দমদম লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল এবারও প্রার্থী করেছে সৌগত রায়কে। চতুর্থবারের জন্য দমদম থেকে সাংসদ হওয়ার লড়াই লড়ছেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। শনিবার সকালে উত্তর দমদমের নিমতা কালচার মোড় থেকে বিরাটি ব্রিজ পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রচার সারেন তিনি। তাঁর সমর্থনে প্রচারে অংশ নেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও উত্তর দমদম পুরসভার পুরপ্রধান বিধান বিশ্বাস।
ধামসা মাদল থেকে ব্যান্ড ও নৃত্যের মাধ্যমে চলে এই প্রচারাভিযান। তৃণমূলের অগণিত কর্মী-সমর্থক এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। নিমতা কালচার মোড় থেকে শুরু করে গোটা এম বি রোড ধরে চলে এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়েই ভোটের আবেদন জানান দমদমের তৃণমূল প্রার্থী।
তৃণমূলের জমানায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, রেশন বণ্টন দুর্নীতি সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। আর অভিযোগের তিরে রয়েছেন ঘাসফুল শিবিরের নেতারা। এ নিয়ে লোকসভা
প্রসূন গুপ্তঃ লোকসভা বটে দমদম। স্বাধীনতা উত্তর যুগে এই দমদম যে কত ঘটনার সাক্ষী তা আর বলে দিতে হয় না। ড.বিধান রায়ের আমলে দমদম ছিল একেবারে কংগ্রেসের নিজের জমি। দমদম লোকসভায় যারা তখন ভোটার ছিল তাদের সিংহভাগই ছিল ওপার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তু। ড.রায় তাদের পুনর্বাসন দিয়েছিলেন। নামমাত্র টাকায় জমি দিয়েছিলেন বসবাসের জন্য এবং চাকরি ও কন্ট্রাক্টারি করার সুযোগ করেও দিয়েছিলেন। কিন্তু ড.রায়ের মৃত্যুর পরে ধীরে ধীরে এই দমদম হয়ে উঠলো কমিউনিস্টদের চারণ ভূমি। ৭০ দশকের মধ্যভাগ থেকে সিপিএম একেবারে দখলদারি নিয়ে নিলো দমদমের। এই লোকসভার অন্তর্গত বিধানসভাগুলি ও পুরসভা দখলে এলো মার্কসবাদীদের। বলা হতো লালদুর্গ। ১৯৮৫-তে ইন্দিরা নিধনের পরে একবার দমদমে যেতে কংগ্রেসের আশুতোষ লাহা। ব্যাস ফের দমদম হাতছাড়া হয় সেই ১৯৯৯ তে, যে বার বিজেপির তপন শিকদার এখন থেকে জেতেন। তারপর ২০০৯-এ পরিবর্তনের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সৌগত রায় পরপর তিন বার জিতেছেন এই আসন থেকে। অর্থাৎ লালদুর্গের পতন হয়।
এবারে লোকসভা নির্বাচন এসে গিয়েছে। প্রার্থী ওই প্রবীণ সৌগতবাবুই। ২০১৪ এবং ২০১৯ এর মোদী হাওয়াতে পরিবর্তিত হয় নি দমদমের মুড। প্রশ্ন এবারে কি হবে?
বৃদ্ধ হলেও সৌগতবাবু এখনও দৌড়ে বেড়ান এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। বিভিন্ন এলাকার মানুষকে তিনি যেমন সময় দেন তেমনই মানুষও তাঁকে কাছে পায়। কাজেই প্রাথমিক ভাবে জয় নিয়ে যে খুব একটা টেনশনে তিনি এমনটি বলা যাবে না কিন্তু ১৩ বছর ক্ষমতায় আছে তৃণমূল অতএব বিপরীত হাওয়া যে বইবে না এমন গ্যারান্টি কোথায়? এবারে এখানে সিপিএমের জাঁদরেল প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী এবং বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন তৃণমূলের শীলভদ্র দত্ত। শীলভদ্র এলাকার বাসিন্দা। প্রথম রাজনীতি কংগ্রেসের হাত ধরে পরে মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূলে। পরে মুকুল দল ছাড়লে শীলভদ্রও দল ছাড়েন। বিজেপির হয়ে ২০২১ এর ভোটে পরাজিত হন।
অন্যদিকে সুজন চক্রবর্তীর দল আজ শূন্যে পরিণত হলেও ওজনদার প্রার্থী তিনি। তিনি যে এই ভোটের অন্যতম ফ্যাক্টর তা আর বলে দিতে হয় না। কাজেই সুজনের প্রাপ্তি ভোট, হয় বিজেপিকে অথবা তৃণমূলকে জেতাবে তা বলাই বাহুল্য। সুজন ভোট নিদারুন কম পেলে শীলভদ্রের লাভ এবং বেশি পেলে ফের সৌগত।
দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন সাংসদ সৌগত রায়। দমদমের সাংসদ তথা তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায় একটি দলীয় সভা থেকে পুলিসের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, 'পুলিশের একাংশের অবহেলা ছিল। পুলিশকে আরও কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।' খড়দহের একটি দলীয় সভায় অংশ নিয়েছিলেন সাংসদ। সেখান থেকেই বিস্ফোরক উক্তি করেন তিনি।
দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিক অভিযোগ করছেন। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় সৌগত রায়কে। তিনি বলেন, “দত্তপুকুরের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পুলিশের তলার স্তরে নিশ্চয়ই কোনও অবহেলা ছিল। আমরা আশা করি এরপর আর এরকম হবে না। পুলিশ আরও সক্রিয় হবে।” তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে, তোমরা বার করো। তারপরও কীভাবে এত বড় বাজি কারখানা থেকে গেল? সেখানকার থানার আইসি ও ওসিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুলিশকে আরও কড়া ব্যবস্থা করতে হবে।”
দত্তপুকুরের বাজি কারখানার বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই ছিল, যে গোটা বাংলার পরিস্থিতি তেতে উঠেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ উগরে পড়ে তাদের ওপর। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেছিলেন, পুলিশ সব জেনেও চুপ ছিল। এমনকি প্রথমে এলাকার যে সব যুবক বেআইনি বাজি কারখানার প্রতিবাদ করেছিলেন, পুলিশ তাঁদেরকেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ” কেউ কেউ বেআইনি কাজ করছেন এবং পুলিশ সেটা চোখ বুজে দেখছে। লোকাল থানায় যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁরা মাক্সিমাম কী করছেন, সেটা আর বললাম না!” পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অর্জুন সিংও। তিনি বলেন, “পুলিশ কেন নেতাদের কথা শুনবে? তারা চাইলে এক মিনিটে বন্ধ করে দিতে পারে বাজি কারখানা।” ঘটনার পরই সাসপেন্ড করা হয় দত্তপুকুর থানার আইসি ও নীলগঞ্জ ফাঁড়ির ওসি।
এই ঘটনার পরই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার ও কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের এডিজি জাভেদ শামিম। ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন। দত্তপুকুরের ঘটনা কার্যত পুলিশের কাছে ‘অ্যালার্মিং’ বলেও চিহ্নিত করেছেন জাভেদ শামিম।
তৃণমূলের (TMC) সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো (Shoe) তৈরি হবে। সেইদিনের জন্য অপেক্ষা করুন। রবিবার কামারহাটির (Kamarhati) এক জনসভায় এমনই মন্তব্য করলেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা তথা সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)।
তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ছিল, আছে এবং থাকবে। পশ্চিমবাংলার মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল তৃণমূল কংগ্রেস। আমরা ২০২৬ পর্যন্ত ম্যানডেট পেয়েছি, আমাদেরই সরকার চলবে। আর যারা আমাদের বেশি নিন্দা করছে, এরপর আমি বলব, তৃণমূলের সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে।
তাই আজ থেকে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করুন। দল যে সব প্রোগ্রাম দেবে, সেইসব অনুসরণ করে চলুন।
এবার নিজের কানে শুনুন, সৌগত রায়ের সেই মন্তব্য।
সৌগত রায়ের মন্তব্য ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল প্রবীণ সাংসদের বিতর্কিত ওই মন্তব্য। তিনি এদিন আরও বলেন, তৃণমূল কিন্তু রাস্তায় আছে। আমরা কোনও দোষ করিনি যে আমাদের ঘরে ঢুকে যেতে হবে। বিজেপি, সিপিএমকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছি, কামারহাটিতে তৃণমূলের সব চোর বলে মিছিল করলে তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেব যে পার্টি অফিসে ঢুকে যেতে হবে। সাবধান থাকবেন।
সামনের বার অধীরের বিজেপি ছাড়া আর কোথাও যাবার জায়গা নেই। বিজেপিতে গিয়েও অধীর চৌধুরী জিতবেন না। শুভেন্দু অধিকারী নাম নারদ কেলেঙ্কারিতে ছিল। অথচ একবারও শুভেন্দুকে ডাকেনি সিবিআই।
সৌগত বলেন, দুর্নীতি থেকে আমরা দলকে আলাদা করছি। কিন্তু নিরোপেক্ষ তদন্ত যদি না হয়, শাসকদল আবার রাস্তায় নামবে। ইডি-সিবিআইয়ের কলকাতার অফিস অবরুদ্ধ করে দেব।