বিদেশ যাত্রার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে মামলা কুনাল ঘোষের (Kunal Ghosh)। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে (Calcutta High Court) মামলা। ১০ তারিখ মামলার পরবর্তী শুনানি। তৃণমূল মুখপাত্রের আবেদন, '১০ দিনের জন্য সেমিনারে যোগ দিতে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার অনুমতি দিক মহামান্য আদালত।' সারদা চিটফান্ড-কাণ্ডে (Sharada Case) জামিনে থাকা কুণালের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কোর্টের।
তাঁর পাসপোর্ট এখনও জমা রয়েছে কোর্টে। আজ মামলা ওঠে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে। সিবিআই জানায়, তাঁকে বিদেশ যেতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আছে কিনা, সেটা লিখিত ভাবে জানাতে চায় এজেন্সি। তাই সময় চাওয়া হয়। ১০ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। এদিকে শীতকালীন অবসরের পর সোমবার থেকে ফের খুলেছে হাইকোর্ট। তাই রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে চলতে থাকা একধিক মামলার শুনানি এবং রায়ের দিকে তাকিয়ে আম আদমি।
সারদা-কাণ্ডে এবার রাজ্যের সিআইডির (Bengal CID) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায় (Debjani Mukherjee)। রীতিমতো হাইকোর্টকে চিঠি লিখে তিনি বিহিত চেয়েছেন। সিআইডি ২৩ অগাস্ট দমদম জেলে এসে তাঁকে চাপ দিয়েছে। এবং বয়ানে লিখতে বলেছে শুভেন্দু অধিকারী এবং সুজন চক্রবর্তী(Suvendu-Sujan) সারদার (Sharada Case) থেকে ৬ কোটি টাকা করে নিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টকে ৪ সেপ্টেম্বর পাঠানো দেবযানীর চিঠিতে উল্লেখ, '২৩ অগাস্ট সিআইডি জেরার নামে দমদমে জেলে এসে কিছু প্রশ্ন করেছে। শেষে তাঁরা জানতে চেয়েছে আমি কি জানতাম রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী সুদীপ্ত সেনের ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন। কিন্তু আমি তাঁদের বলি এই তথ্য আমার জানা নেই। আপনারা বরং ওই দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করুন। এরপরেই ওরা আমাকে বলে যেহেতু আমি অপরাধ প্রমাণের আগে ৮ বছর জেল খেটে নিয়েছি, তাই আমাকে সারদা-কাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী করে দিতে পারেন।'
তিনি হাইকোর্টের উদ্দেশে চিঠিতে আরও লিখেছেন, 'আমি ওদের আমার কেস ডিটেইলস সম্বন্ধে জানতে চাইলে ওরা জানিয়েছিল এডিজি সিআইডির সঙ্গে কথা বলে আমার আইনজীবীর কাছে পাঠাবে। আমার বিরুদ্ধে শারদা সংক্রান্ত মোট ১১টি মামলা রয়েছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেনি। তবে ওরা আবার সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে জেলে আসবেন।'
হাইকোর্টের উদ্দেশে দেবযানীর আবেদন, 'পুরো বিষয়টা মহামান্য আদালতের কাছে রাখলাম। আশা করব কোর্ট যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। যাতে আমি জেলের বাইরে বেরোতে পারি।'
দেবযানীর এই চিঠির মধ্যেই তাঁর মা শর্বাণী মুখোপাধ্যায় পৃথক একটি চিঠি পাঠিয়েছে সিবিআইকে। সেই চিঠিতে তিনি বিশেষ করে সিআইডি অফিসার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে মেয়ের উপর মানসিক চাপ তৈরি করার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন। শর্বাণী মুখোপাধ্যায় লেখেন, '২৩ অগাস্ট দমদম জেলে এসে ওসি সিট ভবানী ভবন ইনস্পেক্টর অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় আমার মেয়েকে মিথ্যা বয়ান লেখাতে চাপ দিয়েছেন। রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের সামনেই সুদীপ্ত সেনের থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়েছেন। এই বয়ান না লিখলে আমার মেয়েকে আরও ৯টি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে এই হুমকিও দেওয়া হয়েছে।'
সিবিআইকে লেখা চিঠিতে দেবযানীর মা জানান, আমার মেয়ে শঙ্কিত। ৫ সেপ্টেম্বর ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলার সময় তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে মেয়ে আমায় একটি চিঠি পাঠায়। সেই চিঠির প্রতিলিপি আমার এই চিঠির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল। আমার মেয়ের বক্তব্য তিনি শুভেন্দু অধিকারী বা সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে কোনওদিন সাক্ষাৎ করেনি। তাও শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান না লিখলে আমার মেয়েকে আরও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'
শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary) সারাদা মামলায় অভিযুক্ত, তাও তাঁর বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নিচ্ছে না তদন্তকারী সংস্থা (CBI)। সেই সংক্রান্ত দায়ের জনস্বার্থ মামলা (PIL) খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মামলাকারী রমাপ্রসাদ সরকারের আবেদন খারিজ করেছে। সারদা কর্তার চিঠিতে শুভেন্দু অধিকারীর নাম, তাও সিবিআই কোনও পদক্ষেপ গ্রহন করছে না রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগেই জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
মামলাকারী আবেদন ছিল, সুদীপ্ত সেনের চিঠি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে তলব করুক সিবিআই। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে শুভেন্দু অধিকারীর নাম উল্লেখ রয়েছে। তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে শুভেন্দু। একথাও উল্লেখ আছে চিঠিতে। আইনজীবী রমা প্রসাদ সরকারের দাবি, এরপরেও সিবিআই সারদা তদন্তে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। তাই আদালত এই বিষয়ে উপযুক্ত নির্দেশিকা জারি করুক।
শুভেন্দুর আইনজীবীর দাবি, এই জনস্বার্থ মামলা গ্রহ যোগ্য নয়। কারণ আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, 'আদালত মনে করছে না এবিষয়ে নতুন করে সিবিআইকে নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন আছে। তাই আবেদনকারীর আবেদন খারিজ করা হল।'