কয়েকদিন আগেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা পেয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ফলক বসানো হয়েছে। এবার সেই বিতর্কিত ফলক সরিয়ে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষকে কটাক্ষের পাশাপাশি ওই বিতর্কিত ফললকে অহংকারী বলেও অভিহিতও করেন।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাওয়ার পর একটি ফলক বসানো হয়। সেখানে উপাচার্য এবং প্রধানমন্ত্রীর নাম থাকলেও ওই ফলকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম নেই। সেখান থেকেই শুরু বিতর্ক। এবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে টুইট করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ওই ফলক বসানোর পরে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি তলব করেন রাজ্যপাল। সেসময় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তাঁর নির্দেশেই শান্তিনিকেতনে ধর্না কর্মসূচি চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
শান্তিনিকেতনের নাম ফলকে ফেরাতে হবে রবীন্দ্রনাথের নাম। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কেন্দ্রের সামনে এই ডেটলাইন বেঁধে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদি না হয়, তাহলে শুক্রবার থেকে বিশ্বভারতীর সামনে আন্দোলন শুরু করবে তৃণমূল কংগ্রেস।
সম্প্রতি বিশ্বভারতীকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। কিন্তু অভিযোগ, মূল নাম ফলকে নেই রবীন্দ্রনাথের নাম। রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক হয়েছে। বৃহস্পতিবার কালীঘাটে সাংবাদিক বৈঠক করে সেই বিতর্ককে আরও একবার উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, রবীন্দ্রনাথের জন্যই গোটা বিশ্ব আজ বিশ্বভারতীকে চেনে যানে। তাঁর জন্য ইউনেস্কো এই জায়গাটিকে হেরিটেজ বলে ঘোষণা করেছে। এতদিন পুজো বলে তিনি চুপ করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার সকালের মধ্যে যদি নাম পরিবর্তন না হয়, তাহলে আন্দোলন হবে।
এদিকে, সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া হুঁশিয়ারির পর নাকি সুর খানিকটা নরম করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। নিজেদের ভুলের কথা স্বীকারও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। দ্রুত নাম পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মত, মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়াতেই বিশ্বভারতীর এমন মতবদল।
রবিবার ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে শান্তিনিকেতনের নাম ঘোষণা করে। এরপর থেকে সারা বাংলাই কার্যত কলার তুলছে বিশ্বের দরবারে। ঘোষণার পর থেকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও কার্যত সাজো সাজো রব। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবের মেজাজ। আলোতে মুড়ে দেওয়া হয়েছে রবি ঠাকুরের প্রিয় এই জায়গা। অধ্যাপক থেকে ছাত্রছাত্রীদের পরনে ঐতিহ্যবাহী পোশাক, রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে আনন্দ উৎযাপনে মেতে ওঠে তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আমেজ সারা বাংলাতেই প্রসিদ্ধ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানে এখনও একই পদ্ধতিতে চলে শিক্ষাদান। পৌষ উৎসব ও দোল উৎসবে সেজে ওঠে শান্তিনিকেতন চত্বর। এবার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় উঠে এল বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন। শান্তিনিকেতন ইউনেস্কোর-এর হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। বার্সেলোনায় পৌঁছেই এই খবর পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে আড্ডায় শান্তিনিকেতন নিয়ে উচ্ছ্বসিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
গতবছরই দুর্গাপুজোকে সম্মানিত করেছিল ইউনেস্কো। এবার শান্তিনিকেতনকে হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়েছে। বার্সেলোনায় গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "শান্তিনিকেতনকে ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি গর্বের। বার্সেলোনা আমাদের জন্য লাকি। যেদিন আমি এলাম, সেদিনই শান্তিনিকেতন হেরিটেজ তকমা পেল। একথা সারাজীবন মনে রাখব।"
মণি ভট্টাচার্যঃ এটা রবীন্দ্রনাথের মুলুক..... ভারতবর্ষ (India) কোনো পলিটিক্যাল পার্টির মুলুক নয়। ভারতবর্ষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) মুলুক। সিএন-ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন গায়ক কবীর সুমন (Kabir Suman)। অমর্ত্য সেন-বিশ্বভারতী বিতর্কে, অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়ে মুক্তমঞ্চের মাধ্যমে শনিবার ও রবিবার প্রতিবাদ স্বরূপ গান গাইবেন বাংলার অন্যতম বিতর্কিত গায়ক চরিত্র কবীর সুমন। শুক্রবার সন্ধ্যাতেই শান্তিনিকেতন যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সিএন-ডিজিটালের তরফে কবীর সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফুরফুরে মুডেই কবীর সুমন জবাব দিলেন, 'হ্যাঁ আমি রবীন্দ্রনাথের গান গাইবো।'
সূত্রের খবর, অমর্ত্য সেনের বাড়ি 'প্রতীচী'র বিতর্কিত ১৩ ডেসিমাল জমি নিয়ে বিশ্বভারতীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। বিশ্বভারতীর উচ্ছেদ-নোটিস নিয়েও জেলা কোর্টের দ্বারস্থ হলে সময়ের হেরফেরে হাইকোর্টে যেতে হয় অমর্ত্য সেনের পক্ষের আইনজীবীদের। বীরভূম জেলা আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত অমর্ত্য সেনের জমির বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বিশ্বভারতী। বৃহস্পতিবার অমর্ত্যের জমি মামলায় এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এরপরে শনিবার ও রবিবার শান্তিনিকেতনে মুক্ত মঞ্চের মাধ্যমে গান গেয়ে প্রতিবাদ জানাবেন গায়ক কবীর সুমন।
এ বিষয়ে সিএন-ডিজিটালের তরফে কবীর সুমনকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি তো বহুদিন পরে রবীন্দ্র সংগীত গাইবেন। এর উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি রবীন্দ্রনাথের গান গাই, অনেকেই জানেন না।' আসলে বাংলার সংস্কৃতিতে বহুদিন পর গানে-কবিতায় প্রতিবাদ করতে দেখা যাবে। গানে-কবিতায় এই প্রতিবাদ নিয়ে কবীর সুমন বলেন, 'যারা ভারতের শাসন ক্ষমতায় থাকুন কিংবা ব্রিটেনের শাসন ক্ষমতায় থাকুন, এটা রবীন্দ্রনাথের মুলুক সেটা কেউ কেউ ভুলে যান। আমি ওইখানে থাকব। আমি তো গান গাই। আমি পরপর রবীন্দ্রনাথের গান গাইব।' কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'আমার এখন ৭৫ বছর বয়স, আমি এখনও গাইতে পারি। ফলে আমি রবীন্দ্রনাথের গান পরপর গাইব। প্রেমের গান, মরশুমের গান, বর্ষার গান। নানা রকম গান গাইব।'
এ উত্তর শুনে সিএন-ডিজিটালের তরফে কবীর সুমনকে বলা হয় ওটা যে প্রতিবাদের মঞ্চ। ঠিক তারপরেই কবীর সুমন প্রতিক্রিয়া দেন, 'অবশ্যই, আমি মনে করি, অসুন্দর সময়ে সুন্দর থাকাটা একটা প্রতিবাদ, বেসুরো সময়ে সুরে থাকাটা একটা প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদ, বেসুরো পরিস্থিতিতে অশুভ শক্তিকে একটা জানান দেওয়া যে এটা রবি ঠাকুরের মুলুক।'