১৮ দিন পার, মানুষের ক্ষোভে উত্তপ্ত সন্দেশখালি। পুঞ্জীভূত রাগ ফেটে বেরোচ্ছে ক্রমাগত। প্রশাসনের উপরও ভরসা হারিয়ে এবার রাস্তাতেই বিচার চেয়ে মানুষ। সন্দেশখালি ঢুকতে বাধার মুখে দিল্লির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম। বাধার মুখে আইনজীবীও। এই ছবি দেখতে দেখতে চোখ সয়ে গেছে প্রায়। তারই মধ্যে এবার অন্য ছবি দেখাল শাসক তৃণমূল। সন্দেশখালি জুড়ে যখন কাঁদো কাঁদো রব। তারই মাঝে বেড়মজুরে খোলকর্তাল নিয়ে, গলায় মালা পরে কীর্তনে মজে সুজিত-পার্থরা। সঙ্গে হাজির সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোও।
তবে শুধুই নাচানাচি নয়। পাশাপাশি সন্দেশখালির মানুষকে দিলেন জমি ফেরানোর আশ্বাসও। বছর শুরুর সময় থেকেই ক্ষণে ক্ষণে উত্তাপ ছড়িয়েছে সন্দেশখালিতে। গোটা এলাকা জুড়ে দাবি একটাই। শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারই। পুলিসের জালে দুই শাগরেদ এলেও এখনও অধরা সন্দেশখালির বাঘ। সেখানেই যখন গ্রামবাসীদের আক্রমণের তিরে স্থানীয় তৃণমূল, তখনই এবার দ্বীপাঞ্চলের মাটিতে পা পড়ল শাসক তৃণমূলের।
শনিবারের পর রবিবারও সন্দেশখালিতে হাজির রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু। রবিবার একেবারে ফুলের মালা পরে ঢোল নিয়ে কীর্তনে মজে থাকতে দেখা গেল রাজ্যের নেতা মন্ত্রীদের। এসব দৃশ্য দেখে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিকই, মানুষের ক্ষোভ প্রশমনে শেষ দাওয়াই হরিবোল? কীর্তন করে এতদিনের অত্যাচারে ইতি টানা যাবে? মন্ত্রীদের উপস্থিতিতেই আবার তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকে ধাওয়া করে উত্তরটাও বোধ হয় বুঝিয়ে দিয়েছে সন্দেশখালির মানুষ।
শনিবার সন্দেশখালিতে গিয়েছেন ডিওয়াইএফআই নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। প্রথমে ছদ্মবেশে সন্দেশখালি ঢুকলেও পুলিসি বাধার মুখে পড়েন বাম নেত্রী মীনাক্ষী। ১৪৪ ধারার যুক্তি দেখিয়ে গ্রামে যেতে বাধা দেওয়া হয় মিনাক্ষী-সহ সিপিএমের যুব নেতানেত্রীরা। তবে শনিবার সকাল থেকেই গ্রামে ঘুরছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু। তাঁরা কীভাবে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন, প্রশ্ন মীনাক্ষীর।
শনিবার সকালে মুখ ঢাকা দিয়ে পুলিসের নজর এড়িয়ে সন্দেশখালিতে পৌঁছন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। টোটো করে গ্রামে গ্রামে ঘোরেন। কথা বললেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে। গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন বাম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের বাড়িতেও যান মীনাক্ষী। দুপুর দেড়টার পর মিনাক্ষীদের পুলিস আটকায়। তার আগেই বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ফেলেছেন মিনাক্ষীরা। মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বাম নেত্রী। পুলিসের তরফে সাফ জানানো হয়, যেহেতু সন্দেশখালির বিভিন্ন জায়গাতে ১৪৪ ধারা রয়েছে তাই সেখানে একসঙ্গে এত লোকজন নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। তারপরই পুলিসের কাছে লিখিত অর্ডার দেখতে চান মীনাক্ষীরা। যদিও পুলিস কোনওরকম অর্ডার দেখাতে পারেনি।
এদিকে, শনিবার গ্রামের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সন্দেশখালিতে যান সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। পুলিসি বাধা পেয়ে মীনাক্ষী দুই মন্ত্রীকে ‘শাহজাহানের লোক’ বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘পার্থ, সুজিত শাহজাহানের দলের লোক। ওঁরা মানুষকে ভয় দেখাতে এসেছেন। যখন জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল, তখন ওঁরা কোথায় ছিলেন? ‘দুয়ারে সরকার’ কোথায় ছিল?’’
মীনাক্ষী আরও বলেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি থাকলে আমি একা যেতে পারি। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে তো বাধা নেই। আমরা যেতে চাইছি। যেতে দিচ্ছে না। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আছে। পুলিসের সঙ্গে কথা বলতে চাই। মানুষ জমি ফেরত চায়। পুলিশের শাস্তি চাই। পুলিশ মানুষের কথা শোনে না। আমরা সে বিষয়ে কথা বলতে এসেছি। জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিস তা বার করে দিক।’’ থানায় যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হয় মীনাক্ষীদের। সন্দেশখালি ঘাটের কাছে বসে পড়েন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগেও সন্দেশখালি যাওয়ার পথে পুলিসি বাধার মুখে পড়েন মীনাক্ষীরা।