প্রথা মেনেই ঘোষিত দেশের অন্যতম নাগরিক সম্মান পদ্ম পুরস্কার (Padma Award) প্রাপকদের নাম। মরণোত্তর পদ্মসম্মান পাচ্ছেন সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিংহ যাদব-সহ (mulayam Singh Yadav) বাঙালি চিকিৎসক তথা ওআরএস-র (ORS) উদ্ভাবক দিলীপ মহলানবিশ এবং স্থপতি বালকৃষ্ণ দোশি। তাঁদের তিন জনকেই পদ্মবিভূষণে সম্মানিত করা হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day 2023)। তার আগে প্রথা মেনে বুধবার এ বছরের পদ্মসম্মান প্রাপকদের নাম ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। এ বছর মোট ১০৬ জনকে পদ্মসম্মান দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন ৬ জন। ৯ জন পাচ্ছেন পদ্মভূষণ সম্মান। পদ্মশ্রী দেওয়া হচ্ছে ৯১ জনকে।
এছাড়া তালিকায় নাম আছে সদ্য গোল্ডেন গ্লোব প্রাপক সঙ্গীত পরিচালক এমএম কেরাভনি, এসএম কৃষ্ণ এবং প্রয়াত বিনিয়োগকারী রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। পদ্মবিভূষণ প্রাপকদের মধ্যে আছেন তবলা বাদক ওস্তাদ জাকির হুসেন। পদ্মভূষণে সম্মানিত হচ্ছেন সমাজকর্মী সুধা মূর্তি, যিনি ইনফোসিস প্রধান নারায়ণ মূর্তির স্ত্রী। শিল্পপতি কুমারমঙ্গলম বিড়লা এবং অভিনেত্রী রবিনা ট্যান্ডন।
এদিকে কলেরা কিংবা ডায়রিয়া রোগকে বাগে আনতে ওআরএসের বহুল প্রয়োগের সূচনা হয়েছিল। আর এই ওআরএস যাঁর হাত ধরে, সেই প্রয়াত বাঙালি চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ ২০২৩ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান পদ্মবিভূষণের জন্য মনোনীত হলেন। এছাড়া চলতি বছর পদ্মসম্মান পেয়েছেন আরও চার বাঙালি— সূচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী, প্রবীণ লোকসঙ্গীত শিল্পী মঙ্গলকান্তি রায়, ভাষা গবেষক ধনীরাম টোটো এবং চিকিৎসক রতনচন্দ্র কর। উল্লেখযোগ্য এঁদের মধ্যে রতনচন্দ্র আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দা। চার জনই পদ্মশ্রী পেয়েছেন।
পদ্মশ্রীর তালিকায় জলপাইগুড়ি জেলার দু’জন। এঁদের মধ্যে ১০২ বছর বয়সী মঙ্গলকান্তি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র সারিন্দা বাদক। সারিন্দায় পাখির ডাক বাজাতে পারেন তিনি। অন্যদিকে, ধনীরামের খ্যাতি উত্তরবঙ্গের বিপন্ন জনজাতি টোটোদের ভাষার লিপির উদ্ভাবক হিসাবে। বস্তুত, তাঁর হাত ধরেই পুনর্জন্ম হয়েছে টোটো ভাষার।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সূচিশিল্পী প্রীতিকণার কাঁথা স্টিচের কাজের খ্যাতি রয়েছে বাংলার সীমানা ছড়িয়ে। একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, ৬৬ বছরের চিকিৎসক রতনচন্দ্র তাঁর জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় ব্যয় করেছেন জারোয়া, ওঙ্গি, গ্রেট আন্দামানিজদের মতো জনজাতির মানুষের চিকিৎসায়।
পদ্ম ভূষণ (Padma Award) সম্মান তুলে দেওয়া হল গুগল সিইও সুন্দর পিচাইকে (Sundar Pichai)। ব্যবসা-শিল্প বিভাগে পিচাইয়ের অবদানের জন্য তাঁকে এই সম্মান দিয়েছে ভারত সরকার (Indian Government)। শুক্রবার সান ফ্রান্সিসকোয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সুন্দরের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত (Indian Ambassador to USA) তরণজিৎ সিংহ সান্ধু। এই সম্মান প্রদান প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন,'সুন্দরের যাত্রা অনুপ্রেরণামূলক। উদ্ভাবনী শক্তিতে বিশ্বব্যাপী ভারতীয় প্রতিভার এক উজ্জ্বল প্রকাশ তিনি।'
Delighted to hand over Padma Bhushan to CEO @Google & Alphabet @sundarpichai in San Francisco.
— Taranjit Singh Sandhu (@SandhuTaranjitS) December 2, 2022
Sundar’s inspirational journey from #Madurai to Mountain View, strengthening 🇮🇳🇺🇸economic & tech. ties, reaffirms Indian talent’s contribution to global innovation pic.twitter.com/cDRL1aXiW6
টুইটারে সিন্ধু যোগ করেন, 'সান ফ্রান্সিসকোয় গুগলের সিইও সুন্দর পিচাইকে পদ্মভূষণ হস্তান্তর করতে পেরে আমরা আনন্দিত। মাদুরাই থেকে মাউন্টেন ভিউ পর্যন্ত তাঁর অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা ভারত-আমেরিকার অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে। তিনি বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনে ভারতীয় প্রতিভার অবদানকে নিশ্চিত করেছেন।'
এই সম্মান পেয়ে অভিভূত খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী পিচাই লেখেন, 'ভারত আমার জীবনের একটা অংশ। যেখানেই যাই, এ দেশ আমার বুকে থাকে। আমি ভাগ্যবান যে, এমন একটি পরিবারে জন্মেছি যাঁরা শিক্ষার উপর আলাদা গুরুত্ব দিতেন। আমি কৃতজ্ঞ আমার বাবা-মায়ের কাছে। আমার ভবিষ্যতের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তাঁদের। এই সম্মানের জন্য ভারত সরকার এবং প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যে দেশ আমায় তৈরি করেছে, তার কাছে এমন সম্মান পাওয়া বিরাট ব্যাপার।'
সুন্দর পিচাইয়ের নাম পিচাই সুন্দর রাজন, তাঁর জন্ম ১৯৭২-র ১২ জুলাই তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে। খড়্গপুর আইআইটির এই প্রাক্তনীর গুগলে যাত্রা শুরু ২০০৪ সালে। প্রথমে গুগল ক্রোম, ক্রোম ওএস ইত্যাদি নিয়ে কাজ শুরু করে পরে ওই সংস্থারই সিইও নিযুক্ত হন। পদ্মভূষণে সম্মানিত পিচাই বলেন, 'ভারত এবং গুগল সংস্থার মধ্যে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।'