কুয়েত জয় হলেও, ঘরের মাঠে কাতারের কাছে দাঁড়াতেই পারল না ভারত। বিশ্বকাপের যোগত্যার ম্যাচে মঙ্গলবার ইগর স্তিমাচের দল হেরে গেল তিন-শূন্য গোলে। ভুবনেশ্বরে কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে তেমন ভাবে কোনও যুদ্ধই করতে পারলেন না সুনীল ছেত্রীরা। বরং প্রথম চার মিনিটে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়েছিলেন টাইগার্সরা।
প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে আট গোলে হারিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল কাতার। ম্যাচের চার মিনিটে মশালের এগিয়ে যায় তারা। এরপর ৪৭ এবং ৮৬ মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় তারা। ম্যাচের হিসাব বলছে, নব্বই মিনিট কার্যত দাপিয়ে বেরিয়েছেন কাতারের ফুটবলাররা। কারণ, ভারতের গোলমুখে হানা ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০টি শটের মধ্যে তিনটি গোল হয়েছে।
এই ম্যাচ হারলেও ভারতের সামনে সুযোগ থাকছে। গ্রুপে তাদের শেষ ম্যাচ খেলতে হবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। ওই ম্যাচ জিতলে পরের রাউন্ডে যাওয়ার আরেকটু আশা থাকবে সুনীল ছেত্রীদের।
ফাইনালে (World Cup 2022) তাঁর খেলা নিয়েই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। চোটের জন্য গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচ খেলতেই পারেননি ডি মারিয়া (Di Maria)। কিন্তু ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মেগা ফাইনালে ত্রাতা হয়ে উঠলেন সেই ডি মারিয়া। প্রথম গোলের সময় তিনি পেনাল্টি আদায় করে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় গোলের সময় তিনি নায়ক। দুরন্ত মুভমেন্ট ফিনিশ হয় ডি মারিয়ার বাঁ পায়ে। বিশ্বকাপ জেতার দু'দিন পর সাজঘর থেকে চুঁইয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ফাইনালের ২৪ ঘণ্টা আগে এক হোয়াটস আপ বার্তায় স্ত্রী জর্জেলিনাকে সেলিব্রেশনের প্রস্তুতি নিতে বলেন ডি মারিয়া। এমনকি, স্ত্রীকে জানান ফাইনালে তিনি গোল করবেনই। তিনি গোল করার ব্যাপারে নিশ্চিত। কোপা ফাইনালে গোল ছিল ডি মারিয়ার। আর ওয়েম্বলিতে ফিনালিসিমায় গোল ছিল তাঁর। আর্জেন্টিনা দল দেশে ফেরার পর একান্ত আলাপচারিতার কথা ফাঁস করেছেন ডি মারিয়ার স্ত্রী।
নিজের ওপর কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে এমন ভবিষ্যৎবাণী করা যায়! ডি মারিয়া সেটাই দেখালেন। হয়তো নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেললেন এই তারকা। মেগাস্টার লিও মেসির ছায়ায় ঢাকা থেকেছেন দীর্ঘ সময়। কিন্তু নীল-সাদার ইতিহাসে ঝকঝকে রোদ্দুর এনে দেওয়ার অন্যতম কারিগর তিনি, ডি মারিয়া।
প্রসূন গুপ্ত: খেলার হচ্ছে কাতারে (Qatar World Cup 2022), একমাত্র মহাদেশ ছাড়া ভারতের সঙ্গে বিশ্বকাপের সম্পর্কজনিত কোনও কিছুর নামগন্ধ নেই। কিন্তু খেলা পাগল বাঙালি (Bengal means Football) দর্শকের সমর্থন কিন্তু টিভি সম্প্রচারকারীদের দরকার টিআরপি তোলার জন্য। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় সারা ভারত, বাংলাদেশ (India- Bangladesh) পাকিস্তান ইত্যাদি উপমহাদেশে টেলিভিশনের সব থেকে বেশি দর্শক। সুতরাং এ দেশগুলির সুবিধাজনক খেলা দেখার সময় ঠিক করছে ফিফা। এই একটি বিষয়ে ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলা পাগল দর্শক দুই বাংলাতে। লক্ষ্য করে দেখুন রাশিয়া এবং কাতারে ফাইনাল হয়েছে ভারতীয় সময় রাত ৮.৩০-এ। শহর কলকাতা থেকে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে খেলা দেখা হয়েছে। এই একটি বিষয়ে বৈরিতা নেই তৃণমূল বিজেপি বা সিপিএমে। কাল রাতে সব মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিলো। তবে সবাই যে আর্জেন্টিনার সমর্থক এমন মোটেই নয়। ব্রাজিল বা জার্মানির সমর্থকরা কাল ফ্রান্সের জন্য গলা ফাটিয়েছে। কারণ লাটিন আমেরিকায় আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল খেলার মাঠে পরম শত্রু , তেমন সমর্থক বিচারে শত্রুতা এদেশেও।
এতদিন বাংলার ব্রাজিল সমর্থকরা দেখাতেন তাঁদের প্রিয় দলের ঝুলিতে পাঁচটি বিশ্বকাপ। ফুটবল বলতে পেলে, রোমারিও, রোনাল্ডো, রিভাল্ডো, রবার্তো কার্লস, কাকা এবং হালফিলের নেইমার। যদিও রবিবারের পর থেকে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা বলা শুরু করবে তাঁদের প্রিয় দলের ঝুলিতে তিনটি বিশ্বকাপ। ফুটবল বলতে পাসারেল্লা, মারাদোনা, মেসি, ডি মারিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলায় ফুটবলের কিছু পাগলপ্রেমী তো আছেই। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের সচিব দেব সাহা আর্জেন্টিনার অন্ধ ভক্ত। সন্ধ্যাতেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছবি এবং লাইভ করে আর্জেন্টিনার জন্য গলা ফাটিয়েছেন। হুগলির ব্যবসায়ী অমল কুন্ডুর বোনের বিয়ে গেলো, ওসব উৎসব বাদ দিয়ে প্রথম থেকে হৈচৈ আর্জেন্টিনার জন্য। বারাসতের সূর্যদের পারিবারিক বনভোজন ছিল প্রথম থেকেই, কতক্ষনে বাড়ি ফিরবে তাঁর জন্য ছটফট করে খেলা শুরুর আগেই বাড়ি ফিরে মেসির জার্সি পরে চিৎকার ইত্যাদি। কাল শহর কলকাতার একাধিক মহল্লায় রাত পর্যন্ত বাজি পুড়েছে। নেপথ্যে ফুটবলের তথাকথিত ঈশ্বর মেসির হাতে কাপ ওঠা।
শিলিগুড়ির তৃণমূল/সিপিএম/ বিজেপির সমর্থকরা এককাট্টা হয়ে আর্জেন্টিনার জন্য গলা ফাঁটিয়েছে এবং সব থেকে গোড়া সমর্থক হিসাবে পত্র পত্রিকায় নাম কুড়িয়েছেন কলকাতার অমিত নাইয়া। শনিবার থেকে নির্জলা উপোস। খেলা শেষে দিশাহারা হয়ে পাগলের মতো ভ্যামস ভ্যামস করে চেঁচিয়ে পাড়া মাত করেছে।সোমবার এলাকার বাজারে লোকজনের একটিই কথা, উফ আর খেলা নেই।
আগে থেকেই বহু জায়গায় মাংস/ভাতের আয়োজন করা হয়েছিল। আর্জেন্টিনা ৩ গোল দিয়ে ৩ গোল খাওয়ার পর এদেরই অনেকে বলেছিলো, না জিতলে সব ফেলে দেব। বিরাটির মহারাজ মুখার্জি আবার বাড়িটিকেই নীল/সাদা করে মেসির ঢাউস এক ছবি টাঙিয়ে জয়ের উৎসব পালন করেছেন।
ভারত বিশ্ব ফুটবলের এই প্রতিযোগিতার ধারে কাছে নেই। আগামী ৫০ বছরেও যেতে পারবে কিনা সন্দেহ কিন্তু ফিফা জানে দর্শক তাদের এই ভারতেই নাকি দুই বাংলায়।
কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup) ফাইনাল রাজ্যের ক্রীড়া ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের (Arup Biswas) চোখে। খেলা দেখে কী লিখলেন তিনি..
১৪ ঘন্টা কেটে গিয়েছে, এখনও ফাইনাল (World Cup Final 2022) জ্বরে আচ্ছন্ন সারা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীরা। কী খেলাটাই দেখলাম রবিবাসরীয় রাতে। এরকম একটা ফাইনাল এর আগে কবে দেখেছি মনে করতে পারছি না। আমি একসময় মোহনবাগান ও ব্রাজিলের প্রচন্ড সমর্থক ছিলাম। কিন্তু মন্ত্রিত্বের দায়িত্বে আসার পর একেবারেই নিরপেক্ষ।
রবিবার রাতে আমার এলাকায় জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে ফাইনালের (Argentina beats France) ব্যবস্থা করেছিলাম। বললে বিশ্বাস করবেন না প্রায় ৫ হাজার মানুষের ভিড় হয়েছিল। নানা পোশাকে, বিশেষ করে নীল-সাদা জার্সিতে এই ঠান্ডায় সব এসে উপস্থিত। একেক সময়ে ভাবি এই খেলা পাগল দর্শকের দেশ ভারত বা বাংলাদেশ, অথচ এখন থেকে কবে যে ফুটবলার উঠবে কে জানে।
অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন বা এআইএফএফের ভাবনার বিষয়। যাই হোক, এবারে লিখি খেলা কেমন হলো! নিঃসন্দেহে প্রথম অর্দ্ধে অসাধারণ আর্জেন্টিনা। মুহুর্মুহু আক্রমণে কাহিল করে দিয়েছিলো ফ্রান্সকে। মনে হচ্ছিলো ফ্রান্স কি খেলা ছেড়ে দিলো? ডি'মারিয়া বাঁ প্রান্ত থেকে দুজন ফ্রান্স ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সেঢুকেছে , অমনি ফাউল। আর্জেন্টিনার কোচের এবার টুর্নামেন্টে একটা বিশেষ স্ট্রাটেজিই ছিল বক্সে ঢুকে কাটাও, ড্রিবল করো, তোমাকে মারবেই এবং মারলেই পেনাল্টি। লক্ষ্য করে দেখা প্রায় প্রতি ম্যাচে আর্জেন্টিনা পেনাল্টি পেয়েছে এবং গোল করেছে মেসি। দ্বিতীয় গোলটি কয়েক মিনিটের মধ্যে ৫টি টাচ এবং বাঁ প্রান্ত থেকে ডি'মারিয়ার অসাধারণ গোল।
দ্বিতীয়ার্দ্ধে একসময় কোচ ডি'মারিয়াকে কেন তুলে নিলো বুঝলাম না। ও উঠে যাওয়ার পর ফ্রান্সের কোচ একে একে গ্রিসম্যান এবং জিরুডকে তুলে নেওয়ার পর ফ্রান্সের খেলার ঝাঁজ বাড়লো। এই সময়ে আর্জেন্টিনা কি খেলায় একটু হালকা দিলো। এমবাপেকে অনেকটাই মাঠজুড়ে খেলতে দেখা গেলো।
এরপর বক্সের মধ্যে ধাক্কা এবং পেনাল্টি। প্রথম গোল এমবাপের। কিছুক্ষণের মধ্যে দ্বিতীয় অসাধারণ মুভে ফের এমবাপেই গোল করলেন। এক্সট্রা টাইম, ফের খেলা ধরলো আর্জেন্টিনা এবং টাচ ফুটবলে ড্রিবল করে গোল পেলেন মেসি কিন্তু ওই কিছুক্ষণ। বক্সে হাতে বল লাগার জন্য ফের পেনাল্টি পেলো ফ্রান্স।
ফের গোল করলেন এমবাপে। শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকারের মাধ্যমে খেলা শেষ হলো। আর্জেন্টিনা টাই ব্রেকে অনেক সপ্রতিভ ছিল। পরপর ৪টি গোল করলো মেসির দল কিন্তু এখানেই পিছিয়ে ফ্রান্স কারণ গ্রিসম্যান , জিহুর মতো খেলোয়াড় ছিল না যাঁরা পেনাল্টি বিশেষজ্ঞ।
ভালোই হয়েছে, পেলে , মারাদোনার পর একটি নামই আসে বিশ্ব ফুটবলের সেরাদের মধ্যে তিনি জাদুকর মেসি। তাঁর হাতে কাপটি না উঠলে খারাপ লাগত। তবে মেসি হয়তো বিদায় নিলেন এবং দেখে গেলেন নতুন প্রজন্মের এমবাপে এসে গিয়েছেন আগামীর জন্য।
সাড়ে তিন দশকের প্রতীক্ষার অবসান। ফ্রান্সকে টাই ব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। দিনের শেষে এই ট্রফি হয়তো বা মারাদোনাকে উৎসর্গ করবেন মেসিরা। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসের পাতায় এখন পেলে, মারাদোনা, জিদান, রোনাল্ডোর সঙ্গেই মেসির নাম ঢুকে গেল। ২০১৪-তে তীরে এসে তরী ডুবেছিল, কিন্তু 2022 মানেই ভামোস ভামোস আর্জেন্টিনা।
লুসেইল স্টেডিয়ামে নাটকীয়, রোমহর্ষক ফাইনালে ১২০ মিনিট পর্যন্ত খেলার ফল ৩-৩। পেনাল্টিতে দুটি গোলের পাশাপাশি ফ্রান্সের তৃতীয় গোলও এমবাপের ঝুলিতে। ১৯৬৬-র পর এই প্রথম কোন ফুটবলার ফাইনালে হ্যাট্রিক করলেন। ব্যস ওইটুকুই, কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রথম ৮০ মিনিট দেশর ছেলেদের সঙ্গে দাপট রেখেই খেলেছে আর্জেন্টিনা। প্রথম ৭৫ মিনিট মাঠেই খুঁজে পাওয়া যায়নি এমবাপে, গ্রিজম্যানদের আক্রমণ।
প্রথম অর্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় স্কালোনির দল। ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত ফ্রান্সের ঝুলিতে না ছিল কর্নার, না অফসাইড। বল পজেশন থেকে শুরু করে গোলমুখী শট এগিয়ে সেই নীল-সাদাই। আর্জেন্টিনার ৩ গোলের পিছনে অবদান মেসি ২ আর ডি মারিয়া ১। মেসির করা দুটি গোলের মধ্যে একটি আবার পেনাল্টি থেকে। কিন্তু ৮০ মিনিটের মাথায় ডি মারিয়াকে স্কালোনি তুলে নিতেই আক্রমণের ধার ভারে এমবাপের।
প্রথম ৯০ মিনিট শেষ হয় ২-২ গোলে। অতিরিক্ত সময় শেষ হয় ৩-৩ গোলে। অবশেষে ম্যাচের ভাগ্য লিখতে হয় পেনাল্টি শুটআউটে। কোয়ার্টার ফাইনালের মতো এই ম্যাচেও নায়ক আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ই মার্টিনেজ। ফ্রান্সের দ্বিতীয় শট আটকে দিয়ে চাপে ফেলে দেন এমবাপেদের। এরপর শুধু সময়ের অপেক্ষা, কারণ ফুটবল দেবতা বিশ্ব ফুটবলের এল এম -১০-কে নিরাশ করেনি।
কাতার বিশ্বকাপ এই নামে খ্যাত হল আমি 'মেসিরই বিশ্বকাপ।' ঠিক যেভাবে ৯৪ রোমারিও, ৯৮ জিদান, ৮৬ মারাদোনা আর ২০২২ মানে লিওনেল মেসি। ৭৮,৮৬,২০২২ বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক এখন মারাদোনার দেশে।
মুন্নি চৌধুরীঃ বিশ্বকাপ ফাইনালের কাউন্টডাউন শুরু। আজ, রবিবার রাতে লুসেইল স্টেডিয়ামে হবে চলতি বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) মেগা ফাইনাল ম্যাচ। মেসি (Lionel Messi) না এমবাপে (Kylian Mbappe)? কাপ উঠবে কার হাতে? বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।
হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে নানা ফ্যাক্টর নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে বসে পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর্জেন্টিনা শিবিরে যেমন হঠাৎ উদয় হয়েছেন সেরগিও আগুয়েরো (Sergio Leonel Agüero)। সম্পর্কে দিয়েগো মারাদোনার জামাই। নীল-সাদা জার্সিতে খেলতে খেলতেই হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়ে তাঁর। খেলা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। আগুয়েরো ছিলেন লিও মেসির রুম পার্টনার। টিমের সঙ্গে খেলতে গেলে মেসির রুম পার্টনার হতেন তিনি। আগুয়েরো খেলা ছাড়ার পর নতুন কোনও ফুটবলার মেসির রুম পার্টনার হননি।
২০১০, ২০১৪ আর ২০১৮। তিনটে বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনি। মেসির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে সেরগিও-র। ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা শিবির উড়িয়ে নিয়ে এসেছে আগুয়েরোকো। আর্জেন্টিনা অনুশীলনে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শুধু তাই নয়। মেসির সঙ্গে রুম ভাগ করে থাকবেন তিনি। সেই নিয়ম আদায় করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন। লিও মেসিকে তাজা রাখতে, মন ফুরফুরে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি নেই। মারাদোনার জামাই কি গুড লাক নিয়ে আসতে পারবেন?
কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) শেষ হচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর, রবিবার। ভারতীয় সময় রাত ৮.৩০টা থেকে শুরু হবে ফাইনাল ম্যাচ, যুযুধান দুই দল ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা (France-Argentina)। এই ম্যাচ যত না বিশ্বকাপ ফাইনাল, ততবেশি মেসি বনাম এমবাপে লড়াই। একদিকে, ফ্রান্সের কাছে পরপর দু'বার কাপ জেতার হাতছানি, অন্যদিকে ৩৬ বছর পর কাপ খরা কাটানোর সুযোগ নীল-সাদা ব্রিগেডের। পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো সমাপ্তিও (Closing Ceremony) জমকালো করতে চায় ফিফা(FIFA)।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার বিবৃতি, ম্যাচ শুরু কাতারের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায়। অন্তত দেড় ঘণ্টা আগে অর্থাৎ বিকেল নাগাদ সবাইকে আসন গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সমাপ্তি অনুষ্ঠান এতটাই জমকালো হবে যা সারা জীবন মনে থাকবে।
কারা কারা অংশগ্রহণ করবে, সেই তালিকাও দিয়েছে ফিফা। অডিওয় একটি গানের সংকলন চলবে, সেখানে ভিডিওয় থাকবে এই বিশ্বকাপের স্মরণীয় মুহূর্তগুলির কোলাজ। কাতার বিশ্বকাপের থিম সং ‘হায়া হায়া’ গাইবেন আমেরিকার গায়ক ডেভিডো এবং আইশা। এই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন বলিউডের ডান্স ক্যুইন নোরা ফাতেহিও। ‘লাইট দ্য স্কাই’ গানের সঙ্গে নাচবেন তাঁরা। বলিউডে বহু সিনেমায় আইটেম গানের সঙ্গে নাচ করেছেন নোরা।
কাতার বিশ্বকাপ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তীর চোখে। কী লিখছেন তিনি
এই সেদিন বিশ্বকাপ শুরু হলো আর এর মধ্যেই রবিবার শেষ হবে এই উৎসব। ফের ৪ বছর বাদে আমেরিকা মহাদেশের মার্কিন যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং মেক্সিকোতে আয়োজন হবে পরের ফুটবল বিশ্বযুদ্ধ। মনটা খারাপ লাগে, সোমবার থেকে ফের রাতে দ্রুত টিভির সামনে বসার দরকার নেই। কোথাও ফাঁকা লাগবে বারবার। যদিও আমরা রাজনীতির মানুষ এবং আমাদের সারা বছর সংগঠন থেকে জনসেবামূলক কাজেই ব্যস্ত থাকতে হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূল দলের সভাপতি হিসাবে অনেক কাজ। সামনে আবার পঞ্চায়েত নির্বাচন, তবুও ব্যস্ততার মধ্যে মনটা উদাস লাগবে বেশ কিছুদিন। ২০২২-র বিশ্বকাপের স্মৃতিতে, খেলা গেলো বটে। সারা বিশ্বের ৩২টি বাছাই করা দল এসে কী খেলাটাই না খেললো।
এক আয়োজক কাতার ছাড়া প্রতিটি দলই তাদের সেরা উপহার দিয়েছে। আসলে ৩২টির মধ্যে ১টি দলই 'সোনার ফিফা কাপ'টি পাবে। বাকিরা ফের প্রস্তুতি নেবে চার বছরের জন্য। দেখুন কে কোন দলের সমর্থক তা নিয়ে তর্কের প্রয়োজন নেই। কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা বা ফ্রান্স। আবার কেউ আফ্রিকার দামাল ছেলেদের কামাল করা মরক্কোর সমর্থক ছিল, থাকতেই পারে। আমাদের ভারত বিশ্ব ফুটবলে নেই এটা যথেষ্ট ভাবনার। এতো আইএসএল খেলা হচ্ছে তারপরেও খেলোয়াড় উঠে আসছে না কেন? বিশ্বকাপ ফুটবল একটি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে থাকা একটি উৎসব। লক্ষ্য করে দেখুন একটা সময়ে বর্ণ সংকট মাথাচাড়া দিয়েছিলো বিশ্বের শ্বেতাঙ্গদের দেশে। কিন্তু আজকের ফুটবলের দিকে তাকান।
এখানে বর্ণ মানে না কেউই। ফ্রান্স দলটার মধ্যে ৭-৮টি খেলোয়াড় কৃষ্ণাঙ্গ এবং এদের বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মের। একটি গোল হলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দর তুলনা হয় কখনও? মরক্কো তিউনেশিয়া দলটি ইসলাম ধর্মের আফ্রিকা জাত অথচ দিব্বি শ্বেতাঙ্গদের প্রশংসা পেলো তারা। আমরা বলি, ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার। এই বিশ্বকাপ দেখে বলতে হয় "ধর্ম বর্ণ যার যার, কিন্তু ফুটবল সবার।" (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার বিশ্বকাপ কাঁথি পুরসভার উপ পৌরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরির চোখে। কী লিখছেন তিনি
আমরা রাজনীতির মানুষ, ২৪ ঘন্টা তাই দৌড়ে বেড়াতে হয়। একদিকে জেলার যুব সভাপতির দায়িত্ব, অন্যদিকে পৌরসভা। এত চাপের মধ্যে থেকেও খেলা দেখবো না তাই কী হয়। একসময় ফুটবল খেলতাম এবং জেলার প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। কিন্তু রাজনীতিতে আসার পর খেলাটাই ছেড়ে দিতে হল। আমার বাবা মন্ত্রী অখিল গিরি আবার ক্রিকেটের ভক্ত, খেলেছেনও। কিন্তু উনি বলেন, যে টুর্নামেন্টে ভারত নেই সেখানে কাউকে সমর্থন করবো না। কিন্তু বিশ্বকাপ দেখছেন। আমরা পরিবারের সবাই এবং মাঝে মধ্যে এলাকার ক্লাবে বসে হৈহৈ করে খেলা দেখছি। আর্জেন্টিনার খেলা থাকলে একা বসে দেখার মজা নেই।
বাংলা-সহ সারা পূর্ব মেদিনীপুর এখন নীল-সাদা হয়ে রয়েছে। প্রায় সকলের মুখে ভ্যামোস ভ্যামোস। স্প্যানিশ কথার অর্থ যতটা উদ্ধার করলাম তাতে দাঁড়ায়, জয় শুধু জয়। আমাদের এলাকায় অবশ্য কিছু ফ্ল্যাগ টাঙানো হয়েছে তুঁতে-নীল, সাদা-লাল অর্থাৎ ফরাসি দল। মজাদার বিষয়, ফ্রান্সের ভক্ত আগে এতো দেখিনি। মনে হয় এরা সব ব্রাজিলের সমর্থক। ফ্রান্সকে কিন্তু উড়িয়ে দিচ্ছি না। ফাইনাল বলে কথা, টেনশন তো থাকবেই।কিন্তু ওই যে, "ম"-এর নাকি সময় এটা। আমার তাই মনে হয় মারাদোনার পর মেসি কিছু একটা করবে।
রাত জেগে প্রায় সব খেলাই দেখেছি। আমার কিন্তু ভালো লেগেছে মরক্কোকেও। দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে এবার। ফ্রান্সের স্ট্র্যাটেজির কাছে হেরে গিয়েছে। এই দল দেখবেন আমেরিকা বিশ্বকাপে সব দলের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াবে। আজ রাতে ক্রোয়েশিয়া বনাম মরোক্কো। মন চাইছে মরক্কো জিতুক, কিন্তু বাস্তব বলছে ক্রোয়েশিয়া। কারণ দুটি দলের খেলার ধরণ অনেকটাই এক রকম। ডিফেন্স করা এবং কাউন্টার আক্রমণে উঠে যাওয়া।একটি জায়গাই ক্রোয়েটদের ইতিবাচক অবস্থান সেটা গোল করার লোক বেশি।
যাই হোক, রবিবারের খেলায় আজকের ফুটবল শাহেনশা মেসির হাতে কাপ উঠুক। পরপর দু'বার বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড ছিল উরুগুয়ের ১৯৩৪ এবং ৩৮-এ এবং ব্রাজিলের ৫৮ ও ৬২-তে। তৃতীয়বার আর তার পুনরাবৃত্তি চাই না। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন থেকে ছিটকে গিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo)। মরক্কোর বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ ম্যাচটি খেলেছিল সিআর সেভেন-এর দল। যদিও সেদিন প্রথম একাদশে স্থান পাননি রোনাল্ডো। বিশ্বকাপ (World Cup 2022) অভিযান শেষ হতেই পর্তুগাল কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ফার্নান্দো স্যান্টোস (Fernando Santos)। সরকারিভাবে এখনও এই খবর ঘোষণা করেনি। তবে পর্তুগিজ ফুটবল সংস্থা সূত্রে এমনটাই খবর পাওয়া যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, নতুন কোচ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন হোসে মোরিনহো। আর হোসে ছিটকে গেলে বা বাদ পড়লে পাওলো ফনসেকার দায়িত্বে আসা কার্যত নিশ্চিত। এছাড়া কোচ হওয়ার রেসে আরও অনেকে রয়েছেন। রুই জর্জ, আবেল ফেরেরা, রুই ভিতোরিয়া এবং জর্জ জেসুস রয়েছেন। তবে যত দূর শোনা যাচ্ছে, সকলের প্রথম পছন্দ মোরিনহো। কারণ, তিনি জন্মসূত্রে পর্তুগিজ হওয়ায় বাড়তি সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে, তিনি ক্লাবস্তরে ফুটবল কোচ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তাঁর সাফল্য সকলের নজর কেড়েছে। আবার রোনাল্ডোর সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বলে শোনা গিয়েছে। যদিও অনেকে মনে করছেন, তিনি ক্লাবস্তর ছেড়ে জাতীয় স্তরের দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করবেন।
এখন সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, তবে কি রোনাল্ডোর সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে সান্তোসের এই সিদ্ধান্ত? নাকি মরক্কোর বিরুদ্ধে হার মেনে নিতে না পেরে নিজেই পদত্যাগ করলেন?
কাতার বিশ্বকাপ শিক্ষাবিদ এবং সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সত্যম রায়চৌধুরীর চোখে
যাবো যাবো করেও এবার বিশ্বকাপে যাওয়া হল না। এর আগে অনেকগুলো বিশ্বকাপের খেলা মাঠে বসে দেখেছি কিন্তু কাতার থেকে পুত্রের কাতর আবেদন ছিল যে, এই অসাধারণ ফুটবল দেখতে অন্তত একবার এসো। আসলে বর্ষশেষে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ইনস্টিটিউটগুলিতে সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে, ম্যানেজমেন্টের পরীক্ষাও আছে। এই সময় যাই কী করে? যাই হোক আমার যাওয়া না যাওয়াতে বিশ্ব ফুটবল থেমে থাকবে না। দারুন আকর্ষণীয় ভাবে প্রায় একমাসব্যাপী চলছে বিশ্ব ফুটবলের আসর। আমাদের পরিবারে সকলেই আর্জেন্টিনার ভক্ত। চাই যে, কাপটা এবার অন্তত মেসির হাতে উঠুক। পেলে, মারাদোনার পর সুপারস্টার তো মেসিই। আগের দুজনের হাতে বিশ্বকাপ এসেছিলো কিন্তু মেসি বিশ্বকাপে খেলছেন ২০০৬ থেকে, এখনও কাপ অধরা।
বললাম বটে কিন্তু কাজটা কি এতো সোজা হবে? ফ্রান্স ইউরোপের সেরা দল। প্রতিটি পজিশনে দুর্দান্ত খেলোয়াড়রা দাপটের সঙ্গে খেলছেন। এর উপর জিরুড, এমবাপে, গ্রিজম্যান ত্রয়ীর মুহুর্মুহ আক্রমণ কতটা সামাল দিতে পারবে আর্জেন্টিনা? এই নিয়েও হাজারো প্রশ্ন রয়েছে। আমি রাশিয়া বিশ্বকাপে এমবাপের খেলা দেখেছি। উনি তখন ডিফেন্সে নেমে বল তৈরি করে দৌড়তেন। এবার প্রথম থেকেই তাঁকে বামমুখী আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে মেসি ডান দিক থেকে আক্রমণ শানান। অর্থাৎ দুই খেলোয়াড়ই এক প্রান্তিক। ফলে কে কাকে কতটা মার্কিং করে সেটাই দেখার। এটা সত্যি বড় খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেওয়া হয় না। কিন্তু পাশাপাশি অন্য খেলোয়াড়রা সেই সুযোগটা নেন।
এদিকে গ্রিজম্যান যেমন ভয়ঙ্কর পাস দেন তেমন আর্জেন্টিনাতেও আলভারেজ, ডি'মারিয়া আছেন আক্রমণে। আর্জেন্টিনার এবারে বেশ ভালো ডিফেন্স। দুই দলের দুই গোলরক্ষক মার্টিনেজ ও লরিস অসাধারণ, ফলে গোল করাটাও কঠিন। আমার মন বলছে কয়েকটা গোল দু দিক থেকেই হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকে গেলে ভালো খেলার মজাটাই চলে যাবে। টাই ব্রেক অন্তত ফাইনাল চলে না।
আমাদের খুশি করতে পারেনি ১৯৯৪-এ ওভাবে ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন হতে কিংবা লাল কার্ড দেখে জিদান বেরিয়ে যাওয়ার পর ইতালিকে জিততে। খেলা হোক আনন্দের, নব্বই মিনিটেই চূড়ান্ত হয়ে যাক কাতার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নের নাম। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
প্রসূন গুপ্ত: রাত ১২.৩০ মানেই আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। আয়েশি বাঙালি যতই ঘুমকাতুরে হোক না কেন রাতে বিশ্রাম নেই। আসলে রাতের খেলাগুলো কাতারে বড় দলগুলির খেলা ছিল বলেই, হয়তো রাত জাগাকে ভবিতব্য মেনে নিয়েছে খেলা পাগল এই জাতি। এখানেই শেষ নয় ব্রাজিল বিদায় নেওয়ার পর সাপোর্টারের ভিড় ছিল আর্জেন্টিনার দিকে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে আর্জেন্টিনার খেলা দেখতে সবাই রাত জেগেছিলো। বাদ যাননি ব্রাজিলের কোনও এক গোড়া সমর্থক। খেলায় একটি করে গোল হয়েছে আর টালিগঞ্জ বা দমদমে পটকা ফেটেছে। রাত আড়াইটার পর তো কালীপুজোর রাত হয়ে গিয়েছিলো, কলকাতা এবং শহরতলিতে যেন অকাল দিওয়ালি। আর তো মাত্র একটা রাত জাগার ব্যাপার। এরপর তৃতীয় স্থানের লড়াই আর ফাইনালের সময় তো চমৎকার, ভারতীয় সময় রাত ৮.৩০। ফিফা কমিটি স্বীকার করেছে ভারত, বাংলাদেশের মতো দর্শক সারা বিশ্বের কোথাও নেই। সুতরাং তাঁদের কথা ভেবে এবং বিজ্ঞাপনের ভাবনা থেকে সম্প্রচারকারী টিভি কোম্পানির দাবিই নাকি ছিল যে ভাবেই হোক ৮.৩০-এর সময়কে ফাইনালের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
ফলে মস্কো ফাইনাল এবং কাতার ফাইনাল এই সন্ধ্যারাতেই হচ্ছে। সে যাই হোক বুধবার মধ্যরাতের খেলায় এগিয়ে কে? অন্য সময় হলে নিশ্চই বলা যেত এমবাপের ফ্রান্স। ফ্রান্সের কিন্তু প্রচুর সমর্থক বাংলায়। জিদানের সময় থেকে এই ফ্রান্স ভক্তি। এবার তো আরও অনেকে আছে। ইংল্যান্ড ফ্রান্সের খেলায় ফ্রান্সের সমর্থক ছিল বেশি। এবারে হেরে যাওয়া ব্রাজিলের সমর্থকরা নিশ্চিত ফ্রান্সকে সমর্থন করবে এমনটাই ভাবা হয়েছিল।
কিন্তু জানা যাচ্ছে আফ্রিকার সিংহ হয়ে ওঠা মরোক্কোর দিকে আজ রাতে সমর্থন থাকবে বেশি। ফ্রান্সের আক্রমণ রোখা মুশকিল, তবুও বলা যেতে পারে উত্তর আফ্রিকার এই দেশের হারানোর কিছু নেই। তাই ৯০ মিনিট সেরা খেলাটাই খেলবে তাঁরা।
কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই জোর গুঞ্জন এবার হয়তো শেষ বিশ্বকাপ মেসি, রোনাল্ডো, মড্রিচের। এই নামগুলোর মধ্যে শেষ দু'জন বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত করেছেন। অর্থাৎ সিআর-৭ আর লুকা মড্রিচের কাতার বিশ্বকাপ জয় অধরা। তবে মঙ্গলবার রাতে স্বপ্নের খেলা খেলে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলে লিয়োনেল মেসি জানিয়ে দিলেন, বিশ্বকাপে এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ। পরের বিশ্বকাপে তিনি আর খেলবেন না। সেমিফাইনালে ৩-০ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে দুরমুশ করে ফাইনালে আর্জেন্টিনা। ১৮ ডিসেম্বর লুসেইল স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ কে? ঠিক হবে বুধবার রাতে ফ্রান্স বনাম মরোক্কোর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে। কিন্তু প্রথমস সেমিফাইনালে ক্রোটদেওর বিরুদ্ধে একটি গোল করেন মেসি। আর আল্ভারেজ গোলের জন্য পাস বাড়িয়েছেন একটি।
মেসির বয়স ৩৫ বছর। পরের বিশ্বকাপ চার বছর পর অর্থাৎ ৩৯ বছর বয়সে পরের বিশ্বকাপ খেলতে হবে মেসিকে। যদিও ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছে পেপে ৪০ বছর বয়সে কাতার বিশ্বকাপ খেলতে পারলে মেসি নয় কেন? যদিও আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালনি বলেছিলেন, মেসি পরের বিশ্বকাপ খেলবেন। কিন্তু মেসি নিজে জানালেন, এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। মেসিদেরকে কড়া মার্কিংয়ে রাখেন বিপক্ষের ফুটবলাররা। যে পরিমাণ চাপ মেসিদের নিতে হয়, যত বয়স বাড়ে সেই ট্যাকেল নেওয়ার ক্ষমতা কমে। এই বিশ্বকাপে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে নিষ্প্রভ দেখিয়েছে, পরের বিশ্বকাপে হয়তো মেসিকেও তেমন দেখাবে। সেটা হতে না দিয়ে এই বিশ্বকাপেই শেষ করতে চাইছেন তিনি। এমনটাই মত অনেক ফুটবল লিখিয়ের।
এদিকে, ১৯৮৬-র পর বিশ্বকাপ জেতেনি আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ তাদের কাছে। ২০১৪-তে আশা জাগিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটের মাথায় জার্মানির গোটজের গোলে কাপ হাতছাড়া হয়ে আর্জেন্টিনার। এদিকে, আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেসি গোলদাতার তালিকায় এখন মেসি। মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁর আগে ছিল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। কিন্তু ১১ গোল করে বাতি গোলকেও ছাপিয়ে যান মেসি। এখন ১৮ ডিসেম্বর লুসেইল স্টেডিয়ামে সব চোখ থাকবে বিশ্ব ফুটবলের এলএম-১০-র দিকে।
কাতার বিশ্বকাপ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর চোখে। খেলা দেখে কী বলছেন তিনি
আমি বিশ্বকাপ খেলা দেখি। তবে আমার খেলা দেখা বলতে যে ভালো খেলে, সেটা উপভোগ করার চেষ্টা করি। আমি কোনও ব্র্যান্ডেড টিমের পক্ষে না, আমি ভালো খেলার পক্ষে। এই কু-অভ্যাস আমার বাচ্চা বয়স থেকে তৈরি হয়েছে। শৈশবে আমি স্কুল ফুটবল খেলতাম, ইন্টার স্কুল ফুটবল খেলেছি। কিন্তু কোনওদিন নির্দিষ্ট ক্লাবের সমর্থক হয়ে যায়নি। কোনও ক্লাব ভালো খেললে ভালো লাগে। কিন্তু ব্র্যান্ড দিয়ে নয় বরং খেলা দিয়ে বিচার করি।
যেমন মরোক্কোর খেলা আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ ওরা অদ্ভুত ভাবে ব্যাক পাস, সাইড পাস, ফ্রন্ট পাস--এসব শিখে নিয়েছে। মরোক্কো বিশ্বের দরবারে এমন টিম হিসেবে খেলেনি আগে। আমি অন্তত দেখেনি। ওদের দম সাংঘাতিক। যদিও দমটা বয়সের উপর নির্ভর করে। যেহেতু আমি ব্র্যান্ডেড ব্যাপারে থাকি না তাই মেসি, রোনাল্ডো কার খেলা ভালো লেগেছে, মন্তব্য করতে চাই না। অনেকে আহত হয় কারণ একজন একটা বল পাস দিল, সেই পাসের সদ্ব্যবহার হল না, আফসোস হয়। আমি সেই আফসোসের শিকার হতে চাই না।
মুন্নি চৌধুরীঃ মহারণের অপেক্ষায় লুসাইল স্টেডিয়াম (Lusail Stadium)। নীল-সাদা বনাম লাল-সাদা। বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ ম্যাচে আর্জেন্টিনার (Argentina) সামনে ক্রোয়েশিয়া (Croatia)। ভারতীয় সময় ম্যাচ শুরু বুধবার রাত সাড়ে ১২টা অর্থাৎ মঙ্গলবার মধ্যরাত। এই মেগা ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগে অদ্ভুত পরিসংখ্যান ঘুরছে কাতারে। বিশ্বকাপ (World Cup 2022) সেমিফাইনালে কখনও হারেনি আর্জেন্টিনা। এবার স্কালনির দল আর ফাইনালের মাঝে দাঁড়িয়ে শুধু ক্রোট-রা। ২০১৪-র পুনরাবৃত্তি কি হবে লুসেইল স্টেডিয়ামে। ৮ বছর বাদে কি আবার ফাইনাল খেলবেন মেসিরা?এ ধরনের কাধিক প্রশ্ন ঘুরছে ফুটবল প্রেমী বাঙালির মনে। যদিও কাতার কাপযুদ্ধে মেসি (Lionel Messi) ম্যাজিকের দিকেই তাকিয়ে আর্জেন্টিনা সাজঘর।
টুর্নামেন্টে চার গোল হয়েছে লিওর। প্রতি ম্যাচেই ধেয়ে আসছে কড়া ট্যাকল। আটকানো যায়নি মেসিকে। ডালিচের দলের জমাট দুর্গ ভাঙতে মারাদোনার দেশ তাকিয়ে মেসির বাঁ পায়ের দিকে। তবে স্কালনির কাজটা মোটেও সহজ নয়। ৫-৩-২ আর্জেন্টাইন কোচের প্রিয় স্ট্রাটেজি। সিঁড়ি ভাঙা অংকের মতো সেটা কখনো হয়ে দাঁড়ায় ৪-২-৩-১ সিস্টেমে। লুকা মদ্রিচদের বিরুদ্ধে নামার আগে প্রবল চিন্তায় নীল-সাদার কোচ। কার্ড সমস্যার কারণে নেই লেফটব্যাক আকুইনা, নেই মন্ত্রিয়েল।
কোচের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে ক্রোট কোচের স্ট্রাটেজি। দুটো উইংকে চমৎকার ব্যবহার করেন ডালিচ। ব্রাজিল ওখানেই ডুবেছে। স্কালনি সেই ভুল করতে চান না। ফ্যাক্টর আরও আছে। দুই গোলকিপারের ডুয়েল। মেসির দলে মার্টিনেজ আছেন। মদ্রিচদের আছেন লিভাকভিচ। দুজনেই টাইব্রেকারে বিশেষজ্ঞ। মার্টিনেজ শপথ নিয়েছেন মেসির হাতে কাপ তুলেই ছাড়বেন। ডাইনামো জাগরেবে খেলা লিভাকোভিচ এবার গোল্ডেন গ্লাভসের দাবিদার। ২০১৮-র পর ২০২২। টানা দু'বার ফাইনালে ওঠার হাতছানি ক্রোয়শিয়ার সামনে।
টাইব্রেকারে এই দল অপ্রতিরোধ্য। ৯০ মিনিটে ম্যাচ শেষ করতে চাইবে আর্জেন্টিনা। ডিফেন্স জমাট করে ম্যাচটা রবারের মতো টেনে নিয়ে যেতে চাইবে ডালিচের দল। কাউন্টডাউন কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে।