বিশ্বকাপের নিরিখে পেলেকে ছাপিয়ে গেলেন নেইমার। বলিভিয়ার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে বিশ্বকাপের কোনও খেলায় ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক হলেন ওয়ান্ডার কিড। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচে বলিভিয়াকে ৫-১ গোলে হারিয়ে অভিযান শুরু করল ব্রাজিল।
ম্যাচের ৬১ ও ৯৩ মিনিটে গোল করেন নেইমার। যদিও ১৭ মিনিটে পেনাল্টি নষ্ঠ করেছিলেন তিনি। ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপের কোনও খেলায় ৭৭টি গোল ছিল ফুটবল সম্রাটের। বলিভিয়ার বিরুদ্ধে ৬১ মিনিটে গোল করে সেই রেকর্ড স্পর্শ করেছিলেন নেইমার।
এদিনের ম্যাচে শুরু থেকে এগিয়ে ছিল পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ২৪ মিনিটে রডরিগোর গোলে লিড পেয়েছিল ব্রাজিল। ৪৭ মিনিটে ২-০ করেন রাফিনহা। ৫৩ মিনিটে ফের গোল রডরিগোর। ২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ফিরতি লেগে খেলবে দুই দেশ।
লিওনেল মেসি (Lionel Messi), পেলে (Pele), মারাদোনার (Diego Maradona) পর সর্বকালের শ্রেষ্ঠদের মধ্যে পড়েন। হয়তো বিতর্ক হতে পারে, হয়তো আরও অনেক নাম উঠে আসবে। কেউ বলবেন তাহলে রুড গুলিতের নাম বা জিদান বাদ কীসে? কেন আসবে না রোনাল্ডো অর্থাৎ সিআর ৭-এর নাম। আরও এই গোত্রীয় অনেক অনেক নাম আছে নিশ্চই যাঁরা বিশ্ব ফুটবলকে (Football World Cup) সমৃদ্ধ করেছেন। তর্ক থাকুক। কিন্তু একটি বিষয় জানতে হবে, এই তিন কিংবদন্তি একাই একটি দল অর্থাৎ একাই দলকে টেনে নিয়ে ফাইনালে যেতে পারেন।
পেলের খেলা আজকের অনেকেই দেখেননি হয়তো। ওই সময়ে খেলার গতি আজকের মতো দ্রুতগামী ছিল না কাজেই পেলে গোলমুখে যেতে অসংখ্য ড্রিবল ডজ করে গোল করতেন। পেলের মতো দৃষ্টিনন্দন গোল খুব কম দেখা গিয়েছে। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিন বলেছিলেন যে, পেলে কোন দিক থেকে গোল করে দেবে বোঝাই যায় না। এই পেলে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের খেলোয়াড়।
মারাদোনা এই তিন জনের মধ্যে সব থেকে প্রতিভাবান। তিনি টিপিকাল স্ট্রাইকার ছিলেন না বরং এটাকিং মিডফিল্ডার ছিলেন। অসংখ্য গোল করেছেন বহু খেলোয়াড়কে কাটিয়ে এবং করিয়েছেন। মারাদোনা একাই দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন বিশ্বকাপে তা বলে ফেলা যায়।
উল্লেখিত, দুই খেলোয়াড় আজ আর নেই, কিন্তু ফুটবল আলোচনায় নিয়মিত আছেন। মেসি এঁদের তালিকার অন্যতম। অসম্ভব পায়ের কাজ। যখন যে কোনও দিক থেকে আক্রমণে যেতে পারেন। ঠিকানা লেখা পাস ইত্যাদি তো আছেই সঙ্গে এ বছর দেখা গেলো অসম্ভব মনের জোর নিয়ে তিনি আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করলেন। এবারে কাতার বিশ্বকাপের শুরুতেই জানিয়েছিলেন এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাঁর দেশ তথা দলের কোচ লিও স্কালোনির ইচ্ছা তিনি পরের বিশ্বকাপটিও খেলুন।
মনে রাখতে হবে ফুটবলে ৩৫/৩৬ বছর হয়ে যাওয়া মানে এবার খেলা ছাড়ো। মেসির বয়স এখন ৩৫, ৪ বছর পর ৩৯। অসম্ভব এই খেলা ধরে রাখা। ১৯৯৪ এ মারাদোনা এক প্রকার জোর করেই বিশ্বকাপ খেলেছিলেন, কিন্তু তাতে তাঁর বদনামই হয়েছিল। মেসি বুদ্ধিমান, অনেক বেশি পেশাদার এবং নিজের বিষয়টি বোঝেন ভালো। কাজেই কোচ যাই বলুন মেসিকে আর বিশ্বকাপে হয়তো দেখা যাবে না।
কান্ড ঘটিয়েছেন ফিফা সভাপতি। নতুন বছরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ফিফা সভাপতির। ফুটবল সম্রাট পেলের শেষকৃত্যে গিয়ে অদ্ভুত কান্ড করেছেন ইনফ্যান্টিনো। পেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কফিন নিয়ে যাওয়া হয়েছে সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরোতে। নিউ ইয়র্ক কসমসে কেরিয়ারের শেষ দুই বছর খেলার আগে সান্তোসেই খেলেছেন পেলে। মৃত্যুর আগে পেলেও ব্যক্ত করে গিয়েছেন নিজের ইচ্ছার কথা। দেহ যেন নিয়ে যাওয়া হয় ভিলা বেলমিরোতে। সেই কথা মাথায় রেখেই স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয় কফিন।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বহু ভিআইপি ছুটে এসেছেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। এখানেই এসেছিলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট। কফিনের ঢাকনা খুলে রাখা হয়েছিল। খোলা কফিনের সামনে মোবাইল ফোন বার করে সেলফি তোলেন ইনফ্যান্টিনো। পরে পেলের স্ত্রী মার্সিয়া ও পুত্র এডিনহো কে সমবেদনা জানান তিনি। কিন্তু ততক্ষণে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এটাই শেষ নয়। তাঁর আচরণ নিয়ে আগেও সমালোচনা হয়েছে। বিশ্বকাপ ফাইনালের পুরস্কার মঞ্চে ইনফ্যান্টিনোর আচরণ মোটেও সমর্থনযোগ্য ছিল না। বছর শেষ হয়ে নতুন বছর শুরু হয়ে গেল। কিন্তু ইনফ্যান্টিনো বদলালেন না।
পেলে নেই (Pele Demise)। শুধু এই একটা খবর যেন সব আলো নিভিয়ে দিয়েছে। পেলের চলে যাওয়া, একটা জীবন্ত ইতিহাসে শেষ দাঁড়ি পড়ে যাওয়া। একটা সময়, স্পোর্টস কুইজে অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন ছিল, ফুটবল সম্রাট পেলের পুরো নাম কী? এডসন আরান্তেস ডো নাসিমান্তো। বিজ্ঞানী থমাস এডিসনের নামে নামকরণ করা হয়েছিল এডসন। দারিদ্র, জীবনযুদ্ধ নিত্যসঙ্গী ছিল তাঁর। বুট কেনার পয়সাও ছিল না। কাগজের ফুটবল (World Football) বানিয়েই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। তাও বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করলেন ফুটবল দল, দি সুলেস ওয়ান্স।
সেই পেলের ঝুলিতে ১২৮৩ গোলের রেকর্ড। মাত্র ১৫ বছর বয়সে যোগ দিলেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসে। ১৯৬৯ সালের ১৯ নভেম্বর সেই সান্তোসের জার্সিতেই করে ফেললেন কেরিয়ারের এক হাজারতম গোল। সান্তোসের ইতিহাসে ১৯ নভেম্বর দিনটিকে পেলে দিবস হিসেবেই পালন করা হয়। লকার রুমে আলাদাভাবে সংরক্ষিত ফুটবল সম্রাটের লকার। ১৯ বছর বয়সে খেলে ফেললেন বিশ্বকাপ।
কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ জয়, বিশ্বকাপে গোল, হ্যাটট্রিক সব, সব পেলের দখলে। যখন যেখানে খেলেছেন হ্যামলিনের বাঁশিওলার মতোই কাতারে কাতারে মানুষ সম্মোহিত হয়েছে তাঁর ফুটবলের জাদুতে। তৈরি হয়েছে রূপকথার গল্প।
১৯৬৭ সালে পেলে গেলেন নাইজেরিয়া। সুপার ঈগলদের বিরুদ্ধে ম্যাচ। ওদিকে দেশে আগুন জ্বলছে। শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই। শুধু পেলের জন্যই দু'দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হলো। পোপ ফ্রান্সিসকে নিজের সই করা জার্সি উপহার দিয়েছিলেন পেলে। ভ্যাটিকান সিটির সংগ্রহশালায় সযত্নে রাখা সেই জার্সি। সম্রাটকে মাঠে নামতে দেখেছে ফুটবলের মক্কাও। ১৯৭৭, ২৪ সেপ্টেম্বর। মোহনবাগানের আমন্ত্রণে কসমস ক্লাব এলো কলকাতায়। পেলের কসমসকে আটকে দিয়েছিলেন গৌতম সরকার, শিবাজী ব্যানার্জিরা। ২-২ গোলে শেষ হয়েছিল ম্যাচ। কলকাতায় জনবিস্ফোরণ। টুকরো টুকরো স্মৃতির কোলাজ ভেসে বেড়াচ্ছে তিলোত্তমায়।
শোকস্তব্ধ ব্রাজিল। দেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে। আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সান্তোস ক্লাবে।। শতাব্দীর সেরা ফুটবলারকে সেখানেই শ্রদ্ধা জানাবেন মানুষ। কারণ পেলে একজনই হয়, তাঁর থেকে কেউ ভালো খেলে ফেললেও। দ্বিতীয় পেলে হওয়ার প্রশ্নই নেই। কারণ ফুটবল সম্রাট নিজেই একবার বলেছিলেন, আমার মা-বাবা বহুদিন আগেই সন্তান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন।
চিরঞ্জিত (বিধায়ক -অভিনেতা): পেলে একটা অদ্ভুত নাম যেন কত কাছের। বাঙালির কাছে আরও কাছের হওয়ার অন্যতম কারণ নামটি 'পেলে'। যেন কী পেলে বা কোথায় পেলে বললেই পাওয়ার বিষয়টি এসে যায়। আমার স্কুল ছিল মিত্র ইনস্টিটিউশন। ছাত্র ভালোই ছিলাম কিন্তু তার সঙ্গে নেশা ছিল ফুটবলের। খুব খেলতাম ঢাকুরিয়ার মাঠে, স্ট্রাইকার ছিলাম। একবার ছেলেবেলায় একটা গোল করার পর চারিদিক থেকে চিৎকার এলো পেলে পেলে। ব্যস ওই তারপর থেকেই ফুটবলের সম্রাট পেলের ভক্ত।
আমাদের বাল্যকালে টেলিভশন ছিল না তাই ফর্মে থাকা পেলের খেলার সোনালী যুগ চাক্ষুষ করতে পারিনি। আমার বাবা ছিলেন প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট শৈল চক্রবর্তী কাজেই বাড়িতে অজস্র বইপত্র ম্যাগাজিন আসতো। ওখান থেকেই কাঁচি দিয়ে কেটে পেলের ছবি আমার লম্বা একটা বাঁধানো খাতায় লাগাতাম। অসংখ্য ছবির কালেকশন ছিল পেলের। আসলে পেলে ছিলেন আমার জীবনের প্রথম সেলিব্রেটি।সিনেমা থিয়েটারের দিকে ঝোঁক ছিল না। বাবা চিত্রশিল্পী ছিলেন বলেই তিনি পেলের কার্টুনও এঁকে ছিলেন, আমিও আঁকতাম। পেলের ছবিও তো এঁকেছি।
এডসন আরান্তেস ডো নাসিমান্তো, এই নাকি পেলের পুরো নাম। আসলে পর্তুগিজদের এ রকম বড় নাম হয়। কিন্তু ওদের ছোট একটা নাম থাকবেই। যেমন রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহো ইত্যাদি সবই এদের নিক নাম। এক সময়ে আফ্রিকা থেকে পেলেদের পূর্বপুরুষদের তুলে এনেছিল পর্তুগিজরা এবং তাঁদের উপর অত্যাচার করে ব্রাজিলে রেখে দিয়েছিলো।
শক্ত কাজ থেকে ফাই ফরমাস খাটানোর জন্য এঁরাই ছিল পর্তুগিজদের দাস। এই কারণে দীর্ঘদিন ব্রাজিলে বসবাসকারী সাদা পর্তুগিজদের এরা একপ্রকার "দাস" ছিল। পরে অবস্থা স্বাভাবিক হলে এরাই খেলার মাঠ থেকে কফির বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। লক্ষ্য করে দেখবেন ব্রাজিল দলে কেউ সাদা, কেউ আবার কৃষ্ণবর্ণের।পেলে এমনই এক পরিবারভুক্ত ছিলেন।
দরিদ্র বাবা ফুটবল খেললেও চোট পেয়ে খেলা ছাড়তে বাধ্য হন। এই দরিদ্র পরিবার থেকে খেলোয়াড় হবে দুষ্কর ছিল ৫০ এর দশকে। কিন্তু পেলে তো হবু সম্রাট, তিনি পেরেছিলেন। বিশ্বজোড়া নাম করেছিলেন আজকের খেলোয়াড়দের মতো অবশ্য টাকা করতে পারেননি পেলে। তিনবার বিশ্বকাপ তাঁর কল্যাণে পেয়েছিলো ব্রাজিল। ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০, এই রেকর্ড ভাঙা দুরূহ। আমি মনে মনে ভাবি ফুটবলের সম্রাটের এই রেকর্ড যেন অক্ষুন্ন থাকে।
আমি পেলের খেলা দেখেছি সিনেমা হাউসে। পরে মোহনবাগানের সঙ্গে খেলা অবশ্য টিভিতে দেখি। আমি তখন একদিকে দূরদর্শনের সাংবাদিক-সংবাদ পাঠক আর অন্যদিকে সবে সিনেমা জগতে পা দিয়ে শুটিং শুরু করেছি কাজেই মাঠে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
পেলে ক্যান্সারের মতো যন্ত্রণায় ভুগে চলে গেলেন। এর আগে মারাদোনা চলে গিয়েছেন। মেসিও এবার বিশ্বকাপের পর নাকি আর খেলবেন না জানিয়েছেন।অতএব সিংহাসনটা শূন্য পড়ে, সম্রাটই শুধু নেই। যাও সম্রাট ,অনেক দিয়েছো এবার চির বিশ্রাম। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
অস্তাচলে পেলে (Pele)। চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন ফুটবল সম্রাট। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে যখন একটু একটু করে ফেস্টিভ মুডে ঢুকে পড়ছে গোটা বিশ্ব, তখনই ইন্দ্রপতন ফুটবল বিশ্বে। সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে লড়াই শেষ পেলের। ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত (Death) হলেন ফুটবলের সম্রাট।
দীর্ঘ প্রায় একমাস ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। সেপ্টেম্বরে রুটিন চেক আপের সময় ক্যানসার ধরা পড়ে। আরও স্পষ্টভাবে বললে ভুগছিলেন কোলন ক্যান্সারে। হার্ট ও কিডনির সমস্যাও ছিল। শেষ পর্যন্ত থেমে গেল সব লড়াই। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে জিতেছেন তিনটি বিশ্বকাপ। ১৯৫৮, ১৯৬২ আর ১৯৭০। তিনটে বিশ্বকাপ তথা সোনার পরী পেলের দখলে। গত শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের সম্মান ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন পেলে আর মারাদোনা। একজন ফুটবল সম্রাট। অন্যজন ফুটবলের রাজপুত্র। মারাদোনা আগেই চলে গিয়েছেন। সম্রাট পেলেও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
কাতার বিশ্বকাপ চলাকালীন অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়েছিল। পেলের সুস্থতা কামনায় প্রার্থনা শুরু হয়েছিল। ফরাসি মেগাস্টার কিলিয়ান এমবাপে পর্যন্ত ম্যাচের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়েছিলেন। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়েছিলেন পেলে। এমনকি হাসপাতালে বসেই বিশ্বকাপের ম্যাচের দিকে নজর রেখেছিলেন। ব্রাজিলের হারে বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। তবুও মানসিকভাবে শক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন নেইমারকে।
আবার লিও মেসির বিশ্বজয়ের পর অভিনন্দন বার্তাও জানান সম্রাট। তাঁর পরিবার আশা করেছিলেন একসঙ্গে বাড়িতে বসেই বড়দিন পালন করতে পারবেন। কিন্তু সেটা হয়নি। বড়দিনের আগেই ফের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। মেডিক্যাল বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে হাসপাতালেই রাখার বন্দোবস্ত করা হয় পেলেকে। বড়দিনের ঠিক আগে একে একে হাসপাতালে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
ইঙ্গিত দিয়েছিলেম চিকিৎসকরা। হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। এমনকি চির বিদায় বার্তাও দেন পেলে। হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন লড়াই ফুরিয়ে আসছে। নতুন বছরে পা রাখা হলো না সম্রাটের। ২১ বছরের ফুটবল কেরিয়ারে ১২৮৩টি গোল রয়েছে পেলের। কিন্তু জীবনের মাঠ থেকে এবার বুটজোড়া খুলে রাখতেই হলো। তারার দেশে মারাদোনাকে সঙ্গে নিয়েই হয়তো নতুন কোনও স্টেডিয়ামে মাঠে নামবেন সম্রাট।
বড়দিনেও (Christmas) বাড়ি ফেরা হচ্ছে না ফুটবল সম্রাটের। হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে কিংবদন্তী পেলেকে (Pele)। ব্রাজিলে (Brazil) সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ফুটবল সম্রাট। ক্যানসার আক্রান্ত পেলেকে নভেম্বরের শেষ দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেপ্টেম্বরে নিয়মিত চেক আপের সময় মরণ রোগ ধরা পড়ে। কেমোথেরাপি চলছিল পেলের। বিশ্বকাপ চলাকালীন অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। 24 ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় ৮২ বছরের পেলেকে। প্রার্থনা শুরু হয়ে যায় ফুটবল বিশ্বে। ফ্রান্সের অনুশীলনের পর কিলিয়ান এমবাপেও পেলের সুস্থতা কামনায় প্রার্থনা করেন। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওঠেন ৩ বারের বিশ্বকাপজয়ী পেলে।
পরিবারের তরফে সোশ্যাল সাইটে বিবৃতিও দেওয়া হয়। বিশ্বকাপ চলাকালীন হাসপাতালে থেকেই ম্যাচ দেখেছেন। ব্রাজিল হারার পর নেইমারকে সান্ত্বনা জানিয়েছিলেন নিজে পেলে। লিও মেসিকেও অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি। চিকিৎসকেরা আশা করেছিলেন বড়দিনের উৎসবের আগেই বাড়ি ফেরাতে পারবেন তাঁকে। কিন্তু আচমকা ফের অবস্থার অবনতি হয়েছে। হৃদযন্ত্র ছাড়াও কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
অতএব পেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালেই রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁর মেয়ে জানিয়েছেন, বাড়িতে এবার বড়দিনের উৎসব আর পালিত হবে না। কিংবদন্তী জীবনযুদ্ধে লড়ছেন। কিন্তু এমন খবরে ফের চিন্তিত ফুটবল মহল।
প্রসূন গুপ্ত: শতাব্দীর পথে বিশ্বকাপ ফুটবল (World Cup 2022)। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কিছুটা থেমে গেলেও আজও অটুট বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) ঐতিহ্য। এই ফুটবল যুদ্ধে বহু ফুটবলার এসেছেন, খেলেছেন কিন্তু রেকর্ড বইয়ে মাত্র কিছু খেলোয়াড় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। ফুটবল বললেই ব্রাজিল (Brazil) দেশের কথা প্রথমেই মনে আসে। পাঁচবার বিশ্বকাপ জয় করেছে তারা। অসংখ্য তারকা ফুটবলার দিয়েছে এই দেশ। কিন্তু বিশ্বফুটবলে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন ফুটবলের রাজা পেলে (Pele), কালো হীরা নাম হয়েছিল তাঁর। অসংখ্য গোল করে দেশকে সম্মানের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। এটা সত্যি যে পেলের সাথে জার্জিনহো-সহ বহু ফুটবলার খেলেছেন কিন্তু বাস্তবতায় একার কৃতিত্বে পেলে ছিলেন অনন্য।
এরপর যে নামটি আসে তিনি ফুটবলের রাজপুত্র প্রয়াত দিয়েগো মারাদোনা। আর্জেন্টিনাকে শুধু বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন তাই নয়, একার কৃতিত্বে অজস্র গোল করেছেন মারাদোনা। বলতে দ্বিধা নেই তাঁর সেরা সময়ে আর্জেন্টিনা দলে আহামরি এমন কিছু বড় খেলোয়াড় ছিল না। গত শতকে এই দুজনই কিংবদন্তি। মারাদোনা অবশ্য আজ প্রয়াত কিন্তু অমর তাঁর ক্রীড়াশৈলী।
এই দুজন ছাড়া আর যাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন বা দেশের নাম চিরস্মরণীয় করেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন জার্মানির বেকেনবাওয়ার। মধ্য মাঠ থেকে অসংখ্য বল বাড়িয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে বলা হয়ে থাকে সর্বকালের সেরা মিড-ডিফেন্ডার। এসেছেন জোহান ক্রুয়েফের। নেদারল্যান্ড কোনও দিন বিশ্বকাপ যেতেনি কিন্তু ফুটবল নিয়ে জাদু দেখাতে পারতেন তিনি। গত শতকের আরও এক প্রতিভাবান ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান। ৯৮-র বিশ্বকাপে খানিকটা জিদানের ভেলকিতে মাত হয়েছে বিশ্ব। সেবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বিপ্লবের দেশ ফ্রান্স। জিদানের মতো পরিশ্রমী খেলোয়াড় এর আগে খুব কমই এসেছে।
চলতি শতকে যে দুজন খেলোয়াড় বিশ্বখ্যাত, তাঁদের হয়তো এবারই শেষ বিশ্বকাপ। রোনাল্ডো বা সিআর-৭ এবং মেসি বা এলএম-১০। অবশ্যই দুজনের খেলার ধারণ আলাদা। মেসি আর্জেন্টিনায় মারাদোনার পরবর্তী প্রতিভা এবং রোনাল্ডো উইথড্রয়াল স্ট্রাইকার। দুজনই গোল করেন বা গোল করতে সাহায্য করেন। এই বিশ্বকাপে এই দু'জন কী করেন দেখার। তবে আগে পরে আরও অনেক নাম আসতেই পারে কিন্তু এদের সমতুল্য কারও নাম এই মুহূর্তে মাথায় আসছেই না।