রাজ্য-রাজ্যপাল জটিলতা কাটিয়ে শপথ নিলেন জলপাইগুড়ির নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তিনি রাজভবনে শপথ গ্রহণ করেন। তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভায় শাসক দলের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায়। বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়ের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন৷ সকলের উপস্থিতিতে এ দিন শপথবাক্য পাঠ করেন এই তৃণমূল বিধায়ক।
পরে রাজ্যপাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, বেটার লেট দ্যান নেভার। অর্থাৎ দেরিতে হলেও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই বিষয়ে বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায় মুখ খুলতে চাননি৷ বিধানসভায় তৃণমূলের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় বলেন, ‘‘ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হল। আজকের পর থেকে ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষ সেবা পাবেন।’’
বুধবার রাজ ভবনে নবনিযুক্ত রাজ্যপাল (Bengal Governor) সিভি আনন্দ বোসের শপথ অনুষ্ঠান (Oath Taking Ceremony) বয়কট করেন শুভেন্দু আধিকারী। কেন এই সিদ্ধান্ত, প্রথমে ট্যুইট করে জানান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary)। পাশাপাশি বিধানসভাতেও সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। এদিন ট্যুইটে বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, 'রাজ্যপালের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার আসন বরাদ্দ করা হয়েছে কৃষ্ণ কল্যাণী এবং বিশ্বজিৎ দাসের পাশে। যারা বিজেপির টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে দল বদলে এখন তৃণমূল (TMC) করছেন। দলত্যাগ আইনে এঁদের বিধায়ক পদ খারিজের শুনানি চলছে।'
Heartiest Congratulations to Dr CV Ananda Bose as he takes oath as the Governor of West Bengal.
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) November 23, 2022
The Information & Cultural Affairs Dept; WB Govt has made the arrangements for the oath taking ceremony.
Seating arrangements as per the Minister in Charge @MamataOfficial's whim: pic.twitter.com/ovbTMqGsif
পাশাপাশি তিনি নবনিযুক্ত রাজ্যপালকে শপথ গ্রহণের শুভেচ্ছা জানিয়ে এই আসন বিতর্কের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য এবং সম্প্রচার দফতরকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, এই দফতরের দায়িত্বে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার এই প্রসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানান, 'শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে আমি এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি কার্যত রাজ ভবনের গেট থেকে ফিরে এসেছি। আমরা সাড়ে ১০টার মধ্যে কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। কেন এই সিদ্ধান্ত, তার জন্য একটি ট্যুইট করেছি। যাতে কোনওভাবে ভুল বার্তা না ছড়ায় এবং সত্য উদ্ঘাটিত হয়।'
তাঁর খোঁচা, 'আমন্ত্রিতদের তালিকা তৈরি থেকে, বসার ব্যবস্থাপনা, এসব কিছু কোম্পানির মালিক করেছেন। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক অনুষ্ঠান। কোনও রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি নেই। এই অনুষ্ঠানে বিধানসভার অধ্যক্ষ, তিন-চার জন মন্ত্রী আমন্ত্রিত ছিলেন। তার বাইরে দু'জন বিধায়ককে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। এঁরা কারা, নাম বলতে চাই না। বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতে বিধানসভায় বিজেপি এবং বিধানসভার বাইরে তৃণমূল। তাঁদের মধ্যে একজন লজ্জা ছেড়ে আবার বনগাঁ তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। এঁদের কোন প্রোটোকলে ডাকা হয়েছে? যদি ধরে নিতাম ২৯৪ জন বিধায়ক আমন্ত্রিত তাহলে এই প্রশ্ন করতাম না। এই নিকৃষ্ট রাজনীতির সাক্ষী থাকল বাংলা।'
এই সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের আসন বরাদ্দ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, 'এই অনুষ্ঠানে কলকাতার লোকসভা এবং রাজ্যসভার একাধিক সাংসদকে সামনের সারিতে বসানো হয়েছে। সেখানে বালুরঘাটের সাংসদ মাননীয় ডক্টর সুকান্ত মজুমদারকে পিছনের সারিতে বসতে দেওয়া হয়েছে। পিছনের সারিতে বসেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। যদি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ হন, মালা রায় সাংসদ হন, ডেরেক ও ব্রায়েন সাংসদ হন, তাহলে ডক্টর সুকান্ত মজুমদারও সাংসদ।'
২৩ নভেম্বর, বুধবার বাংলার নতুন রাজ্যপাল (Governor CV Ananda Bose) হিসেবে শপথ নেবেন ডক্টর সিভি আনন্দ বোস। মঙ্গলবার রাতেই তিনি আসবেন রাজ ভবনে (Raj Bhawan)। শনিবার তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। বুধবার রাজ ভবনে (Governor of Bengal) ডক্টর বোসকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। জানা গিয়েছে, ২১ এবং ২৩ তারিখ, কবে তিনি শপথ গ্রহণ করবেন, জানতে চাওয়া হয়েছিল। ২৩ নভেম্বরকে বেছে নিয়েছেন বাংলার ভাবী রাজ্যপাল।
জানা গিয়েছে, এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বর্তমান অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশন ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এদিকে, প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্ট ডক্টর সিভি আনন্দ বোস সার্নে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নেহেরু ফেলোশিপপ্রাপক ডক্টর বোসের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশের বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকরের পদত্যাগের সাড়ে ৫ মাস পর স্থায়ী রাজ্যপাল পেয়েছে বাংলা।