Breaking News
Abhishek Banerjee: বিজেপি নেত্রীকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের অভিযোগ, প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জাতীয় মহিলা কমিশনের      Convocation: যাদবপুরের পর এবার রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সমাবর্তনে স্থগিতাদেশ রাজভবনের      Sandeshkhali: স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন 'সন্দেশখালির বাঘ'...      High Court: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল, সুদ সহ বেতন ফেরতের নির্দেশ হাইকোর্টের      Sandeshkhali: সন্দেশখালিতে জমি দখল তদন্তে সক্রিয় সিবিআই, বয়ান রেকর্ড অভিযোগকারীদের      CBI: শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ! তদন্তে সিবিআই      Vote: জীবিত অথচ ভোটার তালিকায় মৃত! ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ধূপগুড়ির ১২ জন ভোটার      ED: মিলে গেল কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর, শ্রীঘই হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ ইডির      Ram Navami: রামনবমীর আনন্দে মেতেছে অযোধ্যা, রামলালার কপালে প্রথম সূর্যতিলক      Train: দমদমে ২১ দিনের ট্রাফিক ব্লক, বাতিল একগুচ্ছ ট্রেন, প্রভাবিত কোন কোন রুট?     

MaaSarada

Maa Sarada: মা সারদার ছোট্টবেলা

সৌমেন সুর: মা সারদা ছিলেন ধৈর্য, সরলতা ও দয়াভাবের প্রতিমূর্তি। তার জন্ম কাহিনী নিয়ে একটা মত প্রচলিত আছে। সারদা মা স্বয়ং এই প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন। ' আমার মা শিহরে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলেন। মা ছিলেন অত্যন্ত ভক্তিমতী, নিষ্ঠাবান ও কর্তব্যপরায়ণ। ঠাকুর দেখে ফিরবার সময় হঠাৎ শৌচে যাওয়ার ইচ্ছে হওয়ায় একটা গাছের কাছে যখন যান, তখন শৌচ আর হলো না, মা দেখলেন একটা আলো তাঁর পেটের মধ্যে প্রবেশ করলো, আর দেখলেন, একটা ৫-৬ বছরের একটি মেয়ে গাছ থেকে নেমে আসে, পরনে লাল চেলি। মেয়েটি হাসিমুখে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, 'আমি তোমার ঘরে আসছি মা।' এলে মেয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় আর মা অচৈতন্য হয়ে যায়।

১২৬০ বঙ্গাব্দের ৮ই পৌষ বৃহস্পতিবার রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ঘরে মঙ্গলশঙ্খ বেজে উঠলো। গ্রামবাসীর কাছে খবর পৌঁছালো, রামচন্দ্রের ঘরে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। সকলে শিশুকন্যার মঙ্গল কামনা করতে লাগলেন। এদিকে জন্মপত্রিকা অনুসারে নাম দেওয়া হল ঠাকুরমনি দেবী। লোকবিশ্রুত নাম সারদামনি। পরবর্তীতে নাম হয়ে যায় সারদা। ১২৭১ সালে এ দেশে ভীষণ দুর্ভিক্ষ হয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষেরা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে দলে দলে আসতো দুটো ভাতের আশায়। রামচন্দ্র ছিলেন দরিদ্র ব্রাহ্মণ।

মানুষেরা যাতে ফিরে না যায় তার জন্য মরাই থেকে ধান বার করে চাল করে সবাইকে খাইয়েছেন। মা সারদা ওই ছোট্ট বয়সে পরিবেশন করেছেন। কাউকে দুহাত দিয়ে বাতাস করেছেন। বাড়িতে দলে দলে মানুষ। কাউকে ভুখা পেটে ফিরে যেতে হয়নি। এমনই মানুষ ছিলেন মা সারদা। সেই বাল্য বয়সেই বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য কত দয়া! ছোটবেলায় যিনি দিন দুঃখী মানুষদের অন্ন জুগিয়েছেন, তিনি যে জগতের মা হয়ে উঠবেন সেটাই তো স্বাভাবিক।

সেই যুগে সমাজে বাল্যবিবাহ প্রথা ছিল। সারদা দেবীর মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ২২ বছর বয়সের শ্রীরামকৃষ্ণের সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের আয়োজন ঈশ্বর আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছিলেন। সারদা মায়ের মামার বাড়ির কাছে একটা শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান হয়। মেলা,  যাত্রা আরও কত কি। যাত্রাপালা শেষ হলে এক মহিলা সারদাকে জিজ্ঞাসা করেন, 'এই যে এত লোক এখানে রয়েছে এর মধ্যে কাকে তোর বর করতে পছন্দ?' সারদা দেবী আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল যুবক রামকৃষ্ণকে। এখন মা সারা পৃথিবীতে বিরল। আমরা পরম শ্রদ্ধা ভরে মায়ের চরণে শতকোটি প্রণাম জানিয়ে বলি, 'মা, তুমি জগতের মা, তুমি সতেরও মা, অসতেরও মা। তুমি আমাদের রক্ষা করো।'

7 months ago
Special: গুপ্ত বৃন্দাবনে ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মা সারদা

সৌমেন সুর: আজ বিষয়টা একটু অন্যদিকে ঘোরাবো। প্রতিদিন খুনখারাবি, মারামারি, মিছিল, হাম  বড়াভাব, বৌদ্ধত্য এসব দেখতে দেখতে মনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। মন একটু বিশ্রাম চাইছে। কিন্তু চাইলে তো সব ঠিকঠাক হয় না। তাই ঠিক করলাম আজ একটু আধ্যাত্মিক পথের কথা বলে মনটাকে অন্য পথে চালিত করবো। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মা সারদাকে কে না চেনে, কে না জানে। ঠাকুর অত্যন্ত সহজ সরল ভাবে অধ্যাত্ম ও উপনিষদের কথা ব্যাখ্যা করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। এত সহজ কথা অথচ কী গভীর তার অর্থ। আমরা বৃন্দাবনকে চিনি জানি। কিন্তু বৃন্দাবন যে বাংলায় অবস্থিত আছে এটা আমরা অনেকেই জানিনা। ঠাকুর আমাদেরকে নিয়ে গেলেন বিষ্ণুপুর। এখানেই তিনি অনুভব করেন বৃন্দাবনের পরশ। উচ্চারণ করে বলেন এই হল গুপ্ত বৃন্দাবন।

আজ আমি মা সারদাকে নিয়ে বিষয়কেন্দ্রিক গল্প বলতে বলতে এগিয়ে যাব। ষোড়শ শতাব্দীতে রাজা বীরহাম্বিরের হাত ধরে বিষ্ণুপুরের মানুষ ভেসেছিল বৈষ্ণব ধর্মের জোয়ারে। বিষ্ণুপুরকে সাজানো হয় বৃন্দাবনের মতো করে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাই বিষ্ণুপুর বলতে গুপ্ত বৃন্দাবনের কথা বলতেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও সারদা দেবী কামারপুকুর ও জয়রামবাটী এই দুই স্থানে আবির্ভাব হয়েছিলেন। এই দুই স্থান থেকে বিষ্ণুপুর খুব দূরে নয়। ঠাকুর বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন একটা মামলার সাক্ষ্য দিতে। তখন রাজার তৈরি মায়ের মন্দিরে মৃন্ময়ী মাকে তিনি দর্শন করেন আর সারদা মাকে জানান, 'তুমি বিষ্ণুপুরে গুপ্ত বৃন্দাবন দেখো।' উত্তরে মা সারদা বলেন, 'আমি মেয়েমানুষ, কি করে দেখবো।' ঠাকুর বলেন, 'দেখবে দেখবে, ঠিক দেখবে।' একদিন ঠাকুরের কথা ফলে যায়। বিষ্ণুপুর হয়ে বেঙ্গল নাগপুর ট্রেন চালু হয়। আগে বিষ্ণুপুর দুর্গম ছিল এখন সুগম হয়। মা তখন জয়রামবাটী থেকে বিষ্ণুপুর আসতেন ট্রেনে করে। ঠাকুরের ভবিষ্যৎবাণীকে কেন্দ্র করে মা একদিন সর্বমঙ্গলা মন্দিরের প্রাঙ্গণে বসে বলেন, 'ঠাকুরের কথা আজ সত্যি হল। ' মা প্রথম বিষ্ণুপুর যান ১৩১২ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে, কলকাতা থেকে জয়রামবাটী যাওয়ার পথে। আরেকবার মা বিষ্ণুপুর স্টেশন এ অপেক্ষা করছিলেন, তখন একজন অব বাঙালি কুলি মাকে দেবী ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। কি করবেন মনস্থির করতে পারেন না- এত আনন্দ উদ্ভব হয়েছিল তার মনে। সম্ভবত স্বপ্নে হয়তো মাকে দেখেছিলেন। ১৯২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মা বিষ্ণুপুর থেকে কলকাতা বাগবাজার অঞ্চলে উদ্বোধনের পথে শেষবার গমন করেন।

ভাবের কথা বললাম বলে সবটাই ভাব নয়। তবে ভাবেই ভক্তি। আর ভক্তিতেই মুক্তি। সংসার আবদ্ধ জীব আমরা। সংসারের মধ্যে থেকে যদি দিনান্তে একবার তাঁকে স্মরণ করা যায়, তাহলে আমাদের উতক্ত রিপু গুলো ঠান্ডা হয়ে যাবে, মন শান্ত হবে। তখন মনে হবে অনেক ভুলভাল কর্ম করেছি, আর নয়। এবার ঈশ্বরকে স্মরণ করে পথ চলব।

আজ বিষ্ণুপুর তাই শুধু গুপ্ত বৃন্দাবন, মন্দিরের দেশ, সংগীতের পিঠস্থানই নয়, গর্বিত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদার পদধূলিতে ধন্য হলো ভুবন।

10 months ago