শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়: আজ থেকে ১১৭ বছর আগে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় সুদূর উত্তর প্রদেশের লখনউ থেকে আহমেদ হুসেন নামের এক যুবক ভাগ্য অন্বেষণে কলকাতায় আসেন। চিৎপুরে একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে মোগলাই খাবারের দোকান শুরু করেন। দোকান খোলার কিছুদিনের মধ্যেই আহমেদের তৈরি মটন চাপের স্বাদ কলকাতার খাদ্যরসিকদের মুখে লেগে গেল। পাতলা ফিনফিনে রুমালি রুটি সহযোগে সুস্বাদু মটন চাপের স্বাদ কলকাতার খাদ্যরসিকরা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলো।
বলা যায় আহমেদ কলকাতার খাদ্যরসিকদের স্বাদের নতুন দিগন্ত খুলে দিল। কিছুদিনের মধ্যেই চিৎপুরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল আহমেদের মটন চাপের খ্যাতি। কলকাতার সেই সময়ের বিখ্যাত জমিদারদের কানেও এই খবর পৌঁছে গেল। গাড়ি হাঁকিয়ে তাঁরা ভিড় জমাতে শুরু করলেন আহমেদের দোকানে। এভাবেই খাদ্যরসিকদের ভিড় উপচে পড়তে থাকল। চিৎপুরের ঠাকুর বাড়িতেও রয়ালের মাটন চাপের বিশেষ কদর ছিল। কবিগুরু রয়্যাল এসে খেয়েছেন কিনা, সেই তথ্য পাওয়া না গেলেও বিশ্বকবির জন্যে প্রায়ই লোক মারফৎ মাটন চাপ ও রুমালি রুটি যেত বাড়িতে।
এরপরে জমিদার অবিনাশ মল্লিকের বাড়িতে স্থানান্তরিত হলো রয়্যাল ইন্ডিয়ান হোটেল। আজও এটাই রয়্যালের ঠিকানা। যদিও বছর কয়েক হলো পার্কসার্কাসে রয়্যালের দ্বিতীয় শাখা খুলেছে। যতদিন গিয়েছে রয়্যালের চাপের খ্যাতি ততবৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু কলকাতা নয় সারা ভারতের খাদ্যরসিকরা কলকাতায় এসে পরম তৃপ্তি সহকারে রয়্যাল ইন্ডিয়ান হোটেলের চাপ ও রুমালি রুটির স্বাদ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে চলেছেন। সত্যজিৎ রায়, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, বড়ে গুলাম আলি থেকে শচিন দেব বর্মন, হেমন্ত কুমার, মান্না দে, কিশোর কুমার, মহম্মদ রফি, মুকেশ, রাহুল দেব বর্মন, বাপি লাহিড়ি থেকে কুমার শানু, উত্তমকুমার, রাজ কাপুর, দিলীপ কুমার, রাজেশ খান্না, আমিতাভ বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী, আমজাদ খান, সুচিত্রা সেন, রাখি, শর্মিলা, শাবানা আজমি, ওয়াহিদা রহমান, পতৌদিরা আসতেন।
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়: আজ থেকে ১১৭ বছর আগে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় সুদূর উত্তর প্রদেশের লখনউ থেকে আহমেদ হুসেন নামের এক যুবক ভাগ্য অন্বেষণে কলকাতায় আসেন। চিৎপরে একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে মোগলাই খাবারের দোকান শুরু করেন। লখনউয়ের এক নবাবের ব্যক্তিগত রাঁধুনি ছিলেন আহমেদের বাবা। বাবার সহকারী হিসেবে ছোট থেকেই কাজ করতেন আহমেদ। তিনি ছোট বয়সেই নবাবি ঘরানার মোগলাই খাবার তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। নবাব, আহমেদের হাতের তৈরি খাবার খেয়ে খুব প্রশংসা করতেন। কিন্তু স্বাধীনভাবে ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর ছিলেন আহমেদ। কলকাতায় এসে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।
কলকাতায় এসে ঘুরে ঘুরে বাজার করে নিজের হাতে রান্না করে বিক্রি করতেন। কলকাতার খাদ্যরসিকদের প্রথম মাটন চাপের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন আহমেদ হুসেন। মাটনের পিঠের অংশে হাড়শুদ্ধ ছোট ছোট খণ্ডগুলোকে আদা, রসুন, পেপে, কাজু বাদাম বাটা, নুন, টক দই, ঘি, লঙ্কার গুঁড়ো, জাফরান, গোলাপ ও কেওড়া জল, মিঠা আতর ও রকমারি গরম মশলার সংমিশ্রণ দিয়ে রাঁধতেন।
আহমেদের নিজস্ব চাপ মশলার মিশ্রণ মাখিয়ে কয়েক ঘন্টা রেখে ম্যারিনেট করে চারকোলের মৃদু আঁচে বসিয়ে, তার মধ্যে ঘি গরম করে মিশ্রণ মাখানো মটনের খণ্ডগুলো দিয়ে চাপ তৈরি করা হতো। সেই রান্নার গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ত এবং আশপাশের লোকেদের সেই সুগন্ধ আহমেদের দোকানে টেনে নিয়ে আসত। (চলবে)