গঙ্গা তীরবর্তী এলাকা মানেই ভাঙনের (River Erosion) অভিশাপে জর্জরিত। জনজীবনকে কার্যত বিপর্যস্ত ও অনিশ্চিত করে তোলে। সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের খোঁজ করেন গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা। কিন্তু স্থায়ী সমাধান তো দূরের কথা, কোনও কিছুতেই যেন ভাঙন থেকে মুক্তি মিলছে না মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) সামশেরগঞ্জের (Samserganj) মানুষের। বর্ষা পড়তেই ফের সামশেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙনে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে গোটা গ্রাম নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আতঙ্কে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত মহেশটোল, প্রতাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দারা। মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি গঙ্গা ভাঙনে বিপর্যস্ত মালদহও (Malda)।
মালদহের মালিক গোপালপুর এলাকায় গঙ্গা ভাঙ্গনে গত কয়েকদিনে ভেঙে পড়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। এই পরিস্থিতিতে গৃহহীন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে মালদহের মিল্কির ভবানীপুরে আম বাগানের মধ্যে। ত্রিপাল খাটিয়ে কোনওমতে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। নেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত পানীয় জল। প্রশাসনের কোনও ব্যক্তি একবারের জন্য খোঁজ নিতেও আসেননি বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন গৃহহীন গ্রামবাসীরা। পুনর্বাসনের অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ।
ফের গঙ্গা ভাঙনের আতঙ্ক (panic)। গঙ্গার জলস্তর কিছুটা কমতেই ফের একবার ভয়াবহ ভাঙনের মুখে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) সামশেরগঞ্জ থানার মহেশটোলা এবং প্রতাপগঞ্জ এলাকা। শনিবার সকালে ওই এলাকায় একটি বাড়ি ও দুটি দোকান গঙ্গা নদীর ভাঙনের করাল গ্রাসে তলিয়ে যায়। এরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাজ্য সড়কের ধারে অবস্থিত একটি ইলেকট্রিক পোল ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি শুক্রবার রাতে প্রতাপগঞ্জ এলাকায় কাঁকুরিয়া–ধুলিয়ান রাজ্য সড়কের উপরেও ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা আগামী দু থেকে একদিনের মধ্যেই এই রাস্তাটিও গ্রাস করবে গঙ্গা।
আর এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন বিরোধীরাও। মিলন ঘোষ উত্তর মুর্শিদাবাদ বিজেপি সহ-সভাপতি বলেন, পুর-প্রধান থেকে শাসক দলের বিভিন্ন নেতাদের উপর মানুষ ক্ষিপ্ত। কারণ, শাসক দল থেকে প্রশাসনিক স্তরে সকলেই স্থানীয় মানুষদের এই গঙ্গার গ্রাস থেকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। এছাড়াও, এই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। সমস্যা দেখা দিলে শুধু বালি, বাঁশ দিয়ে মেরামত করে কোনওরকমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা আর কতদিন। যেখানে কেন্দ্র ৫৩ কোটি টাকা এবছর দিয়েছে, সেখানে কেন সমস্যার সমাধান মিলছে না। তাহলে সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে? প্রশ্ন করেছেন তিনি।
সব মিলিয়ে সমস্যায় আছেন মুর্শিদাবাদবাসী।
এ যেন এক অন্তহীন খেলা।প্রতিবছর বর্ষার (Monsoon) জল বুকে পড়তেই ফুঁসে ওঠে গঙ্গা। দুপারের জনবসতি গিলে খায় রাক্ষুসী।ভেঙে চুরমার হয়ে যায় অপ্রকাশিত শত-সহস্র স্বপ্ন। নদীপারের মানুষ গুলি প্রতিদিন তিলতিল করে হারায় নিজের জীবনের পুঁজি। মালদার ভুতনি। গঙ্গা তীরের এই জনবসতি রাতে ঘুমায় দুঃস্বপ্ন নিয়ে। ইঞ্চি ইঞ্চি করে গঙ্গা (Ganges) গিলে খাচ্ছে কলুটোলা, কেশবটোলার বসত জমি। বাঁধ ছুঁয়েছে গঙ্গা। নদীপার ধসে পড়ার (river erosion) শব্দ পাঁজরে আঘাত হানছে। বড় বড় গাছ নিমিষে তলিয়ে যাচ্ছে নদীর উদরে।
ঘটনাটা এবছরের প্রথম নয়। ফি বছর নদীর পেটে চলে যায় বিঘার পর বিঘা জমি। টনক নড়ে প্রশাসনের। দায়িত্ব নিয়ে ছুটে আসেন ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসার (bdo) সহ উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। উন্মত্ত নদীকে ঠেকাতে দেওয়া হয় বালির বাঁধ। এবারেও তার অন্যথা হল না। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নদী ভাঙন রুখতে বালির বস্তা ফেলা হল। তবে প্রশাসনের ভূমিকায় খুশি নয় এলাকাবাসী। দাবি একটি স্থায়ী কংক্রিটের বাঁধের।(permanent dam) কিন্তু সে সব থেকে গেছে কথার আবডালে। বিডিও সাহেব যদিও বলছেন নদীর এই গতি রোধ করতে বোল্ডারও যথেষ্ট নয়। নদী ভাঙনের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এলাকায় গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র (sabitri mitra)।তোপ দাগলেন কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। তাই সমস্যার সমাধান করতে পারছে না রাজ্য।
এ প্রসঙ্গে তোপ দাগলেন বিজেপি নেতৃত্ব। নদীর বাঁধ ঠিক করার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত্ করেছে তৃণমূল সরকার (tmc)। গোটা বিষয়ে কেন্দ্র সরকারকে অন্ধকারে রাখছে তারা। ঠিক কী বলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব? চলুন শুনে নেওয়া যাক
নদীভাঙন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের দড়ি টানাটানি নতুন নয়। তবে গোটা বিষয় নিয়ে রাজ্যসরকার যথেষ্ট পরিমাণে তত্পর নয় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সামনে পঞ্চায়েত ভোট (panchayet election)। গঙ্গাভাঙনের এই ইস্যু কি পঞ্চায়েতে আদৌ কোনও প্রভাব ফেলবে? উত্তর দেবে সময়।