রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রাক্তন আপ্ত-সহায়ক অভিজিৎ দাস এবং বর্তমান আপ্ত-সহায়ক অমিত দে-কে তলব করল ইডি। তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। যেহেতু মন্ত্রী অসুস্থ তাই তাঁকে হেফাজতে পেয়েও জেরা করতে পারছে না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই কারণে এই দুই আপ্ত-সহায়কদের তলব করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন গোয়েন্দারা বলে সূত্রের খবর।
সূত্রের খবর, মন্ত্রীর বর্তমান আপ্ত-সহায়ক অমিত দে এগারোটা বাজার কিছু সময় আগেই পৌঁছে গিয়েছেন সিজিও-তে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। অপরদিকে, অভিজিৎ দাসও এসে পৌঁছেছেন। মূলত, এই দু’জন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর একদম ছায়াসঙ্গী ছিলেন। সেই জায়গা থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে কারা আসতেন, তাঁদের সঙ্গে কী কথোপকথন হতো, কী লেনদেন হত তা সবটাই জানা চেষ্টা করবেন গোয়েন্দারা।
যদিও, বর্তমান আপ্ত-সহায়ক অমিত দে আগেই দাবি করেছেন তিনি থাকাকালীন এই সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুই হয়নি। যা হয়েছে প্রাক্তন আপ্ত-সহায়ক অভিজিৎ দাসের সময়। তবে অমিতবাবুর কথায় কতটা সত্যতা রয়েছে তা খতিয়ে দেখতেই দু’জনকে ডাকা হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁদের আগের বয়ানের সঙ্গে বর্তমান মিলিয়ে দেখা হবে।
ইডি গতকাল আদালতে দাবি করে, এই অভিজিৎ দাসের বাড়িতে তল্লাশি চালানো সময় উদ্ধার হয় একটি মেরুন ডায়রি। যে ডায়রিতে ‘বালু দা’ নাম উল্লেখ আছে। পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন এবং কখন কে কত টাকা দিয়েছে সেই সব লেখা আছে। তাই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে আজ।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোর রাতে গ্রেফতার হন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। প্রায় ২১ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয় তিনি।
জাস্টিস সিনহার নির্দেশে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে বদল করা হয় তদন্তকারী অফিসারকে। সেই জায়গায় এবার দায়িত্বে এলেন ইডি-র নতুন তদন্তকারী অফিসার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মুকেশ কুমার। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, মিথিলেশ কুমারের নেতৃত্বে যে তদন্ত চলছিল, তাতে গতি এগোচ্ছিল না। নির্দেশনামায় উল্লেখ ছিল, ইডির ডিরেক্টরকে ৩ অক্টোবরের তদন্ত নিয়ে উপযুক্ত অফিসারকে পদক্ষেপ করতে বলতে হবে। তারপরই ইডি-র তরফ থেকে এই পদক্ষেপ। নতুন তদন্তকারী অফিসার মুকেশ কুমার ইতিমধ্যেই দায়িত্বগ্রহণ করেছেন।
সূত্রের খবর, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত কীভাবে দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, তা নিয়ে তিনি বাকি অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দিল্লি-র সদর দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গেও আলোচনা সেরেছেন। ইতিমধ্যেই এই মামলার কেস ডায়েরি হস্তান্তরিত হয়েছে।
পুর নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে এবার বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিল সিবিআই। সোমবার সকাল থেকেই তাঁর বাড়িতে তল্লাশি শুরু হয়েছে। রানাঘাটের ওই বিজেপি বিধায়ক আগে রানাঘাট পুরসভার চেয়রম্যান পদে ছিলেন। এদিকে এই প্রথম পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়াল কোনও বিজেপি নেতার।
জানা গিয়েছে, একটানা ২৫ বছর রানাঘাটের পুরপ্রধান পদে ছিলেন পার্থসারথি। প্রথম ১৫ বছর কংগ্রেসের হয়ে এবং পরের ১০ বছর তৃণমূলের হয়ে ওই পদে আসীন ছিলেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল কংগ্রেস। জিতেও যান তিনি। কিন্তু ২০২১ সালের ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে রানাঘাট বিধানসভা থেকে দাঁড় করায় বিজেপি। এবং সেসময়ও তিনি জয়ী হন।
এর আগে রবিবার ফিরহাদ হাকিম ও মদন মিত্রের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। এছাড়াও আরও ১০টি জায়গায় হানা দিয়েছিল তারা। মূলত পুর নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তেই তল্লাশি চালিয়েছিল তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। তারপর সোমবার ফের তল্লাশিতে সিবিআই।
২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো জঙ্গি হামলা। আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সেই জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ সোমবার উঠে এল কলকাতা হাইকোর্টে। নেপথ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা। কিন্তু সোমবার হল না। তবে মঙ্গলেই দুর্নীতির 'অমঙ্গল' ঘটাবে সিবিআই! হাইকোর্টে তেমনই ইঙ্গিত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো দুর্নীতি ফাঁস হবে মঙ্গলবার। সোমবার আদালতে জানাল সিবিআই।
উল্লেখ্য, সোমবারই কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই-এর আইনজীবীর ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটে 'ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো' সুবিশাল নিয়োগ দুর্নীতির পর্দাফাঁসের কথা ছিল। আবার কি নতুন কারোর নাম প্রকাশ্যে আনতে চলেছে সিবিআই? তা নিয়েই জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি ছিল। তবে সন্দীপ কুমার ভট্টাচার্য নামে এক আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে এদিন মামলা শুনলেন না বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
তবে কোন তথ্য ফাঁস করতে চলেছে সিবিআই, তার কিছুটা ইঙ্গিত এদিন দিয়ে রেখেছেন সিবিআই-এর আইনজীবী। তিনি জানিয়েছেন, ৯/১১ বা ১১ সেপ্টেম্বর এমন একটা দিন, যে দিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভেঙে পড়েছিল। আবার ওই একই দিনে স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোতে ভাষণ দিয়েছিলেন। মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতেই আগামীকাল সিবিআই ফাঁস করবে নতুন ও জোরালো তথ্য। জানাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যের মধ্যে সম্পর্কের নতুন ইতিকথা। মন্ত্রী, সচিব কীভাবে তথ্য ডিলিট করেছেন? গোপন তথ্য কোথায় রাখতেন তাঁরা? মন্ত্রীর অফিসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মানিক ভট্টাচার্যের। নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থর বৃহত্তর যোগের হদিস দেবে সিবিআই। দুর্নীতির গোপন তথ্য ফাঁস করবই। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সিবিআই।
পুজোতে কোথায় থাকবেন তিনি ? জেলে নাকি জেলের বাইরে। বুধবার তার সিদ্ধান্ত হল না। বরং আরও একমাস পর এই ব্যাপারে শুনানি হবে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, আরও একটা পুজো হয়তো জেলেই কাটাতে চলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
জামিনের আবেদন চেয়ে এদিন হাই কোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। বিচারপতির এজালাসে নাকি মামলাও উঠেছিল। কিন্তু বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ তা ৯ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছেন।
হিসাব বলছে, ১৯ তারিখ থেকে পুজো শুরু। তার আগে জামি চেয়ে এদিন হাই কোর্টে গিয়েছিলেন পার্থর আইনজীবীরা। কারণ, এর আগে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাস থেকেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেয়েছেন আর এক অভিযুক্ত মানিক ভট্টচার্যের স্ত্রী। যদিও পার্থর ক্ষেত্রে তা কাজে লাগলো না। ইতিমধ্যেই ১৩ মাস জেল খাটা হয়ে গিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গত বছরের জুলাই মাসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পার্থর দাবি, তাঁর সঙ্গে দুর্নীতির যোগ রয়েছে, তা এখনও প্রমাণ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তাঁকে মানসিক ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। যদিও শোভনকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নাম বলাতে চাপ। এই অভিযোগ জানিয়ে জেলে বসে চিঠি লেখেন কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh)। রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তলের সেই চিঠি নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। শুক্রবার আদালতে সিবিআই রিপোর্ট জমা দিয়ে দাবি করল, কুন্তলের সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন। সিবিআই জানিয়েছে, ওই চিঠির কোনও সারবত্তা নেই।
গত ২৯ মার্চ শহিদ মিনারের সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জেলে থাকার সময় মদন মিত্র, কুনাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এরপরই কুন্তল ঘোষ দাবি করেন, তাঁকে চাপ দিচ্ছে ইডি ও সিবিআই নিম্ন আদালতে চিঠিও দেন তিনি। কলকাতার হেস্টিংস থানাতেও অভিযোগ জানান। শুক্রবার আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, কুন্তলের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব ইডির। পূর্বে কুন্তল ঘোষের চিঠিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পাওয়া যায়। সে প্রসঙ্গেই জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তলব করেছিল ইডি। কিন্তু সূত্রের খবর, শুধু চিঠি নয়, নিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য কিছু তথ্য জানার জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে অভিষেককে তলব করা হয়েছে। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিকেলেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিশ দিয়ে এ কথা জানানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সূত্রের খবর, তাঁকে মঙ্গলবার ইডির কলকাতা দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।
একদিকে যখন অভিষেকের কোম্পানির ডিরেক্টর কালীঘাটের কাকু অর্থাৎ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেফতার করেছে ইডি। অন্যদিকে অভিষেকের স্ত্রীকে কয়লা পাচার মামলায় তলব করেছিল ইডি। বর্তমানে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ইডি হেফাজতে রয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী ১৪ই জুন অবধি ইডির হেফাজতে থাকবেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সেই মোতাবেক ১৩ই জুন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করা হয়েছে। সূত্রের খবর, কিছু তথ্য নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজয়কৃষ্ণকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে।
গত ২০ মে কুন্তলের চিঠির প্রেক্ষিতে অভিষেককে প্রায় ১০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। আজই কয়লা পাচার কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৪ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছে তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দোপাধ্যায়। ফলে আজই ফের অভিষেককে ইডির তলবে কিছুটা অস্বস্তিতেই রয়েছে তৃণমূল, এমনটাই সূত্রের খবর।