
ভয়াল রূপ ত্যাগ করে শান্ত হচ্ছে তিস্তা। ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। ভয় নেই আর আশ্বস্ত করছেন মন্ত্রী, তিস্তা পারের বাসিন্দারাও একটু স্বস্তিতে। তবু খচখচ করছে ভয়ের কাঁটা। উত্তাল প্রকৃতি নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে গোটা মানবজাতিকে। বুধবার সব শেষ হওয়ার ভয়টাকে খুব কাছ অনুভব করেছে বঙ্গের উত্তর। সিকিমের লোনক হ্রদে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে তিস্তার উথাল পাথাল স্রোতে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় ভেসে এসেছিল ৩ টি মৃতদেহ। গজলডোবার উঠতি পর্যটন কেন্দ্র রাজ্য সরকারের স্বপ্নের প্রকল্প ভোরের আলো নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই। বৃহস্পতিবার সেই গজলডোবার হাওয়া মহলেই বিশেষ বৈঠকে বসলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী।
শুধু সেচমন্ত্রী নয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়, প্রতিমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল নেত্রী মহুয়া গোপ সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের নজর এখন শুধুই তিস্তার মাতাল স্রোতে। ঘাড়ের ওপর ৪৮ ঘণ্টার অশনি সংকেত। যদি আবার বাড়ে জল? তবে বৃহস্পতিবার একটু হলেও ভরসা দিচ্ছে তিস্তা। বুধবারের ভয়াল রূপ ত্যাগ করে স্রোতস্বিনী এখন ধীর প্রবাহিনী। ভয়ের কাঁটা খচখচ করছেই। খামখেয়ালি প্রকৃতির কখন আবার কি মর্জি হয়!
পার্থ ভৌমিক (সেচমন্ত্রী,পশ্চিমবঙ্গ সরকার): সংস্কৃতি তো জীবনের অঙ্গ, থাকতেই হবে কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের দায়িত্বে আসার পর সময় কোথায়? সত্যি বলতে কি, আমরা ওপার বাংলার মানুষ। ওই বাংলায় আমার পরিবারের নিয়মিত অবসরে গানবাজনা নাটক থাকতোই। আমি এদিকের হলেও পরিবারের ছোঁয়া তো ছিলই। ছোটবেলা থেকে সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আবার ফুটবল খেলা পাগল ছিলাম। এই যে গতকাল আমার প্রিয় দল ইস্টবেঙ্গল শেষ মুহূর্তে জার্মানের মতো জ্বলে উঠে দু গোল শোধ করে টাই-ব্রেকে জিতল তাতে শেষ মুহূর্তে যেন ছোটবেলায় চলে গিয়েছিলাম।
নাটক চিরকালই আমার প্রিয় বিষয়। নৈহাটী জানবেন এমন একটা ছোট্ট শহর যেখানে যুগে যুগে শিল্পী সাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে কাজেই আমি কি ব্যতিক্রম হতে পারি। সিনেমা বা ক্যামেরার সামনে যেতে হবে এমন স্বপ্ন দেখিনি। পরে ছাত্র রাজনীতি থেকে মূল রাজনীতিতে। কংগ্রেস করতাম পরে তৃণমূল সংগঠিত হওয়ার পরে দিদির সাথেই সৈনিক হিসাবে কাজ করে গিয়েছি। আমি নিজেকে আজকেও কেউকেটা মন্ত্রী ইত্যাদি ভাবি না। আমার উপর দায়িত্ব যা বর্তিয়েছে চেষ্টা করেছি তা পালন করার।
বিধায়ক ও চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী আমার ভাতৃসম। আমাকে জানালেন যে তোমাকে আমার পরের ছবিতে একটা কাজ করতে হবে। আমি বলেছিলাম যে , সময় কোথায়। রাজ্ বললেন যে , ও ঠিক খুঁজে নেওয়া যাবে। রাজি হলাম। মূল চরিত্র কিছু নয়। সুন্দরবনের এক পুলিশ অফিসারের চরিত্র, যার কিনা নিজের উপরেই ভরসা নেই। একদিকে ভীতু প্রকৃতির আবার দুস্টুবুদ্ধি প্রবল। শেষে এক কড়া বস আসায় নিজেদের সমঝে নিতে হল এবং তারপর ... । নাহ সিএনের দর্শকদের আর বলবো না , দেখে নিন। তা ওই ছবিতে মুদ্রাদোষের মতো আমার একটা সংলাপ ছিল " হ্যালো স্যার " । কি জানি মন্ত্রী বলেই কি না সাংঘাতিক হিট করে গেলো ওই হ্যালো স্যার। এবারে বিধানসভায় এসেছি ২৮ অগাস্ট অমনি দুস্টু সাংবাদিদের আওয়াজ শুরু হলো হ্যালো স্যার। প্রায় সবাই। দলের এবং বিরোধীদের মুখেও হ্যালো স্যার। কি যন্ত্রনা।
শেষে মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে এলো বিষয়টি। আবার প্রলয়। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন , তিনি শুনেছেন এই ছবির কথা এবং খুবই খুশি হয়েছেন। বললেন যে , দলের কেউ যদি শিল্প সংস্কৃতিতে যোগ দিয়ে কাজ করতে পারে তবে খুব ভালো কথা। আমি দিদিকে প্রণাম করলাম, তিনিও আশীর্বাদ করলেন। এর থেকে সেরা পুরস্কার কি হতে পারে। তবে নিয়মিত মোটেই ওই জগতে যাচ্ছি না, সময় কোথায় কিন্তু সুযোগ পেলে নাটক করবো নিশ্চিত। আমার সংগীত শিল্পী স্ত্রীর ইচ্ছাও তাই, একই ইচ্ছা কন্যারও। সিএনের পড়ুয়াদের রাখির শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থাকবেন।
অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত
প্রলয় সিনেমা ব্যাপক সাফল্য পাওয়ার পর এই সিনেমার দ্বিতীয় ইনিংস 'আবার প্রলয়' (Abar Proloy) নিয়ে হাজির হয়েছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। ওটিটির পর্দায় সিরিজটি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন দর্শক। সুন্দরবনের একটি থানার পুলিস ইন্সপেক্টর 'করালিবাবুর' চরিত্রে এই অভিনেতাকে চেনা চেনা লাগছে, ওঁ পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী না! হ্যাঁ তিনিই রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick)। যে কটি দৃশ্যে তাঁকে দেখা গিয়েছে, জমিয়ে দিয়েছিলেন উপস্থিতি। সিরিজে তাঁর মুখে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সংলাপ 'হ্যালো স্যার'। মন্ত্রীমশাইকে এখন অনেকেই 'হ্যালো স্যার' বলে সম্বোধন করছেন। দর্শকেরা যাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন, তাঁর তারিফ করলেন এবার মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)।
সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। মুখ্যমন্ত্রী যখন নিজের ঘরে সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তখনই সেই ঘরে প্রবেশ করেন সেচমন্ত্রী। তাঁকে দেখে যথারীতি সাংবাদিকরা বলে ওঠেন 'হ্যালো স্যার'। পার্থ ভৌমিক তখন খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন, সাংবাদিকদের ইশারায় বলছেন চুপ করতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মন খুলে প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পার্থর উদ্দেশে বলেন, 'আমি সকলের মুখে তোর কথা শুনেছি। শুনলাম খুব ভালো কাজ করেছিস নাকি। এত দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেও যে অভিনয় করছিস জেনে ভালো লাগল।' সেচমন্ত্রী একথা শুনে পা ছুঁয়ে দিদির আশীর্বাদ নেন।'
তবে সেচমন্ত্রী যে অভিনয় করবেন একথা নাকি মোটেই জানাতে চাননি মুখ্যমন্ত্রীকে। পরিবার নিয়ে সুন্দরবোন বেড়াতে যাবেন বলে চারদিন ছুটি নিয়েছিলেন। ওই চার দিনেই পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় করালীবাবুর চরিত্রের শ্যুটিং শেষ করেছেন।'
পার্থ ভৌমিক (সেচমন্ত্রী,পশ্চিমবঙ্গ সরকার)ঃ মহম্মদ হাবিব চলে গেলেন স্বাধীনতা দিবসের বিকেলে। অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন। আলজাইমা এবং নানা রোগে মাঠের সিংহ যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছিলেন। ১৯৬৬-তে আমার প্রিয় ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে যখন এলেন, তখন আমি নেহাতই শিশু। কিন্তু খেলা মানে ইস্ট-মোহনের খেলা থাকলেই বাড়ির বড়রা রেডিওর সামনে বসে যেতেন। আমি অত না বুঝলেও এটা বুঝেছিলাম আমার ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, ইস্টবেঙ্গলকে সমর্থন করাটা আমার পারিবারিক কর্তব্য। মাঠে যাওয়া শুরু করি ১৫ বছর থেকে ১৯৭৮ থেকে। কি দল ছিল তখন। খেলা বোঝার সময় থেকে কয়েকজন খেলোয়াড়ের অন্ধ ভক্ত ছিলাম, যার অন্যতম বড় মিঞা মানে হাবিব।
সিএন পোর্টালে হাবিব নিয়ে লিখতে বসলে উপন্যাস হয়ে যাবে তাই বেছে নিলাম ১৯৮০। ভয়ঙ্কর ফুটবল বছর ছিল ওই বছরটা। সেবার ইস্টবেঙ্গল থেকে ৯/১০ জন নিয়মিত খেলোয়াড় দল ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। থাকার মধ্যে স্টপারে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য আর তেমন কেউ নেই। ক্লাবের সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত নিশীথ ঘোষ। তাঁর সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় নাকি সব বেরিয়ে গিয়েছিলো। আমাদের মতো কট্টর সমর্থকদের তো মাথায় হাত। নিশীথবাবু বুদ্ধি করে কোচ করে নিয়ে আসলেন প্রদীপদাকে। পিকে ব্যানার্জি। পরে প্রদীপদার কাছে শোনা কিছু গল্প শোনাই।
প্রদীপদা প্রথমেই দলে নিলেন পড়ন্ত বিকেলের সুধীর কর্মকার ও হাবিবকে। এরপর অবশ্য দলে আসলেন চ্যালেঞ্জের মজিদ বাসকার, জামশেদ নাসিরীকে। মোটামুটি একটা দল দাঁড়ালো। সেবার এপ্রিল, মে-তে কলকাতায় ফেডারেশন কাপের খেলা ছিল ইডেনে। মজিদ জামশেদ এবং হাবিবের ট্রাওতে দল দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে উঠলো। মাঠেতো নিয়মিত গেছিই । বুক দুরুদুরু। কিন্তু প্রথম থেকেই হাবিব খেলা ধরে নিলেন। বয়স হয়েছে কিন্তু নিজের ফরোয়ার্ডের জায়গা ছেড়ে লিঙ্কম্যানে খেলতে শুরু করলেন। প্রবল গরম অন্যদিকে তখন রামজান মাস চলেছে। হাবিব কিন্তু চিরকাল রোজা করে এসেছেন, এবারেও তাই। এক বিন্দু জল না খেয়ে ৯০ মিনিট খেলা ভাবা যায় না। এরমধ্যে একটা আক্রমণ মোহনবাগানের গোলরক্ষক প্রতাপ ঘোষ কোনও রকমে কর্নার করে বাঁচালেন। কর্নার থেকে কলার মতো বাঁকানো শট এলো জামশেদের মাথায়। জামশেদ ফ্লিক করে দিলেন হাবিবের দিকে। স্পট জাম্প করে ওদের স্টপারকে বোকা বানিয়ে বল গোলে। তারপর সম্মিলিত চিৎকার। আর মনে নেই।
কিন্তু সেই বছর আজকের দিনে অর্থাৎ ১৬ অগাস্ট ইডেনে ফের মোলাকাত ইস্ট-মোহনের। প্রথম থেকেই প্রবল গন্ডগোল মাঠে। মজিদকে কাঁচি করে মাঠে বাবলুদা ফেলতেই ইট বৃষ্টি শুরু। তারপর বিদেশ বসুকে (বর্তমানে আমাদের বিধায়ক) আমাদের রাইট ব্যাক দিলীপ পালিত ট্যাকেল করার পর বিদেশদা মাথা গরম করে লাথি মারলেন দিলীপদাকে। ব্যাস স্টেডিয়ামে উত্তাল গন্ডগোল। মৃত্যু হলো ১৬টি তাজা প্রাণের। শোনা যায় প্রশাসনের মারাত্মক ভুলেই নাকি দু দলের সমর্থকদের একসাথেই বসার ব্যবস্থা করেছিল ক্রীড়া বিভাগ।
তবুও সেদিন খেলা পুরো হয়েছিল ওই হাবিবের জন্যই। তিনিই দর্শকদের শান্ত হতে গ্যালারির কাছে দৌড়ে গিয়েছিলেন। আজ সেই মাঠের সিংহ নেই। স্মৃতিতে ছবি হয়ে গিয়েছেন। হাবিব মিঞা অমর রহে। (অনুলিখন- প্রসূন গুপ্ত)
পার্থ ভৌমিক (সেচমন্ত্রী-পশ্চিমবঙ্গ সরকার): সিএন পোর্টাল থেকে বললো যে রবিবার বন্ধুত্বের দিবস বা ফ্রেন্ডশিপ ডে। আমাদের যুগে এতশত বুঝতাম না যে এটারও আবার একটা দিন হতে পারে। একটা কথাই বাস্তব, ছোটবেলা থেকে পড়াশুনা-খেলাধুলা সবেতেই বন্ধুত্ব থাকতো যা কিনা আজকেও আছে। আমি হয়তো আজ রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হতে পারি, হয়তো সরকারি সিকিউরিটি নিয়ে অফিস যেতে হতে পারে, কিন্তু এখনও অফিসে যাওয়ার পথে কাউকে দেখলে থেমে যাই বা হাত নাড়িয়ে ডেকেনি।
এ অভ্যাস আমার আর পাঁচ জনের মতো। মানে বন্ধুত্বের কথা বলি। মনে পড়ে যাচ্ছে স্কুল জীবনের কথা। ক্লাস করার থেকে টিফিনে দুস্টুমিই বেশি মনে পড়ে। খেলাটা আমার নেশা ছিল স্কুলে তো ফুটবল খেলতামই। কিন্তু ছুটির পর পাড়ার মাঠে খেলাটাই বেশি পছন্দের ছিল। লাল হলুদ জার্সির আকর্ষণ তো ছিলই। লাইন দিয়ে বিস্তর খেলা দেখেছি। দলবল নিয়েই যত কাণ্ড আমার ছিল। এমন কোনও দিন থাকতো না যেদিনটা বন্ধুহীন হয়ে থাকতাম।একটু বড় হওয়ার পর তো আমাদের পুজোর মধ্যে চলে এলাম। তখন পড়ার বাইরে খেলা আড্ডা এবং পুজোতে কাজ করাটাই ছিল আসল। অষ্টমীতে দল বেঁধে সবার বাড়িতে খিচুড়ি বিতরণ এবং কালী পুজোতে তো দায়িত্ব আরও বেড়ে যেত। আমাদের নৈহাটিতে কালী পুজো বিখ্যাত। ফলে অন্য ক্লাবের পুজোর সঙ্গে টক্কর তো থাকতো।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বন্ধুদের সঙ্গে একটু ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিলাম। বাড়ি ফেরার পথে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে গন্ধ দূর করার একটা আর্ট ছিল। ধরা পরে মার খাবার কথাও ভুলিনি। ইস এতো বছর বাদে ওই দিনের কথা লিখতে বসে কত কথা মনে পরে চোখে জল এসে যাচ্ছে। আমার মনে হয়ে ছোটবেলার বন্ধুই সেরা বন্ধু। যদিও কলেজে ঢুকে নিজেকে অনেকটাই স্বাধীন মনে হয়েছিল। এরপর তো কলেজের আড্ডা, রাজনীতি, অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা ইত্যাদির সঙ্গে ভীষণ ভাবে যেটা ভালো লাগলো তা হচ্ছে নাটক। আজকেও শত কাজের মধ্যে নাটকটা সুযোগ পেলে করি। এখানকার বন্ধুরা আবার একটু গম্ভীর মেজাজের। আমার গিন্নি দারুন সংগীত শিল্পী, কাজেই ওর সঙ্গে আগে অনেকটা সময় কাটতো সংস্কৃতি মানসে। ও তো আমার প্রিয় বন্ধুই বটে, এ ছাড়া আমার সন্তানরাও আমার বন্ধু।
রাজনীতি করি, যাদের সঙ্গে করি তাঁরা আমার বন্ধু। এখন তো ওদের সঙ্গেই কাজ। এ ছাড়া দপ্তরে তো কাজের ফাঁকে যোগাযোগ রাখি বন্ধুদের সাথে। মনে হয়ে ভগবানকে বলি, আমি যেন সকলের পার্থ হয়েই থাকতে পারি এবং আপনারা আমার বুদ্ধিদাতা কৃষ্ণ। (অনুলিখন- প্রসূন গুপ্ত)
প্রসূন গুপ্ত: পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick) জানাচ্ছিলেন যে আর একমাসের মধ্যেই পুরাতন পঞ্চায়েতের (Panchayet) পাঁচ বছরের পালা শেষ হবে, কিন্তু ভোট (Election) কবে হবে তাঁর বার্তা দিতে পারেন নি। বিভিন্ন সচিব মহলেও একই প্রশ্ন ছিল। তবে অভিজ্ঞতা থেকে বলা যেতেই পারে যে লোকসভা অবধি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপেক্ষা করবেন না। অন্যদিকে যে ভাবে প্রচারে সেকেন্ড ইন কমান্ড জেলা থেকে জেলায় যাচ্ছেন তাতে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা যে ভাবেই হোক দ্রুত ভোট পর্বটি শেষ করতে চাইছেন তাঁরা।
সম্প্রতি এগরাতে বাজি বিস্ফোরণে কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা সোচ্চার। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই চলে যান এগরায়। মঞ্চে উপস্থিত থেকে তিনি বলেন যে, তিনি এই ঘটনায় দুঃখিত। মৃত পরিবারে তিনি আড়াই লক্ষ করে টাকার চেক দেন এবং প্রতি পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি এও বলেন যে মৃত্যু নিয়ে তিনি রাজনীতি চান না। একই দিনে তিনি অভিষেকের সভা রয়েছে শালবনিতে। এটি যে এক সময়ে নক্সালদের আখড়া ছিল তা বিস্তর জানেন অভিষেক। একই মঞ্চে উপস্থিত থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী। মালদহের পরে একই মঞ্চে মমতা ও অভিষেক। অর্থাৎ এটি যে ভোটার প্রস্তুতি তা বলাই বাহুল্য।
এদিনই প্রধানমন্ত্রীর ডাকা নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা যান নি কাজেই এমন বার্তাও তিনি রাজ্যবাসীকে দিলেন যে , তাঁর প্রধানমন্ত্রীর ডাকা অর্থনৈতিক বৈঠকে কোনও আগ্রহ নেই। যদিও বিজেপির থেকে চরম সমালোচিত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদি জুলাইতে পঞ্চায়েত ভোট হয় তবে প্রশ্ন কতটা প্রস্তুত বিরোধীরা। বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন এই ভোটে সন্ত্রাস হতে পারে কিন্তু আসল বিষয়ে এবারে কিন্তু বামেদের ভোট বাড়বেই বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলে। বিজেপির বিগত বিধানসভা ভোটে ৩৬% ভোটার অধিকাংশ যে বামেদের ভোট তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বামেরা কিন্তু খুব নীরবে এলাকায় এলাকায় গিয়ে প্রচার সারছে। কাজেই দেখার বিষয় তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ কিন্তু বামেরা হতেই পারে। আপাতত এ বিষয়টা সময়ের সাথে সাথে আরও স্পষ্ট হবে।
যখন লেখায় যাচ্ছি তখন অন্তত কংগ্রেস (Congress) ১৩০ + আসনে (Seat) এগিয়ে কাজেই অসম্ভব কিছু না ঘটলে তারাই যে সরকার (Goverment) গড়তে চলেছে তাতে আর সন্দেহের কিছু নেই। আমরা রাজ্য বা রাজ্যের কাজে ব্যস্ত থাকলেও প্রায় প্রতিদিন মিডিয়ার বা সোশ্যাল নেটের পোর্টালগুলির উপর নজর রাখতাম। বুঝতেই পারছিলাম বিজেপির জমি খারাপ হচ্ছে। হবেই বা না কেন, যে ভঙ্গিতে তারা ২০১৮ র ভোটে জনবার্তা না মেনে প্রায় জবরদস্তি ঘোড়া কেনা বেঁচা করে কর্ণাটক দখল করেছিল তা মোটেই ওই রাজ্যের মানুষ ভালো ভাবে নেয় নি। এই সংস্কৃতিটা বিজেপির আমলে যে ভাবে মাথাচারা উঠেছিল তা মোটেই দেশের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়। একেবারে একের পর এক রাজ্যে ক্ষমতায় না এসেও নানান চাপ দিয়ে সরকার দখল করেছিল বিজেপি তা নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। গোয়া, উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং অবশ্যই কর্নাটকে ঘোড়া কেনাবেঁচা করেছিল তার পরিষ্কার জবাব আজ কানাড়ি জনতা দিয়ে দিয়েছে এবং এতটাই ফারাক যে এবারে পুরোনো ফর্মুলা আর চলবে না।
আমি মনেকরি লোকসভা নির্বাচনের আগে এটা বিজেপির কাছে মস্ত ধাক্কা। আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেইছিলেন যে তিনি চান সর্বত্র বিজেপি হারুক। আজ অবশ্য আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিবেদনটি লিখছি। শুধু ধর্ম নিয়ে ভোট যেটা যায় না। প্রধানমন্ত্রী সেই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন প্রচারে। এটা বাস্তব কর্নাটকেও উচ্চবর্ণ বা নিম্নবর্ণের রাজনীতি আছে। কিন্তু দেশের সরকারের বোঝা উচিত উন্নয়ন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান নিয়ে দেশের মানুষ চরম সংকটে রয়েছে। করোনাকাল গেলে দেশের অর্থনৈতিক সংকট যা দেখা গিয়েছিল তার কোনও সমাধান তো কেন্দ্র করতে পরেই নি উপরোন্ত দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। মানুষ খাবে নাকি জাতপাত ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাবে। এর জবাব আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদী আরও বুঝতে পারবেন। কর্নাটকে যে পরিমান দুর্নীতি হয়েছে এবং তা কেন্দ্রীয় সরকার তা আমলই দেন নি, আজকের ভোটের ফলে তার প্রতিচ্ছবি পড়েছে। একটা সিনেমা দিয়ে কি আর ক্ষমতায় আসা যায়? যাই হোক জনতার রায় মাথায় রেখে বিরোধী আসনে মেনে নেওয়াই বাঞ্চনীয়।
(অনুলিখন : প্রসূন গুপ্ত)
রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের চোখে কাতার বিশ্বকাপ। 'অবিশ্বাস্য' জাপানের খেলা দেখে কী মতামত মন্ত্রীর
মন্ত্রী (Bengal Minister) হিসাবে প্রচুর কাজ থাকে, নতুন পাওয়া দায়িত্বও অনেক। কিন্তু তাই বলে ফুটবল দেখবো না তাই কী হয় নাকি? সেই ১৯৭৮-এ ছেলেবেলা থেকে টিভিতে চোখ রাখতাম শুধু একটু নতুন খেলা দেখার জন্য। আমি ঘোরতর ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক ছিলাম, অবশ্য এখন নিরপেক্ষ থাকতেই হয়। লাল হলুদের খেলা থাকলে নৈহাটি থেকে যেভাবেই হোক ময়দান এবং অনেক পরে সল্টলেক যেতাম। ওই খেলাতেই সন্তুষ্টি ছিল আমাদের। কিন্তু নিয়মিত ভাবে বিদেশি খেলা দেখা এই বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) থেকেই। ৮২-র স্পেন বিশ্বকাপে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা (Brazil-Argentina) কিছু করতে পারল না। দেখেছিলাম জার্মানি আর ইতালির দুর্দান্ত ফাইনাল, সাদা-কালো টিভিতে। তখন অবশ্য ওটুকু যথেষ্ট ছিল। এরপর ৮৬-র মারাদোনার আর্জেন্টিনা থেকে হলুদ-সবুজ জার্সির ব্রাজিল বাঙালিকে টেনেছে। এক দল ব্রাজিল, তো অন্য দল আর্জেন্টিনা। যদিও তখন ধীরে ধীরে সমর্থন আদায় করছে ইতালি এবং জার্মানি।
কিন্তু এশিয়ার দেশগুলির সম্বন্ধে আমাদের উৎসাহ ছিল অনেক কম। নেহেরু কাপে বিদেশি দলগুলি এসেছিলো ৮০-র গোড়ায়। কিন্তু তার মধ্যে চীন, কোরিয়া বা রাশিয়ার খেলা আমাদের ভালো লাগলেও ভক্তি যোগায়নি। ইস্টবেঙ্গল তো উত্তর কোরিয়ার একটি ক্লাবকে হারিয়েছিল। কিন্তু গত ৩৫-৩৬ বছর ধরে আমাদের বৈঠকখানায় বিদেশ দিব্বি ঢুকে গিয়েছে। ইউরোপিয়ান বা লাতিন আমেরিকান ক্লাব ফুটবল আমরা আজ দেখে অভ্যস্ত। জাপান নিয়ে ভাবিনি কখনও।
এবারেও শত কাজ, সংগঠন, টিভি অনুষ্ঠান ইত্যাদির শেষে বিশ্বকাপে চোখ রেখেছি। কোনও খেলা ছাড়ছি না, ঘুম বলতে ওই দু-তিন ঘন্টা। বৃহস্পতিবার জাপানের খেলায় চোখ রেখেছিলাম। অন্যদিকে ভেবেছিলাম জার্মানি তো জিতবেই আর জাপান বোধহয় পারবে না। সবচেয়ে বড় কথা জাপানের প্রতিপক্ষ স্পেন, কাপ জেতার অন্যতম দাবিদার। কিন্তু এ কি দেখলাম! আমি চমৎকৃত, কোনও ভাষাই যথেষ্ট নয় প্রশংসার। পাসিং বা তিকিতাকা ফুটবলকে দমিয়ে দিয়ে এক গোল খেয়েও ভয়ঙ্কর জাপানকে দেখলাম প্রেসিং ফুটবল খেলতে। আমাদের মহাদেশে চিন নিয়ে আমরা লাফাই, কিন্তু জাপান শিল্প সংস্কৃতি সভ্যতা এবং তাদের দেশের ফুটবলে তারা এতটাই এগিয়েছে যে আলোচনার কিছু নেই। দুই ফুটবল দৈত্যকে সূর্যোদয়ের দেশ হারালো শ্রেফ 'দৌড়ে'। আমাদের ফুটবলে কতটা আগের তুলনায় উন্নতি হয়েছে পরের কথা। কিন্তু জাপানকে দেখে ভারত কিন্তু জেদ বাড়াতেই পারে। জাপান আজ সারা এশিয়ার উদাহরণের সুধা। সেলাম জানাই জাপানকে এবং চাই বাকি খেলাগুলিতেও তারা যেন এই স্পিরিট ধরে রাখতে পারে। (অনুলিখন : প্রসূন গুপ্ত)