পর পর দু'বার ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল পাকিস্তান (Pakistan)। শুক্রবার বালুচিস্তানে (Balochistan) ভয়াবহ বিস্ফোরণের জেরে প্রাণ হারালেন ৫২ জন। এদিন সকালে বালুচিস্তানের এক মসজিদের কাছে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক। এই ঘটনার পরই ফের এক বিস্ফোরণ হয় খাইবার পাখতুনখোয়ায়। যেই ঘটনায় ফের প্রাণ হারান ৩ জন। জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাক সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে বালুচিস্তানের মাস্তুং জেলার আল-ফালাহ মসজিদের কাছে। শুক্রবার সকালে ইদের মিছিল উপলক্ষে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। আচমকা আত্মঘাতী জঙ্গি ভিড়ের দিকে এগিয়ে এসে বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। মুহূর্তে ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এর পরই ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে মৃতদেহ।
এখানেই শেষ নয়, এই ঘটনার পরই খাইবার পাখতুনখোয়ায় ফের আত্মঘাতী বিস্ফোরণ হয়। হাঙ্গু জেলার এক মসজিদের মধ্যে এই বিস্ফোরণ হয় বলে পুলিস সূত্রে খবর। পুলিস আরও জানিয়েছে, প্রার্থনা করার সময়ে এই বিস্ফোরণ হয় ও সেই সময় মসজিদে মোট ৩০-৪০ জন ছিলেন। এই ঘটনায় প্রাণ হারান ৩ জন ও গুরুতর আহত হন ৬ জন।
কাবুলে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে (Suicide Blast) নিহত অন্তত ২০ জন। শহরের বিদেশ মন্ত্রকের (Foreign Ministry) অফিসের সামনে এই বিস্ফোরণ। এক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, বুধবারের এই বিস্ফোরণে বাড়তে পারে হতাহতের সংখ্যা।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, বিস্ফোরণের সময় বিদেশ মন্ত্রকে চিনের আধিকারিকদের সঙ্গে তালিবান প্রশাসনের বৈঠক চলছিল। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় নিরাপত্তা বাহিনী। বুধবারের এই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন জামশেদ করিমি নামে এক গাড়ি চালক। জামশেদ বলেন, ‘‘আমি জানি না, বিস্ফোরণে কত জন হতাহত হয়েছেন। তবে বিস্ফোরক দিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দিতে এক জনকে দেখেছি।’’ এই হামলার সত্যতা স্বীকার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। শহরে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানান কাবুল পুলিসের মুখপাত্র।
বুধবার পাকিস্তানের (Pakistan) বালুচিস্তানের (Balochistan) কাছে কোয়েটার বালেলি এলাকায় একটি পুলিসি ট্রাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ (suicide blast)। ঘটনায় একজন পুলিস সদস্য এবং একটি শিশু মারা গিয়েছে। বিস্ফোরণে ২০ জন পুলিস কর্মকর্তা-সহ কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে সূত্রের খবর। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে নিকটরবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানি মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বিস্ফোরণের পর চলন্ত পুলিসের ট্রাকটি ছিটকে পড়ে এবং খাদে পড়ে যায়। পুলিস জানিয়েছে, একটি উদ্ধারকারী দল এবং বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলকে বিস্ফোরণস্থলে পাঠিয়েছে। বিস্ফোরণে ২৫ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
কোয়েটার ডিআইজি গোলাম আজফার মহেসার পাকিস্তান মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন যে বিস্ফোরণটি একটি আত্মঘাতী হামলা ছিল। কারণ তাঁরা ঘটনাস্থলে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর দেহাবশেষ পেয়েছেন। তিনি বলেন, 'বিস্ফোরণের কারণে পুলিসের ট্রাকটি ছিটকে পড়ে এবং একটি খাদে পড়ে যায়।'
উল্লেখ্য, নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) হামলার দায় স্বীকার করেছে। সেখানকার সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, জঙ্গি গোষ্ঠীটি সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহার করার এবং যোদ্ধাদের সারা দেশে হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার একদিন পরই এই বিস্ফোরণ।
এক পুলিস কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে পুলিসের ট্রাকসহ তিনটি গাড়ি এবং কাছাকাছি দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের স্থানটি ঘিরে রাখা হয়েছে এবং আরও তদন্ত চলছে।
এক আত্মঘাতী হামলায় কাবুলে (Kabul blast) নিহত তালিবান (Taliban) নেতা রহিমুল্লা হাক্কানি। আফগানিস্তানের (Afganisthan) তালিবান সরকারের ধর্মীয় নেতা হিসেবে পরিচিত তিনি। বৃহস্পতিবার সে দেশের সংবাদ সংস্থা টলো নিউজ এই খবর দিয়েছে। যে খবরের সত্যতা স্বীকার করেছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার।
জানা গিয়েছে, ধর্ম পণ্ডিত, শিক্ষক শেখ রহিমুল্লা হক্কানি বৃহস্পতিবার কাবুলের একটি স্কুলবাড়ির কাছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সেই সময় জলসায় উপস্থিত এক ব্যক্তির কৃত্রিম পায়ে লুকিয়ে থাকা বিস্ফোরক থেকেই এই বিস্ফোরণ। এমনটাই টলো নিউজ সূত্রে খবর।
এদিকে, আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল ইস্তক সে দেশে তালিবান এবং পাক তালিবানের ছায়া যুদ্ধ চলছে। আর পাক তালিবানকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে তালিবান বিরোধী অপর গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্ক। যদিও এই জঙ্গি সংগঠন আফগানিস্তানে জোট সরকারের শরিক। কিন্তু ক্ষমতা বৃদ্ধির লড়াইয়ে তারা তালিবান থেকে পিছিয়ে। তাই তৈরি হয়েছে বৈরিতা।
এদিনের আত্মঘাতী বিস্ফোরণ সেই বৈরিতার বহিঃপ্রকাশ কিনা খতিয়ে দেখবে তালিবান পুলিস। অন্যদিকে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী আফগানিস্তানে সক্রিয় হতে মরিয়া। এসবের মাঝে পড়ে প্রায়ই তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে বিস্ফোরণ এবং মৃত্যুর খবর মিলছে।