১০ তারিখ জনগর্জন সভায় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে ব্যারাকপুর। অপমানিত হয়েছেন অর্জুন সিং, বলছে ব্যারাকপুরবাসী। মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন, বলছেন অর্জুন সিং নিজেই। এমনকি সোমবার সকাল থেকেই ভাটপাড়ার মজদুর ভবন থেকে খুলে ফেলা হয় দলীয় পতাকা।
এমনকি এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলা হলে তাঁরাও কার্যত জানান, তৃণমূলের এই সিদ্ধান্তে ব্যারাকপুর লোকসভাটাই হাতছাড়া হল। তাঁরা জানাচ্ছেন, অপমানিত হয়েছেন অর্জুন সিং।
অপরদিকে অর্জুন সিং কী বলছেন? সেদিকে নজর ছিলই রাজ্যবাসীর। তবে সাংবাদিক বৈঠকে সোমবার অর্জুন সিং জানালেন, আমাকে টিকিট দেওয়া হবে বলেই ডাকা হয়েছিল। তবে তালিকা ঘোষণার দিন সেখানে হাজির হয়ে জানতে পারেন, তাঁকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। মানসিক ভাবে আঘাত পেয়েছিলাম। তবে তা অনেকটা কেটেছে আজ।
ভোটমুখী বঙ্গে সন্দেশখালি ইস্যুতে উত্তেজনার পারদ ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। তৃণমূলের ব্রিগেডের পাল্টা সভার ডাক দেয় সিপিএম। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং প্রাক্তন স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের নেতৃত্বে সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকে সভার আয়োজন করে বামেরা। বামেদের সভার দিন সন্দেশখালিতে নতুন করে জারি ১৪৪ ধারা। সোমবার সকাল থেকে ধামাখালি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয় বসিরহাট জেলা পুলিসের পক্ষ থেকে। এতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
ধামাখালি ঘাট ছাড়াও সরবেড়িয়া মোড় ও রাজবাড়ি বাজার এলাকাকেও ১৪৪ ধারার আওতায় আনা হয়েছে ন্যাজাট থানার পক্ষ থেকে। আগামী ১৩ তারিখ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলে খবর সূত্রের। তবে এই মুহূর্তে অনেকটাই শান্ত সন্দেশখালি। কি কারণে নতুন করে জারি করা হল ১৪৪ ধারা? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাতেই কার্যত বিপাকে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। দ্রুত ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার দাবি সাধারণ মানুষের।
বাংলার উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। আর বাংলাকে আত্মনির্ভর করতেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। শনিবার কৃষ্ণনগর থেকে এমনটাই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার সাত হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের পরে এদিনও ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের কথা জানান। বাংলার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী সর্বদা রয়েছেন। এমনটাই কৃষ্ণনগরের সভা থেকে আশ্বাস দিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ফারাক্কা থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত হাইওয়ে তৈরি করা হয়েছে। মোদী জমানায় পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের দরজা খুলে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। রাজ্যের একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। এর মধ্যে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্বোধন করেন। ফরাকা থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত চার লেনের জাতীয় সড়কের উদ্বোধনও করেন। আজিমগঞ্জ-মুর্শিদাবাদ রেল প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন তিনি। তিনি বলেছেন, রঘুনাথপুরে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে এগারো হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার ও শনিবার মিলিয়ে রাজ্যের জন্য বাইশ হাজার কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। শুক্রবার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের পরে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, বাংলায় রেলের উন্নয়ন এমন হওয়া দরকার যেমনটা অন্য রাজ্যে রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, বিকশিত ভারত গড়ার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেখানে গরিব, মহিলা ও যুবদের সব থেকে বড় ভূমিকা থাকবে।
কৃষ্ণনগরের সভায় জনগণের ঢল দেখা যায় এদিন। তিনি বলেন, বাংলার বিকাশ হলেই দেশের বিকাশ। এই রাজ্য থেকে বিজেপিকে ৪২ টি আসনের সবকটিই দখল করতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসও ৪২ টির মধ্যে ৪২টি দখলের স্লোগান রেখেছিল। তারপর তারা গিয়ে থামে ২২ টিতে।
চিটফাণ্ড থেকে নিয়োগ দুর্নীতি। একাধিক ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে তীব্র আক্রমণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। যে কোনও সময় ভোটের দিন ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
একেবারে ভোটের মুখে বাংলায় দাঁড়িয়ে ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। একাধিক ইস্যুকে সামনে রেখে একযোগে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ শানালেন তিনি।
আরামবাগের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার পরিস্থিতি কেমন তা গোটা দেশ দেখতে পাচ্ছে। তৃণমূল শুধুই মুখে মা-মাটি এবং মানুষের কথা বলে। আদৌতে কী হচ্ছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, গরু থেকে নিয়োগ, সব ক্ষেত্রেই তৃণমূল দুর্নীতি করছে বলে এদিন তীব্র আক্রমণ শানান নরেন্দ্র মোদী। বলেন, শিক্ষক নিয়োগ থেকে পুরসভায় নিয়োগ। সবক্ষেত্রেই তৃণমূল দুর্নীতি করছে। এমনকি গরীবদের রেশন থেকে শুরু করে সীমান্ত থেকে পশুপাচার করা হচ্ছে বলেও আক্রমণ প্রধানমন্ত্রী। আর সেই কারণেই তৃণমূলের মন্ত্রীদের বাড়িতে বিশাল নোটের পাহাড় দেখা গিয়েছে। যা সিনেমাতেও দেখা যায় না। অপরাধ এবং দুর্নীতির নতুন মডেল বাংলায় তৈরি হয়েছে বলেও এদিন দাবি করেন নরেন্দ্র মোদী।
তবে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে মোদী! আর সেজন্যে ওরা দুশমন নম্বর ওয়ান আমাকে মনে করে। তবে চুরি করতে দিতে পারি না আমি। যারা গরীবদের টাকা লুঠ করেছে তাঁদের সবাইকে টাকা ফেরত দিতে হবে বলেও এদিন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর এটা মোদীর গ্যারেন্টি বলে মন্তব্য তাঁর।
পাশাপাশি রাজ্যের কারণে কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প কীভাবে আটকে রয়েছে বাংলায় সেই কথাও এদিন বাংলার মানুষের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে কিন্তু কাজ করতে পারছে না তৃণমূল সরকার। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ঝরিয়া আর রানিগঞ্জে কয়লা প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন।
গোটা দেশে দ্রুত গতিতে কাজ হলেও এখানে তা কচ্ছপের গতিতে এগোচ্ছে বলে দাবি প্রধানমন্ত্রী। আর এই সমস্ত প্রকল্পে গতি আনতে বাংলার সব কেন্দ্রে পদ্মফুল ফোটানোর আবেদন করেন তিনি।
প্রসূন গুপ্তঃ লোকসভা ভোটের আগে বিভিন্ন রাজ্যে এবং কেন্দ্রেও দলের পদাধিকারদের পরিবর্তনের পথে বিজেপি। একটা সময়ে প্রার্থী তালিকা থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর পদে যাঁরা আসবেন তার অনেকটাই নির্ভর করতো সংঘের উপরে। কিন্তু দিন পাল্টিয়ে গিয়েছে কাজেই এখন দলের কে কি করবে সেটাও ঠিক হয় মোদী-অমিত শাহের জুটির উপর বলেই গুঞ্জন। শেষ বিধানসভা নির্বাচনগুলোতে বিজেপির হাল মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয়। হিমাচল এবং কর্ণাটক বিধানসভায় যেভাবে বিজেপির পরাজয় হয়েছে তাতে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল যে, সর্বত্র মোদী ম্যাজিক বা মোদীর প্রচার দিয়ে কাজ হওয়া কঠিন। ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদী তাঁর সাড়ে নয় বছর ক্ষমতায়, কাজেই রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা বিরোধী হাওয়া তৈরি হবেই। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ওই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিই প্রয়োজন বলেই মনে করে কেন্দ্রীয় বিজেপি। সামনেই বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও দীপাবলির পরেই ৫ রাজ্যে নির্বাচন। এই নির্বাচন অনেকটাই লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল বলেই মনে করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞারা।
বর্তমান অবস্থান এবং দলের অবস্থা বুঝেই ফের প্রার্থী নির্বাচনের দায়িত্ব বিজেপির কোর কমিটি নিজেদের হাতেই নিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে যতটা না চিন্তা দলের তার থেকে অনেক বেশি ভাবনা বাকি চার রাজ্য নিয়ে। এর মধ্যে তেলেঙ্গানায় বিজেপির সংগঠন অতি দুর্বল। সেখানে মূল লড়াই টিআরএস, তেলেগু দেশম ও কংগ্রেসের মধ্যে। কাজেই বিজেপি জানে কোনও ভাবেই তারা সেখানে সরকার গড়তে পারবে না। ছত্রিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের বাঘেল দেশের অন্যতম কর্মবীর সুতরাং লড়াই কঠিন। মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান নিয়ে ভাবনা বিজেপির। এর মধ্যে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, বিজেপির শিবরাজ সিং চৌহান এবারে যাওয়ার পথে। বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটি আপাতত চৌহানকে টিকিট দেবে কিনা ভাবছে। একই সাথে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এবং সাংসদদের অনেককেই বিধানসভায় দাঁড় করেছে দল। অন্যদিকে রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাসুন্ধারারাজে সিন্ধিয়া, মোদীর কোনও দিনও প্রিয়পাত্রী নন। সিন্ধিয়াকে এক প্রকার বাদ দেওয়ার পথে বিজেপি। যদিও বসুন্ধরা হুমকি দিয়েছেন তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ না করলে তিনি আলাদা কিছু ভাববেন। এই বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে নতুন মুখের খোঁজে কেন্দ্রীয় বিজেপি।
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন (Loksava Election)। এ অবস্থায় সংগঠনকে মজবুত করতে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না বিজেপি (BJP)। দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা ভোট। এবস্থায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বিজেপির। তার মধ্যেই এবার একাধিক রাজ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি (President) বদল করা হল।
সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে চার রাজ্যে বিজেপির সভাপতি বদল করা হয়েছে। তেলেঙ্গানায় বিজেপির রাজ্য সভাপতির চেয়ারে বসছেন জি কিষান রেড্ডি। অন্ধ্র প্রদেশে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন ডি পুরন্দেশ্বরী, ঝাড়খণ্ডে রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব সামলাবেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারান্ডি, ও পঞ্জাবে দলের রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন সুনীল জাখর।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে. এবার একেবারে হিসাব কষে পা ফেলছে গেরুয়া শিবির। কারণ রাজ্য সভাপতি উপর সংগঠনের কাজকর্ম অনেকটাই নির্ভর করে। এক্ষেত্রে একাধিক রাজ্য রাজ্য সভাপতির পদে বদল এনে সংগঠনকে আরও বেশি করে গোছানোর উদ্যোগ নিল গেরুয়া শিবির।