উল্টোরথের (Ulto Rath) দিন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল ত্রিপুরাবাসী (Tripura)। বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে এসে লোহার রথে বিদ্যুৎসংযোগ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু (Accident) হয় ৩ শিশু সহ ৭ জনের। আহত ১৬। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার কুমারঘাট ব্লক চৌমুহনি এলাকায়। এই ঘটনায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা (Chief Minister Manik Saha) শোকপ্রকাশ করেছেন। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যাঁরা নিকট এবং প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, সেই সকল পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। বিদ্যুৎমন্ত্রী, ডিজিএম-এর কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন। জানা গিয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা নাগাদ আহতদের দেখতে হাসপাতালে যাবেন তিনি। এছাড়াও নিহত ও আহতদের জন্য আর্থিক অনুদান ঘোষণা করেছেন। আহতদের বিনাখরচে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। স্বজনহারাদের পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও (Narendra Modi)।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একসঙ্গে এত জনের মৃত্যু, ত্রিপুরার ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা। স্বাস্থ্য দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রত্যেকটি হাসপাতালে এই দুর্ঘটনায় যাঁরা আহত রয়েছেন তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবায় যেন কোন ধরনের ত্রুটি না হয়। রাজ্যের মুখ্য সচিবকেও এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের জন্য আর্থিক চার লক্ষ টাকার অনুদানের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। যাঁরা ৬০ শতাংশের বেশি আহত হয়েছেন তাঁদের আড়াই লক্ষ টাকা করে, ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ আহতদের ৭৪ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।এই ঘটনার সঠিক তদন্তের জন্য ঊনকোটি জেলার জেলাশাসকের নেতৃত্বে তদন্তকারী টিম গঠন করা হবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা, আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
বৃহস্পতিবার কুমারঘাট ইসকন মন্দিরের পক্ষ থেকে উল্টো রথের আয়োজন করা হয়। মূলত ওই রথটি লোহা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই উল্টোরথ শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে ব্লক চৌমুহনি পৌঁছতেই রথের চূড়া হাই ভোল্টেজ তারের সংস্পর্শে আসে। নিমেষের মধ্যেই বিদ্যৎস্পৃষ্ঠ হয়ে পড়ে রথ। মুহূর্তের মধ্যে রাজপথে লুটিয়ে পড়ে রথে লোহার সিঁড়ির সংস্পর্শে থাকা ভক্তরা। দাউদাউ করে জ্বলছিল বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ দেহগুলি। এই দৃশ্য খুবই মর্মান্তিক। ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী থেকে শুরু করে সকলের চিৎকার, আর্তনাদ শোনা যায়।
শেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থলেই দুটি নয় বছরের শিশু সহ তিনজন মহিলা এবং একজন পুরুষ প্রাণ হারান। আরেকজন হাসপাতালে রেফার করার সময় মাঝপথে প্রাণ হারান। আহত ১৬ জন। আহতরা কুমারঘাট, কৈলাশহর, ঊনকোটি জেলা হাসপাতাল ও জিবিপি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ত্রিপুরায় (Tripura Government) শপথগ্রহণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা (CM Manik Saha) এবং তাঁর মন্ত্রিসভার ৮ জন সদস্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Modi), কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি (BJP President JP Nadda) জগত প্রকাশ নাড্ডার উপস্থিতিতে শপথগ্রহণ করেন তাঁরা। এই নয় জনকে শপথবাক্য পাঠ করালেন রাজ্যপাল সত্যদেও নারায়ণ আর্য। এদিন শপথ নেওয়া ৯ জনের মধ্যে মানিক সাহা-সহ পাঁচ জন আগের মন্ত্রিসভায় ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সঙ্গে মন্ত্রিসভায় ছিলেন সুশান্ত চৌধুরী, রতনলাল নাথ, প্রণজিৎ সিংহ রায় এবং সান্তনা চাকমা। নতুন মুখ হিসেবে মন্ত্রিসভায় গেলেন বিকাশ দেববর্মা, সুধাংশু দাস, টিংকু রায় এবং আইপিএফটি-র শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া।
এদিকে, এদিন শপথ নেওয়ার আগে লক্ষীনারায়ণ মন্দিরে পুজো দেন মানিক সাহা। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং-সহ অরুণাচল এবং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীরাও। সদ্যসমাপ্ত ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে বিজেপি এবং আইপিএফটি জোট ৩৩টি আসন পেয়েছে। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসা তিপ্রা মোথার ঝুলিতে ১৩ আসন। অন্যদিকে জোট বেঁধে লড়াই করা বাম-কংগ্রেসের ঝুলিতে ১৩টি আসন।
গেরুয়া ঝড় তুলে ত্রিপুরায় (Tripura Assembly Poll) প্রত্যাবর্তন বিজেপির। ৬০ আসনের বিধানসভায় ৩৩টি আসন পেয়েছে বিজেপি এবং জোটসঙ্গী আইপিএফটি (BJP+)। ১৪ আসন ঝুলিতে পুড়েছে বাম এবং কংগ্রেস জোট (Left+)। তিপ্রা মোথা পার্টি পেয়েছে ১৩টি আসনে। প্রথমবার ভোটে লড়ে খাতা খুলতে ব্যর্থ তৃণমূল কংগ্রেস। নোটার চেয়েও কম ভোট ঘাসফুল শিবিরের ঝুলিতে। যদিও প্রথমবার ভোটে লড়ে ত্রিপুরায় বিরোধী দলের স্বীকৃতি পাবে তিপ্রা মোথা। ১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ভোট পড়েছিল ৮০%-র বেশি। সেদিন থেকেই ক্ষমতা ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা (CM Manik Saha)। বৃহস্পতিবার তিনি টাউন বরদোলাই আসনে ১১৮০ ভোটে জিতেছেন। মানিক সাহা হারিয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের আশিস সাহাকে।
এদিকে, ত্রিপুরায় ভোট গণনার প্রাথমিক পর্বে বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ছিল বিজেপি। একটা সময় পর্যন্ত ম্যাজিক ফিগার (৩১) থেকে দূরে থাকলেও বেলা বাড়লে সম্পূর্ণ বদলে যায় চিত্র। বিরোধী জোটকে অনেক পিছনে ফেলে ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। এই ভোটে তিপ্রা মোথা প্রথম থেকেই ফ্যাক্টর। ত্রিপুরায় বিজেপির ঝুলিতে ৩৯% ভোট, বাম এবং কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে ৩৩% ভোট, এক শতাংশের কম ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে।
এদিকে, ভোট গণনায় ফল চূড়ান্ত হওয়ায় এখন দেখার জনজাতি কেন্দ্রিক দল তিপ্রা মোথা বিজেপিকে সমর্থন করে কিনা সেদিকে তাকিয়ে জাতীয় রাজনীতি। ইতিমধ্যে সূত্রের খবর, বিজেপি শিবির থেকে সমর্থনের জন্য তিপ্রা মোথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোত কিশোর মানিক্য দেববর্মার কাছে দূত পাঠানো হয়েছে। ভোটের আগেও এবার গেরুয়া শিবির দৌত্যর জন্য প্রদ্যোত কিশোরের কাছে লোক পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেই দৌত্য ব্যর্থ হয়েছে।
আসন্ন ২০২৩ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনকে (Tripura Assembly Election) ঘিরে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দল প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেছে। শনিবার প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করল ভারতীয় জনতা পার্টি (Bharatiya Janata Party)। ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৮টি আসনের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করল বিজেপি (BJP)। তাঁদের মধ্যে ১১ জনই মহিলা প্রার্থী। বাকি ১২ জন প্রার্থীর নাম খুব শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে গেরুয়া শিবির। শনিবার দিল্লির ভারতীয় জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় অফিসে বসে সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘোষণা করেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং এবং সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র।
এই ৪৮টি আসনের মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থীরা হলেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা, যিনি আট টাউন বড়দোয়ালি আসনের বর্তমান বিধায়ক। ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়বেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বিধানসভা কেন্দ্র ৯ বনমালিপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়ছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন, ২ মার্চ ফল ঘোষণা। ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল বিজেপি ২০১৮ সালে। তাই এবারে ত্রিপুরায় বিজেপি-কে হারাতে সমঝোতার পথে হেঁটেছে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস৷
মঙ্গলবার থেকে আগরতলায় (Agartala) শুরু হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির পুলিস প্রধানদের ২৭ তম কনফারেন্স। ত্রিপুরা (Tripura) রাজ্যের রাজধানী আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এই কনফারেন্সে (Conference) প্রথম দিনের সূচনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডঃ মানিক সাহা (Manik Saha), ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্য সচিব জে কে সিনহা। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত পুলিসের উচ্চ আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্য সচিবকে স্বাগত জানান।
পরে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার থেকে বিভিন্ন সময় নেশা সামগ্রী উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের প্রবেশ করছে। এরপর এগুলো বাংলাদেশের যাচ্ছে বেআইনিভাবে। আবার ত্রিপুরাতে অবৈধভাবে উৎপাদিত গাঁজা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার হচ্ছে। কী করে নেশা সামগ্রী পাচার বন্ধ করা যায়, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। তিন বছর পর এ ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং ত্রিপুরা রাজ্যে ৩০ বছর পর এই কনফারেন্স হচ্ছে।'
কোভিড-সহ নানা কারণে মাঝে কিছু বছর এই বৈঠক হয়নি। বিভিন্ন রাজ্যের পুলিস প্রধানের পাশাপাশি অন্যান্য নিরাপত্তা এজেন্সির আধিকারিকরাও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এর ফলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া আরও গতিশীল হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা আরও বলেন, 'আগে উত্তর-পূর্ব ভারতের উগ্রবাদীদের বাড়বাড়ন্ত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চেষ্টায় এখন দেশের এই অঞ্চলের শান্তি বিরাজ করছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া এক্ট-ইস্ট পলিসির কারণে উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজ্য একই মালায় আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। আগে রাজ্যগুলির নিজেদের মধ্যে সমস্যা হত, এখন এগুলি নেই বললেই চলে। উগ্রবাদও নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় এখন উগ্রবাদী রয়েছে। এই দিকেও রাজ্যগুলির পাশাপাশি কেন্দ্রের নজরদারি চলছে। নিজেদের মধ্যে ফিলগুড এবং অষ্টলক্ষ্মীর কথা বলা হয়েছিল তা বাস্তবায়িত হয়েছে।'
উত্তরপূর্বের বিভিন্ন রাজ্য দিয়ে অনুপ্রবেশ এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ইস্যুতেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কথা বলেন তিনি। জানান রোহিঙ্গা মাঝে মাঝে রাজ্য অনুপ্রবেশ করে এবং পুলিস বিভিন্ন সময়ে তাঁদের আটক করছে। পাশাপাশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তিনি বলেন, রাজ্যের বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া হয়ে গিয়েছে। ছোট ছোট কিছু জায়গা বাকি রয়েছে নানা সমস্যার কারণে। এগুলোতেও যাতে দ্রুত বেড়া নির্মাণ করা যায় তার জন্য আলোচনা চলছে।
ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিঘরে সুশাসনের অঙ্গ হিসাবে জেলা, মহকুমা এবং ব্লকস্তরে সরকারি উদ্যোগে লাভ্যার্থী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। সোমবার বিশ্রামগঞ্জ দ্বাদশশ্রেনী বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সিপাহিজলা জেলা ভিত্তিক সুশাসন মেলা এবং লাভ্যার্থী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মানিক সাহা, কারামন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল-সহ অন্য অতিথিরা। মেলায় জেলার বিভিন্ন এলাকার বেনিফিসিয়ারীদের হাতে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা সরাসরি তুলে দেওয়া হয়।
সিপাহিজলা জেলার ৬৪টি স্ব-সহায়ক দলের হাতে ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৬০হাজার টাকার সাহায্যরাশি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাছাড়া জেলায় ৩০ জন মহিলাকে অটো গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে জম্পুইজলার সেবিকা জমাতিয়া এবং বিশালগড়ের গীতা রানি ভৌমিকের হাতে গোলাপি ইলেক্ট্রিক অটো গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও কৃষি, বন দফতর, প্রাণী সম্পদ-সহ বিভিন্ন দফতরের তরফে বেনিফিসিয়ারিদের হাতে সাহায্যরাশি তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে লাভ্যার্থীদের সঙ্গে সরাসরি মত বিনময় করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার কাহিনি তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই সরকারের সময়ে মহিলাদের স্বশক্তিকরণের সাথে আত্মনির্ভর ভারতের পাশাপাশি আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার দিকে সরকার কাজ করছে।'
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরের উদ্যোগে স্টলের ব্যবস্থাও করা হয়, যা পরবর্তীতে সময় প্রদক্ষিণ করেন মুখ্যমন্ত্রী-সহ অনুষ্ঠানের অতিথিরা। তার পাশাপাশি আগত সাধারণ মানুষ এই সকল স্টলগুলি থেকে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করেন।
প্রসূন গুপ্ত: ঘোরতর বামপন্থী রাজ্য ছিল ত্রিপুরা। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের আগমনের কয়েক বছর পর সেখানেও কংগ্রেসকে সরিয়ে সিপিএমের নেতৃত্বে বামেরা ক্ষমতায় আসে। মাঝে রাজীব গান্ধীর আমলে একবার ৫ বছরের জন্য কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল ঠিকই, কিন্তু গোষ্ঠীদন্দ্ব ইত্যাদিতে জড়িয়ে সেই ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি হাত শিবির। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেও ত্রিপুরার সমস্যা অনেক, যা কিনা স্বাধীনতার পর থেকে ৭৫ বছর বাদেও সমাধান হয়নি। স্কুল কলেজে বেড়েছে, ইঞ্জিয়ারিং থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট হয়েছে কিন্তু শিক্ষান্তে চাকরির সুবিধা হয়নি। কারণ সেভাবে শিল্প বিনিয়োগ আসেনি। আসা কঠিনও বটে কারণ বড় শিল্প গড়লে তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো প্রথমত খরচসাপেক্ষ, দ্বিতীয়ত সময় নষ্ট। বিজেপির বিপ্লব দেব মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এদিকে বিপ্লব আরএসএস করা নেতা। দীর্ঘদিন সংঘের প্রচারক ছিলেন। দলের ধারা অনুযায়ী তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু দ্রুতই বোঝা গেলো দলে মন কষাকষি প্রবল। বিভিন্ন সময় দিল্লি থেকে প্রতিনিধিরা এসেছিলো কিন্তু ফিরে গিয়েছিলো উপদেশ দিয়েই। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারল, যে কোথাও দল ত্রিপুরাতে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। উপজাতিরা ক্ষিপ্ত, অতএব বিপ্লবকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী করা হল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা মানিক সাহাকে।
মানিক দীর্ঘদিন বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করা মুখ। শোনা গিয়েছিলো যে বিপ্লব দেবকে হয়তো রাজ্য সভাপতি করা হতে পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিল্লির চরমপত্র এল, যা পাঠালেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অরুন সিং। সেই পত্রে পরিষ্কার বার্তা রয়েছে আজ থেকেই ত্রিপুরা বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্য। এই বার্তা পাঠিয়েছেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাই। রাজীব দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা। এরই সঙ্গে বিপ্লবের আশাও শেষ হলো।