প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের তলব করা হল কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তকে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ইডি দফতরে দফতরে আসেন বাপ্পাদিত্য। ইডি সূত্রে খবর, এই তৃণমূল কাউন্সিলরকে তাঁর ব্যাংকের পাসবুক, সমস্ত লেনদেন এবং আয়কর রিটার্নের সমস্ত কাগজপত্র সহ বেশ কয়েকটি নথি আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যা বৃহস্পতিবারই ইডি দফতরে জমা দেন বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। টানা ৬ ঘণ্টা ধরে চলছে জিজ্ঞাসাবাস।
প্রসঙ্গত, একসময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা ছিল বাপ্পাদিত্যের। সেই কারণে প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় পার্থের ভূমিকা সম্পর্কে বাপ্পাদিত্য অনেকটাই জানেন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তবে পার্থর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই তাঁকে তলব, এমনটাই দাবি এদিন ইডির দফতরে হাজিরা দিতে আসা বাপ্পাদিত্যের। পাশাপাশি তাঁর সাফ দাবি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই।
তবে গত বছর প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের বাড়িতে উদ্ধার হয় প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত এবং এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক নথি। প্রায় ১০০ পাতার নিয়োগ সংক্রান্ত নথি উদ্ধার হয়েছিল বলে সিবিআই সূত্রে খবর। এরপর বৃহস্পতিবার বাপ্পাদিত্যকে আবার তলব ইডির। এই বিষয়ে জল কতদূর গড়ায় এখন সেটাই দেখার।
প্রাথমিকের নিয়োগ মামলায় বড় নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রাথমিকের ৪২ হাজার ৯৪৯ প্রার্থীর প্যানেল প্রকাশ করতে হবে পর্ষদকে। বুধবার প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই শুনানি শেষে এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
২০১৬ সালের প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত মামলার বুধবার শুনানি ছিল হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। সেখানে আজ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, ৪২ হাজার ৯৪৯ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। যদি প্যানেল আগেই প্রকাশ হয়ে থাকে, তাহলে সেই প্যানেলের হার্ড কপি ও সফ্ট কপি উভয়ই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৫ জানুয়ারি। ওই দিনই পর্ষদকে আদালতে প্যানেলের হার্ড কপি জমা দিতে হবে।
২০১৪ র টেটের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয় তার মাধ্যমে প্রায় ৪২৫০০ শিক্ষক নিয়োগ হয়। মামলায় অভিযোগ ওঠে যে সংরক্ষণ নীতি না মেনেই নিয়োগ হয়েছিল। এই মামলার প্রেক্ষিতেই অভিযোগ ওঠে যে অ্যাপটিচিউড টেস্ট না নিয়েই ইচ্ছামত নম্বর দেওয়া হয়েছে এবং ইন্টারভিউ নিয়ম মেনে হয়নি। কারও ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি না মেনে নিয়োগ হয়েছে। এই মামলাতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ইন্টারভিউয়ার অর্থাৎ যারা ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর ৩৬ হাজার চাকরি প্রার্থীদের চাকরি বাতিল করেন তিনি।
২০১৪ সালে টেট পরীক্ষার মাধ্যমে ২০১৬ এবং ২০২০ সালে প্রাথমিকে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হয়। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী গত ১২ ডিসেম্বর হলফনামা জমা দেয় পর্ষদ। জানানো হয়, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্যানেল প্রকাশ করা হয়। তবে সে যুক্তি খারিজ করে দেন বিচারপতি সিনহা। দুটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ প্যানেল প্রকাশের কথা বলেন। পর্ষদের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। এরপর বুধবার ওই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পর্ষদকে নির্দেশ দেয়, আগামী ১০ দিনের মধ্যে ৪২ হাজার ৯৪৯ জন শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল প্রকাশ করতে হবে। আগামী ১৫ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার উঠে এল ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার নাম। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রিপোর্ট পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ জড়িত। এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট দিয়ে ইডির বক্তব্য, মোট সাড়ে ৭ কোটি টাকার দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে ইডি। এই সাড়ে ৭ কোটি টাকার পুরোটাই ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার সম্পত্তি। এছাড়া আটটি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। এগুলি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে ইডি।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় এদিন সিবিআই ও ইডি আলাদা আলাদা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গেল বেঞ্চে। বিচারপতি রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর বুধবার ফের এই মামলার শুনানি করবেন। ইডির জয়েন্ট ডিরেক্টর ও ইএসআই হাসপাতালের একজন সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসারকে আগামীকাল, বুধবার আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
উল্লেখ্য, ইডির স্ক্যানারে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস ছাড়া আরও চারটি কোম্পানির নাম উঠে এসেছে তদন্তে। চার কোম্পানির ডিরেক্টরদের তলব করেছে ইডি। নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সহ এই চারটি সংস্থা যুক্ত রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এই কোম্পানিগুলি থেকে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে টাকা যেত বলে অনুমান তদন্তকারী আধিকারিকদের।