কাতার বিশ্বকাপ শ্রমিক নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে। খেলা দেখে কী লিখছেন তিনি
আমি সারা জীবনে আবেগের কাছে মাথানত করে চলার পক্ষে নই। আবেগ তো মানুষ মাত্রই থাকবে কিন্তু কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে মানসিক ভাবে কঠোর না হলে প্রকৃত দর্শনে পিছিয়ে যাবো। আমার প্রথম জীবন থেকেই লেখাপড়ার সঙ্গে কোনও আপস করিনি। বন্ধুবান্ধর বলতো তুই তো পড়াশুনায় কামাল করছিস, সেটাকেও গায়ে মাখিনি। কারণ পড়তে হবেই। রাজনীতিতেও আপোস করিনি, তার ঘটনা তো সকলেই জানে। ছাত্র আন্দোলন থেকে আজ শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত ও দায়িত্বে আছি। কিন্তু আমার খেলা বিশেষ করে ফুটবল অত্যন্ত প্রিয়। একদিকে মোহনবাগান অন্যদিকে ব্রাজিল। ব্রাজিল জিতলে খুশিতে মন ভরে ওঠে উত্তেজনা থাকে। কিন্তু ব্রাজিল হারলে আর খেলা দেখি না, এটাই আমার জীবনের আবেগ এবং এখানেও আপস নেই।
সত্যজিৎ রায়, জটায়ু সন্তোষ দত্তের মৃত্যুর পর বলেছিলেন, সন্তোষ নেই আর ফেলুদার ছবি করবো না। লক্ষ করে দেখুন মানিকবাবুর প্রিয় উপন্যাসে ফেলুদাই প্রধান অথচ জটায়ুকে বা সন্তোষ দত্তকে বাদ দিয়ে নয়। তাঁর কথায় এটা প্রমাণিত হয়েছিল সন্তোষ দত্তর মতো চরিত্রাভিনেতার বিকল্প নেই। জটায়ু ভাঁড় নয়, শিল্পী, তা যেভাবেই কেউ ভাবুক না কেন। আমার কাছে জটায়ু এক আইকনিক চরিত্র যেমন তেমন ফুটবলে আইকনিক দল ব্রাজিল।
আজকের ফুটবলে ফ্রান্স,স্পেন,ক্রোয়েশিয়া, জাপান বা ইউরোপিয়ান বা আফ্রিকান দলগুলি যাই খেলুক না কেন ব্রাজিল ছাড়া ফুটবল হয় না। পেলের বিকল্প আজ অবধি হলো কি? নেদারল্যান্ডের জোহান ক্রুয়েফ বলেছিলেন আমরা বিশ্বের সব ফুটবলার একদিকে, পেলে অন্যদিকে। ৫৮,৬২,৭০ তিনবারই বিশ্বজয়ী ব্রাজিলের সম্পদ ছিলেন পেলে। কত খেলোয়াড় আসবে যাবে কিন্তু পেলের বিকল্প বা তাঁর রেকর্ড ভাঙার কেউ আছে কি?
তবে এরই মধ্যে আজ পেলে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসালয়ে। এক ফ্রান্সের এমবাপে ছাড়া তাঁকে স্মরণ কেউ করেছে কি? ব্রাজিলকে আমরা ভালোবেসেছি তো পেলের জন্যই। দরিদ্র একটি বিশাল দেশ, যে দেশের খেলোয়াড়দের অনেকেরই খাওয়ার পয়সা ছিল না। সেখান থেকে আজ উন্নয়নগামী দেশগুলির অন্যতম ব্রাজিল। না ব্রাজিলহীন ফুটবলে আগ্রহ নেই। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার বিশ্বকাপ অভিনেতা-বিধায়ক চিরঞ্জীত চক্রবর্তীর চোখে। কী লিখছেন তিনি
অনেক বিশেষজ্ঞই বিশ্বকাপ নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। কে হতে পারে চ্যাম্পিয়ন, তার ভবিষ্যৎবাণীও চলছে কিন্তু আমি এদের দলে নেই। খেলা বিশেষ করে আজকের ফুটবল নিয়ে আগাম মন্তব্য করাটা অনুচিত বলেই মনে করি। লক্ষ্য করে দেখুন, কি খেলাটাই প্রথম রাউন্ডে খেললো এশিয়া-আফ্রিকার দলগুলি। যেকোনও সময়ে হারিয়ে দিলো তথাকথিত চ্যাম্পিয়ন দলগুলিকে। জাপানের খেলা তো আমার দারুণ লেগেছে, মনে হয় বাঙালি ফুটপ্রেমীদের মনে দাগ কেটেছে জাপান। গত রাতের লাতিন আমেরিকার দল দু'টির কী অবস্থা! ব্রাজিল শেষ মুহূর্তে ৩ স্ট্রাইকিং খেলোয়াড়দের তুলে নিলো, তখন হাতে ছিল মাত্র ৬ মিনিট। কোনও মানে হয়! একটা কথা এই নেইমারকে কখনোই আমার সর্বকালের সেরাদের মধ্যে ফেলবো না।
আর্জেন্টিনার বিষয়েও একই ঘটনার জেরক্স। দিব্বি এগিয়ে থেকেও দু গোল খেয়ে গেলো মেসির দল। নেদারল্যান্ডের দ্বিতীয় গোলটিতে অসাধারণ স্পটকিকের ফসল। যাই হোক এবারে নজর বাকি দুই কোয়ার্টার ফাইনাল।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, সিনেমা জগতের অভিনেতা থেকে রাজনীতির বিধায়ক হলেও খেলার প্রতি আকর্ষণ আমার খুব বেশি। শুধু বিশ্বকাপ নয় ইউরোপিয়ান ক্লাব কাপ ফুটবলের খেলাও নিয়মিত রাত জেগে দেখে থাকি যার ফলে আজকের বিশ্বকাপারদের খেলা দেখে আমি অভ্যস্থ। আজকের দুটি ম্যাচ জমজমাট। প্রথমে ফ্রান্স বনাম ইংল্যান্ডের খেলার মধ্যে সামান্য হলেও আমি ইংলিশম্যানদের।
এটা সত্যি যে ফ্রান্সের দলটি দারুণ ফর্মে আছে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এরাও কিন্তু গ্রুপ লিগে হেরেছে। ওদের দুর্বলতা ইংল্যান্ড জানে। ইংল্যান্ড একমাত্র দল যারা টোটাল ফুটবল খেলছে, একটি ম্যাচেও হারেনি। গোল থেকে ডিফেন্স হয় মিডফিল্ড এবং স্ট্রাইকার সবাই চনমনে, দ্রুত দৌড়ায় ৭ জন একসঙ্গে আবার ৬ জন দ্রুত নেমেও আসে। অন্যদিকে এমব্যাপে, জিরুডরা ঠিকই। কিন্তু অনেকটাই বাঁ দিক থেকে এমবাপের আক্রমণের উপর নির্ভর করে ফ্রান্স।
ওকে আটকাতে নিশ্চই কিছু প্ল্যান আছে কোচ সাউথগেটের মাথায়। অন্যদিকে পর্তুগাল ও মরক্কো। খুব চাপের খেলা, আমি মনে করি রোনাল্ডো তাঁর সেরা ফর্ম হারিয়েছে। দৌড়চ্ছে ঠিকই কিন্তু যে প্রেসিং ফুটবল খেলা উচিত তা কোথায় রোনালদোর মধ্যে? তবে নজর থাকবে নতুন তারকা রামোসের উপর। মরক্কো যদি খেলাটাকে কোনওভাবে টাইব্রেকে নিয়ে যায় তবে বিপাকে পড়বে রোনাল্ডো বাহিনী। অতএব ভবিষ্যৎবাণী বৃথা। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর চোখে কাতার বিশ্বকাপ। 'অবিশ্বাস্য' জাপানের উপর বাজি ধরছেন কি মন্ত্রী, কী বলছেন দমকলমন্ত্রী?
ঘুরে এলাম অসাধারণ দেশ কাতার এবং রাজধানী দোহা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে নাকি বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে কাতার সরকার। বিমানবন্দর থেকে হোটেল যেখানেই যান না কেন, আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত প্রশাসন। খুব সুন্দর বানিয়েছে প্রেস কর্নার। সারা বিশ্বের কত যে মিডিয়া এসেছে তাদের সরঞ্জাম নিয়ে না দেখলে কল্পনা করা যাবে না। ওই দেশে দেখলাম প্রচুর ভারতীয় এবং বাংলাদেশি। খিদে পেলে অনায়াসেই পছন্দসই খাওয়ার পেয়ে যাবেন। অনেকেই সে দেশের প্রশাসনকে সমালোচনা করছে, কিন্তু আমি বলবো যস্মিন দেশে যদাচার। এমনিতেও ইউরোপীয়, বিশেষ করে ইংরেজ দর্শকরা বরাবরই হুজুগে। আগের বিশ্বকাপের মতো রাস্তাঘাটে হুজ্জুতি একেবারেই করা যাবে না এই বিশ্বকাপে। এদিকে সে দেশে অনেক বঙ্গ সন্তানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তারা বিস্মিত চোখেই বললো, আপনি এখানে? বললাম কয়েকটা দিন থাকবো মাত্র। এরপরই ঢুকে গেলাম বিশ্বকাপের আসরে। দুর্দান্ত স্টেডিয়ামগুলি, সম্ভবত বিশ্বসেরা। ভিআইপি বলে নিশ্চিন্ত বসার জায়গা পেলাম বটে কিন্তু খেলার মাঠে আম জনতার সঙ্গে বসে খেলা দেখার আনন্দ আলাদা।
দুটি খেলা দেখলাম, বাকি হোটেলে বসে। পর্তুগাল এবং ঘানার গ্রুপ লিগের খেলা। দারুন এই খেলায় ৩-২ গোলে পর্তুগাল জিতলো বটে। শুধু তাই নয় অন্যতম প্রিয় খেলোয়াড় রোনাল্ডোর পেনাল্টিতে গোলও হল। কিন্তু কোথাও কি একটা পর্তুগালের ফাঁকফোকর ধরা পড়ল? এরপর ব্রাজিল আর সার্বিয়ার খেলা দেখলাম। ব্রাজিল তার চিরায়িত আক্রমণ বানালো পূর্ব ইউরোপের ছোট দেশ সার্বিয়ার বিরুদ্ধে। আমরা বাঙালিরা যাকে বলি সাম্বা ঝড়। নেইমারের নেতৃত্বে সেলেকাওদের দৌড় উদবুদ্ধু করল। তবে ব্রাজিল ডিফেন্স কিন্তু মাঝেমধ্যেই ফাঁক হয়ে গিয়েছিল। নক আউটে কিন্তু হলুদ-সবুজ জার্সিকে অনেক সতর্ক হতে হবে।
যেহেতু আমার দফতরের প্রচুর কাজ, তাই ফিরে আসতেই হল। শত কাজের মধ্যে রাতে কিন্তু খেলা দেখেছি। আমার রাতে ঘুমোতে দুটো-আড়াইটে বেজে যায়। কাজেই রাত জেগে কাজ করতে করতে টিভিতে নজর রাখছি। একসময় নিয়মিত খেলতাম কাজেই খেলা আমার কাছে অন্যতম প্রিয় আনন্দ। রবিবার রাতে নক আউটের দুটি খেলা দেখলাম। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড অসাধারণ পাসিং ফুটবল খেললো। যেমন এমব্যাপে তেমন ব্রিটিশ হ্যারি কেন।দুজনের পায়েই শক্তিশালী শট। নকআউটে গোলও পেলেন তারা। এখানেই আবার বলবো লিগের খেলা কিন্তু নক আউটে চলবে না। এখানে ডিফেন্স মজবুত রেখে আক্রমণ বা প্রতি আক্রমণে যেতে হবে। আজ জাপানের খেলা, দারুন দৌড়ে খেলছেন জাপানিরা। জার্মানি স্পেনকে হারিয়েছে কিন্তু ওরা যখন আক্রমণে যায় তখন ডিফেন্স অনেকটাই ফাঁকা থাকে। ক্রোয়েশিয়া যথেষ্ট শক্তিশালী দল কাজেই ক্রোটরা চেষ্টা করবে কাউন্টার আক্রমণে যাওয়ার
ফলে আগামী খেলাগুলিতে পরিচিত দলগুলিকেই ফের কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা যাবে বলেই আমার ধারণা। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার (Qatar World Cup 2022) থেকে কলকাতা ফুটবল জ্বরে কাবু সারা বিশ্ব। আর্জেন্টিনা (Argentina) যখন মাঠে নামছে, কলকাতার মেসি ভক্তরাও তখন প্রস্তুতি নিচ্ছে জোর কদমে। গাঙ্গুলি বাগানের আর্জেন্টিনা ফ্যান্স ক্লাব তো কাতারের ফ্যান জোনকে তুলে এনেছে তাদের এলাকায়। রবীন্দ্র পল্লি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের রাজকীয় আয়োজনে স্বাগত ব্রাজিল, রোনাল্ডো (Ronaldo) ভক্তদেরও। ফ্যান জোনে চলছে দেদার ফুটবল আড্ডা। বড় বড় কাটআউট মারাদোনা থেকে মেসি, ডিমারিয়া, দিবালাদের।
লাগানো হয়েছে বিশাল আকারের জায়েন্ট স্কিন। সেখানে বসেই মেসি ম্যাজিক দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে ৮ থেকে ৮০-র আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। শেষবারের মতো বিশ্বকাপের আসরে নামছেন এলএম টেন। পারবেন কি তিনি নীল-সাদার দেশকে বিশ্বকাপটা তুলে দিয়ে মারাদোনার পাশে নিজের জায়গা করে নিতে? এ শহরের মেসি ভক্তরা কিন্তু আত্মবিশ্বাসী। তাদের আশা নিজের শেষ বিশ্বকাপে স্বপ্নের ফুটবল উপহান দিন লিও। আর সেটা দেখার জন্য কলকাতার আর্জেন্টাইন সমর্থকরদের উন্মাদনা তুঙ্গে। আর্জেন্টিনা মাঠে নামার আগে তাই গাঙ্গুলি বাগানের রং হয়েছে নীল-সাদা। মেসিদের জন্য বিশেষ প্রস্তুতিও চলছে ফ্যান জোনে। এখন অপেক্ষা শুধু মেসি ম্যাজিকের।
চলতি মাসের ২০ তারিখ কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup) উদ্বোধনী। তারপর থেকেই ফুটবল জ্বরে কাপতে শুরু করবে বিশ্ব। ৩২ দেশের এই টুর্নামেন্টে সেরার সেরা কে? এই ৩২ দেশের মধ্যে রয়েছে মধ্য আমেরিকার দেশ মেক্সিকো (Mexico)। বাকিদের মতো তাদের নজরে বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022)। মেক্সিকোর গ্রুপে আছে আর্জেন্টিনা, পোল্যান্ড, সৌদি আরব। ২০১৮-র বিশ্বকাপে মেক্সিকো দলে নজর কেড়েছিলেন গিলেরিমো ওচোয়া। এবার মেক্সিকান গোলরক্ষককে দারুণ প্রস্তাব মেক্সিকান মডেল ওয়ান্ডা এসপিনোসার। এসপিনোসার থেকে রীতিমতো যৌনতার প্রস্তাব এসেছে।
জনপ্রিয় অ্যাডাল্ট সোশাল মিডিয়ার মডেল ওয়ান্ডা এসপিনোসা। ইন্সটাগ্রামে যার লক্ষাধিক ফলোয়ার। সম্প্রতি তিনি প্রিয় ফুটবলার ওচোয়ার উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়ে জানান, যদি মেক্সিকো ফুটবল দল বিশ্বকাপ জেতে তাহলে তিনি ওচোয়ার সঙ্গে যৌনতায় মেতে উঠবেন।
১৯৮৬ সালের পর থেকে বিশ্বকাপের শেষ আটে প্রবেশ করেনি মেক্সিকো। তবে মেক্সিকোর ফুটবল ইতিহাসে ওচোয়ার মত কোনও গোলকিপার এই প্রস্তাব পাননি। তবে এই প্রস্তাবে কোনও সাড়া দেননি এই গোলকিপার। তাঁর চোখ এখন শুধু তিন কাঠি রক্ষা করা। সেই লক্ষ্যেই ২২ নভেম্বর পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে মেক্সিকো।
বিশ্ব ফুটবলে (World Football) মাদক নিয়ে স্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখার রীতি রয়েছে। ক্রিকেটে তো এই দৃশ্য হামেশাই দেখা যায় ম্যাচ যদি হয় ক্যারিবিয়ান কোনও দেশে। তবে ফুটবলে বিশেষ করে ইউরোপীয়ান আর আমেরিকান দেশগুলোতে তার রমরমা চোখে পড়ার মতো। কিন্ত এবারের বিশ্বকাপ যে কাতারে (Qatar World Cup 2022), আর ইসলামিক দেশগুলোতে মাদক সেবন আইন বিরুদ্ধ।
যার জন্য হাজতবাস ও মোটা টাকার জরিমানাও রয়েছে আরবে। তহলে কি করবেন কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে আসা বিদেশি পর্যটকরা? বিশ্বকাপ ও বিদেশি ফুটবল অনুরাগীদের কথা মাথায় রেখেই মাদক বিষয়ক আইনে শিথিলতা এনেছে কাতার সরকার।
স্টেডিয়ামে পাওয়া যাবে মাদক, তবে সেটা খেলা চলাকালীন নয়। ম্যাচ শুরুর তিন ঘন্টা আগে আর কিকঅফের একঘন্টা পরে সমর্থকরা স্টেডিয়ামে মাদক কিনতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন লাইসেন্সপ্রাপ্ত হোটেলেও চড়া দামে মাদক কিনতে পারবেন পর্যটকরা। তবে দোহায় যে ফ্যানজোন করা হয়েছে, সেখানে কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার পর থেকেই পর্যটকরা অনায়াসেই পেয়ে যাবেন সুরা বা মাদক। তবে মাদক সেবন করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে বিশ্বকাপ দেখতে আসা ফুটবলপ্রিয় পর্যটকদের।
হীরক বোস: কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের (World Cup 2022) দামামা বেজেছে। পশ্চিম এশিয়ার (Qatar) এই দেশে মেকসিকান ওয়েভ তুলতে বিদেশি পর্যটকরা পৌঁছে যাচ্ছেন, চাহিদা বাড়ছে হোটেলের। কিন্তু প্রিয় দল কবে পা রাখছে কাতারে। সবথেকে বেশি উত্তেজনা রয়েছে ব্রাজিল (Brazil), আর্জেন্টিনা আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে নিয়ে। সঙ্গে সিআর সেভেনের অপেক্ষায় মরু শহর।
সাম্বার ছন্দ কাতারে পা দেবে ১৯ তারিখ। ২৪ তারিখ সার্বিয়ার বিরুদ্ধে লুসেল স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ ব্রাজিলের। তার আগে নেইমাররা ১৯ তারিখ স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় দোহায় এসে পৌঁছাবেন। ব্রাজিলের পাশাপাশি সেদিন দোহায় পৌঁছবে ক্যামেরুন এবং সার্বিয়াও। কাতারের স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে পাঁচটা পৌঁছবে ক্যামেরুন।
তার আধঘণ্টা পরই পৌঁছে যাবে সার্বিয়া। সুইজারল্যান্ড অবশ্য ১৪ নভেম্বরই পৌঁছে যাবে দোহায়। লাতিন আমেরিকার অপর দল উরুগুয়ে ১৯ নভেম্বরই যাবে কাতারে। ১৬ তারিখ কাতারে পৌঁছবে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্স। মেসিদের প্রথম খেলা ২২ তারিখ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে। আর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স মাঠে নামছে ২৩ তারিখ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহনকারী দলগুলির মধ্যে প্রথম কাতারে পৌঁছবে জাপান। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার ১০ দিন আগেই এই দেশে পা রাখবেন জাপানি ফুটবলাররা। অধিকাংশ দলই যাবে ১৪ থেকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে। ১৭ তারিখ কাতার পৌঁছাবে স্পেন আর জার্মানি। ইউরোপের এই দুই দেশই রয়েছে একই গ্রুপে।
কাতার বিশ্বকাপে (Qatar World Cup) স্পেন (Spain) দল থেকে বাদ পড়লেন সার্জিও রামোস (Sergio Ramos)। শেষ বিশ্বকাপেও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, কিন্তু এই বিশ্বকাপে দল থেকে ছেটে ফেলা হলো জনপ্রিয় ডিফেন্ডার সার্জিও রামোসকে। লুইস এনরিকের দলে রয়েছে শুধুই তারুণ্যের ছোয়া। তাই তো রামোসের মতো তারকাকে ছাড়াই কাতারে দলে নিয়ে যাচ্ছে স্প্যানিশ আরমাডারা।
বাদ পড়েছেন ডেভিড দি' গিয়া ও থিয়াগোর মতো ফুটবলারও। রেড ডেভিল্সের বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন তরুন বার্সা স্ট্রাইকার আনসু ফাতাই। এছাড়াও দলে রয়েছেন জর্ডি আালবা, ড্যানি কারভাজাল, কোকে, সার্জিও বুসকেটসের মতো তারকা ফুটবলার। ২৩শে নভেম্বর কোস্টারিকা ম্যাচ দিয়ে গ্রুপ-ই তে থাকা স্পেন তাদের বিশ্বকাপ অভিযান শুর করছে। তাদের গ্রুপে কোস্টারিকা ছাড়াও রয়েছে জার্মানি আর জাপান। যথেষ্ট ভারী গ্রুপে বারো বছর আগের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এখন অপেক্ষা টিকিটাকা ফুটবল দেখার।
মুন্নি চৌধুরী: বিশ্বকাপ (World Cup) আসছে। কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup) কাউন্টডাউন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এই প্রথমবার শীতকালে হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে রঙিন, গ্ল্যামারাস টুর্নামেন্ট। ৩২টি দল অংশ নিচ্ছে। এটাও তো একটা নয়া মাইলস্টোন। সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ হিসেবে এর মধ্যেই প্রবল কৌতূহল তৈরি হয়েছে। আলোচনায় ফোকাস কেড়ে নিয়েছে এমএসসি ওয়ার্ল্ড ইউরোপা (MSC World Europa)।
আদতে এটি একটি বিশাল প্রমোদতরী। ইংল্যান্ড ফুটবলারদের স্ত্রী, বান্ধবী কিংবা পরিবারকে ওই প্রমোদতরীতে রাখার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এক হোটেলে টিমের সঙ্গে পরিবার বা স্ত্রীকে রাখার বিষয়ে এলার্জি থাকে বিভিন্ন ম্যানেজমেন্টের। অন্য রাস্তায় হাঁটছে সাউথগেটের ইংল্যান্ড। এমসি ইউরোপার অন্দরের খবর, পাঁচতারা হোটেলের স্বাচ্ছন্দ্যকে হার মানাবে ওই প্রমোদতরী। রেস্তোরাঁ, সেলুন, স্পা, বুটিক তো থাকছেই। আলাদা অনুমতি আদায় করে পানশালার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আলাদা অনুমতি নিতে হচ্ছে, কারণ, কাতারে মদ্যপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাস্কেটবল কোর্ট, ফুড কোর্ট থেকে প্লে স্টেশন, সবটাই রয়েছে। বিনোদনের যাবতীয় মশলা মজুত থাকবে। সবমিলিয়ে এলাহি ব্যাপার।
এককথায়, কাপ জিততে মরিয়া ইংল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট। ফুটবলারদের তোয়াজ করে রাখতে কোনও কার্পণ্য করা হচ্ছে না। এবার, ফুটবলাররা কি পারবেন মাঠে এর প্রতিদান দিতে? দল চ্যাম্পিয়ন হলে প্রমোদতরীর ম্যাজিক ফর্মুলা কিন্তু সুপারহিট হয়ে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।
রাজা সাহা: কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup) বোধহয় 'ইতিহাস' তৈরির 'ইতিহাস' করবে। বাঁশি মুখে এবার প্রথমবার মেসি, নেইমারদের ম্যাচ পরিচালনা করতে দেখা যাবে মহিলা রেফারিদের। ম্যাচ পরিচালনায় এবার থাকছেন ৬ জন মহিলা রেফারি (Woman Referee)। যাদের ৩ জন রেফারি, ৩ জন সহকারী রেফারি। ইতিমধ্যেই ফিফা (FIFA) ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের জন্য রেফারিদের তালিকা প্রকাশ করেছে। আসন্ন বিশ্বকাপে ৩৬ জন রেফারি থাকছেন। সহকারী রেফারি থাকছেন ৬২ জন।২৪ জন ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি থাকছেন।
মহিলা রেফারিরা, যারা এবার ম্যাচ পরিচালনা করবেন তারা হলেন ফ্রান্সের স্টেফানি ফ্রাপার্ট, রোয়ান্ডার সালিমা মুকানসঙ্গা, জাপানের ইয়শিমি ইয়ামাশিতা। ৩ মহিলা সহকারী রেফারি হিসেবে ম্যাচ পরিচালনায় দেখা যাবে ব্রাজিলের নিউজা বাক, মেক্সিকোর কারেন ডিয়াজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথরিন নেজবিটকে। একাধিক গুরুত্বপূর্ন টুর্নামেন্টে সাফল্যের সঙ্গে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন এই মহিলা রেফারিরা। ফলে এক নতুন ইতিহাসের সামনে দাড়িয়ে ফুটবল বিশ্ব।
মেসি,নেইমার, রোনাল্ডো বিশ্ব ফুটবলের এই তাবড় নামদের কাতারের সবুজ গালিচায় সামলাবেন মহিলারা। নব্বই মিনিট সুষ্ঠু খেলা পরিচালনার প্রয়োজনে এঁরা কড়া হবেন, আবার প্রয়োজনে হবেন নরম। এঁদের দেখানো লালকার্ড, হলুদ কার্ড অনেক খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করবে। অতএব রেফারিংকে পেশা হিসেবে নিতে চাওয়া অনেকের কাছেই এই বিশ্বকাপ হয়ে থাকবে অনুপ্রেরণা।
নির্ভরযোগ্য দুই খেলোয়াড়, দু'জনেরই বয়স ৩৫। একজন লিভারপুলের (Liverpool) প্রাক্তনী আর একজন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের (Manchester United)। এই দুই তারকা ফুটবলারকে রেখেই কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) জন্য দল সাজিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে (Uruguay)। লুই সুয়ারেজ এবং এডিনসন কাভানি এই দুই তারকাকে এবার নীল জার্সিতে দেখতে পাবে ফুটবল বিশ্ব। সঙ্গে বাড়তি পাওনা ডিফেন্ডার দিয়েগো গডিন। উরুগুয়ে ম্যানেজার দিয়েগো আলোনসো গুরুত্ব দিচ্ছেন অভিজ্ঞতার উপরেই।
কারণ পর্তুগাল, ঘানা, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে Group-H-এ রয়েছে ফোরলানের দেশ। দলে সুযোগ পেয়েছেন বার্সেলোনায় খেলা ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাউজো। আগামী ২৪ শে নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের নিজের প্রথম ম্যাচ খেলবে উরুগুয়ে। নতুন করে স্কিল ফুটবল উপহার দিতে মরিয়া সুয়ারেজ, কাভানিরা।
বিশ্বকাপে (Qatar World Cup 2022) ব্রাজিল দল থেকে বাদ পড়লেন তারকা ফুটবলার কুটিনহো (Coutinho)। যদিও তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বার্তা দিলেন অধিনায়ক নেইমার (Neymar)। কাতার বিশ্বকাপের জন্য সাম্বার দেশের (Brazil) দল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। অধিনায়ক নেইমারের সঙ্গে দলে জায়গা করে নিয়েছেন সব নামজাদা তারকা ফুটবলাররা। তিতের ব্রাজিল দলে থিয়াগো সিলভা, দানি আলভেসের মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে গ্যাব্রিয়াল জেসাস, ভিনিসিয়াস জুনিয়ারের মতো তারুণ্যের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। তবে দল থেকে বাদ পড়েছেন সুপারস্টার কুটিনহো।
সাম্প্রতিক ফর্ম আর চোটের কারণেই ব্রাজিল দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এরপরেই সতীর্থর উদ্দেশ্যে আবেগঘন নেইমার। মন খারাপ হলেও সোশাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে, বাকি সবার মতো টিভির সামনে বসে দেশের হয়ে গলা ফাটানোর কথা জানাতেই... এই রিপ্লাই করেছেন ব্রাজিল অধিনায়ক। কুটিনহোর জন্য ভালোবাসার বার্তা এভাবেই দিলেন ব্রাজিল অধিনায়ক। এদিকে, কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ জি-তে রয়েছে ব্রাজিল। নেইমারদের গ্রুপে অন্য দলগুলো--- ক্যামেরুন, সার্বিয়া, সুইৎজারল্যান্ড। ২৫,২৮ নভেম্বর এবং ৩ ডিসেম্বর গ্রুপ লিগের ম্যাচগুলো খেলবে ব্রাজিল।
পল কে মনে আছে? নিশ্চয় আছে। বিশেষ করে ফুটবলপ্রেমীদের তো থাকারই কথা। অতিকায় অক্টোপাস। পল (Paul) অন্য দশটি অক্টোপাসের (Octopas) মতো আট পায়ের মাংসল এক প্রাণী হলেও, এর ঐশ্বরিক ক্ষমতা রয়েছে বলে জার্মানরা বিশ্বাস করেন। ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের (World Cup 2010) আগে নিখুঁত ভবিষ্যৎবাণী করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল পল। দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ দেশের পতাকা বাক্সবন্দী করে রাখা থাকতো বিশাল একুরিয়ামে। গুটিগুটি পায়ে বাক্সের ঢাকনা খুলে ফেলত পল। দু'দুবার পল বেছে নিয়েছিল জার্মানিকে (Germany)। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়য় ঘটল ফাইনালের আগে। এবার জার্মানি নয়, পল বেছে নিয়েছিল স্পেনকে (Spain)। কি আশ্চর্য! কাপ জিতেছিল স্পেনই। বিশ্বকাপ এলেই ভবিষ্যৎবাণী করার এমন নানা পদ্ধতিতে প্রবল কৌতূহল তৈরি করে।
কাতার বিশ্বকাপের আগেও অন্যথা হয়নি। বাজার গরম করে দিল ইএ স্পোর্টস। ওরা আবার ফিফা ভিডিও গেমের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিশ্বকাপের ট্রেন্ড তুলে ধরেছে তারা। ভবিষ্যৎবাণী বলছে, চ্যাম্পিয়ন হবে আর্জেন্টিনা। মেসির গোলে নীল-সাদা হারাবে ব্রাজিলকে। শুধু তাই নয়। ফাইনালে ওঠার রাস্তায় ম্যাচের ফল কী হবে? সেটাও জানিয়ে দিয়েছে। আটটি গোল করে সোনার বুট পাবেন মেসি। জানিয়েছে প্রযুক্তি।
স্বাভাবিকভাবেই ট্রেন্ড দেখে মনে মনে নাচতে শুরু করে দিয়েছেন আর্জেন্টিনা ফ্যানেরা। একে মেসির শেষ বিশ্বকাপ। সত্যিই কাপ এলে পাড়ায় পাড়ায় সেলিব্রেশন শুরু হয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।