নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (SSC Case) ইডির হাতে গ্রেফতার পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (APA) ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজত (Jail Custody)। শনিবার রাজ্য রাজনীতির চর্চিত চরিত্র এই 'অপা'কে ভার্চুয়ালি আদালতে তোলা হয়েছিল। দু'জনের কেউই জামিনের আবেদন করেননি। তবে বিচারকের কাছে পার্থর (Partha Chatterjee) আবেদন, 'আমার স্বাস্থ্যর অবস্থা ঠিক নেই। জেলে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত মেডিসিন ব্যবস্থা দরকার। শরীর ঠিক নেই, আপনি যদি বিষয়টা দেখেন।
একইভাবে অর্পিতা ভার্চুয়াল জানালেন, 'আমার শরীরে খুব খারাপ। চেকআপের দরকার। পর্যাপ্ত ওষুধ চেকের ব্যবস্থা নেই। যেখানে আছি সেখানে ব্যবস্থা নেই। কষ্ট হচ্ছে, যদি একটু ব্যবস্থা করেন।' শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের করলেন না জামিনের আবেদন। দু'জনের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে নির্দেশ বিচারকের।
হাইকোর্টে পত্রপাঠ খারিজ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের জামিন (Bail Plea)। বুধবার জামিন মামলার শুনানিতে আদালত সাফ জানিয়েছে, যেহেতু আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্ত চলছে, তাই কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের (Kalyanmay Ganguly) জামিন আবেদনের মামলা আপাতত চালানো সম্ভব নয়। আবেদনকারী চাইলে মামলা প্রত্যাহার করতে পারেন। একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টকে (Calcutta High Court) কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বক্তব্য জানাবেন।
ইতিমধ্যে নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ড প্রায় ৪ মাস জেলবন্দি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি। এই মামলার তদন্তে চার্জশিট জমা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। এদিন জামিন মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের বক্তব্য, 'গ্রুপ সি কর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্যানেল বাতিলের পর শান্তিপ্রসাদ সিনহা ভুয়ো সুপারিশ পত্র তৈরি করেন। সেগুলো দেওয়া হয় কল্যাণময় গাঙ্গুলিকে। তিনি রাজেশ লায়েককে দিয়ে বেআইনি নিয়োগপত্র তৈরি করান।'
এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের ভূমিকায় বিরক্ত আদালত। বিচারপতি বলেন,'আমরা স্পষ্ট জানতে চাই কি ভাবে অপরাধ হয়েছে আর সেখানে ধৃতের ভূমিকা কি? এটা শুধু প্যানেল বাতিলের পর সেখান থেকে নিয়োগ নয়। এখানে টাকার খেলা আছে? না কি ভালোবাসার সম্পর্কে নিয়োগ?' জবাবে সিবিআই জানায়, 'পিছনে টাকার যোগ আছে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে।'
এই শুনানিতে আদালতের মন্তব্য, 'আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত চলছে। সেই তদন্ত এত না এগোনো পর্যন্ত জামিনের আবেদন সাড়া দেওয়া যাবে না।' যদিও বুধবার কোনও লিখিত নির্দেশ হয়নি। আবেদনকারী মামলা আপাতত প্রত্যাহার করবে কিনা, সেই ব্যাপারে বৃহস্পতিবার আদালতকে জানাবেন কল্যাণময়বাবুর আইনজীবী। তাই ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যন্ত মুলতুবি মামলা।
আইনি লড়াই (SSC case) শেষে পরেশ অধিকারী (Paresh Adhikary) তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে (Ankita Adhikary) হটিয়ে সম্প্রতি চাকরি পেয়েছেন ববিতা সরকার। শুরুতে সব ঠিকঠাক থাকলেও ফের একবার সংবাদ শিরোনামে ববিতা সরকার (Babita Sarkar)। প্রশ্ন উঠছে ববিতা সরকারের আবেদনের বৈধতা নিয়ে। অভিযোগ, তাঁর নাকি দুই নম্বর নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যদিও ববিতার সাফাই, 'আমাদের নম্বর এসএসসি প্রকাশ করেনি। আমি র্যাঙ্ক জানতাম। ওয়েটিং লিস্টের র্যাঙ্ক জানতাম। সেই র্যাঙ্ক বদল নিয়ে আমি আইনি লড়াই চালিয়েছি। কোনও সদুত্তর না পেয়ে আইনি পথে লড়াই চালাই।'
তাঁর দাবি, 'তিনি আবেদনের সময় সঠিক তথ্যই পেশ করেছিলেন। তাঁর তরফে কোনও ভুল নেই। সেক্ষেত্রে ফের একবার আদালতের দ্বারস্থ হবেন তিনি। আদালতের যা নির্দেশ হবে তা শিরোধার্য। কিন্তু অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে।' চাকরি চলে গেলেও তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বেন। এমনটাই জানিয়েছেন ববিতা সরকার।
এদিকে ববিতা সরকারের আবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই আরও এক চাকরিপ্রার্থী নিজেকে ওই পদের দাবিদার হিসেবে প্রকাশ্যে এসেছেন। তাঁর নাম অনামিকা রায়। শহর শিলিগুড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুধমোড় এলাকার বাসিন্দা অনামিকা। তাঁর কথায়, 'দু'নম্বর কমে যাওয়া মানে মেরিট লিস্টের অনেক পিছনে চলে যাওয়া। তাতে এই পদের পরবর্তী দাবিদার আমি। কীভাবে এই ভুল হয়েছে বা ভুল এড়িয়ে গিয়েছে জানি না। যখন বিষয়টি সামনে এসেছে, তখন আমার প্রাপ্য চাকরিটা আমাকে দেওয়া হোক। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আইনি পথে যাবো।' জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কলেজ অফ এডুকেশন থেকে বিএড করেন অনামিকা। বর্তমানে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
অপরদিকে স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রে খবর, চাকরি দেওয়ার সময় এলিজিবিলিটি মিলিয়ে নেওয়া হয়। ইন্টারভিউ ও তার আগে ভেরিফিকেশন হয় ২ বার। এখন আমরা নিজে থেকে কোনও পদক্ষেপ করবো না। আদালতে মামলা হলে দেখা হবে। যখন উনি চাকরি পান তখন সার্ভার রুম বন্ধ ছিল। তখন মেলানোর উপায় ছিল না। এখন আদালত নির্দেশ দিলে দেখবে এসএসসি। ববিতা তথ্য আপলোড ঠিক করে থাকলে যদি এসএসসির তরফ থেকে ভুল হয় সেটাও দেখতে হবে। তথ্য আদালত তলব করলে এসএসসি দেবে তখন।
এসএসসি দুর্নীতি-কাণ্ডে (SSC Case) সিবিআইয়ের হাতে ধৃত সুবীরেশ ভট্টাচার্য (Subiresh Bhattacharya) জামিন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ। নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন (Bail Plea)। এসএসসি দুর্নীতি-কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট আগামি ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে তলব হাইকোর্টের। এদিন জামিন মামলার শুনানিতে এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের আইনজীবী সওয়ালে বলেন, '৮৮ দিন হয়ে গিয়েছে আমার মক্কেল জেলে। এখন তদন্তও শেষ। তদন্ত চলাকালীন জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে আমার মক্কেল, তাঁর অবগতির মধ্যে থাকা সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। অর্থাৎ তদন্তে সাহায্য করছেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য।'
এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যানের তরফে তাঁর আইনজীবীর দাবি, 'শারীরিকভাবে অসুস্থ তাঁর মক্কেল এবং দীর্ঘদিন জেলে থাকায় তাঁর সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষয় হচ্ছে। তাই সুবীরেশ ভট্টাচার্য আদালতের কাছে জামিন চেয়ে আবেদন করছেন। যেহেতু চার্জশিট দাখিল হয়েছে আর তদন্তের প্রয়োজন নেই। আর তদন্তের প্রয়োজন হলেও, জামিনের পর কোনও অসুবিধার হওয়ার কথা নয়। তাই আমার মক্কেলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করুক মহামান্য আদালত।'
তবে সুবীরেশ ভট্টাচার্যের এই জামিনের আবেদনের বিরোধিতায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় সংস্থা জানায়, 'কোনওভাবেই সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে জামিন দেওয়া যাবে না। কারণ এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তিনি। তাঁর কাছে এমন কিছু তথ্য রয়েছে, সেই তথ্য সূত্র ধরে এসএসসি দুর্নীতি-কাণ্ডের মূল কাঠামোর কাছে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।' সিবিআইয়ের যুক্তি, 'এই মুহূর্তে সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে জামিন দিলে প্রমাণ লোপাটের সম্ভাবনা আছে।' এরপরেই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ২০ ডিসেম্বর অবধি এসএসসি দুর্নীতি-কাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি কী, ২১ ডিসেম্বর রিপোর্ট দাখিল করে জানাবে সিবিআই। এরপরেই সুবীরেশ ভট্টাচার্যর জামিন ভাগ্য স্থির হবে আদালতে, এমনটাই সূত্রের খবর।
স্কুল সার্ভিস কমিশন না এসএসসি (SSC Case) গ্রুপ-ডি (Group C and D) নিয়োগ-কাণ্ডের তদন্তে থাকা সিবিআইয়ের সিটে (CBI SIT) রদবদল। সিটের ২ জনকে সরিয়ে, চার জনকে নিযুক্ত করলো কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে সিটের দায়িত্বে আনা হল কেন্দ্রীয় সংস্থার ডিআইজি অখিলেশ সিংকে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে বহাল থাকবে। বুধবার অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলএন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Ganguly)। এদিন শুনানিতে এসএসসি গ্রুপ-ডি নিয়োগ-কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিবিআইয়ের আইও-কে ডেকে পাঠায় হাইকোর্ট। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরেই এই পদক্ষেপ আদালতের। জানা গিয়েছে সিবিআইয়ের ডিআইজি অখিলেশ সিং ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।
সিবিআই সিটে রদবদলের ফলে দু'জনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন কেসি ঋষিনামণ এবং ইমরান আশিক। গত কয়েকদিনে নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের ধীর গতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কেন্দ্রীয় এই সংস্থাকে লোকবল বাড়াতেও পরামর্শ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, প্রায় এক বছর হতে চললো সিবিআই তদন্তের নির্দেশ সেওয়া হয়েছে। জুন মাসে সিট গঠন করা হয়েছে। গ্রুপ-ডি মামলায় মোট ৫৪২ জনের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা মাত্র ১৬ জনকে জেরা করেছে।'
তিনি জানান, প্রত্যেককে জেরা করা হলে আরও তথ্য হাতে আসতো। এর কারণ হতে পারে সিবিআইয়ে আধিকারিকদের অভাব নয়তো দক্ষতার অভাব। এরপরেই সিট পুনর্গঠনে চার জন সিবিআই অফিসারের নাম চান বিচারপতি। ডেপুটি এসপি অংশুমান সাহা, ইনস্পেক্টর বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, প্রদীপ ত্রিপাঠী এবং ওয়াসিম আক্রম খানকে সিটের সদস্য করেন বিচারপতি। ডিআইজি অখিলেশ সিংয়ের নেতৃত্বে সিটের এই চার সদস্য কাজ করবে। অখিলেশ সিংকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে এখুনি কলকাতা পাঠাতে হবে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে বদলি করা যাবে না। এমনটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি এই মামলার তদন্তে কতটা অগ্রগতি তা ৭ দিনের সিবিআইকে জানাতে হবে। আগামি ২২ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Case) মামলায় চলা সিবিআই (CBI) তদন্ত নিয়ে ফের উষ্মা প্রকাশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Ganguly)। একটি মামলায় এজলাসে উপস্থিত সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, 'আপনার সিবিআই কত দিনে তদন্ত শেষ করবে? লোক বাড়ানোর ব্যবস্থা করুন। কাল (পড়ুন রবিবার) এক জায়গায় গিয়েছিলাম। সমাজের উপর তলার মানুষ সেখানে ছিলেন। তাঁরা আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করেছেন, তদন্ত কবে শেষ হবে, জানতে চেয়েছেন।'
তিনি জানান, লোক কোথায়, সিবিআইকে লোক বাড়াতে হবে। আমার চোখে যা আসছে তাতে আরও দুর্নীতির ইঙ্গিত আছে। সেক্ষেত্রে সিটে লোক না বাড়ালে হবে না। প্রয়োজনে অর্ডার দেবো। কারণ সিবিআই আরও বহু মামলার তদন্ত করছে। যদিও এক সপ্তাহ আগেই বিচারপতি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। সম্প্রতি সিবিআইয়ের আইও-কে ডেকে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছিলেন বিচারপতি। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রথম দিকেই আমি দুর্নীতি লক্ষ্য করেছিলাম। তাই আমি সিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আমি নির্দেশ দিতে পারি, কিন্তু প্রধান কাজ করতে হবে সিবিআইকে। আমি চাই সিবিআই এই কাজটা দায়িত্ব নিয়ে করবে। সিবিআইয়ের পতাকা মাথা উঁচু করে উড়ুক, আমি এটাই চাই। আমি কিছু মন্তব্য করি আমার উদ্বেগ থেকে।
সপ্তাহ ঘুরতেই ফের সিবিআই তদন্ত কতদিনে শেষ হবে, জানতে চেয়ে উষ্মা প্রকাশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের।
বুধবার চাকরি (SSC Case) চেয়ে এক্সাইড মোড়ে জমায়েত হওয়া চাকরিপ্রার্থীদের (Job Aspirants) গ্রেফতার করে আদালতে তোলে পুলিস (Kolkata Police)। পুলিসের কামড় (Police Bite) খাওয়া অরুণিমা পাল-সহ মোট ৩০ জন চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়। এই ৩০ জনকেই এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলেও জামিন পান (Bail Plea) প্রত্যেকেই। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পুলিস এঁদের 'অপরাধী' দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এঁদের পুলিসি হেফাজতের আবেদন করে পুলিস। কিন্তু সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি। ধৃত ৩০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
এদিকে, চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষের উকিল এদিন আদালতে সওয়াল করেন, 'কাদের আসামি বলে সম্মোধন করা হচ্ছে, চাকরিপ্রার্থীদের? আসামি তো তাঁরা, যারা চাকরি দিয়েছেন কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে। অযোগ্য প্রার্থীদের থেকে যারা টাকা নিয়েছেন সেই মন্ত্রী, আসামিরাই আমাদেরই বিচারকক্ষে আসেন।' চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল, 'যাদের কোর্টে আনা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই শিক্ষক। প্রত্যেকেই টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। হাইকোর্টের নির্দেশ হলেও এঁদের চাকরি দিতেই পারছে না। উলটে একজন পুলিস কামড়েছে, এই কাজ মানুষের না। এঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল, পুলিস বলপূর্বক এঁদের অত্যাচার করছে।'
চাকরিপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিস যে যে অভিযোগ এনেছে, তার প্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত নথি পুলিস দেখাতে পারেনি। কৃষক আন্দোলনের সময় সুপ্রিম কোর্ট কৃষকদের সরায়নি। কিন্তু আমাদের চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে মাথা ফেটেছে, কারও হাড় সরেছে। এঁরা অত্যন্ত নিরীহ মানুষ, নিজেদের যোগ্যতায় শিক্ষক হয়েছে। যদিও পুলিস বলছে এঁদের সংগঠন খুঁজে বের করতে হবে। এঁরা কি মাওবাদী? এই প্রশ্নই আদালতে তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী।
তাঁদের সওয়াল, 'যে কামড়ালো সে পিজিতে ভর্তি আর যে কামড় খেলো সে হাজতে। পুলিস শাসক দলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। ধৃত চাকরিপ্রার্থীদের নিঃশর্ত জামিন দেওয়া হোক। নয়তো সমাজের কাছে ভুল বার্তা যাবে।'
যদিও পুলিসের তরফে আইনজীবীর পাল্টা যুক্তি, 'চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি আমরাও সমব্যথী। কিন্তু তাঁর মানে এই নয় যে ওরা আইন হাতে তুলে নেবেন। উন্মত্ত জনতাকে প্রতিহত করতে পুলিসকে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে হবে। এঁরা শিক্ষক, শিক্ষক সুলভ আচরণ এঁদের থেকে কাম্য।' দু'পক্ষের এই সওয়াল-জবাবের পরেই কিছুক্ষণ রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারক। অবশেষে সন্ধ্যার পর ধৃত ৩০ চাকরিপ্রার্থীকেই জামিন দিয়েছে ব্যাঙ্কশাল আদালত।
আদালতের এই রায়ে স্পষ্টতই নৈতিক জয় দেখছেন চাকরিপ্রার্থীরা। নিয়োগ নিশ্চিত না হলে আগামি দিনে আন্দোলন আরও জোরদার হবে, এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এদিন জামিন নিশ্চিত হতেই কোর্ট ক্যাম্পাসে উদযাপন শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীরা। অন্য চাকরিপ্রার্থীরা পুষ্পবৃষ্টির মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া হয়।