মাসখানেক আগেই মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) কুনো থেকে পালিয়ে গিয়েছে একটি চিতা (Cheetah)। লোকালয়ে ঢুকে পড়েছিল সেই বন্যপ্রাণ। তারপর কুনো থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে সেই চিতার খোঁজ পাওয়া যায়। বন দফতরের কর্মীরা সেটিকে ধরতে গেলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় চিতা। শেষমেশ তাকে ঘুমের গুলি ছুড়ে বেহুঁশ করে তুলে নিয়ে এসে কুনোতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিছুতেই চিতাটিকে আটকে রাখা যাচ্ছে কুনোতে। বারবার কুনো থেকে পালিয়ে যাওয়ার কারণে চিতাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভবঘুরে’।
কুনোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার পর আবার পালিয়ে গিয়েছে সেটা। তবে এবার কুনো থেকে পালিয়ে ১০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শিবপুরী জেলার মাধব জাতীয় উদ্যানে ঢুকে পড়েছে সেটা। কুনোতে চিতা ছাড়ার পর থেকে কিছু না কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। চিতাবাঘের সামনাসামনি হয়ে চিতার যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তাই চিতাবাঘগুলি অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও নামিবিয়ার চিতা নিয়ে চিন্তা বেড়েই চলেছে বন দফতরের। সেক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্য বনাধিকারিক জেএস চৌহান বলেন, 'ওবানের গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে। যতক্ষণ ওবান নিরাপদে, ততক্ষণ আমরা কোনও রকম হস্তক্ষেপ করব না।'
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের দিন ২০২২-এর ১৭ সেপ্টেম্বর নামিবিয়া (Namibia) থেকে মধ্যপ্রদেশের কুনোর জঙ্গলে মোট ৮ টি চিতা আনা হয়েছিল। তারমধ্যে একটি চিতা 'সাশা' শারীরিক অসুস্থতার জন্য কিছুদিন আগেই মারা গিয়েছে। এবার খবরে এসেছে, মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যান থেকে পালিয়ে ২০ কিমি দূরে একটি গ্রামে ঢুকে পড়েছে। ফলে আতঙ্কে গ্রামবাসীরা। জানা গিয়েছে, সেই চিতার খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
Sheopur, Madhya Pradesh | Cheetah Oban, one of the cheetahs brought from Namibia, entered Jhar Baroda village of Vijaypur which is 20 kms away from Kuno National Park. Monitoring team has also reached the village. Efforts are underway to bring the cheetah back: DFO
— ANI MP/CG/Rajasthan (@ANI_MP_CG_RJ) April 2, 2023
(Video… pic.twitter.com/4iQAoB6tcz
ডিস্ট্রিক্ট ফরেস্ট অফিসার জানিয়েছেন, চিতা 'ওবান' কুনো জাতীয় উদ্যান থেকে ২০ কিমি দূরে বিজয়পুরের ঝার বরোদা গ্রামে ঢুকে পড়েছে। ইতিমধ্যেই পরিদর্শনকারী দল এসে পৌঁছেছে গ্রামে। ওবান নামক চিতাটিকে অভয়ারণ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বন দফতর সূত্রে খবর, এটি সত্যি যে ওবান অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে গ্রামে ঢুকে গিয়েছে, কিন্তু এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ তাদের টিম প্রতি মুহূর্তে চিতাটির উপরে নজর রাখছে ও খুব শীঘ্রই তাকে ধরে ফেলা হবে ও অভয়ারণ্যে ফিরিয়ে আনা হবে।
চিতার বংশবৃদ্ধি করতে মোদী সরকার উদ্যোগ নিয়ে ভারতে এনেছিলেন আটটি চিতা। কিন্তু বংশবৃদ্ধিতে বড় ধাক্কা। নামিবিয়া (Namibia) থেকে মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) কুনো জাতীয় উদ্যানে আনা আটটি চিতার মধ্যে একটি মহিলা চিতার মৃত্যু হল সোমবার। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর 'সাশা' নামের ওই চিতাটিকে ভারতে আনা হয়েছিল। কুনো জাতীয় উদ্যানের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতে আসার পর থেকে তাকে ক্লান্ত ও অসুস্থ দেখাত। এরপর তার চিকিৎসা করাতেই ধরা পড়ে কিডনির অসুখে ভুগছে সাশা। এর জন্য চিকিৎসাও শুরু করেছিল বনদফতর। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।
উল্লেখ্য, গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭২তম জন্মদিনে ওই চিতাগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যনে। এর মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই মৃত্যু হল সাশার। একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাশার রক্ত পরীক্ষাতে দেখা গিয়েছিল ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি ছিল। যার মানে তার কিডনিতে ইনফেকশন রয়েছে। তবে বাকি চিতাগুলি সুস্থ আছে বলে জানানো হয়েছে।
কুনো জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, সাশাকে অসুস্থ দেখালে পশু চিকিৎসকদের একটি দলকে ডেকে পাঠানো হয়। চিতাটিকে পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা জানান, ডিহাইড্রেশন এবং কিডনির সমস্যা রয়েছে প্রাণীটির। সেই মতো চিকিৎসাও শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে তাতে সাড়াও দেয় সাশা। কিন্তু সোমবার তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে নামিবিয়া থেকে ভারতে চিতা (cheetah) এনেছিল মোদী সরকার। এবার ভারতে ১২টি চিতা আনা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa) থেকে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব (Union Environment Minister Bhupender Yadav) বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বারোটি চিতাকে উড়িয়ে আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭২ তম জন্মদিনে আফ্রিকার আর এক দেশ নামিবিয়া থেকে দেশে ৮টি চিতা আনিয়ে মধ্যপ্রদেশের কুনো-পালপুর জাতীয় উদ্যানে ছাড়া হয়েছিল। ৫টি স্ত্রী এবং ৩টি পুরুষ চিতাকে খাঁচামুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী স্বয়ং। কুনোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে থাকা আটটি চিতা প্রতি তিন-চার দিনে একটি শিকারকে হত্যা করছে এবং তারা সুস্থ রয়েছে। একটি চিতা অসুস্থ ছিল কারণ তার ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
বিশ্বের ৭,০০০ চিতার বেশিরভাগই দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া এবং বতসোয়ানায় বাস করে। নামিবিয়াতে চিতার সংখ্যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। চিতাই একমাত্র ভারত থেকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। প্রধানত অতিরিক্ত শিকার এবং আবাসস্থলের ক্ষতির কারণে এটি হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ছত্তিশগড়ের কোরিয়া জেলার শাল বনে শেষ দেখা যাওয়া চিতাটি মারা যায়। সেকারণে সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১০০টি চিতা আনার চুক্তি করেছে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক।