মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। মাধ্যমিকের প্রথম দিন সকাল থেকেই হইহই রইরই কাণ্ড। হঠাৎ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হুবহু মাধ্যমিকের মতই এক প্রশ্নপত্রের বেশ কয়েকটি পাতা। এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে তুমুল হৈচৈ পড়ে যায়। এই খবর সবার প্রথম সম্প্রচার করে সিএন। অতঃপর সিএনের খবরের জেরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরীক্ষা শেষের সার্বিক ঘটনাক্রমের সাংবাদিক বৈঠকে, ভাইরাল হওয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়েও বিবৃতি দেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ওই দুই পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন এবং অ্যাডমিট কার্ড। প্রসঙ্গত, এর আগেই পর্ষদ নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিল, প্রশ্নপত্রের প্রতিটি পাতায় ওই প্রশ্নপত্রের ক্রমিক নম্বরের কোড লুকানো থাকবে। কেউ কোনও পাতার ছবি তুলতে চাইলে, পাতায় লুকিয়ে থাকা ক্রমিক নম্বরের মাধ্যমে তা সহজেই জানতে পারা যাবে। এমন কাজে ধরা পড়লে সে বছরের মত তার পরীক্ষা সম্পূর্ণ বাতিল হয়ে যাবে। শুধু তাই না, পরীক্ষাকেন্দ্রের পরীক্ষকও পরীক্ষা শুরুর আগে তা অবগত করেছিলেন পরীক্ষার্থীদের। তবুও এমন ঘটনা থেকে বিরত রইল না ২০২৪ এর মাধ্যমিকের প্রথম দিনের পরীক্ষাও। পর্ষদের নির্দেশিকাকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই এমন ঘটনা ঘটল।
তবে প্রশ্ন উঠছে, যেখানে রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে এত নিরাপত্তার বহর শোনা যাচ্ছে, সেখানে পরীক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারছে কীভাবে? এছাড়াও পর্ষদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকেও মোবাইল ও স্মার্ট ওয়াচ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৩ পরীক্ষার্থীর। তারই মাঝে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রশ্নপত্র ভাইরালের মত ঘটনা ঘটল পরীক্ষার প্রথম দিনেই। তবে, নিরাপত্তার গাফিলতি কোথাও স্পষ্ট মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে। এই গাফিলতির দায় নেবে কে? উঠছে প্রশ্ন।
আর তিন দিন পরই ২রা ফেব্রুয়ারি শুরু হতে চলেছে ২০২৪-এর মাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু এখনও পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড পায়নি বহু পড়ুয়া। আর তাই মোটা টাকার ব্যাগ হাতে করে প্রধান শিক্ষকদের মঙ্গলবার হাইকোর্টে আসতে নির্দেশ দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বিচারপতি। সোমবার বাগুইআটি জ্যাংড়া আদর্শ বিদ্যালয় এবং অশোকনগরের সূর্য মৌলানা আজাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী অ্যাডমিট কার্ড হাতে না পাওয়ায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। এছাড়াও মুর্শিদাবাদের একটি হাইস্কুলের ৮ জন ছাত্রও অ্যাডমিট কার্ড না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে হাইকোর্টে হাজির হয়।
বিষয়টি শুনেই প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু জানান, 'আগামীকাল মোটা টাকার ব্যাগ হাতে করে হাইকোর্টে আসতে হবে প্রধান শিক্ষকদের। না হলে পুলিস দিয়ে তাঁদের আদালতে আনাব। সেটা নিশ্চয়ই ভালো দেখাবে না।' এছাড়াও বিচারপতি বসু বলেন, 'বিপ্লব করার বেলায় এই প্রধান শিক্ষকদের জুড়ি মেলা ভার। অথচ ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়ে তাঁরা উদাসীন।'
যেসব মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা অ্যাডমিট কার্ড হাতে না পাওয়ায়, হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে, সেই সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের মঙ্গলবার আদালতে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি মোটেই ভালো ভাবে নিচ্ছে না হাইকোর্ট। পড়ুয়াদের সমস্ত অভিযোগ শুনে এদিন পর্ষদের কাছে ওই ছাত্রছাত্রীদের অ্যাডমিট কার্ড না পাওয়ার কারণ জানতে চান বিচারপতি বসু। পর্ষদের আইনজীবী জানান, স্কুলের তরফে সঠিক নথি না দেওয়ায় পর্ষদ অ্যাডমিট কার্ড ইস্যু করেনি। এতেই চটে যান বিচারপতি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় ওই ৩ স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের এজলাসে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই মামলাগুলোর শুনানি রয়েছে বলে হাইকোর্ট সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, এর আগেও একইভাবে নির্ধারিত সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু না করায় মালদহের একটি স্কুলকে মোটা টাকা জরিমানা করেছিলেন বিচারপতি বসু। প্রধান শিক্ষকের পকেট থেকেই জরিমানার অর্থ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এমনটাই হাইকোর্ট সূত্রে খবর।