সৌমেন সুর: মানুষ জন্মালে সে মানুষ হয় না। মানুষ হতে গেলে চাই কিছু বাড়তি গুণ। যারা মানুষ নন তারা লোক। সেবা মানুষের এক পুণ্য ব্রত। সেবার মধ্যে দিয়েই মানুষ ফিরে পায় তার মনুষ্যত্বকে। খুঁজে পায় আত্ম বিকাশের পথ। মানুষের চিরকালের সাধনা হলো বৃহত্তের সাধনা। সেবা হল সেই বৃহৎ জীবনেরই আহ্বান।
সব ধর্মের মূল বিষয় মানুষের কল্যাণ। সব ধর্মের মধ্যেই বারবার ধ্বনিত হয়েছে মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব। মানুষের সেবায় ঈশ্বরের সেবা, নরই নারায়ন। দিন-দুঃখী, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, মানুষের মধ্যেই বাজে দেবতার চরণধ্বনি। তবু ভন্ড, স্বার্থপর মানুষের সংখ্যা বর্তমানে বেশি। তারা আচার অনুষ্ঠানকে বড় করে তোলে, আর ঈশ্বরের মহিমাকে বন্দী করে রাখে মন্দিরে। সেবা একটা সৎ বৃত্তি। সেবায় সবারই অধিকার। বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। নিপীড়িত, দুঃখী, বিপন্ন মানুষকে সেবা করা একমাত্র প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য। আমাদের দেশের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বলতে রামকৃষ্ণ মিশন, রেড ক্রস, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, মারোয়ারি রিলিফ সোসাইটি প্রবৃত্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মুখ্য উদ্দেশ্য জনগণের সেবা। এটা এমনিই এক কর্ম, যেখানে রাজনৈতিক দলের মানুষকে হতে হবে ত্যাগী ও সচেতন। যেটা এখন কোন দলের আছে বলে তো মনে হয় না। সবার উদ্দেশ্য, যেমন করে হোক ক্ষমতা দখল। এই ক্ষমতা দখলের জন্য যা করতে হয় করব। তাতে মানুষ ধ্বংস হয় হোক। ক্ষমতা দখলের জন্য নৃশংস অত্যাচারের আবহাওয়া তৈরি হোক। আর নারীদের সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে পড়ুক, তবে ক্ষমতা হাতে থাকে, এটাই মুখ্য উদ্দেশ্য। কোন কিছুতেই মাথা নোয়াবনা।
তাহলে মানুষের সেবা দাঁড়ালো কোথায়! সেবা-ই এখন অভিধানে কোন এক পাতায় ছোট্ট খুদে অক্ষরে প্রকাশ মাত্র। দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে সব ভালো জিনিসগুলো অদৃশ্য ভাবে উবে যাচ্ছে। সাধারণ অ-জ্ঞান মানুষ কিছু টের পাচ্ছে না। ফায়দা লুটে যাচ্ছে রাজনৈতিক দল। এর শেষ কোথায়?
মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা (Rajib Sinha)। মনোনয়ন পর্বে অশান্তি এবং নিরাপত্তা সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ওই বৈঠকে।
সর্বদলীয় বৈঠক না করে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল বামফ্রন্ট সহ সব বিরোধী রাজনৈতিক দল। তারপর মঙ্গলবারের ওই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছে বিজেপি এবং কংগ্রেস। মনোনয়ন জমার সময় বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন সহ মোট পাঁচ দফা আবেদন করে ওই মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ১৪ জুলাই নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও মামলার রায়দান এখনও বাকি।
খসড়া ভোটার তালিকা (Voter List) প্রকাশ বিষয়ে আলোচনার জন্য সর্বদল বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (Election)। সূত্রের খবর, আগামী ২ নভেম্বর দুপুরে কমিশনের কলকাতা অফিসে এই বৈঠক হওয়ার কথা। উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সবক’টি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলকে (political Party)। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০২৩-র জন্য সারা দেশে ভোটার তালিকার খসড়া ৯ নভেম্বর প্রকাশিত হবে। ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে তালিকা সংশোধনের কাজ। ২০২৩-র বছর ৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।
২০২৩-র জানুয়ারি থেকে পরবর্তী এক বছরে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচন এবং উপনির্বাচন এই নতুন ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই হবে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে কমিশনের এই সর্বদল বৈঠক একটি রুটিন প্র্যাকটিস। প্রতিবছর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার আগে প্রতিটি রাজ্যের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে কমিশন। তারপর প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং বিয়োজনের পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। দেশের নতুন ভোটারদের হাতে ২৫ জানুয়ারি, ‘জাতীয় নির্বাচক দিবসে’ আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোটার কার্ড তুলে দেওয়া হয়।