আজ রামনবমী। প্রতি বছরের তুলনায় এবছরের রামনবমী যেন একটু অন্য়রকম। কারণ চলতি বছরে জানুয়ারি মাসে অযোধ্য়ায় রামমন্দিরের রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। তারপর প্রথম রামনবমী উৎসব। সেই উপলক্ষ্য়ে সাজসজ্জায় সেজে উঠেছে রামমন্দির। হলুদ পোশাকে সাজানো হয়েছে রামলালাকে। বুধবার সকাল থেকেই নেমেছে ভক্তদের ঢল। ইতিমধ্যেই রীতিনীতি মেনে সম্পন্ন হয়েছে রামলালার দিব্য় অভিষেক।
বুধবার দুপুর ১২টার একটু আগে মন্দিরের উপরের তলায় ইনস্টল করা একটি আয়নায় সূর্যের আলো পড়লে তা ঠিক ৯০ ডিগ্রিতে একটি পাইপের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে এসে রামলালার কপালে এসে পড়বে। নলের অন্য প্রান্তে থাকা দ্বিতীয় আয়না ব্যবহার করে সূর্যের রশ্মিকে আবার প্রতিফলিত করানো হয়। এরপরে এটি পিতলের নলের সাহায্যে আবার ৯০ ডিগ্রিতে প্রতিফলিত করানো হয়। শ্রী রামচন্দ্র সূর্যবংশে জন্ম নেন। পরবর্তীকালে রাজা রঘুর নামানুসারে রঘুবংশ নামেও পরিচিত ছিলেন দশরথের বংশধরেররা। আর সেই কারণেই রামনবমীতে রামলালার কপালে বিশেষ সূর্য তিলক।
রামনবমী উপলক্ষ্য়ে বুধবার ভোররাত ৩ টের সময় ভক্তদের জন্য় রামমন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিন রাত ১২ টা পর্যন্ত রামলালা দর্শন করতে পারবেন ভক্তরা। রাম নবমীর বিশেষ পুজোর জন্য ৫৬ ধরনের ভোগ প্রস্তুত করা হয়েছে। রামলালাকে এই বিশেষ নৈবেদ্য দেওয়া হবে। পূজা সম্পন্ন হওয়ার পর এই নৈবেদ্যও ভক্তদের দেওয়া হবে।
২২ জানুয়ারি ছিল সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত! সেদিন উদ্বোধন করা হয় নবনির্মিত রাম মন্দির ও এর পাশাপাশি গর্ভগৃহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় রামলালা। আর সাধারণের জন্য রাম মন্দিরের দ্বার খোলার পর থেকেই মন্দিরের সামনে জনজোয়ার। ফলে বিপুল সংখ্যক ভক্তদের কথা ভেবেই রাম মন্দিরের দর্শনের সময় পরিবর্তন করা হল। রামলালা দর্শন এখন থেকে ভক্তরা করতে পারবেন ভোর ছ'টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত।
কোটি কোটি মানুষের জনসমাগমে অযোধ্যা ঘিরে প্রবল উৎসাহ সাধারণ মানুষের মনে। প্রথম দিনেই তিন কোটির বেশি অনুদান জমা পড়েছে। এদিকে ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ পুলিস। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ তাঁদের পূর্ব নির্ধারিত অযোধ্যা ভ্রমণসূচি স্থগিত রেখেছে। অযোধ্যায় ঢোকার সমস্ত বাস রুটও বন্ধ করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। তা সত্ত্বেও ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে হাজারে হাজারে মানুষ প্রতিদিন আসছেন রামলালার দর্শনে। আর এরই মাঝে সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই রামলালা দর্শনের সময় পরিবর্তন করা হল। এখন থেকে ভক্তরা রামলালা দর্শন করতে পারবেন ভোর ছটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত। এই সময় টানা খোলা থাকবে রাম মন্দিরের দরজা।
প্রথমে প্রতিদিন রাম মন্দিরের দর্শনের সময় নির্ধারিত হয়েছিল সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা। এরপর আবার দুপুর ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছিল মন্দিরের দরজা। ফের ২টো থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দর্শনের অনুমতি মিলছিল। কিন্তু, কাতারে কাতারে ভক্ত সমাগমের কথা মাথায় রেখে এবার থেকে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রামলালার দর্শন করতে পারবেন পুণ্যার্থীরা।
রামলালা দর্শনে অযোধ্যায় ভক্তদের সুনামি। যার জেরেই চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হল রামমন্দির উদ্বোধনের পরের দিন সকালেই। জানা গিয়েছে, পুলিসের ব্যারিকেড ভেঙে রামলালা দর্শনে মন্দিরের দিকে এগিয়ে যান পুণ্যার্থীরা। পরিস্থতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিস বাহিনী আনছে শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট।
সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পুলিসের ব্যারিকেড ভেঙে হুড়মুড় করে মন্দিরের দিকে ছুটছে জনস্রোত। সেই সময়েই বেশ কয়েক জন পদপিষ্ট হয়েছেন বলে দাবি বেশ কিছু সংবাদ সংস্থার।
উল্লেখ্য, সোমবার দুপুর ১২টা ২৯ মিনিটে ‘শুভ মুহূর্তে’ রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। উদ্বোধনের পর মঙ্গলবার সকাল ৭টায় খোলে মন্দিরের দরজা। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে মন্দির। পরে আবার দুপুর ২টো থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত রামলালা দর্শন চলবে। সকাল সাড়ে ৬টায় ‘জাগরণ’ অর্থাৎ আরতি এবং সন্ধে সাড়ে ৭টায় সন্ধ্যারতি হবে। তা অনলাইনেও দেখতে পাবেন ভক্তরা। যদিও ভিড়ের চাপে আপাতত দর্শন বন্ধ। এছাড়া মন্দির সংক্রান্ত আরও নিয়মাবলী প্রকাশ করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। সেগুলি হল-
* দিনে তিনবার আরতি হবে।
* প্রত্যেকবার আরতিতে ৩০ জন করে ভক্তকে সুযোগ দেওয়া হবে রামলালার আরতি দর্শনের।
* প্রত্যেকের কাছে থাকতে হবে পূর্ব অনুমতি পত্র এবং ভারত সরকারের দেওয়া সরকারি পরিচয় পত্র।
* অফলাইন এবং অনলাইনে এই আরতি দর্শনের পাস পাওয়া যাচ্ছে। অফলাইনে অযোধ্যার মন্দিরের ক্যাম্প অফিস থেকে মিলবে পাস।
* অনলাইনেও বুক করা যাচ্ছে এই পাস। শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের ওয়েবসাইটে লগইন করে পাসের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন ভক্তরা।
* দুপুরে ভোগ আরতি ১২টায়।
আরতি দর্শন করার জন্য আরতির নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পৌঁছে যেতে হবে মন্দিরে।
রামমন্দির উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেজে উঠেছে অযোধ্য়া। আবেগ ও আনন্দে মেতেছে গোটা দেশবাসী। রামমন্দিরের রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে। উদ্বোধনের আগেই উৎসবনগরীতে উপস্থিত হয়েছেন বলিউড তারকারা। এছাড়াও অযোধ্য়ায় হাজির হয়েছেন হাজার হাজার ভক্তরা। ভক্তির সম্মিলিত মেলবন্ধন হয়েছে আজ।
এদিন সকালে রাম মন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হন অমিতাভ বচ্চন ও তাঁর ছেলে অভিষেক বচ্চন। কিন্তু দেখা মেলেনি বচ্চন বধূ অভিনেত্রী ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের। এমনকি অযোধ্য়ায় রাম চরণ করতে একসঙ্গে হাজির হন ভিকি ও ক্য়াটরিনাও। এদিন ক্য়াটরিনার পরনে দেখা গিয়েছে শাড়িতে এবং ভিকির পরনে দেখা যায় ধুতিতে।
অন্য়দিকে অযোধ্য়ায় হাজির মুকেশ আম্বানি ও তাঁর স্ত্রী নিতা আম্বানি। এছাড়াও শাড়ি ও ধুতি-পাঞ্জাবিতে দেখা পাওয়া গিয়েছে আলিয়া ও রণবীরকেও। মাধুরী দিক্ষীত সহ রাজনীকান্ত, অনুপম খের, হেমা মালিনী, জ্যাকি শ্রফ, রোহিত শেট্টি, রাজকুমার হিরানি এর মতো বিশিষ্ট তারকারাও এসেছেন এই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী থাকতে।
রাম মন্দিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হাতে পুজোর ডালা নিয়ে ধীরে ধীরে গর্ভগৃহের দিকে এগিয়ে যান। এরপর পুজোয় বসলেন প্রধানমন্ত্রী। রামলালার বিগ্রহে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হওয়া আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা।
রুপোর মুকুট হাতে রামমন্দিরে এলেন প্রধানমন্ত্রী। গর্ভগৃহে উপস্থিত উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্য়পাল আনন্দীবেন পটেল, আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত ও রাম মন্দিরের প্রধান পুজারী।
শত অপেক্ষার অবসান। আজ উদ্বোধন হতে চলেছে অযোধ্যার রাম মন্দির। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য় অধির আগ্রহে রয়েছেন গোটা দেশের মানুষ। তবে শুধু দেশ নয় গোটা বিশ্ব মুখিয়ে রয়েছে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা দেখার অপেক্ষায়। সরয়ূর তীরে মহোৎসবের সাজে সেজে উঠেছে অযোধ্য়ার রামলালা ধাম। এদিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার আচার। আবেগের উৎসবে আনন্দিত।
সোমবার দুপুরে নবনির্মিত কৃষ্ণশিলা মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা। আর সেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতিমধ্য়েই অযোধ্য়ায় পৌঁছে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বিমান বন্দর থেকে অযোধ্য়া যাবেন হেলিপ্য়াডে। তাই নিরাপত্তায় চাদরে মোড়া রয়েছে রাম মন্দির। মোতায়েন রয়েছে ১৩ হাজার নিরাপত্তারক্ষী। আমন্ত্রিত অতিথি ও বিশেষ অনুমতিপত্র ছাড়া প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে হাজির হয়েছেন রাজনৈতিক ব্য়ক্তি থেকে শুরু করে সেলিব্রিটিরা।
মনের ভক্তি ও ইচ্ছা শক্তিতে নিজের হাতে ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের রামায়ণের গোটা চিত্র তুলে ধরেছেন তাঁত শাড়িতে। প্রায় এক বছর সময় ধরে একটির পর একটি সুতো দিয়ে নিখুঁতভাবে গোটা রামায়ণের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁত শাড়িতে রানাঘাট থানার হবিবপুর রাঘবপুর মাঠপাড়ার বাসিন্দা হস্তচালিত তাঁতশিল্পী পিকুল রায়।
সেই শাড়ি অযোধ্যার রামমন্দিরের রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন ভগবান সীতা মায়ের চরণে অর্পণ করতে চান শিল্পী পিকুল রায়। আগামী ২২ তারিখে অযোধ্যায় রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। সেই দিনের উদ্দেশেই হবিবপুর স্টেশন থেকে অযোধ্যার উদ্দেশ্যে ট্রেনে রওনা তাঁতশিল্পী পিকুল রায়ের। তিনি সঙ্গে নিয়েছেন হাতে তৈরি রামায়ণের গোটা চিত্র ফুটিয়ে তোলা তাঁত শাড়ি। ভাইয়ের এই মহৎ কাজে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন দাদা অনন্ত রায়। তাই ভাইকে সঙ্গ দিতে ভাইয়ের সাথে দাদা অনন্তও অযোধ্যায় রওয়ানা দিয়েছেন। তিনি জানালেন, অযোধ্যার রামমন্দিরের তরফ থেকে তেমন কোনও সাড়া মেলেনি। অযোধ্যা মন্দিরের তরফে কোনও সাড়া না মিললেও, মনের ভক্তির বলেই সেই ইচ্ছাপূরণের জন্যই অযোধ্যার উদ্দেশে রওনা। তবে পিকুল রায় ও দাদা অনন্ত রায়ের অযোধ্যায় যাওয়ার খবর জানাজানি হতেই গোটা গ্রাম উপচে পড়ে উৎসাহিত করতে।
পিকুল রায়ের একবছর সময় লেগেছে শাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করতে। সম্পূর্ণ তাঁতের উপর হাতের বুনোনে তৈরি এই শাড়ি দেখলে মনে হবে এটা ছাপা অথবা প্রিন্টের, কিন্তু না গোটাটাই হস্তশিল্প। এই হচ্ছে বাংলার তাঁত শিল্পের অবদান, যা আজকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন শিল্পী পিকলু রায়। রাম-সীতা, লক্ষণ, হনুমানকে হাতের বুনোনের মাধ্যমে শাড়িতে ফুটিয়ে তুলেছেন পিকলু। আগামী ২২শে জানুয়ারি অযোধ্যার রামমন্দিরে শাড়িটি উপহার হিসেবে দেবেন ও সেখানে উপস্থিত থেকে অঞ্জলিও দেবেন দাদা-ভাই।
রাত পোহালেই ২২ জানুয়ারি, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা, এর পাশাপাশি নবনির্মিত রাম মন্দিরের উদ্বোধন। ফলে সেই ঐতিহাসিক ক্ষণের জন্যই অপেক্ষায় সারা দেশবাসী। রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের শুভ ও ঐতিহাসিক উপলক্ষ্যে, সকাল ১০টা থেকে প্রাণ-প্রতিষ্ঠা মুহুর্তের ঠিক আগে পর্যন্ত, প্রায় ২ ঘণ্টা শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরে শুভ পবিত্রতার জন্য 'মঙ্গল ধ্বনি'র আয়োজন করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ৫০টিরও বেশি মনোমুগ্ধকর বাদ্যযন্ত্র প্রায় ২ ঘন্টা ধরে বাজানো হবে। ভগবান শ্রী রামের সম্মানে বিভিন্ন ঐতিহ্যকে একত্রিত করে এই গ্র্যান্ড কনসার্টটি প্রতিটি ভারতীয়র জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য চিহ্নিত করবে। এই শুভ সংগীতানুষ্ঠানের ডিজাইনার এবং সংগঠক হলেন যতীন্দ্র মিশ্র, যিনি একজন প্রখ্যাত লেখক, অযোধ্যা সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ এবং শিল্পী। এই কাজে তাঁকে সহায়তা করেছে কেন্দ্রীয় সঙ্গীত নাটক আকাদেমি, নয়াদিল্লি।
মন্দির প্রাঙ্গণে ভারতীয় ঐতিহ্যে ব্যবহৃত সব ধরনের যন্ত্র বাজানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে পাখাওয়াজ, বাঁশি, উত্তর প্রদেশের ঢোলক, কর্ণাটকের বীণা, মহারাষ্ট্রের সুন্দরী, পাঞ্জাবের আলগোজা, ওড়িশার মর্দাল, মধ্যপ্রদেশের সান্টুর, মণিপুরের পুং, অসমের নাগারা ও কালি, ছত্তিশগড়ের তাম্বুরা, বিহারের পাখাওয়াজ, দিল্লির পাখাওয়াজ, শেহনাই, রাজস্থানের রাবণহাঠ, বাংলার শ্রীখোল, সরোদ, অন্ধ্রের ঘটম, ঝাড়খণ্ডের সেতার, গুজরাটের সান্তার, নাগাস্বরম, তাভিল, তামিলনাড়ুর মৃদং এবং উত্তরাখণ্ডের হুডা-এর মতো বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে।
রবিবার পেরোলেই সোমবার রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা। অবশেষে রামলালা বিরাজমান হবেন তাঁর নিজগৃহে। তারই কাউন্টডাউন এখন শুরু হয়ে গিয়েছে রামনগরীতে। ২২ জানুয়ারির পুণ্যক্ষণকে বরণ করে নিতে সেজে উঠছে অযোধ্যা। দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রামের মূর্তি। জনতার ঢল সামলাতে বন্ধ অযোধ্যা আসার দুটি স্টেশনও। শুধু চূড়ান্ত কাউন্টডাউনের প্রহর গুণছে ১৪০ কোটির দেশ।
পাঁচ বছর বয়সী রামলালার মূর্তি বসেছে গর্ভগৃহে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে সেই মূর্তির ছবি। কন্নড় শিল্পী যোগীরাজ অরুণের হাতে তৈরি কৃষ্ণশীলার এই মূর্তি ঘিরে আবেগও উঠেছে তুঙ্গে। জানা গিয়েছে, ২০০ কেজি ওজনের এই মূর্তির উচ্চতা ৪.২৪ ফুট আর চওড়ায় তিন ফুট। ভগবান রামের বাল্যকালকে হাতে ফুটিয়ে তুলেছেন যোগীরাজ অরুণ। সূত্রের খবর, মূর্তি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে বিষ্ণুর দশ অবতার স্থান পেয়েছে মূর্তিতে। একদম নীচে রয়েছেন হনুমানজি এবং গরুর। মাথায় সূর্য ভগবান। মৎস্য, কুর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, কল্কি অবতার খোদাই করা মূর্তিতে।
এদিকে প্রশাসন সূত্রে খবর, শনিবার থেকে বন্ধ অযোধ্যা ধাম এবং ফৈজাবাদ স্টেশন। পুণ্যার্থীদের চাপ সামলাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রক। জেলা প্রশাসনের অনুরোধেই এই দুই স্টেশনে ট্রেন ঢোকানো বন্ধ করে দিয়েছে রেল মন্ত্রক। অযোধ্যা ধাম এবং ফৈজাবাদ স্টেশনে ঢোকার আগে অনেক ট্রেনের অভিমুখ বদলে দেওয়া হয়েছে। ফলে রবিবার থেকে যাঁদের বুকিং টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছে রেল মন্ত্রক, এমনটাই সূত্রের খবর। ইতিমধ্যে পুণ্যার্থীদের ভিড়ে হিমশিম অবস্থা জেলা প্রশাসনের। লতা মঙ্গেশকর চক থেকে নির্মীয়মান রামমন্দির এবং সরযূ তীরে শুধুই কালো মাথার ভিড়। ট্রেন ছাড়াও পায়ে হেঁটে, ব্যক্তিগত গাড়িতে কিংবা গোরু-মহিষের গাড়িতে চেপে সহস্র পুণ্যার্থী অযোধ্যায় প্রবেশ করছেন। তাঁদের সামলাতে হিমশিম অবস্থা স্থানীয় প্রশাসনের। তাই মূল অনুষ্ঠানের দিন ভিভিআইপিদের উপস্থিতির মধ্যে কোনওপ্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রেলপথ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনের।
আবার শনিবার কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মন জপ নাম এই গানটি গেয়েছেন বাঙালি শিল্পী পায়েল কর। সেই ইউটিউব লিঙ্ক-সহ সামাজিক মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, 'প্রভু শ্রীরামের প্রতি বাংলার মানুষের অগাধ আস্থা। সোমবারের অনুষ্ঠানের পর মিষ্টিমুখ আবশ্যিক। তাই হায়দরাবাদ থেকে অযোধ্যায় এসেছেন ১২৫৬ কেজির লাড্ডু। তিরুপতি বালাজি মন্দির পাঠিয়েছে ৩ টনের লাড্ডু।'
রামমন্দির উদ্বোধনের দিন ২২ জানুয়ারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বাংলার নতুন প্রজন্ম যাতে ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠতে পারে সে কথা মাথায় রেখে তাঁর এই চিঠি। অন্যদিকে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ওইদিন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করেছে।
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে সুকান্তর দাবি, “চলতি বছরের জন্য আপনার বিশেষ অধিকারে একটি বাড়তি ছুটি উপহার দিন রাজ্যবাসীকে। এ বিষয়ে আমি আপনার সদুত্তর প্রার্থনা করি।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি চিঠিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমি লিখিত অনুরোধ করেছি যেন উনি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে আগামী ২২ জানুয়ারি ২০২৪-এর পবিত্র দিনে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করেন। এর ফলে বাংলার নতুন প্রজন্ম ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠতে পারবে এবং তাদের মন ভারতীয় গরিমায় প্লাবিত হবে।”
২২ জানুয়ারি ঘটতে চলেছে অপেক্ষার অবসান। ওইদিনই অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। সেদিন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার সাক্ষী থাকবে গোটা দেশ। উত্তরপ্রদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওইদিন সেরাজ্যের সমস্ত জেল থেকে সরাসরি দেখানো হবে সেই মুহূর্ত। আর এ বিষয়ে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত জেল সুপারিটেন্ডেন্টকে। যোগীরাজ্যের কারা ও গৃহরক্ষী প্রতিমন্ত্রী ধরমবীর প্রজাপতি জানিয়েছেন, বন্দিদের দেশের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকা প্রয়োজন। তাই রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা ‘লাইভ’ দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উদ্বোধনের দিন হাজির থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্প্রতি অযোধ্যায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা বিশ্ব আগামী ২২ জানুয়ারি ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্যে অপেক্ষা করছে। অযোধ্যাবাসীর উন্মাদনা-আবেগ অনেক বেশি। তবে আগামী ২২ জানুয়ারি দেশের প্রত্যেক বাড়িতে যাতে রামজ্যোতি জ্বালানো হয় সেই আবেদন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গোটা দেশে যাতে দীপাবলি পালন করা হয় সেই আবেদনও রাখেনও। আলোয় আলোকিত হবে গোটা দেশ।
উল্লেখ্য, গর্ভগৃহে রামের যে মূর্তিটি থাকবে তা তৈরি করেছেন কর্ণাটকের মাইসুরুর বাসিন্দা অরুণ যোগীরাজ। রামলালার মোট তিনটি মূর্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে, ওই তিনটি মূর্তিই মন্দিরে থাকবে এবং সমান গুরুত্ব পাবে। সূত্রের খবর, ওই মূর্তিগুলি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, আগামী ১০০০ বছরে তার কোনও সংস্কারের প্রয়োজন হবে না। রামের পাঁচ বছর বয়সী অর্থাৎ বালক রূপকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তুলসীদাস রচিত রামচরিতমানস এবং মহর্ষি বাল্মীকির রামায়ণে রামের যে রূপ বর্ণনা করা হয়েছে সেই আদলেই মূর্তিগুলিকে তৈরি করা হয়েছে।