অবশেষে পাওয়া গেল 'ডেডলাইন'। শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে এসেই এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা জানালেন, নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাওয়ার আশাবাদী তাঁরা। নিয়োগের দাবি জানিয়ে ১১ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেছিলেন তাঁরা। এর পর আজ অর্থাৎ শুক্রবার বিকাশ ভবনে দ্বিতীয় বৈঠক হয়। চাকরিপ্রার্থীরা বিকাশ ভবন থেকে বেরিয়ে এসেই জানালেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ডেডলাইন। অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়োগের নিশ্চয়তা তাঁদের কাছে চলে আসবে, এমনই আশ্বাস মিলেছে বিকাশ ভবন থেকে।
এদিন দ্বিতীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা জানান, আইনি প্রক্রিয়াকে সম্মান জানিয়ে সব দিক বিবেচনা করেই তাঁদের নিয়োগের বিষয়টি দেখছে শিক্ষা দফতর। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তেমনই ইঙ্গিত তাঁরা পেয়েছেন। তাঁরা বলেন, 'এই মিটিংয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হল। আমাদের মূল বিষয় ছিল, নিয়োগ কবে হবে, নিয়োগের উন্নতি কতটা হয়েছে। আমরা আজকে জানতে পারলাম। আমাদের নিয়োগপত্র দ্রুত পেয়ে যাব বলে আশা করছি। আমাদের নিয়োগ হবে। আমরা নির্দিষ্ট তারিখ চেয়েছিলাম। এর পর ১ ফেব্রুয়ারির তারিখ পেয়েছি। একটা কার্যকরী জায়গায় পৌঁছে যাব বলে আশা করছি।
ফলে এত দিনের মধ্যে একটা সমাধান বেরোবে বলে আশাবাদী চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা আরও বলেন, 'নিয়োগপত্র পাব, ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তার নোটিফিকেশন পাব বলে আশাবাদী। আইনি জটিলতা কীভাবে কাটবে, কীভাবে ওনারা করবেন, সেটা ওনাদের ব্যাপার। আইন বিশেষজ্ঞ ওনাদের আছে। আমরা সাধারণ চাকরিপ্রার্থী, আমরা ডেড লাইন পেয়েছি। নির্দিষ্ট তারিখ পেয়েছি। এর মধ্যে যাবতীয় আইনি জটিলতাকে সম্মান জানিয়ে আমরা নিয়োগ পত্র পাব।'
চাকরিপ্রার্থীরা আরও জানিয়েছেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে। সেই অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত জট কাটবে বলে তাঁরা আশাবাদী। ওয়েটিং লিস্টে থাকলেই যে সবাই চাকরি পাবে এমন নয়, যাঁরা প্রকৃত প্রার্থী তাঁদের লিস্টের নাম থাকা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। তাঁদের নিয়োগের দাবি জানানো হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী এই আশাই দিয়েছেন। পরে ফের বৈঠক হতে পারে, তবে তার তারিখ নির্দিষ্ট হয়নি।'
নিয়োগের দাবিতে এতদিন চাকরিপ্রার্থীদের রাস্তায় বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু বুধবার দেখা গেল এক অন্য দৃশ্য। এবারে ২০১৬-এর এসএলএসটি শারীর শিক্ষা কর্মশিক্ষা চাকরিপ্রার্থীরা পৌঁছে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির বাড়িতে। হাতে পোস্টার নিয়ে বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়লেন চাকরিপ্রার্থীরা। পোস্টারে লেখা, 'আমরা ভগবানের দর্শনে এসেছি। ভগবান আমাদের উদ্ধার করুন।' তাঁদের দেখে বিচারপতিও অবশেষে তাঁদের সঙ্গে দেখা করলেন ও পরামর্শ দিলেন।
জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে সুপারিশপত্র পেয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু সুপার নিউমেরারি পোস্ট ঘিরে আইনি জটিলতা থাকায় চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, সরকার তাঁদের নিয়োগ আটকে রেখেছে। সেই কারণেই এদিন বিচারপতির দ্বারস্থ হন তাঁরা। বিচারপতিও তাঁদের দেখতে নীচে নেমে আসেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন ও পরামর্শও দেন। বিচারপতি তাঁদের রাস্তায় বিক্ষোভ না দেখিয়ে আদালতে আসার পরামর্শ দেন।
চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, সোমা দাস চাকরি পেয়েছেন। আর তা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সুপারিশেই। তাদের চাকরিটাও যাতে হয় সে বিষয়ে বিচারপতিকে আবেদন জানান। আর তা শুনেই চাকরিপ্রার্থীদের স্পষ্ট বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, সোমা দাসের চাকরির ব্যবস্থা করেননি। সুপারিশ করেছিলেন। অন্যদিকে ১০০০ দিন ধরে চাকরি প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, 'আমিও সমব্যথিত। চাই সবাই চাকরি পান। কিন্তু বসে থেকে কোনও লাভ হবে না। যোগ্য হলে কেন আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন না?'
নিয়োগের দাবিতে সুদীর্ঘ এক হাজার সাত দিন ধরে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন এসএলএসটি উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা। ইতিমধ্যেই রীতিমত খালি গায়ে, মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বহু চাকরিপ্রার্থী। আর এরপরেই গত ১১ ডিসেম্বর তড়িঘড়ি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সহ শিক্ষা দফতরের একাধিক আধিকারিকরা। এই বৈঠকে ব্রাত্য বসু বলেছিলেন আইনি জট কাটলেই নিয়োগ হবে। আর শিক্ষামন্ত্রীর এই কথাতেই একটু হলেও আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন রাজ্যের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। গত ১৪ ডিসেম্বর ছিল সুপ্রিম কোর্টের সুপার নিউমেরারি পোস্ট সংক্রান্ত মামলার শুনানি। এই শুনানির তারিখও পিছিয়ে গিয়ে হয়েছে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি।
আর এই কারণেই প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের যোগ্য বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। আগামী ২২ ডিসেম্বর ফের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক রয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের। কিন্তু নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনের এমন টালবাহানা দেখে তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে ঠিকই নিয়োগ হতো, বারবার বৈঠক এবং আলোচনার প্রয়োজন পড়ত না।
তবে ১১ ডিসেম্বরের বৈঠকে প্রশাসনের তরফে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের আশ্বাস দেওয়া হলেও নিয়োগের স্বপ্ন কিন্তু সেই বিশ বাওঁ জলেই। আর এই কারণেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের বক্তব্য, নিয়োগ দিতে না পারলে প্রশাসন নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করুক এবং পুলিস ফোর্স পাঠিয়ে গুলি করে মেরে ফেলুক প্রার্থীদের। তবুও নিয়োগ না পেলে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে কোনওভাবেই সরে দাঁড়াবেন না বলে জানালেন চাকরিপ্রাথীরা।
দীর্ঘ প্রশাসনিক টালবাহানায় আটকে রয়েছে ২০১৬ সালের এসএলএসটি উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ। এই ইস্যুতে বারংবার একাধিক বৈঠক, একাধিক আলোচনা হলেও কোনও সুরাহা হয়নি। আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতির বন্যায় রাজ্যের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের ভবিষ্যৎ এখনও সেই তিমিরেই।
বহু প্রতীক্ষার অবসান। চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের ১০০২ দিন পর অবশেষে সোমবার কুণাল ঘোষের তদারকিতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয় এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের। শিক্ষা দফতরে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে তাঁদের বৈঠক চলে। বৈঠক শুরুর আগে কুণাল ঘোষকে দেখা যায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি বলছেন, 'আইনি জট খুলবেই।' এছাড়াও নিয়োগ নিয়ে জট তৈরি হয়েছে, তা খুলতে চলেছে বলে দাবি করেছেন চাকরিপ্রার্থীরাও। তাঁদের দাবি, শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন তাঁরা।
সোমবার দুপুর ৩ টে নাগাদ শুরু হয় বৈঠক। প্রায় ২ ঘন্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় চাকরিপ্রার্থীদের। খানিক স্বস্তি ছিল তাঁদের মুখে। তাঁরা আশাবাদী। তাঁরা জানালেন, 'সোমবারের বৈঠক সদর্থক। স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং শিক্ষা দফতরের মধ্যে কোথাও একটা মিসকমিউনিকেশন ছিল। সেই জন্যই আইনি জটে আটকে রয়েছে নিয়োগ।' তাঁরা বললেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যত দ্রুত সম্ভব আইনি জটিলতা কাটিয়ে মিলবে নিয়োগ। খুব দ্রুতই স্কুলে চাকরি করতে পারব। ফিরে যেতে পারব বাড়িতে।'
এক বুক যন্ত্রনায় দিন যাচ্ছে তাঁদের। অবশেষে ১৬ মাস পর শিক্ষা দফতরে বৈঠক করতে পেরেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ফের তাঁদের দেওয়া হয়েছে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি। য্ন্ত্রণাপীড়িত চাকরিপ্রার্থীরা খানিক আশার আলো দেখছেন। তবে শেষ অবধি নিয়োগপত্র কবে তাঁদের হাতে আসবে, তা তাঁরা জানেন না এখনও। এখন তাঁদের অপেক্ষা ২২ ডিসেম্বরের বৈঠকের। কারণ, নিয়োগে আইনি জট কাটানোর কাজ কতটা সম্পন্ন হল, তা জানা যাবে ২২ ডিসেম্বরেই।
এবার রাজ্যে ২০১৬ সালের SLST- তে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর। পাশাপাশি ২০১৬-র RLST-তে চাকরি পাওয়া গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-তে যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের তালিকাও প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দফতরের তরফে। এই বিষয়ে প্রতিটি জেলার ডিআইকে বিজ্ঞপ্তি পাঠাল SSC। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে প্রতিটি প্রধান শিক্ষকের কাছে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে, তাঁদের স্কুলে কতজন ২০১৬-তে পাওয়া চাকুরিরত রয়েছেন তার তালিকা প্রস্তুত করতে। পাশাপাশি যাঁরা স্কুলে থাকবেন না, তাঁদের বাড়িতেই পাঠাতে হবে এই বিজ্ঞপ্তি, এমনটাই নির্দেশ শিক্ষা দফতরের।
৯ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে, ২০১৬-তে চাকরি পাওয়া শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীর তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য শিক্ষা দফতর। এছাড়াও সোমবার অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক প্রধান শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট SI অফিস থেকে অন্যান্য নথি-সহ শিক্ষা দফতর দ্বারা জারি করা নোটিশ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি স্কুল এবং সংশ্লিষ্ট অফিসকে তাদের নোটিস বোর্ডে ওই 'পাবলিক নোটিস' প্রদর্শন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ওই দিনই সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের অন্যান্য নথির সাথে নোটিশ প্রদান করবেন প্রধান শিক্ষক, এমনটাই নিদের্শ রাজ্য শিক্ষা দফতরের। পাশাপাশি ওই সংশ্লিষ্ট কর্মচারী বা শিক্ষককে ই-মেলও করা হবে এবং প্রমাণও রাখা হবে ওই বিজ্ঞপ্তির, এমনটাই সূত্রের খবর। সবশেষে আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে ফরওয়ার্ডিং লেটার-সহ ওই বিজ্ঞপ্তি পরিষেবার প্রতিবেদন জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট এসআই অফিসে। তবে এক্ষেত্রে ২০১৬-র SLST এবং RLST-তে চাকরি পাওয়া ব্যক্তির মধ্যে কেউ পদত্যাগ করে থাকলে বা কারও মৃত্যু হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে তাঁদের ওই বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর জন্য বিবেচনা করা হবে না বলেই সূত্রের খবর।
তবে এই তালিকা প্রকাশের বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফে।
সুদীর্ঘ ১০০১ দিন ধরে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ২০১৬-র SLST উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু এই দীর্ঘ আন্দোলনেও হয়নি কোনও সুরাহা। গত শনিবার আন্দোলনের ১০০০ দিনে রীতিমত মাথা মুড়িয়ে, খালি গায়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। রাজ্যের যোগ্য বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের এহেন অবস্থা দেখে চোখে জল এসে গিয়েছে রাজ্যবাসীর। শনিবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা। এমনকি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এদিন চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন তাঁদের। সোমবার দুপুরে শিক্ষাবিদ তথা তৃণমূলের মুখপাত্র কামাল হোসেন চাকরি প্রার্থীদের ধরনা মঞ্চে আসেন।
কামাল হোসেন জানান, তিনি তৃণমূলের মুখপাত্র হিসেবে নয়, এসেছেন একজন শিক্ষক হিসেবে। প্রতিবাদকারী কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী তাঁরও ছাত্র। তাঁরাই তাঁকে ধরনা মঞ্চে আসতে অনুরোধ করলে তিনি আসেন। তিনি আরও বলেন, কুনাল ঘোষ শনিবার এসে একটি সমাধানের পথ বার করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীও চান এই চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দিতে। সে বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে রাজ্যের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের বাধ্য হয়ে যে অভিনব প্রতিবাদের পন্থা তাঁদের বেছে নিতে হয়েছিল, সেটিকে 'নাটক' বলে আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। একজন শিক্ষিত অধ্যাপক হয়ে এমন কথা কীভাবে বলতে পারেন সৌগত রায়? প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীরা।
পাশাপাশি শনিবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ SLST উত্তীর্ণ আন্দোলনকারীদের ২টি মঞ্চের একটিতে গেলেন আর একটিতে কেন গেলেন না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাহলে কি SLST উত্তীর্ণ আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরী করে আন্দোলন ভেঙ্গে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে? এ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের যোগ্য বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা।
যদিও এই চাকরিপ্রার্থীরা জানিয়েছেন, যতদিন না নিয়োগ হচ্ছে, তাঁদের আন্দোলন চলবে পাশাপাশি আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
শহরের রাজপথে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ২০১৬র SLST উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা। দীর্ঘ ১০০০ দিন পরেও সুরাহা না মেলায় মহিলা চাকরিপ্রার্থী সহ অন্যান্য প্রার্থীরাও মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। যোগ্য হয়েও কেন এমন পদক্ষেপ নিতে হবে রাজ্যের হবু শিক্ষকদের? আর ঠিক কত বঞ্চনা, কত বৈঠক শেষে মিলবে নিয়োগ? এ প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এখনও অজানাই।
৯০০ দিনের উপর হয়ে গেল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা। বুধবার সকালে প্ল্যাকার্ডে লেখা একগুচ্ছ দাবি দাওয়া নিয়ে এমএলএ হস্টেলের সামনে বিক্ষোভ দেখতে থাকেন চাকরিপ্রার্থীরা। বুধবার রাজ্য অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল রাজ্যের মন্ত্রী বিধায়কদের। কিন্তু বাইরের আন্দোলনের চাপে হস্টেলেই আটকে থাকতে হয় তাঁদের। প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘৯০০ দিন ধরে ধরনায় বসে থাকা বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আওয়াজ তুলুন। ‘ কিংবা কোনওটায় লেখা ‘ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।’
বুধবার সকালে রাজ্যসভার অধিবেশনে যাওয়ার বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই বিক্ষোভ। যদিও পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে বেলা ১১ টা নাগাদ এসে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। বড় বাস, ভ্যানে আন্দোলনকারীদের একপ্রকার ‘বলপূর্বক’ তুলতে দেখা যায় রাজয়পুলিশকে। আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভের জের পড়ে বিধানসভার অধিবেশনেও।
ববিতা সরকারের ছায়া প্রিয়াঙ্কা সাউ মামলায় (Priyanka Sau Case)। যোগ্য হয়েও বেআইনি নিয়োগের (Recruitment Scam) জেরে হাইস্কুলে ইংরেজি শিক্ষিকার চাকরি পাননি প্রিয়াঙ্কা সাউ। ২০১৬ সালে এসএলএসটি (SLST) দিয়েও ছয় বছর ধরে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী হিসেবে চলছিল তাঁর আইনি লড়াই। বৃহস্পতিবার সেই লড়াইকে স্বীকৃতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট (High Court)। ২৮ অক্টোবরের বাড়ির কাছের স্কুলে প্রিয়াঙ্কা সাউকে নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের। কলকাতা জেলার মধ্যে তাঁর কাছে তিনটি স্কুলের বিকল্প রাখতে হবে। তার মধ্যে থেকে পছন্দসই একটি স্কুল বাছবেন প্রিয়াঙ্কা। ২১ অক্টোবরের মধ্যে কাউন্সেলিং করে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট স্কুলে সুপারিশপত্র পাঠাতে হবে। যাতে পুজোর পর যোগদান করতে পারেন প্রিয়াঙ্কা। ঠিক এই নির্দেশ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে এদিন দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এদিকে, এই মামলায় এসএসসি নিয়োগে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। পুরুষ-মহিলা এবং শুধু মহিলা দুই প্যানেলেই নথিবদ্ধ ছিলেন প্রিয়াঙ্কা সাউ। কিন্তু পুরুষ-মহিলা মেধাতালিকায় যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম থাকলেও, তিনি কাউন্সেলিংয়ে ডাক পাননি। কারণ পুরুষ-মহিলা প্যানেল থেকে সরিয়ে শুধু মহিলা প্যানেলে রাখা হয় প্রিয়াঙ্কার নাম। ফলে তিনি ডাক না পাওয়ায় অন্য একজনের কাউন্সেলিংয়ে ডাক পড়ে। রীতিমতো এই অভিযোগে সরব হয়ে মামলা করেন প্রিয়াঙ্কা সাউ।
এই প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা সাউ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'লড়াই করে যে সবশেষে সাফল্য আসে। আমার গল্পটা সেরকম। আমার লড়াই ব্যর্থ হয়নি, বরং ন্যায়ের জয় হয়েছে। এটাই আমার ভালো লাগছে।'
২০১৬ SLST-র মাধ্যমে নবম-দশমে কতজন ভুয়ো নিয়োগ হয়েছেন? স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) এবং সিবিআইয়ের থেকে জানতে চাইলো হাইকোর্ট (Calcutta high Court)। অবিলম্বে সেই ভুয়ো নিয়োগ খুঁজে বের করে অযোগ্যদের চাকরি থেকে থেকে বরখাস্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পৃথক ভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি এবং সিবিআই (CBI) আদালতে রিপোর্ট জমা করবে। ২৮ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি। বুধবার হাইকোর্ট জানিয়েছে। বেআইনি নিয়োগের বিষয়ে এসএসসি আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে। যারা বেআইনি ভাবে নিয়োগ পেয়েছে তাঁদের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হবে। মেধা তালিকার ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের সেই চাকরি দেওয়া হবে।
খুব দ্রুত এই বিষয়ে নিষ্পত্তি চেয়ে এসএসসি এবং সিবিআইকে নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তবে শুধু এসএসএসি নয় কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে বেআইনি নিয়োগ নিয়ে পৃথক রিপোর্ট দেবে সিবিআইও। যদিও এসএসসি-র আইনজীবীর সওয়াল, 'এটা সংখ্যা স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষে খুঁজে বের করা অত্যন্ত কঠিন। সার্ভিস কমিশন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না। কাদের নিয়োগ আইনি আর কাদের নিয়োগ বেআইনি? জিজ্ঞাসাবাদ না করলে বোঝাও সম্ভব নয়। কিন্তু সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বের করতে পারবে। স্কুল সার্ভিস কমিশন কীভাবে সেটা করবে?'
যদিও স্কুল সার্ভিস কমিশনের উল্লেখ, তাদের তথ্য অনুযায়ী মোটামুটি ১৬-১৭ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এরপরেই আদালতের নির্দেশ, 'স্কুল সার্ভিস কমিশন মামলাকারীদের আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। কতজনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ? চিহ্নিত করা গেল সেটা আদালতকে জানাতে হবে। পাশাপাশি একইসঙ্গে সিবিআইকেও রিপোর্ট দিয়ে জানাবে। তারা তদন্তের প্রেক্ষিতে বের করবে কতজনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। অযোগ্যদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারন করে, যারা ওয়েটিং লিস্টে রয়েছে তাদের চাকরিতে নিযুক্ত করা হবে।'
পাশাপাশি মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে একটা রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে, নবম-দশমে তারা কতজনকে নিয়োগপত্র দিয়েছে? ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব নথি মামলাকারীদের আইনজীবীদের হাতে দিতে বলেছে আদালত।