। ১৯০৫ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে এম. এ। এরপর মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু। তারপর মহীশূর কলেজে অধ্যাপনা। এই মহিশুর এই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯১৮ সালে। সাক্ষাতের আগেই তার লেখা 'দ্য ফিলোজফি অব রবীন্দ্রনাথ টেগোর' গ্রন্থের প্রকাশ। ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। টানা কুড়ি বছর এই বিভাগে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি হন।
কথা হলো শিক্ষক হলেন দেশের অন্যতম প্রধান কর্ণধার। রাধাকৃষ্ণণ ছিলেন একজন আদর্শনিষ্ঠ শিক্ষক, বিদ্যান, বাগ্মীও জ্ঞান তপস্বী। তার ওপর রাষ্ট্রপ্রধান। তাই ৫ই সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন উপলক্ষে 'শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। এই পবিত্র দিনের শিক্ষকরাই যে জাতির মেরুদন্ড তা শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়। শিক্ষক শুধু শিক্ষাই দেন না। তিনি শিক্ষার্থীর কোমল মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেন। চিত্তের প্রসার ঘটান। সাধারণ মানুষ শিক্ষক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাবান হোক। এটাই শিক্ষক দিবসের প্রাণের কথা। আবার এই দিনের শিক্ষক সমাজ তাদের ভূমিকার কথা স্মরণ করুক, এটাই শিক্ষক দিবসের মহৎ বার্তা।
শিক্ষক দিবসে (Teacher's Day) এবার লাগলো রাজনৈতিক রং। ঝালদা (Jhalda) পঞ্চায়েত সমিতি বনাম ঝালদা ১ নং ব্লক সভাপতি আয়োজিত শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান। প্রকট তৃণমূলের ২ গোষ্ঠীর লড়াই। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও নারাজ।
জানা যায়, পুরুলিয়ায় (Purulia) তৃণমূলের ব্লক সভাপতির নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। এরপর থেকেই ঝালদা শহর ও গ্রামের তৃণমূল নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ জমছিল। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে সোমবার শিক্ষক দিবসের মঞ্চে, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রতিবছর ঝালদা এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি আয়োজিত শিক্ষক দিবস অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবার তৃণমূলের সমস্ত নেতা কর্মীরা সমবেত হয়ে এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও ঝালদা বাঁধাঘাটের কাছে একটি মাঠে পঞ্চায়েত সমিতি তাঁদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অন্যদিকে একই সময় শহর ঝালদার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি হলে ঝালদা ১ নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জয়প্রকাশ মাহাতো এবছর আলাদাভাবে শিক্ষক দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেন। ফলে সমস্যায় পড়ে ব্লকের সাধারণ তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। আড়াআড়িভাবে দুভাগে ভাগ হয়ে যেতে বাধ্য হন কর্মীরা। আর এরপরই ঘটে বিপত্তি।
এদিন ঝালদা ১ নম্বর ব্লক তৃণমূলের সহ সভাপতি বিপ্রদাস মাহাতো মঞ্চ থেকে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, "নবাগত কিছু তৃণমূল নেতা দলে এসে দলকে ভাঙার খেলায় মেতেছে। আর তাদেরকে মদত যোগাচ্ছে দলেরই কিছু নেতা। ঝালদা পঞ্চায়েত সমিতিকে দলেরই একাংশ ভেঙে দেওয়ার খেলায় মেতেছিল। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টায় সমিতি ভাঙতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।"
আবার ওই মঞ্চ থেকেই জেলা যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আক্ষেপের সুরে বলেন, "তৃণমূল ক্ষমতায় আশার আগে থেকে সিপিএম-এর হাতে মার খেয়ে দল করার পরও এখন নবাগত কিছু তৃণমূল নেতা তাঁদের তৃণমূলী বলে মনেই করে না।"
এই বিষয়ে বাগমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো কি বলছেন? তিনি বলেন, "জেলা নেতৃত্বের নির্দেশে ব্লক সভাপতি শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান ডেকেছে, তাই উপস্থিত হয়েছি।"
পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সোমেন বেলথরিয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, "পঞ্চায়েত সমিতি সরকারি অনুষ্ঠান করতে পারে। তবে ব্লক স্তরে সবাইকে নিয়ে অনুষ্ঠান করার নির্দেশ রয়েছে। এছাড়া, দল বিরোধী কোনও বক্তব্য কেউ দিলে দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। একইসঙ্গে, খুব শীঘ্রই দলের সমস্ত পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস তাঁর।
কিন্তু, আশ্বাস দিলেও জল্পনা থামছে না। প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষক দিবস পালন নিয়ে আমরা-ওরা মনোভাব পোষণ করছে কেন শাসকদলের নেতারা? আর কেনই বা রাজনৈতিক আঁকচা আঁকচির জন্য শিক্ষক দিবসের মঞ্চকে বেঁছে নেওয়া হল?
শিক্ষক দিবসের (Teachers Day) অনুষ্ঠানে দুর্নীতি প্রসঙ্গে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। তিনি বলেন, 'হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না। কে কতটা লোভী হবেন তা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। ব্যক্তি মানুষের উপর সততা নির্ভর করে। কিন্তু বাম আমলের কোনও কাগজ নেই। কোনও ফাইল আমরা কিছু পাইনি। আমাদের আমলে কাগজ আছে তাই ভুল ধরা পড়ে। একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। আগামি দিনে ৮৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হবে। আমরা কারও চাকরি খাইনি। যারা সুবিচার পায়নি আমাদের আমলে পাবেন।'
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে তিনি জানান, আমরা নিয়োগ করতে চাইছি, কিন্তু সময় সাপেক্ষ। শুধু একের পর এক জনস্বার্থ মামলা। সঙ্গ দোষে কেউ কেউ বিপথে যান, তার জন্য সবাইকে খারাপ বলা ঠিক নয়। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে পুরো ক্ষমতা নেই। সঙ্গদোষে ভালো খারাপ হয়ে যায়। পয়সা আজ আছে কাল ফুরোবে, তাই চরিত্র গঠন করুন। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষারত্ন প্রদান অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি শিক্ষক দিবস অনুষ্ঠানে চরিত্র গঠনের বার্তা দেন তিনি।
তাঁর দাবি, কয়েকজন ছেলেমেয়ে রাস্তায় বসে ছিল, আমি বলেছিলাম তাঁদেরটা করে দিন। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন ওদের নাম্বার পারমিট করছে না। তারপরেও আমি বলেছিলাম দিন একটু করে দিন। যেহেতু আমার দয়া-মায়া বেশি। যে কারণে গালাগাল খাই বেশি।'