প্রসূন গুপ্ত: স্বাধীনতা উত্তর যুগে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সৌজন্যতা ভীষন ভাবেই ছিল। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু মনে করতেন স্বাধীনতা সংগ্রামে সবারই দান আছে। অন্যদিকে এ রাজ্যে দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধানচন্দ্র রায়ও ঐ একই ভাবনায় বিশ্বাস করতেন। এ কারণে দুটি জায়গা থেকে দুই ভবিষ্যতের নেতার পরিচিতি হয়েছিল। একজন অটল বিহারী বাজপেয়ী অন্যজন জ্যোতি বসু।
আইনসভায় বা ভোটের সময় যতই এক দল অন্য দলকে আক্রমন করুক না কেন ব্যক্তিগত কুৎসা কখনও হতো না। এটির জন্ম ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকে। বাংলাদেশ যুদ্ধের পরে ইন্দিরা কিংবদন্তী হয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু জরুরি অবস্থার পরে তিনিই হয়ে গেলেন বিরোধীদের ঘৃণার পাত্রী। কারণও ছিল, ঐ সময় নতুন আইন চালু করে ইন্দিরা, বিরোধীদের জেলে পরেছিলেন। কাজেই বিষয়টি শত্রুতায় পরিনত হলো। ১৯৭৭ এর লোকসভা ভোট থেকে রাজনৈতিক দলগুলি ইন্দিরাকে প্রচারে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে দলীয় আক্রমনে তুলোধনা করেছিল। ৭৭ এ হেরে ফের ক্ষমতায় ফের ইন্দিরা কংগ্রেস এবং ঐ সময় থেকে কংগ্রেসও বিরোধীদের ভয়ঙ্কর প্রচারে নাস্তানাবুদ করেছিল। এটা পরিবর্তিত হয় রাজীবের আমলে। পরে নরসিমা রাও, অটলবিহারী বা ড. মনমোহন সিং কিন্তু যথেষ্ট সৌজন্য দেখান বিরোধীদের।
কিন্তু এ বাংলায় বামেরা ৭৭এ ক্ষমতায় আসার পরে কেন্দ্র তথা রাজ্যের বিরোধীদের যে ভাষা ব্যবহার করতো তা বোধকরি বটতলা নিষিদ্ধ বইয়ের ভাষাকে লজ্জা দেবে। আজকে শূন্য হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের ভাষা আক্রমন বিন্দুমাত্র কমে নি। সংস্কৃতি হাত বদল হয়। ২০১১ এ ক্ষমতায় এসে ভাষা আক্রমনে তৃণমূল যেন ৩৪ বছরের ক্রোধ উসুল করে নিয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী আসনে বিজেপি। মোদী জমানা থেকে কেন্দ্র বা রাজ্যে বিজেপি বিরোধীদের একপ্রকার পাত্তাই দেয় না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিভিন্ন ভোট প্রচারে ভয়ঙ্কর আক্রমণাত্মক। এদের স্ট্র্যাটেজিই তাই। এ রাজ্যে কুবচন যেন এক সংস্কৃতি। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোট প্রচারে নরেন্দ্র মোদী কিন্তু যথেষ্ট সংযত। ব্যক্তি আক্রমণে যাচ্ছেন না মোটেই। বিশেষজ্ঞদের মতে তিনি ফের ক্ষমতায় ফিরছেন কাজেই হালকা ভাষনে ব্যস্ত থাকছেন।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের নানান কেন্দ্রে সৌজন্যের প্রচার দেখা যাচ্ছে। হুগলি কেন্দ্রে দুই বন্ধু লকেট ও রচনা কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলেন নি। ব্যারাকপুর কেন্দ্রে পার্থ ভৌমিক বা অর্জুন সিং প্রচারে পরস্পরকে "বন্ধু" বলছন। যাদবপুর কেন্দ্রে অনির্বাণ বা সায়নী পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখছেন। কিন্তু ব্যাতিক্রমও আছে। তমলুক কেন্দ্রে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী ও তৃণমূলের দেবাংশু তীব্র আক্রমনেই রয়েছেন।সৌজন্যের রাজনীতি আজ আর কোথায়।
একদিকে যখন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরতের বিরুদ্ধে, প্রায় ২৪ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। অন্যদিকে তখন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চিটফান্ড কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ইডি অফিসে হাজির তৃণমূল কাউন্সিলর। সূত্রের খবর, বিধাননগরের কাউন্সিলর তুলসী সিনহা রায়ের অভিযোগ, বিজেপি সাংসদ অর্থাৎ লকেট চট্টোপাধ্যায়, চিটফান্ড থেকে মুনাফা নিয়েছেন এবং চিটফান্ড কাণ্ডে জড়িত ছিলেন। যদিও পুরো বিষয়টির মধ্যে প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখছে বিজেপি নেতৃত্ব।
কয়েকদিন আগে নুসরতের বিরুদ্ধে ২৪ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন শঙ্কুদেব পণ্ডা। তিনি অভিযোগ করেন, একাধিক বয়স্ক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েও ফ্ল্যাট দেননি নুসরত। সেই টাকা দিয়েই কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে তুলসী রায় অভিযোগ করেন, একটি চিটফান্ড থেকে প্রচুর সুবিধা নিয়েছেন লকেট। তাই ইডির কাছে লকেটের সম্পত্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, রোজভ্যালি চিটফান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন লকেট। সবার বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও লকেটের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত হবে না সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।