ইন্ডিয়া জোটের ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর প্রস্তাবেই সিলমোহর দেওয়া হল অবশেষে। বিজেপি-বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'র শনিবারের ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে চেয়ারপার্সন করা হল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে। শনিবার জোটের ভার্চুয়াল বৈঠকে চেয়ারপার্সন হিসাবে খাড়গের নামই প্রস্তাব করা হয়েছিল বলে সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে। এদিন এই বৈঠকে যোগ দেয়নি তৃণমূল। শনিবারের বৈঠকে মূলত জোটে এক জন আহ্বায়ক এবং চেয়ারপার্সন করা নিয়ে আলোচনা ছিল।
জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে ইন্ডিয়া জোটের আহ্বায়ক হিসাবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নাম নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছিল। সূত্রের খবর, সেই প্রস্তাবে রাজি হননি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দল জানিয়েছে, তাঁদের নেতা কোনও পদ চান না। অন্যদিকে এর আগের ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে মমতা প্রস্তাব দিয়েছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গের নামই। আর এদিনের বৈঠকে তাঁর প্রস্তাবেই সায় দিয়েছে জোট। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি খাড়গেকেই চেয়ারপার্সন করল 'ইন্ডিয়া'। তবে জানা গিয়েছে, খাড়গের নামে সকলের সায় মিললেও, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। সূত্রের খবর, মমতা এবং সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবের সঙ্গে আলোচনা করেই নাম ঘোষণা করা হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শনিবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেয়নি বাংলার শাসকদল তৃণমূল। কংগ্রেসের ডাকা 'ইন্ডিয়া' শিবিরের বৈঠকে মমতার যোগ দেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই ছিল ধোঁয়াশা। একেবারে শেষ মুহূর্তে বৈঠকের আমন্ত্রণ পাওয়ার কারণেই যোগ দিতে না পারার সম্ভবনা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অবশেষে তাই দেখা যায়। এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এদিন জুম আ্যপ-এর মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন বিরোধী দলগুলির শীর্ষ নেতারা। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মল্লিকার্জুন খাড়গে, আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, এছাড়াও এম কে স্ট্যালিন, শরদ পাওয়ার, লালু প্রসাদ যাদব, নীতীশ কুমার, সীতারাম ইয়েচুরি, প্রমূখ বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন।
২০২৪ সালেই লোকসভা নির্বাচন। ফলে এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্টডাউন। আর এরই মধ্যে মঙ্গলবার নয়া দিল্লির অশোকা হোটেলে বৈঠকে বসল বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র বৈঠক। আর এদিন এক চমক দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসাবে প্রস্তাব দিলেন মল্লিকার্জুন খাড়্গের নাম। আর এতে সম্মতি জানালেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মঙ্গলের বৈঠকে মূলত ইভিএম, আসন ভাগাভাগি, যৌথ প্রচার পরিকল্পনা, ইতিবাচক এজেন্ডা তৈরি করার মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
মঙ্গলবার দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ বৈঠক সম্পন্ন হল। এদিন দুপুর ৩টের পরই শুরু হয় ইন্ডিয়ার বৈঠক। এতদিন বিরোধী জোটের মুখ হিসাবে রাহুল গান্ধীকেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু এদিন বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে সরাসরি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের নাম প্রস্তাব করেন মমতা। তাঁকে সমর্থন করলেন আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। তবে মমতার এই প্রস্তাবে বাকি দলগুলি খুব একটা উৎসাহ দেখায়নি। যদিও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি মঙ্গলবারের জোট বৈঠকে। মমতার এমন প্রস্তাবের পরই খাড়্গে জানালেন, 'পরে আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক হবে।'
জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হলেও তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে আসন সমঝোতা নিয়ে ডেডলাইন বেঁধে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ এর মধ্যেই সেরে ফেলতে হবে আসন সমঝোতার বিষয়টি। তৃণমূল নেতৃত্ব আজ এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সূত্রের খবর। আগামী ২০ দিনের মধ্যেই ফের বিরোধী জোটের পঞ্চম বৈঠক বসতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।
ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই ইডি এবং সিবিআইয়ের সক্রিয়তা বাড়বে। মুম্বইয়ে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র বৈঠকে উপস্থিত হয়ে নেতাদের সতর্ক করলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে। তাঁর আশঙ্কা, লোকসভা ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদের উপর অত্যাচার আরও বাড়াবে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে এজেন্সির সক্রিয়তা আরও বাড়বে। গ্রেফতারিও করা হতে পারে দাবি তাঁর।
শুক্রবার ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক হয় মুম্বইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে। সেখানে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, "পাটনা ও বেঙ্গালুরুর বৈঠক দেখে আশঙ্কা বেড়েছে বিজেপির। সেকারণে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করে আক্রমণ বাড়ানো হচ্ছে। তাঁর আশঙ্কা, মণিপুর, মূল্যবৃদ্ধি সহ একাধিক ইস্যুতে চাপে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে সেখান থেকে নজর ঘোরাতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে সক্রিয় করা হবে।
তবে শুধু মল্লিকার্জুন খড়গে নয়, এর আগেও এই দাবি করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এজেন্সি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তিনি।
প্রসূন গুপ্ত: রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন বিরোধী দলকে অনেকটা কাছাকাছি এনে ফেলেছে। রাহুলের লঘু পাপে গুরুদণ্ড হয়েছে এমনটাই বক্তব্য বিরোধীদের। এই ঘটনা অর্থাৎ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ চলে যাওয়াতে তাঁর পাশে দাঁড়ানো কি সমস্ত বিরোধীদের অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াই, এমন প্রশ্নই বিশেষজ্ঞদের। সোমবার রাতে কংগ্রেস সভাপতি এবং রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খার্গের বাড়িতে সমস্ত বিরোধী দলকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ইদানিং কংগ্রেসের কোনও আন্দোলনে তৃণমূল না থাকলেও সোমবার দলের দুই সাংসদ লোকসভার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার জহর সরকার এই ভোজে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে কংগ্রেসের চিরকালের বিরোধী আপ পার্টির প্রতিনিধিদেরও এই সভায় দেখা গেলো। পাশাপাশি ডিএমকে, এসপি, আরজেডি, এনসিপি ইত্যাদি দলের প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন। অনুপস্থিত ছিল বিজেডি দল এবং শিবসেনা(উদ্ধব) অংশ। উদ্ধবের উপস্থিত না থাকার কারণ নাকি সম্প্রতি রাহুলের সাভারকর মন্তব্য। রাহুল বলেছিলেন, তিনি গান্ধী, সাভারকার নয়। এই মন্তব্যে অখুশি উদ্ধব, কাজেই সভাতে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। যদিও প্রতিবাদ মিছিলে তাঁদের দলের প্রতিনিধিকে দেখা গিয়েছে বলে সংবাদ।
নামেই ভোজসভা আসলে জোটসভা বা আসন্ন ভোটসভা বললে প্রকৃত উদাহরণ হতো। আলোচ্য বিষয় অবশ্যই বিজেপির বিরুদ্ধে জোট। প্রবীণ নেতা শরদ পাওয়ার বলেন, 'আসন্ন নির্বাচনে এই উপস্থিত বিরোধীরা একসঙ্গে থাকলে বিজেপি বা এনডিএ-কে হারানো সম্ভব।' বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার তৃণমূলের সাংসদ প্রসূন।
তিনি বলেন, 'যে ফুটবল খেলেছেন তিনি, কাজেই টিমওয়ার্ক না থাকলে একার ট্যালেন্ট দেখিয়ে জেতা যায় না।' জহর সরকার প্রাক্তন আমলা কাজেই সরকারি বিষয়টি তাঁর নখদর্পনে। তিনি আইনানুগ বিষয়টি তুলে ধরেন। আপ পার্টিও একই সুরে কথা বলে। রাহুল পরিষ্কার জানান, 'তিনি না থাকলেও বা তাঁকে না রাখলেও সমস্যা নেই। কিন্তু সম্মিলিত জোটটি হোক।' অন্যদিকে বিজেপির প্রশ্ন, 'এ রকম জোট তো প্রতি বছর হয়ে থাকে কিন্তু ভেঙেও যায়।'
প্রসূন গুপ্ত: এআইসিসি বা সর্বভারতীয় কংগ্রেসের যে ভোট সোমবার হয়ে গেলো বুধবার তার গণনা হয়েছে। খবর বিপুল ভোটে জিতেছেন মালিকার্জুন খাড়গে। তাঁর জয় সুনিশ্চিত ছিল, কারণ গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভার এই কংগ্রেস সাংসদ। সোনিয়া এবং রাহুলের আশীর্বাদধন্য খাড়গের জয় নিশ্চিত ছিল শশী থারুরের বিরুদ্ধে।
তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ ইতিমধ্যে তাঁর সোশ্যাল নেটওয়ার্কের পেজে কংগ্রেসের ভালো হোক লিখে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের আবেদন জানিয়েছেন। থারুর কংগ্রেসের বিদ্রোহী বা জি-২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম মুখ। তবুও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য থারুর জিতলে কংগ্রেসেরই ভালো হতো। শশী থারুর সুশিক্ষিত, সুবক্তা এবং সুদর্শন। ফলে ৮-৮০ সবার মধ্যেই থারুরের ক্যারিশ্মা আছে। কিন্তু দল এবং দলের বাইরে সেটা হওয়ার নয়। কাজেই কয়েক ঘন্টার মধ্যে কংগ্রেসের নতুন সভাপতি মালিকার্জুন খাড়গে।
এখন লাখ টাকার প্রশ্ন, আজ কংগ্রেসের যা অবস্থা সেখান থেকে খাড়গে কি দলে সুদিন আনতে পারবেন? অভিজ্ঞতা বলছে তা হবে কঠিন কাজ। এই মুহূর্তে সারা ভারতে রাজস্থান এবং ছত্রিশগড় ছাড়া হাতে অন্য কোনও রাজ্য কংগ্রেসের নেই। ঝাড়খণ্ড এবং বিহারে মিলিজুলি অবিজেপি সরকার। পড়শি এই দুই রাজ্যে কংগ্রেস শাসক জোটের শরিক মাত্র। এর মধ্যে রাজস্থানে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব গেহলট এবং পাইলটের। গেহলটকে সোনিয়া কংগ্রেসের সভাপতি পদে প্রার্থী হতে বলেছিলেন। কিন্তু উনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ শচিন পাইলটকে ছাড়তে নারাজ।
রাজস্থানে এই গোষ্ঠীকোন্দল খাড়গেকেই মেটাতে হবে। অন্যদিকে কর্নাটক, মহারাষ্ট্রতে বিজেপি বিরোধী জোটকে কাজে লাগিয়ে আগামি ভোটে ফল প্রত্যাশিত করার চাপ থাকবে খাড়গের। সামনে লোকসভা ভোট ২০২৪-এ। বর্তমান বিজেপি সরকারকে বেগ দিতে খাড়গে কি পারবেন নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প মুখ হয়ে উঠতে?
প্রসূন গুপ্ত: বলা হয় কংগ্রেস দল কিন্তু এই কংগ্রেস বারবার বদলেছে। মহাত্মা গান্ধী বা নেহেরুর আমলে ভোট হয়েছে বহুবার স্বাধীনতার আগে, স্বাধীন ভারতেও হয়েছে। স্বাধীনতার পরে জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভোট চিহ্ন ছিল জোড়া বলদ। নেহেরু এবং লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পরে দলের আদি সদস্য বা সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইন্দিরা গান্ধী 'নব কংগ্রেস' তৈরি করেন এবং সভাপতি হন অসমের দেবকান্ত বড়ুয়া। তখন ভোট প্রতীক গাই-বাছুর। এরপর ১৯৭৭-এ কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতা হারায়, অনেকেই সেসময়ে ইন্দিরার পাশ থেকে সরে যান। ইন্দিরা ১৯৮০-র নির্বাচনের আগে ফের কংগ্রেস ভেঙে তৈরি করেন কংগ্রেস (আই) বা ইন্দিরা কংগ্রেস।
অদ্যবধি এটাই জাতীয় কংগ্রেস, যাদের ভোট প্রতীক হাত। এই হাত চিহ্নের প্রথম দলীয় সভাপতি নির্বাচন সোমবার হচ্ছে এবং তৃতীয়বার ইন্দিরা কংগ্রেসে নির্বাচিত হতে চলেছেন গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ। গান্ধী পরিবারের বাইরে প্রথম কংগ্রেসের সভাপতি হন নরসিমা রাও, একইসাথে প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। ১৯৯৬-এ কংগ্রেস ফের কেন্দ্রে ক্ষমতা হারাবার পর অপসারিত হন রাও এবং রাজনীতির অন্তরালে থাকা সোনিয়ার ঘনিষ্ঠ বিহারের সীতারাম কেশরিকে সভাপতি করা হয়। ১৯৯৬-২০০৪ টানা প্রায় ৮ বছর কেন্দ্রে কংগ্রেস ছিল ক্ষমতার অলিন্দের বাইরে। ১৯৯৭ এ কলকাতায় এআইসিসির বৈঠকে মোটামুটি ধার্য হয় সোনিয়া গান্ধীই সভাপতির দায়িত্বে আসছেন।
বাজপেয়ীর জমানার পর ১০ বছর কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ সরকার কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকে। এরপর কখনও সোনিয়া, কখনও পুত্র রাহুল সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। বিকল্প ছিল না থাকলেও গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠরা মানেনি। হঠাৎ রাহুল সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। এবং অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী হয়ে ফেরেন সোনিয়া। ইতিমধ্যে বারবার দল ভেঙেছে তারই সঙ্গে দলের অন্দরে তৈরি হয়েছে হয়েছে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। যার সাম্প্রতিক নাম বিক্ষুব্ধ-২৩ বা জি-২৩। এবার রাহুল জানান যে আর গান্ধী পরিবারের কেউ সভাপতি হবে না। বাইরের কেউ হবেন এবং ভোটের মাধ্যমে ঠিক হবে। এই প্রথম গণতান্ত্রিক উপায়ে শতাব্দীপ্রাচীন দলে কোনও ভোট হচ্ছে।
প্রার্থী গান্ধী পরিবারের পরম ঘনিষ্ঠ মালিকার্জুন খাড়গে এবং বিরুদ্ধে লোকসভার সুশিক্ষিত সুদর্শন শশী থারুর। মোট ভোটার ৯৮০০, যাঁরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভোট দেবেন ,যা থাকবে গোপন ব্যালটে। আগামী ১৯ অক্টোবর ফল ঘোষণা কিন্তু যে দিকে এগোচ্ছে তাতে খাড়গের জয় সুনিশ্চিত। কারণ মাথায় যে সেই গান্ধী পরিবারের হাত, এমনটাই দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
প্রসূন গুপ্ত: এআইসিসি বা সর্বভারতীয় কংগ্রেস দল আজও কি আদি ও অকৃত্রিম? সম্ভবত এর উত্তর অন্তত রাহুল গান্ধীর কাছে নেই। যে দলের সভাপতি থেকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন রাহুলের প্রপিতামহ জওহরলাল নেহেরু এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীও দায়িত্বে এসেছিলেন। তাঁরাও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী না হলেও দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সফল হয়েছিলেন ইন্দিরার পুত্রবধূ সোনিয়াও। কিন্তু সুরতাল কেটে গেলো রাহুলের জমানায়। ক্রমশই ভঙ্গুর হতে চলা শতাব্দীপ্রাচীন দলের দায়িত্ব নেবে কে। রাহুল জানিয়েছেন, এবার গান্ধী পরিবারের কেউ প্রধান পদে যাচ্ছেন না।
তবে দায়িত্ব যেই পাক না কেন গুঞ্জনে তিনি অবশ্যই গান্ধী পরিবারের অনুগত। বিজেপির আবার বলছে রিমোট কন্ট্রোল প্রেসিডেন্ট। এবার বহুযুগ বাদে কংগ্রেসের বা এআইসিসির ভোট হতে চলেছে ব্যালটের মাধ্যমে বলে সংবাদ। যদিও কংগ্রেসের তাবড় নেতাদের অনেকেই দল ছেড়ে দিয়েছেন, যথা কপিল সিবাল, গুলাম নবী আজাদ, আনন্দ শর্মা ইত্যাদি। আগেই ছেড়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ফলে উপযুক্ত অর্থাৎ সর্বভারতীয় মুখ যাঁরা ছিলেন তাঁদের কাউকেই হয়তো সভাপতির আসনে আসীন হতে দেখা যাবে না।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে আসছে, যাঁরা ভোটযুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত। এসেছে রাজীব ঘনিষ্ঠ কমলনাথের নাম, এসেছে শশী থারুরের নাম। তিনি আবার মনোনয়নও জমা করেছেন। আছেন মধ্য প্রদেশের পারক্তন মুখমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং। ভোট যদি ঠিকঠাক হয়, তবে সমস্যা নেই। কিন্তু একটা থেকেই যাচ্ছে।
শশী থারুর শিক্ষিত মার্জিত এবং সুবক্তা। সাদা চোখে দেখলে তাঁর থেকে উপযুক্ত আর কেউ হতে পারে না। বিপদ সেখানেই, বেশি জনপ্রিয় মুখ কি গান্ধীদের পছন্দ হবে, লক্ষ টাকার প্রশ্ন। শোনা যাচ্ছে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা মালিকার্জুন খাড়গেকে সভাপতি করার জন্য মুখিয়ে রাহুল। খাড়গের বয়স হয়েছে ৮০। এই বয়সে কি আদপেই তিনি এই সুবিশাল দলের মাথা হতে পারবেন? ২০২৪ এর নির্বাচনে নূন্যতম ভালো ফল করতে গেলে যে এমন একটা মুখ দরকার যাকে গ্রাম ভারত চেনে, গো-বলয় বা হিন্দি বলয়ে যার গ্রহণযোগ্যতা আছে। তেমনটি আছে কি কেউ?