পঞ্চায়েত নির্বাচনকে (Panchayat Election 2023) ঘিরে যত উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে, সমস্ত কিছুর জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে (Rajiva Sinha) কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। রাজ্যের বিরোধী দলগুলির অধিকাংশই সরবা হয়েছে পঞ্চায়েতের হিংসা নিয়ে। এবার বিরোধী দল অর্থাৎ বিজেপির নেতা রুদ্রনীল ঘোষ পঞ্চায়েতের এই হিংসার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। রাজীব সিনহাকে তোপ দাগতে এক অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন তিনি। রুদ্রনীল এক ব্যঙ্গাত্মক ছবি এঁকে রাজীব সিনহার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সেই ছবিতে তিনি এঁকেছেন রাজীব সিনহাকে ও তাঁর মাথায় রয়েছে, নীল-সাদা রংয়ের চটি। আর এই ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন রুদ্রনীল যা নিয়েই এখন আলোচনা তুঙ্গে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন থেকে রাজ্যে শুরু হয়ে অশান্তি। এমনকি পঞ্চায়েত ভোটের দিনও একই দৃশ্য দেখতে পেল সারা বাংলা। বেলাগাম সন্ত্রাস, ছাপ্পা ভোট, ব্যালট বক্স লুঠ, খুনোখুনির মাঝেও নীরব ভূমিকা পালন করছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। এমনটাই অভিযোগ রাজ্যের বিরোধী দলের। তাই এবারে রুদ্রনীল একটি ছবি এঁকে তাঁকে তোপ দেগেছেন। তিনি এই ছবিতে রাজীব সিনহার ব্যঙ্গাত্মক ছবি এঁকে ক্যাপশনে লিখেছেন, "ম্যাডাম...পেরেছি? হচ্ছে??????????" ইতি- আদরের রাজীব।'
এখানেই থেমে যাননি রুদ্রনীল। তিনি রাজীব সিনহাকে 'ষড়যন্ত্রের সেনাপতি' বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে রাজ্যে যে একের পর এক হিংসার বলি হয়েই চলেছে, তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছেন না রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ফলে তাঁর এই অঙ্কনের মাধ্যমেই রাজীব সিনহাকে আক্রমণ করলেন রুদ্রনীল ঘোষ। যদিও রাজীব সিনহা শনিবার পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মৃত্যুর পরিসংখ্যান উল্লেখ করেছেন, যেখানে গোটা রাজ্যে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে রাজীব সিনহা ৩ জনের মৃত্যুর রিপোর্ট উল্লেখ করেছেন।
গণতন্ত্রের উৎ'শব' পালনে মুর্শিদাবাদ যেন মডেল। যদিও গোটা রাজ্যেই মৃত্যু, হিংসা, ভোট বিভিন্ন জেলার তুলনায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রে যদিও মুর্শিদাবাদ অনেকটা এগিয়ে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election 2023) আবহে উত্তপ্ত বাংলা (West Bengal)। শনিবার সকাল থেকে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসের ছবি। ঝরল রক্ত, চলছে দেদার ছাপ্পা ভোট। সকাল থেকে প্রাণ গেল বহুজনের। ফলে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। ফলে মুর্শিদাবাদের চেনা ছবিই ফের প্রকাশ্যে। ভোট গ্রহণের সকাল থেকে এখনও অবধি মুর্শিদাবাদে প্রাণ গেল ৪ জনের। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০। তৃণমূলের মোট ৪ জন, কংগ্রেসের ৩ জন, সিপিএম-এর ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও দিকে দিকে বুথ দখল, ব্যালট লুঠ, বোমা ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠে আসছে।
কোথাও পিটিয়ে খুন, কোথাও গুলিবিদ্ধ। ভোট ঘোষণার পর রাজ্যে মুর্শিদাবাদে খুন দিয়ে রাজ্যের হিংসার শুরু হয়। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার রতনপুরে ভোট ঘোষণার পরেই ৯ই জুন খুন হয় কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখ। এরপর থেকে মুর্শিদাবাদে হিংসার শুরু। শনিবার সকালে রেজিনগর থানার নাজিরপুরে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিন শেখ নামে এক শাসক দলের কর্মীর। অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিনের। অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে। এছাড়াও সকালে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামেও একটি ফাঁকা জমি থেকে তৃণমূল কর্মী সাবিরুদ্দিন শেখের দেহ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার রাতেই রাজনৈতিক হিংসার বলি হন তৃণমূলের কর্মী বাবর আলি। অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে। আবার লালগোলা থেকেও আর এক মৃত্যুর খবর এসেছে। জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রওশন আলী। এটা লালগোলার ময়া অঞ্চলের ১৫ নম্বর বুথের সামনের ঘটনা। অভিযোগ, লালগোলায় ভোট দিতে যাওয়ার সময় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সিপিএম কর্মী রওশন আলীর মাথায় লাঠি দিয়ে মারে। তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এছাড়াও রানীনগর ১ নম্বর ব্লকের হেরামপুর ১৪৩ ও ১৪৪ নম্বর বুথ দখল করে ছাপ্পার পাশাপাশি বোমা ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় চারজন গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের এই অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। তাঁদের দাবি, 'ভারতের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দিতে হবে আমাদেরকে, আমরা ভোট চাই ভোট দিতে চাই। আমাদের নিজের ভোট নিজেরা দেব।' তাঁরা অভিযোগ করছেন, ইসলামপুর থানার পুলিস ও তৃণমূল বাহিনীরা সকাল থেকে ১৪৩ নম্বর এবং ১৪৪ নম্বর বুথে গ্রামবাসীদের প্রবেশ করতে দেয়নি। তৃণমূল বাহিনী নিজেরাই সবার ভোট দিচ্ছে।
আবার বহরমপুরে অন্য এক দৃশ্য দেখা গেল। বহরমপুরের গোয়ালজান গার্লস হাই স্কুলের ২১২ ও ২১৩ নম্বর ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ঘটায়, ব্যালট বাক্স ছুঁড়ে দেওয়া হয় ভাগীরথী নদীতে। স্থানীয় সূত্রে খবর, সকালের দিকে শান্তিপূর্ণ ভোট চলছিল। হঠাৎই তৃণমূলের কিছু দুষ্কৃতীরা বুথ দখল করে, চলে ছাপ্পা ভোট। ঘন্টা খানেকের মধ্যে সব ছাপ্পা ভোট হয়ে যায়। পরে যখন তৃণমূলের লোকজন ওই বুথ ছেড়ে চলে যায়, এই অবস্থা দেখে বিজেপি সমর্থকেরা ব্যালট বাক্স ভাগীরথী নদীতে ফেলে দেয়। অন্যদিকে উত্তপ্ত ইসলামপুরের ঘুঘুপাড়া। বিরোধীদের কাউকেই ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ। প্রচন্ড গোলাগুলি চলার কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা কিছু মহিলা, ভয়ে তাঁদের বাড়িও ফিরতে পারছে না বলে সূত্রের খবর।
আবার বেলডাঙা থানা অন্তর্গত বিষণনগর টিটি প্রাইমারি স্কুলে ৪৮ নম্বর বুথেও ভোটের আগেই বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, পুলিসের মদতে শাসকদলের পক্ষ থেকে বুথ দখল হয়ে যায়। ভরতপুর এক নম্বর ব্লকের সৈয়দকূলুট গ্ৰামে ৯৬ ও ৯৭ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ। সাধারণ মানুষ পুলিসের সঙ্গে প্রথমে বাতবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে যা পরে রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। পুলিসকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টিও। ভরতপুর এক নম্বর ব্লকের সিজগ্রাম পঞ্চায়েতের মনসুরপুর গ্রামের দুটি বুথে ভোটারদের প্রভাবিত করা, হুমকি দেওয়া ও বুথ দখলের অভিযোগও উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। চোয়াপাড়া অঞ্চলের কীর্তনিয়াপাড়া বুথে ছাপ্পা ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফলে ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুর্শিদাবাদের এই পরিস্থিতি, তাই এর পরে আর কী কী ঘটতে চলেছে, তাই এখন দেখার।
আজ অর্থাৎ শনিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election 2023)। সকাল ৭ টা থেকেই শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া। মনোনয়নের দিন থেকেই রাজ্যজুড়ে একাধিক কর্মী নিহত ও আহত হয়েছেন। আর এই ভোটের দিনও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য। ভোট প্রক্রিয়া শুরু হতেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে আসছে একাধিক অভিযোগ। এদিন উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Paragana) বিভিন্ন এলাকা ভোটকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শাসকদলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে মোহনপুরে প্রকাশ্যে গুলি করার অভিযোগ উঠে এসেছে। এছাড়াও নির্দল প্রার্থীর সমর্থককে খুন করার অভিযোগ উঠছে বারাসতের কদম্বগাছিতে। বোমাবাজি করে বুথ দখলের অভিযোগও উঠে এসেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে।
শনিবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার মোহনপুর পঞ্চায়েতের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী অরিজিৎ দাসকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া ও তাঁর বুথ ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠে এসেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পূর্বাশা এলাকাও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আবার বোমাবাজি করে বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে আমডাঙার ১ নম্বর রাহানা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছে আইএসএফ। আইএসএফ-এর অভিযোগ, রাহানা ১ নম্বর এলাকায় তিনটি বুথে মাত্র ২ জন রাজ্য পুলিস দিয়ে ভোট করানো হচ্ছে। নেই কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী। ফলে তাঁরা কেন্দ্রবাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছে। আর এই অবরোধ তুলতে গেলে পুলিসকে ঘিরে বিক্ষোভ করে আইএসএফ।
অন্যদিকে, কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪২ নম্বর বুথের নির্দল প্রার্থীর সমর্থককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৯ ও ৬০ নম্বর বুথে ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীদের বিরুদ্ধে। আর এর প্রতিবাদে টাকি রোডে ভোটার ও আইএসএফ অবরোধে বসেছে। এদিকে আবার হাবড়া কুমড়ো পঞ্চায়েত এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করতে রাতভর বাইক বাহিনীর তাণ্ডব চলেছে বলে অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে। মূলত কুমড়া বেলের মাঠ, আনখোলা, বায়ারঘাটা, পাঁচঘরিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় বাইক বাহিনীর তাণ্ডব চলছে।
নির্দল প্রার্থীর অনুগামীদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের (Trinamool) বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন প্রভাস মণ্ডল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ব্লকের আমতলি গ্রাম পঞ্চায়েত (Panchayat) এলাকার ১১৭ নম্বর বুথের নির্দল প্রার্থী প্রভাস মণ্ডল। শুক্রবার রাতের অন্ধকারে কয়েকজন বাইক নিয়ে এসে প্রভাসের অনুগামীদের উপর হামলা (attack) চালায় বলে অভিযোগ। এছাড়াও মারধরের পাশাপাশি বাড়িঘর ভাঙচুর করারও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
স্থানীয়দের দাবি, প্রভাস মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল দল করে। গত ১০ বছর ধরে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য তিনি। এবারও দলের হয়েই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল তাঁকে টিকিট না দিয়ে সদানন্দ রায়কে টিকিট দিয়েছে। ফলে প্রভাসকে নির্দল প্রার্থী হিসেবেই ভোটের লড়াইয়ে নামতে হয়েছে। এলাকার মানুষও তাঁর সঙ্গেই রয়েছে। ফলে অভিযোগ উঠছে, সেই ক্ষোভের কারণেই প্রভাসের অনুগামীদের উপর হামলা চালিয়েছে সদানন্দের লোকেরা।
স্থানীয়দের আরও দাবি, এই সদানন্দ রায় কয়েকদিন আগে পর্যন্তও বিজেপি দল করেছেন। তিনি টিকিট কীভাবে পেলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এ বিষয়ে সুন্দরবন কোস্টাল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ঘটনায় আক্রান্তরা। অভিযোগের ভিত্তিতে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস প্রশাসন।