গা শিউরে ওঠার মতো দৃশ্য। পাহাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বহু গাড়ি, এর মধ্যে পাশের পাহাড় থেকে পাথর দ্রুত গতিতে গড়িয়ে আসতেই দুমড়ে-মুচড়ে গেল তিনটি গাড়ি। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে নাগাল্যান্ডে (Nagaland)। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। গুরুতর আহত হয়েছেন ৩ জন।
বেশ কয়েকদিন ধরেই নাগাল্যান্ডে অনবরত বৃষ্টি পড়ে চলেছে। এর ফলে জায়গায় জায়গায় ধস (Landslide) নামায় রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তাই নাগাল্যান্ডের চুমোউকেদিমা নামক জায়গায় কোহিমা-ডিমাপুর জাতীয় সড়কে সারি সারি দাঁড়িয়ে ছিল একাধকি গাড়ি। এরপরই পাহাড়ের গা বেয়ে হঠাৎ বিশালাকৃতির পাথর এসে গুঁড়িয়ে দিল তিনটি গাড়ি। চোখের নিমেষে খেলনা গাড়ির মতো ভেঙে চুরমার হয়ে গেল দুটি গাড়ি ও একটি উল্টে যায়। এরপরই একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আহতদের ডিমাপুরের রেফারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর চিকিৎসা চলাকালীন আরেক জনের মৃত্যু হয় বলে সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য, এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির এক ব্যক্তির ফোনে এই ক্যামেরাবন্দি হয়। এরপর তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হতেই ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়।
#WATCH | A massive rock smashed a car leaving two people dead and three seriously injured in Dimapur's Chumoukedima, Nagaland, earlier today
— ANI (@ANI) July 4, 2023
(Viral video confirmed by police) pic.twitter.com/0rVUYZLZFN
গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ড (Fire Incident)। আগুনে পুড়়ে মৃত (Death) সত্তর বছরের এক বৃদ্ধা এবং জখম বহু মানুষ। নাগাল্যান্ডের (Nagaland) ডিমাপুর জেলার বার্মা ক্যাম্পের পূর্ব ব্লকে এই ঘটনাটি ঘটেছে। এলাকার বহু ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে গিয়েছে। আগুন লাগায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।
রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ এই আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটে। আগুন লাগার ফলে এলাকার বহু মানুষের নানা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমনকি এলাকার খড়ের তৈরি প্রচুর বাড়ি ছিল, আগুন ছড়িয়ে সেই সমস্ত বাড়িগুলি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যার ফলে প্রচুর মানুষ মাথার উপরে ছাদ হারিয়েছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, অগ্নিকান্ডের ফলে ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন ৯০০ জন বাসিন্দা। আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় দমকল কর্মীরা। তিন ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে খবর, অগ্নিকান্ডের জেরে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি কয়েক জন এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসীরা।
দমকল সূত্রে খবর, গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে ওই এলাকায় আগুন লেগেছিল। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার আশপাশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
ত্রিপুরায় (Tripura) বিজেপি জোট অনেক আগেই ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলেছে। আগরতলায় গেরুয়া দলের (BJP+) মসনদে বসা শুধু সময়ের অপেক্ষা। পাশাপাশি সেভেন সিস্টার্সের অন্যতম সদস্য নাগাল্যান্ডেও এনডিএ সরকার (NDA Government)। মেঘের দেশ মেঘালয়ে (Meghalaya) অবশ্য ত্রিশঙ্কু বিধানসভা। তবে সরকার গঠনে আশাবাদী এনপিপি-র প্রধান কনরাড সাংমা (Conrad Sangma)। তাঁর দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি বা এনপিপি শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত ২৬ আসনে এগিয়ে। তাদের পিছনেই আছে অপর এক আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টি বা ইউডিপি (প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ ১৬.২৪%)। তাদের ঝুলিতে এখনও পর্যন্ত ১১টি আসন। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের তিন নম্বর স্থানে তৃণমূল কংগ্রেস।
জানা গিয়েছে, বিজেপি এবং কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে এই রাজ্যে টিএমসি এগিয়ে ৫ আসনে। বিজেপি এবং কংগ্রেস ২টি করে আসনে এগিয়ে সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত। ৬০ আসন বিশিষ্ট এই বিধানসভা সরকার গঠনে ম্যাজিক ফিগার ৩১। কিন্তু প্রথমসারির কোনও দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায়, একক বৃহত্তম দল হিসেবে মেঘালয়ে এগিয়ে এনপিপি (প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ প্রায় সাড়ে ৩১)। সেক্ষেত্রে সে রাজ্যে সরকার গড়তে কনরাড সাংমার দলকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে বিজেপি। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ট্যুইট করে এ খবর জানান। তবে যেহেতু মেঘালয়ে ফল গণনার ট্রেন্ড মেনে তৃতীয় টিএমসি (প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ প্রায় ১৪), সেক্ষেত্রে সরকার গড়তে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে বাংলার শাসক দল।
এদিকে, নাগাল্যান্ডে সরকার গড়ছে এনডিপিপি এবং বিজেপি। এই দুই দল এগিয়ে ৩৭ আসনে (এনডিপিপি ২৫ এবং বিজেপি ১২)। তারপরেই আছে ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি। তারা এগিয়ে রয়েছে ৭ আসনে। নাগাল্যান্ডে এনডিএ জোটের ফল নিশ্চিত হতেই ট্যুইট করে ভোটারদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তথ্যসূত্র: নির্বাচন কমিশন
সোমবার উত্তর-পূর্বের দুই রাজ্যের ১১৯টি আসনে চলছে ভোট গ্রহণ। ৬০ আসন বিশিষ্ট মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডের ৫৯টি আসনে সকাল থেকে শুরু ভোটগ্রহণ। জানা গিয়েছে সেভেন সিস্টার্সের আওতাভুক্ত এই দুই রাজ্য মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৫৫২ জন। ভোটগ্রহণ শুরু বিকেল ৪টে পর্যন্ত এবং ভোটগণনা হবে ২ মার্চ। সকাল ৯টা পর্যন্ত মেঘালয়ে ভোট গ্রহণ প্রায় ১১ শতাংশ আর নাগাল্যান্ডে ভোট গ্রহণ প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ।
মেঘালয়ে গত পাঁচ বছর ন্যাশানাল পিপলস পার্টি বা এনপিপি এবং বিজেপির জোট সরকার চলেছে। কিন্তু এবার ভোটে পৃথক ভাবে লড়ছে দুই দল। এদিকে ত্রিপুরার পর প্রথমবার মেঘালয়ের ভোটে অংশ নিয়েছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। অন্যদিকে নাগাল্যান্ডে জোট করে লড়ছে বিজেপি। এনডিপিপি-র সঙ্গে জোট করে লড়ছে পদ্মশিবির।
এদিকে, সোমবার ভোট শুরু হওয়ার পরেই ‘কংগ্রেসকে সুযোগ দিন’ বলে দুই রাজ্যের ভোটারদের কাছে আর্জি করেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। পাশাপাশি দলে দলে এসে ভোট দিতে, মেঘালয়-নাগাল্যান্ডের নতুন ভোটারদের টুইটবার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তবে নাগাল্যান্ডের ভোট হিংসা এড়াতে পারেনি। ভোটকেন্দ্রে চলা গুলিতে আহত এক এনপিপি সমর্থক।
অভিযোগ, বুথের ভিতরেই এনপিপি সমর্থককে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন এক এনপিএফ সমর্থক। ওই বুথে ভোটগ্রহণ কিছু সময়ের জন্য স্থগিত থাকলেও আবারও শুরু ভোটগ্রহণ। এখন সেভেন সিস্টার্সের তিন রাজ্য ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ে ২ মার্চ ফল ঘোষণা। মানুষের রায় কোনদিকে যায়, সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
প্রসূন গুপ্ত: উত্তরপূর্ব ভারতের দুটি রাজ্য। একটা সময় মেঘালয় অসমের অন্তর্ভুক্ত ছিল পরে আলাদা রাজ্যে পরিগণিত হয়। অন্যদিকে নাগাল্যান্ড ভারতের অঙ্গরাজ্য হলেও, দীর্ঘদিন নাগারা ভারতকে পরম ঘৃণা দেখত। দেখা গিয়েছিলো স্বাধীনতা উত্তর যুগে ওই রাজ্যে কেউ গেলে তার প্রাণসংশয়ে থাকতো। ধীরে ধীরে নাগারা বুঝেছে মূল স্রোতে না থাকলে খাদ্য-পানি কোনওটাই মিলবে না। তখন তারা খানিক সমঝে চলতে শুরু করে।
দুটিই মূলত পার্বত্য অঞ্চল। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং একদিকে ব্রিটিশদের প্রিয় স্থান ছিল এবং রবীন্দ্রনাথেরও প্রিয় শহর ছিল শিলং। মেঘালয় অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় স্থান। একসময় অসম যখন সন্ত্রাসদীর্ণ ছিল, তখনও শান্তির জায়গা ছিল মেঘালয় তথা শিলং। পাশাপাশি নাগাল্যান্ড কিন্তু ইউরোপিয়ানদের প্রিয় স্থান ছিল।
নাগাল্যান্ডের কোহিমা বা দিমাপুরকে পূর্বের সুইৎজারল্যান্ড বলা হতো। দুটি রাজ্যেই ৬০টি করে বিধানসভার কেন্দ্র , যেখানে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারী ভোট। দুটি রাজ্যের কোথাও বিজেপি বা কংগ্রেসের আধিপত্য নেই। তবে নাগাল্যান্ডে বিজেপি জোট ক্ষমতায়। এখানে এনডিপিপি ৩৫ আসন , বিজেপি ১৩, এনপিএফ ৪ ও এক নির্দল নিয়ে সরকার। এবারে বিজেপি একক ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে কিন্তু কাজটি কঠিন। অন্যদিকে এক সময়ে আধিপত্য কায়েম করা কংগ্রেস সবকটি আসনেই নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে।
অন্যদিকে মেঘালয় কিন্তু দীর্ঘদিন কংগ্রেসের চারণভূমি ছিল। এই রাজ্য মূলত খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বী। কংগ্রেসের প্রিয়পাত্র ছিলেন পিএন সাংমা। পরে তিনি দল ছেড়ে দিলে কংগ্রেস কিছুটা দুর্বল হয়। কিন্তু এ সত্বেও গত নির্বাচনে কংগ্রেস দল সব থেকে বেশি আসন পেয়েও সরকার গড়তে পারেনি। মাত্র দুটি আসন পেয়ে বহু ছোট দলকে সঙ্গে নিয়ে এনডিএর সরকার গড়ে বিজেপি। অবস্থান এখন এনপিপি ২০, ইউডিপি ৮,বিজেপি ২, পিডিএফ ৪, এইচএসপিডিএফ ২, নির্দল ১, এই নিয়ে সরকার। এখানে কংগ্রেস ২১টি আসনে জয় পেলেও কয়েক মাস আগে কংগ্রেস ভেঙে ১২ সদস্য তৃণমূলে চলে যায়। সুতরাং এবারের লড়াই বহুমুখী। কী হতে পারে এই দুই রাজ্যে জানা যাবে ২ মার্চ হলে। এবারেও কি জোড়াতালি সরকারের দিকেই সেভেন সিস্টার্সের অন্যতম এই দুই সিস্টার্স?