বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে গ্রেফতার করতে পারবে না পুলিস। বিধানসভায় জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগের বিরোধিতা করে দ্বিতীয় মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। শঙ্কর ঘোষের করা সেই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদনকারী শঙ্কর ঘোষকে গ্রেফতার করতে পারবে না পুলিস, নির্দেশ বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের।
আবেদনকারী আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান বিধানসভায় জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগ হয়েছে। ওই দিন তিনটি ঘটনা ঘটেছে। এই মামলা দ্বিতীয় অভিযোগ নিয়ে। এই মামলার কারণ বিজেপি বিধায়করা কাঁসর এবং ঘণ্টা বাজাচ্ছিল। ঠিক তখনই জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শুরু করে শাসক দল। সূর্য ডোবার সময় কাঁসর ঘণ্টা বাজাচ্ছিল তারা। এই নিয়েই FIR দায়ের হয়, সেই FIR খারিজের দাবিতে এই মামলা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলা করা হয়েছে বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে।
সরকারি আইনজীবী রুদ্রদীপ্ত সরকার জানান, 'বিধানসভা তো পুজোর স্থান নয়।ওখানে সাংবিধানিক কাজ হয়। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হচ্ছে সেটা অমান্য করে কাঁসর, ঘণ্টা বাজাচ্ছিলেন বিজেপি বিধায়করা। FIR- এর মত অপরাধ মনে হয়ছে পুলিসের।
দুইপক্ষের সওয়াল শোনার পর বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানান, একই রকমের মামলায় তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে এই আদালত। তাই এই মামলাতেও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল করা হল ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত পুলিস আবেদনকারীকে গ্রেফতার করতে পারবে না। ১০ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।
আগের শুনানিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা মামলায় ঘটনার দিন বিধানসভায় কী হয়েছিল, রীতিমতো ল্যাপটপে খতিয়ে দেখেন। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কলকাতা পুলিসের জমা করা ফুটেজে শুধু শাসক দলের বিধায়কদের ছবি, অন্যপক্ষ অর্থাত্ বিজেপি বিধায়কদের ধর্নার ছবি নেই। কেন দুই পক্ষের ছবি নেই, প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। ভিডিও পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ে দেখে বিচারপতির প্রশ্ন, 'শাসক দলের বিধায়করা স্লোগান দেন গলি, গলি মে শোর হে, নরেন্দ্র মোদী চোর হে। প্রধানমন্ত্রীর নাম করে স্লোগান দেওয়ার পর কী করে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো যায় বা গাওয়া যায়? প্রত্যেক বিদ্যালয়ের শুরু এবং শেষে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে। যাঁরা মন্ত্রী বা বিধায়ক হয়েছেন, তাঁরা নিয়ম বা নিষ্ঠা মানবেন না, এটা হতে পারে না।' সেকশন তিন মেনে জাতীয় সংঙ্গীত গাইতে হয় মন্তব্য করেছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতির। তাহলে জাতীয় সঙ্গীত গাওযার জন্য ওই সময় কেন বেছে নিয়েছিল শাসক দল আর কোন ভিত্তিতে কলকাতা পুলিস বিজেপি বিধায়কদের নোটিস পাঠিয়েছে, জোড়া প্রশ্নের জবাব তলব করেছিল হাইকোর্ট। বিধায়কদের গ্রেফতার করা যাবে না বলে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত। ফলে এদিনও একই বিষয় সংক্রান্ত মামলায় বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকেও গ্রেফতার করা যাবে না বলে জানিয়ে দিল হাইকোর্ট।
জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা সংক্রান্ত মামলায় আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, এমনটাই নির্দেশ ছিল কলকাতা হাইকোর্টের। কিন্তু এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ রাজ্য। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত। প্রধান বিচারপতিও মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ২৯ নভেম্বর বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভ চলাকালীন শাসক শিবিরে জাতীয় সঙ্গীত শুরু হলেও স্লোগান থামেনি বলে অভিযোগ। জাতীয় সঙ্গীতের সময় স্লোগান দিয়ে অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে তৃণমূল। এরপরই এই মামলা আদালতে উঠতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্বস্তি পেয়েছিলেন বিজেপি বিধায়করা। আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত বিধায়কদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ করা যাবে না বলে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। কিন্তু, এই হার মানতে নারাজ রাজ্য। এবার এই মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হল রাজ্য। এখন দেখার ডিভিশন বেঞ্চ জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা মামলায় ঠিক কী নির্দেশ দেয়।
জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা হয়েছে। বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টেও এবার মুখ পুড়েছিল রাজ্য সরকারের। বিজেপি বিধায়কদের কোনওভাবেই গ্রেফতার করা যাবে না। মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এবার জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার তদন্তের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। রাজ্যের কাছে হলফনামা তলব করেছেন বিচারপতি। আগামী ১০ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।
বিধানসভার ভিতরে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা হয়েছে। এমন অভিযোগ বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে। কোথায় জাতীয় সঙ্গীত বাজছিল? আর কোথায় তখন ওই বিধায়করা ছিলেন? তা খতিয়ে দেখা হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে হেনস্থা করতে এই এফআইআর করেছে রাজ্যের শাসক দল। বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে তৃণমূল। এদিন আদালতে বিজেপি বিধায়কদের তরফে আইনজীবীর এমন বক্তব্যই ছিল। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে মামলার আবেদন করা হয়েছিল। বিচারপতি মৌখিকভাবে জানিয়ে দেন, কোনওভাবেই বিজেপি বিধায়কদের গ্রেফতার করা যাবে না। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিষয় নিয়েও মন্তব্য করেছেন বিচারপতি।
উল্লেখ্য, ২৯ নভেম্বর তৃণমূল এবং বিজেপির জোড়া কর্মসূচি ছিল বিধানসভা চত্বরে। সে দিনই বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননার অভিযোগ ওঠে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। এবার তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে অবমাননার মামলা খারিজ আদালতের। বিজেপির এক নেতা আদালতে অভিযোগ করেন, জাতীয় সঙ্গীত ও আবৃতি করা একই বিষয় নয়। এই নিয়ে অবমাননার মামলা করেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মুম্বইয়ের মেট্রোপলিটনের ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, মুম্বইয়ে একটি কর্মসূচিতে মমতা জাতীয় সঙ্গীত গাননি। আবৃত্তি করেছিলেন। তাই তাঁকে অবমাননায় অভিযুক্ত করা যায় না।
২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর মুম্বইয়ের কাফে প্যারেডে যশবন্ত রাও চহ্বান প্রেক্ষাগৃহে একটি কর্মসূচিতে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কর্মসূচির শেষে চেয়ারে বসেই জাতীয় সঙ্গীতে গলা মিলিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এমন কী জাতীয় সঙ্গীত না গেয়েই মঞ্চ ছেড়ে চলে যান বলে অভিযোগ তোলেন বিজেপি নেতা বিবেকানন্দ গুপ্ত।
এরপরই ক্যাফে প্যারেড থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই বিজেপি নেতা। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করায় মুম্বইয়ের মাঝগাঁও নগর দায়রা আদালতে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর মামলা গড়ায় বম্বে হাই কোর্টেও।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) পা স্পর্শ করে ফের প্রণাম। এর আগেও এমন একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল পাপুয়া নিউ গিনিতে। সেদেশ সফরে গিয়ে সেখানেও প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়েছিলেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী। আর এবারে মোদীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন মার্কিন সংগীতশিল্পী মেরি মিলবেন (Mary Millben)। মার্কিন (US) সফরে যেতেই সেদেশে এককথায় মোদী ঝড় উঠেছিল। তাঁর জন্যই সেদেশের ভারতীয় প্রবাসীরা ওয়াশিংটন ডিসির রোনাল্ড রেগানে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেখানেই ভারতের জাতীয় সংগীত 'জণগণমন' গেয়ে প্রধানমন্ত্রীর থেকে আশীর্বাদ নেন মেরি মিলবেন।
Indian culture possesses a remarkable beauty, as its values transcend boundaries effortlessly. Through the humble act of touching feet of Hon PM Shri @narendramodi Ji, @MaryMillben has exemplified profound respect for our ancient values. It truly represents the idea of 'One… pic.twitter.com/dAMEuqmffj
— Himanta Biswa Sarma (@himantabiswa) June 24, 2023
প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্কিন সফরের শেষদিনে ইউনাইটেড স্টেটস ইন্ডিয়ান কমিউনিটি ফাউন্ডেশনের তরফে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে চারিদিকে প্রবাসী ভারতীয়দের ভিড়, তাঁদের প্রত্যেকের মুখে নমোস্তুতি। এরই মাঝে আফ্রিকান-মার্কিন সংগীতশিল্পী মেরি মিলবেন প্রধানমন্ত্রীর জন্য জাতীয় সংগীত 'জনগণমন' গান। এরপর জাতীয় সংগীত শেষ করেই সরাসরি এগিয়ে গেলেন মোদীর দিকে ও তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিলেন। আর এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল পুরো বিশ্ববাসী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য জাতীয় সংগীত গেয়ে মেরি মিলবেন বলেন, 'চারবার মার্কিন রাষ্ট্রপতির আমলে আমেরিকান জাতীয় সংগীত এবং দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করার পরে, আমি প্রধানমন্ত্রী মোদী, দেশ ও জনগণের জন্য ভারতীয় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করতে পেরে গভীরভাবে সম্মানিত।'
সৌমেন সুর: জাতীয় সঙ্গীত সব মানুষের অন্তরের মুখের ভাষা, বুকের আশা। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের জাতীয় সঙ্গীত, জাতিকে দিয়েছে আত্মত্যাগের মহিমা। জাতীয় সঙ্গীতে জাতির স্বদেশপ্রীতি, ভাবাদর্শ, আত্মত্যাগ, স্বপ্নসাধনা মূর্ত হয়ে ওঠে।
প্রথম জাতীয় সঙ্গীত বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে। সেখানে সন্তান দল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। মাতৃবন্দনার মহামন্ত্রে উচ্চারিত হল 'বন্দেমাতরম।' ১৮৯৬ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ওই মাতৃবন্দনাকেই জাতীয় সঙ্গীতরূপে গ্রহণ করে। আসলে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে জাতির আত্মপ্রকাশের বীজ প্রকট হয়ে ওঠে। এই মাতৃমন্ত্র উচ্চারণ করে কত মুক্তিযোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। জাতীয় সঙ্গীতের গভীরতায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ হয়ে ওঠে সোচ্চার। কোনও শক্তি আত্মত্যাগী স্বাধীনতা সংগ্রামী মানুষকে রোধ করতে পারে না।
স্বাধীনতার পর জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত হয়। বলা হয়, 'বন্দে মাতরম' সঙ্গীতটি অত্যন্ত দীর্ঘ এবং সুরসৃষ্টিতে অসুবিধা। তাই এর একটি স্তবকে হয় জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি দান। তবে ১৯৫০ সালের ২০ জানুয়ারি 'জনগণমন' সঙ্গীতের প্রথম অংশ জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি পায়। স্রষ্টা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রত্যেক রাষ্ট্র এবং জাতির থাকে জাতীয় সঙ্গীত। জাতীয় সঙ্গীত তাঁর মর্যাদা এবং অহঙ্কার। জাতীয় সঙ্গীতের অপমান মানে গোটা জাতির অপমান। জাতীয় সঙ্গীতের অমর্যাদা আমাদের কলঙ্ক। বুঝতে হবে মানুষের আত্মদানের মধ্যে দিয়ে জাতীয় সঙ্গীতের প্রাণ প্রতিষ্ঠা। জাতীয় সঙ্গীত আমাদের প্রাণ, আমাদের বিবেক।