একটা সময় ছিল যখন বলিউডে সিনেমা মানেই তাতে একজন হিরো থাকবেন, যার চরিত্রের ব্যাপ্তি হবে সুবিশাল। পাশাপাশি সেই চরিত্রের সঙ্গে মানানসই একজন সুন্দরী হিরোইন ও একজন ভিলেন, এই কজন থাকলেই যে কোনও বলিউড ছবির মূল চিত্রপট তৈরি হয়ে যেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বলিউডও (Bollywood) এখন ছক ভেঙেছে। কোনও ছবির বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য যে আর তথাকথিত হিরো এবং হিরোইন প্রয়োজন হয় না, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বহু ছবি। বঙ্গ-কন্যা রানী মুখোপাধ্যায়ের (Rani Mukherjee) মতও খানিকটা একই। তিনি মনে করেন, কোনও সিনেমার সাফল্য অভিনেতাদের লিঙ্গভেদের উপর আর নির্ভর করে না।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রানী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ছবি ভাল হলেই দর্শক তা দেখতে আসবেন। এটাই চরম সত্যি। তাঁর কথায়, 'নারী-কেন্দ্রিক ছবি নিয়ে আজকাল খুব আলোচনা হয় যে সেগুলো আদৌ সাফল্যের মুখ দেখতে পারে কিনা। অবশ্যই পারে। ছবি ভাল হলে মানুষ সেটা দেখতে থিয়েটারে আসবেন-ই। অভিনেতা বা তারকা সেখানে পুরুষ না মহিলা, তাতে কিছুই আসে যায় না।'
কোনও ছবি হিট বা ফ্লপ হওয়া নিয়েও নিজস্ব মত পোষণ করেছেন রানী। ইদানীং কোনও ছবি ১০০ কোটির ক্লাবে প্রবেশ না করলে তাকে হিট বলতে অনীহা দেখান ফিল্ম বোদ্ধারা। এই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে রানীর। তাঁর মতে, 'কোনও ছবি হিট হওয়া নিয়েও অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে কিছু মানুষের মনে। ছবির প্রযোজক টাকা রোজগার করতে পারছেন কিনা সেটার উপর নির্ভর করে ছবিটি হিট কিনা। সিনেমাটি বক্স অফিসে কত টাকা সংগ্রহ করল, সেটাই একমাত্র মানদণ্ড হওয়া উচিত নয়। ছবিটি তৈরি করতে কত খরচ হয়েছে সেটাও মাথায় রাখা উচিত।'
'কুছ কুছ হোতা হ্যায়' খ্যাত অভিনেত্রী রানি মুখোপাধ্যায় (Rani Mukherjee) বলিউডের অন্যতম তারকা। সেখানে তাঁর অনেক পরিচিতি, অনেক বন্ধু। তবে সবচেয়ে কাছের, কোরিওগ্রাফার বৈভবী মার্চেন্ট (Vaibhavi Merchant)। বলিউডে কোরিওগ্রাফি জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন বৈভবী। ১৯৯৯ সালে 'হাম দিল দে চুকে সনম' সিনেমার 'ঢোলি তারো ঢোল বাজে' হোক বা হালফিলের পাঠান সিনেমার নাচগুলি তাঁরই কোরিওগ্রাফি করা। এতদিন তাঁর ইশারায় নাচতেন তারকারা, তবে এবার অভিনয় করবেন।
বলিউডে এবার পরিচালনায় ডেবিউ করতে চলেছে বৈভবী মার্চেন্ট। আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনা হাউজ 'যশরাজ ফিল্মস' এই সিনেমা প্রযোজনা করবেন। নিজের জীবনের প্রথম পরিচালনায় বৈভবী পাশে রাখতে চেয়েছেন প্রিয় বান্ধবী রানিকেই। নাম ভূমিকায় অভিনয় করবেন রানি। কয়েক দশক পেরিয়ে গিয়েছে রানি ও বৈভবীর বন্ধুত্ব।
কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছিল রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত সিনেমা, 'মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে'। মুক্তি পাওয়ার পরেই প্রবল প্রশংসা পেয়েছিল ছবিটি। যত সময় পেরোচ্ছে রানি যেন আগের থেকেও বেশি পরিণত অভিনয় করছেন। তাই তাঁর থেকে দর্শক একটু বেশিই প্রশংসা করছেন। বৈভবীর সঙ্গে তাঁর নতুন সিনেমা কী বিষয় নিয়ে আসে, সেটাই দেখার।
বলিউডের (Bollywood) বিখ্যাত অভিনেত্রী রানী মুখোপাধ্যায়ের (Rani Mukherjee) ছবি দেখেননি, এমন খুব কম মানুষই রয়েছেন। তবে জানেন কি রানীর মেয়ে আদিরা (Adira) রানীর কোনও ছবিই এখনও পর্যন্ত দেখেনি। এমনই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন রানী। আদিরার তার মায়ের ছবি না দেখার পিছনে এমন কী রহস্য রয়েছে, সেই বিষয়েই জানিয়েছেন রানী।
রানী জানিয়েছেন, মেয়ে আদিরা এখনও তার মাকে অভিনেত্রীর চোখে দেখতে অভ্যস্ত নয়। সে যদিও ছোট, ফলে ছবি দেখার তার তেমন বয়স হয়নি। তবুও আদিরা তেমনভাবে তাঁর অভিনয় করা কিছুই দেখেনি। কারণ আদিরা তার মা ও অভিনেত্রীর মধ্যে তফাৎ করতে পারে না। রানী বলেন, 'আমি যদি ছবিতে কোনও কারণে কাঁদার অভিনয় করি, তবে আদিরাও কেঁদে ফেলে। কারণ সে মনে করে যে, আমি মানে তার মা কষ্ট পেয়েছে। তবে আগামী ৩-৪ বছর পর সে হয়তো এই তফাৎটা করতে পারবে।'
রানী এও জানিয়েছেন যে, আদিরা তাঁর ছবি মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে-র ট্রেলার দেখেছে, আর সেটা দেখেই আদিরা আবেগপ্রবণ হয়ে কাঁদতে শুরু করেছিল। উল্লেখ্য, আদিরা রানীর জীবনে আসার পর তিনি হাতেগোনা কিছু ছবিই করেছেন। কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছিল মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে। এই ছবির সাফল্যের পর রানী এখন মর্দানি ৩-এর জন্য উৎসুক।
রানী মুখোপাধ্যায় (Rani Mukherjee), এই নামটি বললেই আর কোনও পরিচয়ের দরকার পড়ে না। এর মধ্যেই মুক্তি পেয়েছে তাঁর ছবি 'মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে'। বক্স অফিসে দারুন সাড়া ফেলেছে ছবিটি। এমনকি দর্শকদের মনও জয় করে নিয়েছে সিনেমাটি। সম্প্রতি রানী মুখোপাধ্যায় একটি সাক্ষাৎকারে এমন এক অবাক করা ঘটনার কথা জানিয়েছেন যা শুনে আকাশ থেকে পড়েন তাঁর অনুরাগীরা। এই গল্প যেন হার মানাবে কোনও ছবির গল্পকেও। তবে কী এমন বললেন তিনি!
রানী জানিয়েছেন, তিনি নাকি তাঁর জন্মের পরই তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। শুনে অবাক হলেন তো! আসল গল্প হল, রানী জন্মের পর হাসপাতালেই অন্য এক শিশুর সঙ্গে অদল-বদল হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর হাসপাতালে হইহই পড়ে যায়। তিনি জানিয়েছেন, তিনি এক পঞ্জাবি পরিবারে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
রানী আরও জানিয়েছেন, কীভাবে তাঁর মা কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায় তাঁকে খুঁজে বের করেছিলেন। তিনি জানান, যখন হাসপাতালে তাঁর মায়ের কোলে অন্য শিশুকে দেওয়া হয়, তখনই তিনি বুঝতে পারেন, এটি তাঁর নিজের সন্তান নয়। ফলে শুরু হয় খোঁজাখুজি। এরপর তাঁর মা রানীর চোখ দেখে তাঁকে চিনতে পারেন। কারণ রানীর চোখের রং বাদামি। সেই মুহূর্তে ঠিক রানীর চোখই যেন হয়ে ওঠে তাঁর পরিচয়! ফলে মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যে সন্তানের কোথাও চলে যাওয়া এত সহজ নয়, তা ফের প্রমাণিত। রানী আরও জানিয়েছেন, এই কোলবদলের কাহিনীর জন্য তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিয়ে এখনও ঠাট্টা-মশকরা করেন।
শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) পাঠানকে (Pathan) টক্কর রানী মুখোপাধ্যায়ের (Rani Mukherjee) ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ (Mrs Chatterjee Vs Norway)। সপ্তাহের শেষে বক্স অফিসে বলিউডের আগের সব নজির ভেঙে দিয়েছে এই ছবি। ৭৪৫ হাজার নরওয়েজিয়ান মুদ্রা এসেছে ছবির থেকে যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৯ লক্ষ টাকা। সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবি ‘পাঠানকে’ও ছাপিয়ে গিয়েছে রানী অভিনীত এই ছবি। ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ সেই অর্থে ভারতীয় ছবির জয়। এই ছবি দর্শকদের আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছে।
সন্তানের অধিকার চেয়ে এক প্রবাসী মায়ের লড়াইয়ের কাহিনিতেই গড়ে উঠেছে এই ছবি। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছে রানি। বাংলার অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যকেও দেখা যাবে এই ছবিতে। প্রযোজক সংস্থার পক্ষ থেকে ছবিটির সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানানো হয়েছে। প্রযোজক নিখিল আদবানী বলেন, “এক জন সাহসী লড়াকু মায়ের গল্প এত মানুষকে ছুঁয়ে গিয়েছে দেখে ভাল লাগছে। দর্শকদের প্রাণিত করতে এমন ছবি আরও তৈরি করব আমরা।”
জি স্টুডিয়োর কর্ণধার শরিক পটেল লিখেছেন, “এটি সেই ম্যাজিক তৈরি করেছে, যা জীবন থেকে উঠে আসা গল্প পারে। দর্শকের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। সাগরপারের দর্শকও যে এতে সাড়া দিয়েছেন, তাতে আমরা আনন্দিত।”
এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে ১৭ মার্চ। নরওয়ের দর্শকের কাছ থেকে বিপুল ভালবাসাও পেয়েছে এই ছবি। বলিউডের অন্যতম ছবি হিসাবেও একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে অসীমা ছিব্বর পরিচালিত ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’।