কয়লা পাচার-কাণ্ডে (Coal Smuggling) অর্থ তছরুপের অভিযোগে ইডির একটি নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মেনকা গম্ভীর (Menoka Gambhir)। সেই নোটিশে তাঁকে তলব করে কেন্দ্রীয় সংস্থা (ED Notice)। সেই তলবের বিরোধিতায় হাইকোর্টে (Calcutta High Court) আবেদন করা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকাকে আদালত রক্ষাকবচ দিয়েছিলে। সেই রক্ষাকবচে উল্লেখ ছিল, মেনকা গম্ভীরের বিরুদ্ধে কোনও কড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে না ইডি। এবার মেনকার সঙ্গে থাকা সেই রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করল কলকাতা হাইকোর্ট। যেহেতু ইডির জারি করা তলব নোটিশের সময়সীমা পেরিয়েছে, তাই এখন আর রক্ষাকবচের দরকার নেই।
এই যুক্তি দেখিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকার সঙ্গে থাকা রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। যতদিন নোটিশের মেয়াদ, ততদিন রক্ষাকবচ। নয়তো সেই রক্ষাকবচের অপব্যবহার হতে পারে। এমনটাই আদালতে সূত্রে খবর।
নতুন করে ইডি যদি তাঁকে কোনও নোটিস পাঠায়, তিনি আদালতে দ্বারস্থ হলে ফের রক্ষাকবচ পেতে পারেন। এমনটাই মেনকা গম্ভীরকে জানান বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। আদালতের এই নির্দেশের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকার সঙ্গে কোনও রক্ষাকবচ রইল না। তাই ইডি তাঁকে নোটিস পাঠিয়ে এই মুহূর্তে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে। সেক্ষেত্রে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের বিরোধিতা করে মেনকা গম্ভীর ডিভিশন বেঞ্চে যাবে কিনা সেটা আগামির বিষয়।
কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta high Court) ইডির বিরুদ্ধে মানেকা গম্ভীরের করা আদালত অবমাননার মামলা খারিজ। শুক্রবার আদালতের বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য এই মামলা খারিজ করে বলেন, 'ইডি (ED) যাতে মানেকা গম্ভীরের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিতে পারে, কোর্ট সেই রক্ষাকবচ দিয়েছিল। কিন্তু মানেকা গম্ভীর (Maneka Gambhir) কোথায়, কী কাজ যাবে এবং সেই প্রসঙ্গে ইডির কী ভূমিকা হবে? এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ দেয়নি। তাই বিমান বন্দরে (Kolkata Airport) মানেকা গম্ভীরকে আটকে আদালত অবমাননা করেনি কেন্দ্রীয় সংস্থা।'
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য সম্প্রতি থাইল্যান্ড যাওয়ার পথে বিমান বন্দরে অভিষেকের শ্যালিকাকে আটক করে অভিবাসন দফতর। তাঁর বিরুদ্ধে ইডির লুকআউট নোটিস আছে। এই যুক্তি দেখিয়ে তাঁকে বিমানে উঠতে বাধা দেওয়া হয়। অগত্যা থাইল্যান্ড না গিয়ে ফিরতে হয় মানেকা গম্ভীরের। সেই ঘটনার রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই একদিন রাত ১২টার পর ইডি দফতরে আইনজীবীকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মানেকা। যদিও পরে জানা গিয়েছিল, ওটা রাত নয় দুপুর ১২টা হবে। এএম, পিএম ত্রুটি এই অসুবিধার নেপথ্যে। পরে অবশ্য নতুন করে নোটিস পাঠিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে ডাকা হয় অভিষেকের শ্যালিকাকে।
তারপরেই আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে ইডির বিরুদ্ধে মামলা করেন মানেকা গম্ভীর। সেই মামলার নিষ্পত্তি এদিন হাইকোর্টে করলেন বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য।
ইডির বিরুদ্ধে অভিষেকের শ্যালিকা মানেকা গম্ভীরের (Maneka Gambhir) দায়ের করা আদালত অবমাননার (Contempt of Court) মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থার (ED) থেকেই রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের। পাশাপাশি কলকাতা বিমানবন্দরের অভিবাসন (Immigration) দফতরকেও জানাতে হবে বক্তব্য। বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সেদিন হলফনামা দিয়ে অবস্থান জানাবে ইডি এবং ইমিগ্রেশন। এদিন শুনানির বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের বেঞ্চ জানায়, মানেকা গম্ভীরকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে অবগত ছিল না আদালত।
ইডির আইনজীবী জানান, আদালতের নির্দেশ কঠোর পদক্ষেপ নয়। আমরা কোনও কঠোর পদক্ষেপ করিনি। তবে আদালতের নির্দেশে কোথাও বলা ছিলো না, তাঁকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না। এই যুক্তির প্রেক্ষিতে মানেকা গম্ভীরের আইনজীবী বলেন, 'আমার মক্কেল এই মামলায় অভিযুক্ত নয়। কোনও লুকআউট নোটিশ ছিল না। তাঁকে সমন পাঠানো হয়েছিল। মানেকা গম্ভীরের মা অসুস্থ থাকায় বিদেশে যেতে হতো। দেশ ছেড়ে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। ইমিগ্রেশন অফিসারদের কাছে, ওকে আটক করার কোনও কারণ ছিল না। ওর কাছে ফেরার টিকিটও ছিল।'
পাল্টা ইডি আইনজীবী জানান, লুকআউট নোটিস জারি করলে সেটা সেই ব্যক্তিকে জানাতে হবে এমন কোনও মানে নেই। দু'পক্ষের এই সওয়াল-জবাবের মধ্যে বিচারপতির মানেকা গম্ভীরের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রশ্ন, 'আপনার আবেদনটা ঠিক কী? আপনি কী চান? অভিষেকের শ্যালিকার আইনজীবী জানান, মানেকা গম্ভীর বিদেশে যেতে চাইলে, তাঁকে আবার বাধা দেওয়া হবে। গ্রেফতার না করা হলেও আটক করা হবে। আমারা আগামীকাল জানাতে চাই।
দু'পক্ষের এই সওয়াল-জবাব শেষে ইডি-ইমিগ্রেশনকে হলফনামা দিতে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। পাশাপাশি আগামিকাল এই মামলার পরবর্তী শুনানি রাখা হয়েছে।