শহরের সরকারি হাসপাতালে ফের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে রোগী মৃত্যুর (Patient Death) ঘটনা। এবার কাঠগড়ায় এনআরএস হাসপাতাল (NRS Hospital)। অভিযোগ, চার হাসপাতালে ঘুরে এনআরএস হাসপাতালে আসলে চিকিৎসা না পেয়েই মৃত্যু বছর ২৪-র যুবকের। জানা গিয়েছে, বাইক থেকে পড়ে চোট পান ওই যুবক (Young Boy Died)। পায়ে গুরুতর চোট পেলে এবং যন্ত্রণা শুরু হলে শহরের একাধিক হাসপাতাল ঘুরে এনআরএস-এ আনা হয় সেই যুবককে। দীর্ঘক্ষণ তাঁকে চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রাখা হয়, তাতেই যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। শুধু চিকিৎসায় গাফিলতি নয়, উঠেছে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। যদিও হাসপাতাল সূত্রে খবর, চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতিও চলছিল। সেই সময় মৃত্যু হয় যুবকের।
এদিকে পরিবারের অভিযোগ, ভালো ছেলে কথা বলছিল। নিজে জলও খায় তারপরেও কীভাবে এই ঘটনা। ওকে ভর্তির সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাঁদের অনেক অনুনয়-বিনয় করা হয়। রোগী সমেত ঢুকতে দেওয়া হয়নি, কার্ড করে না আনলে চিকিৎসা হবে না। আমাদের এসব বলা হয়। এভাবে সকাল ৯টা অবধি ফেলে রেখেছিল রোগীকে। প্রাথমিক চিকিৎসা হলে ওই যুবক বেঁচে যেত। এমন আক্ষেপ শোনা গিয়েছে পরিবারের গলায়।
মৃতের মা জানান, 'বাইক থেকে পড়ে পায়ে চোট পায়। যন্ত্রণা হলে ভাঙড়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। রাতে ব্যথা হলে এসএসকেএম হাসপাতালে আনলে এক্সরে কর কিছু পায়নি। আমাদের বলে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও কিছু না পেয়ে বলে নীলরতনে নিয়ে যান। সকাল ৬টা নাগাদ এই হাসপাতালে আনলে বলে আগে কাগজ আনুন, তারপর চিকিৎসা শুরু হবে। সিস্টারের কাছে গিয়ে ভর্তির কাগজ তৈরি করতে গিয়ে বলি একটু তাড়াতাড়ি করুন। বলে তাড়াতাড়ি হবে না। এভাবে সকাল ৯টা অবধি ছেলেটাকে ফেলে রাখে। একটা ইঞ্জেকশন দিলেই ব্যথা কমতো, আমার ছেলেটা বেঁচে যেত।'
৪৫ মিনিটের সফল অস্ত্রোপচারে কল্যাণীর (Kalyani Youth) এক যুবকের প্রাণ বাঁচালো এনআরএস হাসাপাতাল (NRS Hospital)। জানা গিয়েছে, বছর ৩৩-র এক যুবককে সোমবার ভোর তিনটে নাগাদ গলায় ত্রিশূলবিদ্ধ অবস্থায় কল্যাণী থেকে এনআরএস নিয়ে আসা হয়েছিল। যুবকের এহেন অবস্থা দেখে বিস্মিত হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা। যে জায়গায় ত্রিশূলটি বিদ্ধ ছিল, তার এক ইঞ্চি উপর-নিচে ত্রিশূলটি বিঁধলে প্রাণ সংশয় ছিল। সেই অবস্থায় ওই যুবককে কল্যাণী থেকে কলকাতার এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ট্র্যাকিওস্কোপি করে ৪৫ মিনিটের অপারেশন (Surgery) শেষে তাঁর গলা থেকে ত্রিশূল বের করে যুবককে বিপদমুক্ত করা হয়েছে। আপাতত সুস্থ রয়েছেন ওই রোগী।
জানা গিয়েছে, কীভাবে গলায় ত্রিশূল ঢুকে গেল তা নিয়ে হতবাক চিকিৎসকরা। যখন সার্জারি করা হচ্ছিল সেই সময় কোনভাবেই রোগী নড়াচড়া করেনি একেবারে নির্লিপ্ত ছিলেন। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর প্রণবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের চিকিৎসকের টিম এই সফল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে ত্রিশূলটি বের করেন।
সৌমেন সুর: আমি চিকিৎসা বিজ্ঞান পর্বে মোট চারজন খ্যাতিমান যশস্বী চিকিৎসককে বেছে আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। এক একটি পর্বে এক একজন চিকিৎসকের প্রসঙ্গ থাকবে। আজ ডাক্তার নীলরতন সরকার নিয়ে আলোচনা। নীলরতন সরকার জয়নগর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ক্যামবেল মেডিক্যাল স্কুল থেকে ডাক্তারির প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর সাব অ্যাসিস্টেন্ট সার্জেন্টের চাকরি পাওয়ার পরেও জ্ঞানপিপাসু নীলরতন মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে এফ.এ এবং বি.এ পাশ করেন। কিছুদিন চাতরা হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের চাকরি করার পর, মেডিক্যাল কলেজে ফিরে এসে এখানে এম.এ ও এম.ডি পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হন।
এই সময় থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে তাঁর সাফল্যের সূত্রপাত। ১৮৯৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলো নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত উপাচার্য ছিলেন। চিকিৎসক হিসেবে নীলরতন সরকারের নাম-যশ-খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর এই খ্যাতির কারণে দেশীয় শিল্পোদ্যোগী হিসেবে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা কম আলোচিত। এদেশে তিনি প্রথম বিজ্ঞানসম্মত দূষণমুক্ত ট্যানারি, সার ও সাবান কারখানা স্থাপন করেন। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সভাপতি হিসেবে আসীন হওয়ার পর বহু যুবককে শিল্পে নিযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেন।
একমাত্র নীলরতন সরকারের প্রচেষ্টায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল ও যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা; 'সিরোসিস অফ লিভার ইন চিলড্রেন।' তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় ছিলেন সবচেয়ে বেশি যশস্বী। অন্যদিকে ব্রাহ্ম সমাজের সক্রিয় সদস্য হিসেবে অনেক সামাজিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন এই চিকিৎসক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত চিকিৎসক বেশ আস্থাভাজন ছিলেন ডাক্তার এনআরএস। মধ্য কলকাতার শিয়ালদহে এনআরএস সরকারি হাসপাতাল তাঁর নামাঙ্কিত এবং নীলরতন সরকারের দান। এই হাসপাতালের সূত্রে এবং নামী চিকিৎসক হিসেবে নীলরতন সরকারের নাম মানুষের কাছে চির অক্ষয় হয়ে থাকবে।
(চলবে)