মণি ভট্টাচার্যঃ পাহাড়ে জিটিএ-র শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে শিক্ষা দফতর। উত্তর বিধাননগর থানায় এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জিটিএ-র স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এবার সিএন-এর হাতে এল জিটিএ-তে নিয়োগ পাওয়া ৩১৩ জন অস্থায়ী শিক্ষককে স্থায়ীকরণের তালিকা। উল্লেখ্য, ৩১৩ জন অস্থায়ী শিক্ষককে আপার প্রাইমারি ও ১২১ জন শিক্ষককে প্রাইমারিতে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ প্রকাশ্যে।
আরও ভয়ানক অভিযোগ, এই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির কথা জানত সিআইডি, স্টেট ভিজিল্যান্স কমিশন সবাই। ২০২২ সালে জিটিএ-তে শিক্ষক নিয়োগে বেনিয়ম নিয়ে সুমন গুরুং নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে শিক্ষা দফতর। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করে ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম। গোটা ঘটনার তদন্তের নামে একটি রিপোর্ট শিক্ষা দফতরকে জমা করে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম।
ওই কমিটি ২০২৩ সালে অক্টোবর মাসে একটি রিপোর্টের মাধ্যমে শিক্ষা দফতরকে জানায় জিটিএ-র স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের স্থায়ীকরণে বেনিয়ম হয়েছে। তাতে শিক্ষা দফতরের বেশ কিছু আধিকারিক সহ কিছু নেতৃত্বরা জড়িত বলে জানায় ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।
এছাড়া চলতি বছর জানুয়ারি মাসে জিটিএতে ৩১৩ জন অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে একটি চিঠি পৌঁছয় শিক্ষা দফতরে। শিক্ষা দফতর সেই চিঠি ডিআইজি, সিআইডিকেও পাঠায়। এমনকি শিক্ষা দফতর এই চিঠি ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য ভিজিলেন্স কমিশনকেও পাঠায়। সবকিছু জেনেও চুপ ছিল রাজ্য সিআইডি এবং রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশন? কেন এই দুর্নীতির কথা জেনেও চুপ ছিল রাজ্য! উঠছে প্রশ্ন।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের তৎপর ইডি। শুক্রবার সকালে থেকে কলকাতায় চলছে ইডির ম্য়ারাথন তল্লাশি। লেকটাউন সহ ৫ জায়গায় চলছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তল্লাশি। জানা গিয়েছে, এদিন চেতলায় বিশ্বরূপ বসু নামক এক ব্য়বসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় ইডি। পরিবহন ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত তিনি। সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার 'মিডলম্য়ান' অর্থাৎ প্রসন্ন রায় ঘনিষ্ঠ এই বিশ্বরূপ বসু।
ইডি সূত্রে খবর, এদিন চেতলার ১৭৮ নম্বর পিয়ারী মোহন রায় রোডের বাড়িতে ছিলেন না বিশ্বরুপ বসু। সেখানে তাঁর দাদাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্য়মে জানা যায়, কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন বিশ্বরূপ বসু। অন্যদিকে চেতলা লকগেটের কাছে বিশ্বরূপ বসুর আরেকটি ফ্ল্যাট পাওয়া গিয়েছে। যদিও সেই ফ্ল্যাটটি তালা বন্ধ অবস্থায় ছিল। সেখানেও তাঁর বেশ কয়েকজন আত্মীয়কে পাওয়া গিয়েছে। তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি আধিকারিকেরা। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর প্রসন্ন কুমার-এর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিশ্বরূপ বসুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন ইডি আধিকারিকরা।
এরপর প্রসন্ন কুমার রায়ের সূত্র ধরে এস কে ঝুনঝুনওয়ালা ওরফে সত্যেন্দ্র ঝুনঝুনওয়ালার সন্ধান পান ইডি আধিকারিকেরা। এদিন সকালে ইডি আধিকারিকেরা তাঁর লেকটাউন বিরাটি অঞ্চলের বাড়িতে পৌঁছে যায়। সেখানে তাঁকে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাঁকে নিয়ে তাঁর ভাই বীরেন্দ্র ঝুনঝুনওয়ালার বাড়ি এয়ারপোর্ট থানা এলাকার বিরাটি ৪ নম্বর মহাজাতি অঞ্চলের গৌরীপুর রোডের বাড়িতে যান ইডি আধিকারিকরা। সকাল ন'টা থেকে সেখানে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি আধিকারিকেরা।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে ফের গ্রেফতার ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়। সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়ে তাঁকে। এর আগে এই একই মামলায় সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান ‘নিয়োগ দুর্নীতির অন্য়তম মিডলম্যান’।
জানা গিয়েছে, সোমবার প্রসন্ন রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য় ইডি দফতরে ডাকা হয়েছিল। সেখানে তাঁকে দিন-রাত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপর সোমবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, এই প্রসন্ন রায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত জানুয়ারি মাসে প্রসন্ন রায়ের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। প্রসন্ন রায়ের নিউটাউনের অফিস থেকে একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছিল বলে ইডি সূত্রে খবর। সেই নথিপত্রের ভিত্তিতে প্রসন্ন রায়কে ইডি দফতরে তলব করা হয়েছিল। সেই মত সোমবার ইডি দফতর যান তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে প্রসন্ন রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাঁকে ইডির স্পেশাল কোর্টে পেশ করা হবে বলে সূত্রের খবর।
এবার রাজ্যে ২০১৬ সালের SLST- তে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর। পাশাপাশি ২০১৬-র RLST-তে চাকরি পাওয়া গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-তে যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের তালিকাও প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দফতরের তরফে। এই বিষয়ে প্রতিটি জেলার ডিআইকে বিজ্ঞপ্তি পাঠাল SSC। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে প্রতিটি প্রধান শিক্ষকের কাছে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে, তাঁদের স্কুলে কতজন ২০১৬-তে পাওয়া চাকুরিরত রয়েছেন তার তালিকা প্রস্তুত করতে। পাশাপাশি যাঁরা স্কুলে থাকবেন না, তাঁদের বাড়িতেই পাঠাতে হবে এই বিজ্ঞপ্তি, এমনটাই নির্দেশ শিক্ষা দফতরের।
৯ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে, ২০১৬-তে চাকরি পাওয়া শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীর তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য শিক্ষা দফতর। এছাড়াও সোমবার অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক প্রধান শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট SI অফিস থেকে অন্যান্য নথি-সহ শিক্ষা দফতর দ্বারা জারি করা নোটিশ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি স্কুল এবং সংশ্লিষ্ট অফিসকে তাদের নোটিস বোর্ডে ওই 'পাবলিক নোটিস' প্রদর্শন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ওই দিনই সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের অন্যান্য নথির সাথে নোটিশ প্রদান করবেন প্রধান শিক্ষক, এমনটাই নিদের্শ রাজ্য শিক্ষা দফতরের। পাশাপাশি ওই সংশ্লিষ্ট কর্মচারী বা শিক্ষককে ই-মেলও করা হবে এবং প্রমাণও রাখা হবে ওই বিজ্ঞপ্তির, এমনটাই সূত্রের খবর। সবশেষে আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে ফরওয়ার্ডিং লেটার-সহ ওই বিজ্ঞপ্তি পরিষেবার প্রতিবেদন জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট এসআই অফিসে। তবে এক্ষেত্রে ২০১৬-র SLST এবং RLST-তে চাকরি পাওয়া ব্যক্তির মধ্যে কেউ পদত্যাগ করে থাকলে বা কারও মৃত্যু হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে তাঁদের ওই বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর জন্য বিবেচনা করা হবে না বলেই সূত্রের খবর।
তবে এই তালিকা প্রকাশের বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফে।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে বৃহস্পতিবার সকাল সকাল ইডির হানা শহরে। ইডি আধিকারিকরা অভিযান চালান কাশিপুর থানা এলাকার কাশিনাথ দত্ত রোডে প্রাক্তন শিক্ষকের বাড়িতে। জানা গিয়েছে, বালুরঘাটের প্রাক্তন শিক্ষক শুভ্রাংশ মৈত্রের বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে ইডি আধিকারিকরা পৌঁছে যান সকাল নয়টা নাগাদ।
মূলত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে প্রাক্তন এই শিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছয় ইডি আধিকারিকরা। তবে বছর খানেক আগেই প্রায়ত হয়েছেন শুভ্রাংশ মৈত্র। কাশিপুরের বাড়িতে শুভ্রাংশ বাবুর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা থাকেন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে শুভ্রাংশ বাবু কোনওভাবে যুক্ত কিনা তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকরা। পাশাপাশি বিভিন্ন নথিও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।
শাহ সফরের পরের দিনই সক্রিয় সিবিআই। সূত্রের খবর, রাজ্য জুড়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় সিবিআই তল্লাশি শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সল্টলেক, মুর্শিদাবাদ, কলকাতার কিছু জায়গায় তৃণমূল কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ীর বাড়িতে সিবিআই হানা দেয়। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সকাল থেকেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাসগুপ্তের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি শুরু হয়েছে। ওদিকে ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়িতে বৃহস্পতিবার হানা দিল সিবিআই আধিকারিকরা। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত মানিক ঘনিষ্ঠ জাফিকুল জড়িয়ে আছেন কি না তার তদন্তেই এদিন সকালে ডোমকলে আসেন তারা। এর আগে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
গতকাল অর্থাৎ বুধবার ধর্মতলার সভা থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহ দুর্নীতি নিয়ে মমতা ও তৃণমূলকে টার্গেট করেন। তারপর দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজ্যজুড়ে বহু যায়গায় সিবিআই হানা শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, ডোমকলের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদেও এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে সিবিআই হানা দিয়েছে। বড়ঞায় বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের গ্ৰেফতারের পর এবার ফের সিবিআই হানা বড়ঞায়, বড়ঞা থানার কুলি মোড়ের বাসিন্দা ঝান্টু সেখ পেশায় ব্যবসায়ী তার বাড়িতে বৃহস্পতিবার সকাল সকাল কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ানদের নিয়ে তদন্তকারী সংস্থা হানা দেয়। জানা গেছে এই ঝানটু শেখের বেশ কিছু বেসরকারি কলেজ ও বিভিন্ন জায়গায় সম্পত্তি রয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকেরা ঝান্টু শেখের বাড়িতে পৌঁছেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
ওদিকে পাটুলি, সল্টলেকে তৃণমূল কাউন্সিলরদের বাড়িতে হানা সিবিআইয়ের। পাটুলিতে নিয়োগ দুর্নীতির মূল মাথা পার্থ ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাসগুপের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। ওদিকে বিধাননগর পৌরনিগমের মেয়র পরিষদ সদস্য ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতে সিবিআই হানা। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই এর এই অভিযান বলে সূত্র মারফত খবর।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রথম গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার আরও এক। ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থা এস বসু রায় এন্ড কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত কৌশিক মাজিকে গ্রেফতার করল সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, মঙ্গলবার কৌশিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল। সেসময় তাঁর বয়ানে অসংগতি পাওয়ায় গ্রেফতার করে সিবিআই। আদালতেও তাঁকে পেশ করা হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার ওএমআর শিট বিকৃতিকাণ্ডে এস বসু রায় এন্ড কোম্পানির কর্মী পার্থ সেনকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
পুজোতে কোথায় থাকবেন তিনি ? জেলে নাকি জেলের বাইরে। বুধবার তার সিদ্ধান্ত হল না। বরং আরও একমাস পর এই ব্যাপারে শুনানি হবে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, আরও একটা পুজো হয়তো জেলেই কাটাতে চলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
জামিনের আবেদন চেয়ে এদিন হাই কোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। বিচারপতির এজালাসে নাকি মামলাও উঠেছিল। কিন্তু বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ তা ৯ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছেন।
হিসাব বলছে, ১৯ তারিখ থেকে পুজো শুরু। তার আগে জামি চেয়ে এদিন হাই কোর্টে গিয়েছিলেন পার্থর আইনজীবীরা। কারণ, এর আগে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাস থেকেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেয়েছেন আর এক অভিযুক্ত মানিক ভট্টচার্যের স্ত্রী। যদিও পার্থর ক্ষেত্রে তা কাজে লাগলো না। ইতিমধ্যেই ১৩ মাস জেল খাটা হয়ে গিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গত বছরের জুলাই মাসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পার্থর দাবি, তাঁর সঙ্গে দুর্নীতির যোগ রয়েছে, তা এখনও প্রমাণ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তাঁকে মানসিক ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। যদিও শোভনকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
দুদিন ধরে নিখোঁজ থাকলেও ইডির (ED) তলবে হাজির তৃণমূল (TMC) যুব নেত্রী সায়নী ঘোষ (Sayani Ghosh)। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে আজ অর্থাৎ শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হতে বলা হয় তৃণমূল যুব নেত্রী সায়নী ঘোষকে। সেই মোতাবেক আজ অর্থাৎ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার সময় সিজিও কমপ্লেক্সে এসে পৌঁছলেন তিনি। সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'ইডিকে ১০০ শতাংশ সহায়তা করব।'
সূত্রের খবর, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতেই সায়নী ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য চার পাতার প্রশ্নমালা তৈরি করেছিল ইডি। সেই মোতাবেক সায়নীর ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আইটি রিটার্ন কপি সহ সায়নীকে হাজির হতে বলা হয়েছিল বলে খবর, সূত্রের আরও খবর, সায়নীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দুই জন অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর পদমর্যাদার ইডি কর্তা সহ আরও অনেকে থাকতে পারেন।
ওদিকে বেলা সাড়ে ১১ টার মধ্যে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দিকে আঙ্গুল তোলেন সায়নী।ঘোষ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি প্রচারে ছিলাম, ৪৮ ঘণ্টার নোটিশে ডাকা হয়েছে আমাকে, আমি সশরীরে হাজির হয়েছি। এবং আমি তদন্তে ইডিকে একশো শতাংশ সহযোগিতা করব।'
প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর (Paresh Adhikary) মেয়েকে সরিয়ে সরকারি স্কুলে চাকরি পেয়েছেন ববিতা সরকার (Babita Sarkar)। হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে অঙ্কিতা অধিকারী এযাবৎকাল পাওয়া বেতন তুলে দিয়েছে ববিতাকে। এবার ববিতার নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তড়িঘড়ি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ববিতা সরকার, পিছিয়ে নেই তাঁর নিয়োগ অবৈধ দাবি করা অনামিকা রায়। ববিতা যে চাকরি করছেন, সেই চাকরির দাবিদার অনামিকা, এই দাবিতে হাইকোর্টে গিয়েছেন তিনিও।
দু'পক্ষের দায়ের এই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি আদালত। তবে বেতন বাবদ পাওয়া যে টাকা, ববিতাকে তুলে দিয়েছে অঙ্কিতা, সেই ববিতাকে আলাদা সরিয়ে রাখতে নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। প্রয়োজনে সেই টাকা কলকাতা হাইকোর্টের রেজিষ্টার জেনারেলের কাছে জমা রাখতে হবে। এহেন নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী নয় জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সেদিন হলফনামা আকারে অবস্থান জানাতে হবে ববিতা সরকারকে।
আদালতে পরেশ কন্যার চাকরির অন্যতম দাবিদার অনামিকা রায়ের আবেদন, 'ববিতা সরকার ৩১ পেলেও ৩৩ দেখিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। আদালতের কাছে সেই নম্বর বাড়ানোর প্রসঙ্গ লুকনো। এদিকে কোর্ট নির্দেশে চাকরি পেয়েছেন ববিতা। এখন তাঁকে সেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমাকে সেই চাকরি দেওয়া হোক।'
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ববিতার আইনজীবী ফিরদৌস শামীম জানান, এটা তৈরি করা গল্প। ববিতা যখন চাকরি পাওয়ার আবেদন করে তখন উনি নিজের নম্বরের কথা জানায়নি আদালতকে। এখন জানাচ্ছেন, ববিতার চাকরি পাওয়ার মামলায় অনামিকাকে দিয়ে সই করানো হয়। এখন উনি অস্বীকার করছেন। চাকরি যার পাওয়ার কথা তিনি পাবেন। আদালতের কাছে লুকনোর কী আছে? আমার মক্কেল সমস্যা দেখেই আদলতকে জানিয়েছে। এর থেকে প্রমাণিত অনামিকা সাজানো গল্প বলছে, প্রয়োজনে তাঁর দাবী তদন্ত করে দেখা হোক।'
বিচারপতি পাল্টা জানান, 'আপনি যেটা অনামিকার সই বলছেন, আমি তো দেখছি না ওটা অনামিকার সই।' এই শুনানিতে পর্ষদ আইনজীবী ভাস্কর বৈশ্য বলেন, 'আমি চাই এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হোক।' পাল্টা অনামিকা রায়ের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত জানান, 'ববিতা ও অনামিকা একই সাবজেক্টের পরীক্ষার্থী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের। অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি ববিতা পান আদালতের নির্দেশে। অঙ্কিতা অধিকারীর র্যাঙ্ক জাম্প ছিল। তারপর ববিতা জানতে পারলেন তিনি ৩৩ না ৩১ পেয়েছেন। এটা যদি হয়, তবে অনামিকার নম্বর ববিতার থেকে বেশি। ইতিমধ্যেই পর্ষদের ভুল প্রকাশ্যে এসেছে, এটাও একটা ভুল।'
শিক্ষক নিয়োগে (Teacher Recruitment) দুর্নীতির বহর কত বড়! সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) স্পষ্ট করে জানাল সিবিআই (CBI)। কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থার অধীনে হাইকোর্ট যে স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিম বা সিট (SIT) গঠন করেছিল তারা সোমবার রিপোর্ট পেশ করেছে। সেই রিপোর্টে বলা, মোট ২১ হাজার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি। সেই দুর্নীতি করতে গিয়ে ৯ হাজার ওএমআর শিট (OMR Sheet) বিকৃত করা হয়েছে।
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এর আগে প্রাথমিক চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। সেই চার্জশিটেই বলা, অপটিকাল মার্ক রেকগনিশন তথা ওএমআর শিট বিকৃত করে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও সুবীরেশ ভট্টাচার্য সরাসরিভাবে জড়িত বলে জানানো হয়েছিল চার্জশিটে।
আরও বেআইনি নিয়োগের হদিশ। নবম-দশমে ভুয়ো নিয়োগের আগে সিবিআই গাজিয়াবাদ থেকে যে হার্ডডিস্ক উদ্ধার করেছে, তার থেকে চল্লিশটি স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে। সিবিআই প্রথম থেকে দাবি করছিল বেআইনি নিয়োগের সংখ্যাটা অনেক বেশি। হাইকোর্টের নির্দেশে সেই মোতাবেক ৪০টি যে স্যাম্পেল উদ্ধার হয়েছিল, তা নিয়ে শুক্রবার আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন।
তারপরেই দেখা যায় সেই চল্লিশটি উদ্ধার হওয়া স্যাম্পেল ভুয়ো। অর্থাৎ সেই ৪০ জন বেআইনিভাবে নিয়োগপত্র পেয়েছিল। হাইকোর্টে রিপোর্ট আকারে পেশ করা হবে। এর মধ্যে বাংলার শিক্ষক ২১ জন। ইতিহাসের শিক্ষক ১০ জন, ভৌতবিজ্ঞান ১, ভূগোলের ১ জন, ইংরেজির শিক্ষক ৪ জন, জীবন বিজ্ঞান ৩ জন।
শিক্ষক দিবসের (Teachers Day) অনুষ্ঠানে দুর্নীতি প্রসঙ্গে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। তিনি বলেন, 'হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না। কে কতটা লোভী হবেন তা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। ব্যক্তি মানুষের উপর সততা নির্ভর করে। কিন্তু বাম আমলের কোনও কাগজ নেই। কোনও ফাইল আমরা কিছু পাইনি। আমাদের আমলে কাগজ আছে তাই ভুল ধরা পড়ে। একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। আগামি দিনে ৮৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হবে। আমরা কারও চাকরি খাইনি। যারা সুবিচার পায়নি আমাদের আমলে পাবেন।'
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে তিনি জানান, আমরা নিয়োগ করতে চাইছি, কিন্তু সময় সাপেক্ষ। শুধু একের পর এক জনস্বার্থ মামলা। সঙ্গ দোষে কেউ কেউ বিপথে যান, তার জন্য সবাইকে খারাপ বলা ঠিক নয়। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে পুরো ক্ষমতা নেই। সঙ্গদোষে ভালো খারাপ হয়ে যায়। পয়সা আজ আছে কাল ফুরোবে, তাই চরিত্র গঠন করুন। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষারত্ন প্রদান অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি শিক্ষক দিবস অনুষ্ঠানে চরিত্র গঠনের বার্তা দেন তিনি।
তাঁর দাবি, কয়েকজন ছেলেমেয়ে রাস্তায় বসে ছিল, আমি বলেছিলাম তাঁদেরটা করে দিন। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন ওদের নাম্বার পারমিট করছে না। তারপরেও আমি বলেছিলাম দিন একটু করে দিন। যেহেতু আমার দয়া-মায়া বেশি। যে কারণে গালাগাল খাই বেশি।'
২০১১-র পর থেকে যারা প্রাইমারি শিক্ষকপদে (Primary Teacher) নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের নথি চেয়ে পাঠাল শিক্ষা পর্ষদ (Primary Board)। পয়লা সেপ্টেম্বরের মধ্যে পর্ষদ অফিসে সেই নথি পাঠাতে হবে। এই মর্মেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ চেয়ারম্যানকে। জানা গিয়েছে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করা সংস্থা ইডি (ED) এই নথি চেয়ে পাঠিয়েছে। ২০১১-র পর থেকে কাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। সেই দিক খতিয়ে দেখতে চায় কেন্দ্রীয় ওই সংস্থা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, রাজ্যে পরিবর্তনের সরকার আসার পর ২০১২ থেকে শুরু হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে টেট পরীক্ষা।
২০১২ থেকে এযাবৎকাল টেটের মাধ্যমে যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের নথি চেয়ে পাঠিয়েছে পর্ষদ। জানা গিয়েছে, শুধু নথি নয়, জমা দিতে হবে নিয়োগপত্রও।
সেই তথ্য এক্সেল ফরম্যাটে সফ্টকপি হিসেবে পাঠাতে হবে। চিঠিতে উল্লেখ, এই বিষয়টিকে যেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। চাকরিপ্রার্থীর নাম, টেট রোল নম্বর, বাবার নাম, কোন ক্যাটাগরিতে চাকরি, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি, কোন স্কুলে চাকরি এবং কোন বছরে এসবই জানাতে হবে।
এদিকে, সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন গৌতম পাল। তিনি চেয়ারে বসেই ঘোষণা করেছেন সংসদকে স্বচ্ছ রাখতে যা যা করণীয়, তিনি করবেন। এমনকি, প্রতি বছর টেট পরীক্ষা আয়োজনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন নতুন সংসদ সভাপতি।
শিক্ষক নিয়োগ (Teacher Recruitment) দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের (CBI Arrest) হাতে গ্রেফতার আরও এক মিডলম্যান প্রসন্ন রায়। এই অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) ভাগ্নি জামাই। প্রসন্নকে, ধৃত প্রদীপ সিংয়ের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার সম্ভাবনা। সিবিআই সূত্রে খবর, প্রদীপ সিংকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রে তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পারেন প্রসন্নকুমার রায়ের সল্টলেক জিডি-২৫৩ ফ্ল্যাটে গাড়ি ভাড়ার দেওয়ার কাজ করতেন প্রদীপ। এরপরেই তদন্তকারীরা প্রসন্নকুমারকে গ্রেফতার করেন।
জানা গিয়েছে, নিউটাউনের বলাকা আবাসনে B-6 2/3-এ ফ্ল্যাট রয়েছে প্রসন্নর। পাশাপাশি কলকাতার লেদার কমপ্লেক্স থানার অধীনে অভিজাত ভিলা রয়েছে তাঁর। রাজারহাট ধারসাইয়ে রয়েছে বাগান বাড়ি-সহ একাধিক জমির খোঁজ মিলেছে তদন্তকারী আধিকারিকদের। তদন্তকারী আধিকারিকরা নিশ্চিত নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিপুল অংকের টাকা সম্পত্তি ক্রয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
শুক্রবার প্রসন্নকে গ্রেফতারের পর রাখা হয়েছে নিজাম প্যালেসে। আজ তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হবে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য। এরপর আলিপুরে সিবিআই এর বিশেষ আদালতে তোলা হবে তাঁকে।