করোনাভাইরাস (Coronavirus), মাঙ্কিপক্সের (Monkeypox) জোড়া থাবায় দেশ জেরবার। এই আবহে এবার লাম্পি ভাইরাসকে (Lumpy virus) ঘিরে উদ্বেগ বাড়ল। তবে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে গবাদি পশুরা। লাম্পি চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে বেশি গরুর মৃত্যু ঘটছে রাজস্থানের (Rajasthan) সাতটি জেলায়। সেই জেলাগুলিতে গরুর টিকা দেওয়া এখনও শুরু হয়নি। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের হোম টার্ফ যোধপুরও রয়েছে।
পশুপালন বিভাগের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ১০.৬১ লক্ষেরও বেশি গবাদি পশু চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু মাত্র ৬.৮ লক্ষ টিকা দেওয়া হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যে ১০ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৮৭ টি গরু সংক্রমিত হয়েছে। যার মধ্যে ৪৬ হাজার ৩১৭ টি গরুর মৃত্যু ঘটেছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হল, শুধুমাত্র ৬ লক্ষ ৮৭ হাজার ৩৭৫ টি গরুর টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
যে সাতটি জেলায় এখনও টিকাকরণ শূন্য, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম রাজস্থানের ছয়টি জেলা, যা হল বারমের, যোধপুর, পালি, বিকানের, নাগৌর এবং জয়সলমীর। পশ্চিম রাজস্থান রাজ্যের পকেট সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে এই ভাইরাল সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে ১৬,১৩৭টি গরু মারা গিয়েছে। যদিও অনেকে বলছেন, বাস্তবে সংখ্যাগুলি যা দেখানো হয়েছে তার চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি হতে পারে। তবে, অন্যান্য সাতটি জেলার তুলনায় ধোলপুরে এই রোগের বিস্তার ততটা গুরুতর নয়।
লম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) হল একটি সংক্রামক ভাইরাল রোগ। যা গবাদি পশুকে প্রভাবিত করে এবং জ্বর, ত্বকে ঘা সৃষ্টি করে এবং মৃত্যুও হতে পারে। এই রোগটি মশা, মাছি, উকুন, ভেপ এবং গবাদি পশুর সরাসরি সংস্পর্শে এবং দূষিত খাবার ও জলের মাধ্যমে ছড়ায়।
প্রধান উপসর্গগুলি হল পশুদের মধ্যে জ্বর, চোখ ও নাক থেকে স্রাব, মুখ থেকে লালা পড়া, সারা শরীরে নডিউলের মতো নরম ফোসকা, দুধ উৎপাদন কমে যাওয়া এবং খেতে অসুবিধা যা কখনও কখনও পশুকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
বিশ্বের ৭৫টি দেশে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ এই মুহূর্তে মাঙ্কিপক্সে (Monkeypox) আক্রান্ত। এই ভাইরাস নিয়ে 'রেড অ্যালার্ট' (Red Alert) জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। এই পরিস্থিতিতে সামনে এসেছিল একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। সমপ্রেমী পুরুষ যাঁরা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছেন তাঁদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। তবে সম্প্রতি মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের উপর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিল্লিতে (Delhi) যে পাঁচজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে তিনজন সমকামী বা উভকামী নয়। তাঁরা নিজেদের বিষমকামী বলে দাবিও করেন। বাকি দুজনের আক্রান্ত হওয়ার পিছনে কোনও যৌন সংযোগ নেই। এমনকি বিদেশ ভ্রমণের কোনও ইতিহাস নেই।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার কারণে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন ওই দু’জন। আইসিএমআর, পুণের মৌলনা আজাদ মেডিক্যাল কলেজ এবং এমস-এর বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণাটি করে।
উল্লেখ্য,সংক্রমণের কারণ আলাদা হলেও সকলের উপসর্গ একই। মাথা ব্যথা, গায়ে ফোস্কার মতো ফুসকুড়ি, জ্বর, মাথাধরা সবটাই দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাতাসেও অর্থাৎ নিঃশ্বাসের মধ্যেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এই ভাইরাস করোনার মতো অধিক সংক্রামক নয়, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।