নির্বাচনী কেন্দ্র ভাঙড়ে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। ভাঙড়ের বিধায়কের প্রশ্ন, বারবার পুলিস তাঁকে কেন বাধা দিচ্ছে? বারবার ১৪৪ ধারা জারি রাখার কথা বলা হচ্ছে। মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন, বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। চলতি সপ্তাহেই শুনানির সম্ভাবনা।
পঞ্চায়েত ভোটে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে ভাঙড়। বোমাবাজি, গুলি, সংঘর্ষে প্রাণহানিও হয়েছে। রবিবার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভাঙড়ে যাচ্ছিলেন নওশাদ সিদ্দিকী। তাঁর গাড়ি আটকে দেয় পুলিস। পুলিসের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তোলেন ভাঙড়ের বিধায়ক। তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র ভাঙড়ে যেতে দেওয়া হয়নি বলে পুলিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ। সেই নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ নওশাদ সিদ্দিকি। প্রসঙ্গত ভাঙড়ে ১৪৪ ধারা জারির পর গত পরশু রাতে আরাবুল ইসলাম ও শওকত মোল্লাদের ঢুকতে বাধা দেয় পুলিস।
গত মঙ্গলবার গণনার দিন কাঁঠালিয়ায় গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয় তিন জনের। স্থানীয় সূত্রে খবর, তাঁদের মধ্যে ২ জন ছিলেন আইএসএফ কর্মী। এই নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিও করেছেন নওশাদ সিদ্দিকী। বৃহস্পতিবার চালতাবেড়িয়ায় আইএসএফের ঘাঁটিতে বোমা ফেটে জখম হন ৪ আইএসএফ সমর্থক। এরপরই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
শাসকের ধরনা। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের পরে এই ছবিও উপহার দিল দক্ষিন ২৪ পরগনার ভাঙড়। ১৪৪ ধারা ভেঙে ওই এলাকায় ঢুকতে গেলে অভিযোগ, পুলিস ক্যানিংয়ের বিধায়ক শওকত মোল্লা-সহ বাকি তৃণমূল নেতাদের পথ আটকায়। তার প্রতিবাদে ধরনা শুরু করেন তৃণমূলের নেতা, কর্মীরা। শনিবারই স্থানীয় ভোগালি এলাকার বাসিন্দা শেখ মোসলেম নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। তৃণমূলের বুথ সভাপতি বলে পরিচিত ওই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন শওকত, আরাবুলরা। তখনই ভাঙড় ব্রিজের কাছে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।
গত সাত জুলাই, পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে রাজনৈতিক সংঘর্ষে আহত হন বছর পঁয়ষট্টির মোসলেম। তাঁকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। রাতেই তাঁর বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল শওকত এবং আরাবুলের। তার আগেই তাঁদের আটকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
গণনার পর থেকেই ভাঙড়ে জারি আছে ১৪৪ ধারা। এই কারণেই শুক্রবার ওই এলাকায় ঢুকতে পারেননি স্থানীয় বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তাঁর অভিযোগ, শনিবার রাতে ওই এলাকায় ঢুকে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি বৈঠক করার কথা ছিল তৃণমূল নেতাদের। নওশাদের অভিযোগের পাল্টা শওকত জানিয়েছেন, তাঁরা প্রকাশ্যে কোনও সভা করেননি। স্থানীয় একটি বাড়িতে সবাই কথা বলেছেন। ফলে আইন ভাঙার কোনও প্রশ্ন নেই বলেও দাবি ক্যানিং পূর্বের বিধায়কের।
প্রাণহানির আশঙ্কা জানিয়ে হাইকোর্টের (High Court) দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভাঙড়ের (Bhangar) আইএসএফ (ISF) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী (Nawsad Siddique)। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রের নিরাপত্তাও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরও সন্তুষ্ট নন নওশাদ। নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর আর্জি জানিয়ে ফের আদালতের দ্বারস্থ হলেন বিধায়ক। বর্তমানে সাত জন সদস্যের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পান নওশাদ। যা কার্যত ওয়াই ক্যাটেগরির মধ্যে পড়ে। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না বিধায়ক। সেই কারণে আরও নিরাপত্তা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
নওশাদের দাবি, ওই এলাকার অন্য বিধায়করা জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা পেয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি রাজা শেখরমান্থা মন্তব্য করেন যে, নিরাপত্তা বিষয়টি পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। তিন সপ্তাহ পরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিক কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। চলে গুলি-বোমা। আইএসএফ প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এরপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লেখেন নওশাদ সিদ্দিকী। সেখানে প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ তিনি। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে কেন্দ্রের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে মামলাও দায়ের করেন তিনি। সেই মামলা শোনেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। পরে আদালত নির্দেশ দেয় বিধায়কের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়ে।
মণি ভট্টাচার্য: অশান্ত ভাঙ্গড় (Bhangar)। এবার আরাবুল ইসলাম ও সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাঙ্গরের কনভেনার শওকত মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর (CM) কাছে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী (Nawsad Siddique)। সূত্রের খবর, বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারলেন না তিনি। আরও খবর, নবান্নে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে ভাঙড়ের গোটা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে। বেরিয়ে এসে তিনি সিএন-ডিজিটালকে জানালেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিকিউরিটি অফিসারকে এ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জানানো হয়েছে।
এছাড়া নওশাদ সিদ্দিকী সিএন ডিজিটাল কে আরও জানালেন যে, অশান্ত ভাঙড়ের এই চিত্র অর্থাৎ পঞ্চায়েত ঘোষণার পর থেকেই ভাঙড়ের আইএসএফের উপর আক্রমণ, আইএসএফ কর্মীদের মারধর, তাদের বাড়ি ভাঙচুর, এই সংক্রান্ত অভিযোগ প্রথম দিক থেকেই করে আসছে আইএসএফ। এবার এই অভিযোগ নিয়ে বুধবার সকালে বিচারপতি মান্থার এজলাসেও মামলা করা হয়েছে। বুধবার নবান্ন থেকে বেরিয়ে সিএন ডিজিটাল কে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, 'মনোনয়ন সংক্রান্ত হিংসা সমন্ধে অভিযোগ জানাতে তাদের একটি দল আজ রাজভবনও গিয়েছেন। এছাড়া রাজ্যপালকে একটি মেইল করে এ সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগে জানানো হয়েছে।'