
সৌমেন সুর: ১৫০৩ সাল থেকে ১৫০৬ সালের মধ্যে চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি মোনালিসার ছবি আঁকা সম্পূর্ণ করেন। লিওনার্দো মোনালিসার রূপে এতই বিভোর হয়েছিলেন যে মোনালিসার ছবি আঁকা ছাড়াও ওর মূর্তি নির্মাণে পর্যন্ত আকৃষ্ট হয়েছিলেন। লিওনার্দো নিজে ছিলেন অসাধারণ রূপবান পুরুষ। তার গভীর ঘন কালো দুটি চোখ, লাবণ্যপূর্ণ অবয়ব যে কোনো মানুষের ঈর্ষার বস্তু। অপরূপ সুন্দরী মোনালিসা যখন তার স্বামীর কাছে শোনেন, লিওনার্দো পঞ্চাশের উর্ধ্বে বয়স, তখন তাকে 'বৃদ্ধ' বলে বাতিল করে দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন স্বচক্ষে লিওনার্দোকে দেখলেন তখন নিজের ভাবনাটাকে Withdraw করতে বাধ্য হন। যাই হোক লিওনার্দো মোনালিসার প্রতিকৃতি আঁকার পর নিজের সৃষ্টিতে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে ছবিটা মোনালিসার স্বামীর হাতে কখনই তুলে দেননি। ছবিটি সম্পর্কে লিওনার্দো এতই সংবেদনশীল ছিলেন যে, রাতে শোবার সময় মাথার কাছে ছবিটি নিয়ে শুতেন। লিওনার্দোর এই মোনালিসা প্রেমের জন্য তার অনুরাগীরা, ছাত্ররা নানা বিদ্রুপ করতো কিন্তু লিওনার্দো এসব ভ্রুক্ষেপ করতেন না। তিনি আপন খেয়ালেই চলতেন।
বস্তুত এই ছবি নিয়ে অনেকদূর গড়ায়। বিভিন্ন রাজার ভাবনাকে নস্যাত্ করে দেন লিওনার্দো। ছবিটি তিনি কিছুতেই কারো কাছে বিক্রি করবেন না। একসময় অস্বাভাবিক দাম উঠেছিল মোনালিসার। কিন্তু লিও মাথা নীচু করেন নি। অবশেষে লিওনার্দোর মৃত্যুর পর ছবিটি চলে যায় ফ্রান্সের রাজপরিবারের অধীনে। এরপর থেকে ছবিটি প্রায় পৌনে ৩০০ বছর তাদের হেফাজতেই ছিল। ১৮০০ সালে ছবিটি নেপোলিয়ানের হাতে আসে। ছবিটি দেখে নেপোলিয়ান এত মুগ্ধ হন যে, ছবিটি তিনি শয়নকক্ষে টাঙিয়ে রাখেন।
অতীতের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ছবিটা দু'বার ফ্রান্সের বাইরে গেছে। একবার ১৯১১ সালে ফ্রান্সের বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি যায়। এরপর দুবছর বাদে ইতালিতে পাওয়া যায়। আর একবার একমাসের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডির অতিথি হয়ে বিপুল অর্থের বিনিময়ে ইনসিওর হয়ে আমেরিকায় যায়। বর্তমানে মোনালিসা ছবিটি ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামেই রাখা আছে। এখানে সারা পৃথিবী থেকে হাজার হাজার শিল্পরসিক মানুষ এই অনন্য প্রতিকৃতি দেখতে আসেন। তথ্যঋণ---ভাস্কর ভট্টাচার্য।
সৌমেন সুর: মোনালিসা, এমন একটা পৃথিবীর অন্যতম ছবি-যা আজও মানুষ ভুলতে পারেনি। সমস্ত পৃথিবীর তাবড় শিল্পরসিক মানুষ জানেন, ছবিটি অন্যতম চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা অমর ছবি। শিল্পী ছিলেন ভার্সেটাইল জিনিয়াস। তিনি ছিলেন একাধারে স্থপতি, গনিতজ্ঞ, ভূবিদ, পদার্থবিদ, এরোনটিক্স ইঞ্জিনীয়র, নগর উন্নয়ন বিশারদ, জ্যোর্তিবিদ ও একজন পাকা সমাজদার সঙ্গীতজ্ঞ। পৃথিবাতে এমন বহুমুখী প্রতিভাবান মানুষ বিরল। মোনালিসা ছবিটি দেখলে কখনো কখনো প্রশ্ন আসে মনে, কে এই মোনালিসা, কি তার পরিচয়! সে কি শুধু টিত্রকরের কাল্পনিক মনের প্রকাশ, নাকি রক্তমাংসের কোনো এক প্রানী! এ ছবি আঁকার পেছনে উদ্দেশ্যটা কী।
ইতালির ফ্লোরেন্স ছিল এক সমৃদ্ধময় নগরী। প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা, সেখানে বাস করতেন ফ্রানসেস্কো ডেল গায়োকোণ্ডো নামে একজন যুবক ব্যবসায়ী। এই যুবকের সুন্দরী স্ত্রী ছিলেন মোনালিসা। এই মোনালিসার আসল নাম ম্যাডোনালিসা খেরারডিনি, ডাকনাম 'মোনা।' জীবনপথে চলতে চলতে হঠাত্ ফ্রানসেস্কোর মনে বাসনা জাগে-তার স্ত্রীর একটি প্রতিকৃতি আঁকতে হবে। তখন বাজারে লিওনার্দোর খুব নামডাক। ফ্রানসেস্কো লিওনার্দোকে কিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সিলেক্ট করেন। ১৫০৩ সালের ঘটনা। লিওনার্দোর বয়স তখন একান্ন। আর মোনালিসার বয়স সবেমাত্র চব্বিশ। ইতিহাস বলে, প্রতিদিন কাজের শেষে মোনালিসা বিকেলের পড়ন্ত বেলায় এই শ্রেষ্ঠ শিল্পীর স্টুডিওতে যেতেন। পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ এসে পড়তো জানালা বেয়ে ঘরে। মোনালিসা বসতেন সেই আলোয়। শিল্পী লিওনার্দো তখন রং তুলি নিয়ে, উদ্ভাসিত সুন্দরীর মুখখানাকে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে একটু একটু করে ক্যানভাস পূর্ণ করে চলতেন। এই মোনালিসার প্রতিকৃতিটি অঙ্কন করেছেন সম্পূর্ণ বাম হাতে। মূল প্রতিকৃতির দৈর্ঘ্যে ছিল ৭৭ সেমি ও প্রস্থে ছিল ৫৩ সেমি। লিওনার্দো ছবিটি নিখুঁত করে আঁকতে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। শুধু তাই নয় মোনালিসার মুখের সেই রহস্যময় হাসিটি যা আজ অবধি সারা বিশ্বের মানুষকে নাড়া দিয়ে আসছে। আমরা অনেকেই জানি, মোনালিসা তার হাসিটির জন্য জগত্ বিখ্যাত। প্রতিকৃতি আঁকতে গিয়ে লিওনার্দোকে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত মোনালিসার ঠোটে সেই রহস্যময় হাসিটি দেখে Satisfy হচ্ছেন--ততদিন মোনাকে হাসির Display করে যেতে হতো। (চলবে) তথ্যঋণ-ভাস্কর ভট্টাচার্য