
একাই একশো নয়। মেসি একাই এক হাজার। ফুটবল কেরিয়ারের ১০০০তম ম্যাচ খেলে ফেললেন ফুটবলের রাজকুমার লিয়োনেল মেসি (Lionel Messi)। দিনটা স্মরণীয় করে রাখলেন কাতার বিশ্বকাপে (Qatar World Cup 2022) প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করা অবিশ্বাস্য গোলে, কয়েকটা স্পেলের ফুটবল ম্যাজিকে। অস্ট্রেলিয়ার (Australia) রক্ষণকৌশল যখন মেসিসহ গোটা নীল-সাদা দলকে বিবশ করে রেখেছিল, তখন ডেডলক ভাঙার কাজটা নিজের কাঁধেই নিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তাঁর গোলেই ম্যাচের ৩৫ মিনিটে লিড নেয় আার্জেন্টিনা। শুধু কি তাই? এটি বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে মেসির করা প্রথম গোল। তাও আবার নিজের হাজারতম ম্যাচে।
এই নিয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলছেন মেসি। লক্ষ্যে অবিচল। ন'টা গোল হয়ে গিয়েছে পাঁচটি বিশ্বকাপে। দশ গোল করার অপেক্ষা কেবল। মেসি তাঁর হাজার ম্যাচের মধ্যে দেশের জার্সিতে খেলেছেন ১৬৯ ম্যাচ। বার্সার হয়ে খেলেছেন ৭৭৮টি ম্যাচ। পিএসজির জার্সিতে ৫৩ ম্যাচের মালিক। আর মোট গোলসংখ্যা? ৭৮৯। তার মধ্যে বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২টি গোল করেছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে ৯৪টি এবং প্যারিস সঁ জঁ-র হয়ে ২৩টি গোল রয়েছে তাঁর।
এছাড়া বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ৬০টি ম্যাচে ২৮টি গোল, দেশের হয়ে মেসি কোপা আমেরিকায় ৩৪ ম্যাচে ১৩টি গোল করেছেন। আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে ৫১টি ম্যাচে ৪৪টি গোলের অধিকারী। আর ২০১৮ বিশ্বকাপে গোলসংখ্যা ছিল ৪। এবারের কাতার বিশ্বকাপে সেই সংখ্যা এখনও অবধি ৩।
আগামী শুক্রবার শেষ আটের লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে লিওনেল স্কালোনির দল। সেখানে নতুন কী নজির গড়েন সেদিকেই তাকিয়ে ভক্তরা।
মুন্নি চৌধুরীঃ কেবলই মেসি (Lionel Messi)। শুধুই মেসি। অস্ট্রেলিয়াকে (Australia) ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের শেষ আটের টিকিট নিশ্চিত করেছে নীল-সাদা। মেসি ম্যানিয়ায় আচ্ছন্ন কাতার (QatarWorldCup2022) থেকে কলকাতা এবং সর্বত্র। বারবার ঘুরে ফিরে আসছে এল এম ১০-এর ৩৫ মিনিটে ম্যাজিক মুভের কথা। ওয়ান-টু খেলে বক্সের মধ্যে জায়গা বানিয়ে নিয়েছিলেন। বিপদজনক জায়গায় মেসির পায়ে বল। ক্লিয়ার করতে এগিয়ে আসেন তিন অজি ডিফেন্ডার। কিন্তু তিন কাঠি চেনা মেসি চকিতে ধাবমান অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে পায়ের ভিড়ে বল গলিয়ে দিল জালে। এককথায়, অসম্ভবকে সম্ভব করার নামই তো মেসি। এক আউন্স মাখনে যেন পাতলা ছুরি চালিয়ে দিলেন। যাবতীয় প্রতিরোধ চূর্ণ।
দ্বিতীয় গোল বিরতির পর। মারাত্মক ভুল করে ফেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক রিয়ান। সেই ভুলের মাশুল গোল দিয়ে তুলে নিলেন আলভারেজ। গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে তৎক্ষণাৎ শুরু হয়ে গেল আর্জেন্টিনা ভক্তদের জয় উল্লাস। বিশ্বকাপে এই নিয়ে নিজের নবম গোল করলেন মেসি। কিন্তু নকআউটে তাঁর পা থেকে এল প্রথম গোল।
ডন ব্র্যাডম্যান আর ক্যাঙ্গারুর দেশ ম্যাচে ফিরেছিল শেষ বারো মিনিটে। ফার্নান্দেজের সেমসাইড গোল রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলেছিল। শুধু কি তাই? শেষ মুহূর্তের ত্রাতা হলেন আর্জেন্টিনা গোলকিপার মার্টিনেজ। নাহলে মেসির রাতেও আরও কাঠ-খড় পোড়াতে হত স্কালনির দলকে।
উল্লেখ্য, ৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার হবে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে নামবে এই দু’দল। এই স্টেডিয়ামেই হওয়ার কথা বিশ্বকাপের ফাইনাল। ভারতীয় সময় রাত ১২.৩০ মিনিট থেকে শুরু হবে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা।
এভাবেও ফিরে আসা যায়। হ্যাঁ, প্রথম ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল সৌদি আরবের কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা (Argentina)। কিন্তু তারপরেও গ্রুপ লিগের (group C Match) শেষ দুই ম্যাচে দুর্দান্ত কামব্যাক মেসি-ডি মারিয়াদের। মেক্সিকোকে ২-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর এবার পোল্যান্ডের বিরুদ্ধেও দাপুটে জয় নীল-সাদা জার্সির। বুধবার মধ্যরাতের ম্যাচে (Qatar World Cup 2022) কিছুটা মেসি ম্যাজিকে ভরসা রেখে এবং অনেকটা টিমগেম খেলে লেওয়ানডস্কিদের ২-০ গোলে হারালো আর্জেন্টিনা (Argentina beats Poland)। এদিনের ম্যাচে পুরো নব্বই মিনিট নিজেদের মধ্যেই বল কন্ট্রোলে রেখেছিল লিওনেল স্কালোনির দল। পাসিং অ্যান্ড টাচ ফুটবলের অন্য ধারা এদিন আর্জেন্টিনার খেলায় দেখেছে বিশ্ব ফুটবল। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচ শুধুই জিতলই না স্কালোনির দল বরং গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেলেন মেসি, ডি পল, ডি মারিয়ারা। ফুটবল লিখিয়েরা বলছেন, এই খেলা অব্যাহত থাকলে সেমি ফাইনাল পর্যন্ত নিশ্চিত মেসিদের।
কারণ প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচ জিতে উঠলে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কমলা ব্রিগেড অর্থাৎ নেদারল্যান্ডসের। বিশ্বকাপের শেষ দুই ম্যাচে যেভাবে আক্রমণ এবং ডিফেন্সের জোড়া তালমেল দেখিয়েছেন আকুনহা, মার্টিনেজ, মেসিরা; সেই তালমেলে অস্ট্রেলিয়া এবং নেদারল্যান্ডসেরও উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এমনটাই মনে করছে ফুটবল বিশ্ব।
বুধবার মধ্যরাতের ম্যাচে প্রথম ৪৫ মিনিট একাধিকবার ডি বক্সে ঢুকলেও বল ফিনিশ করতে পারেনি মেসি, মার্টিনেজরা। এই অর্ধেই কর্নার কিক এবং বল পজেশনের নিরিখে পোল্যান্ডের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু হয় দুর্ভাগ্য, নয়তো পোলিশ গোলরক্ষক উজসেনি স্কেজেনস্কির শক্ত হাতে আটকে গিয়েছে বল। প্রথম ৪৫ মিনিটেই পেনাল্টি আদায় করলেও মেসির শট দুর্দান্ত বাঁচান স্কেজেনস্কির। যদি আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড ম্যাচের ফল ৩-০ হতো, তাহলে হয়তো এই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হতো ইউরোপের এই দেশকে। তবে কাতার বিশ্বকাপে পোলিশ এই গোলকিপার একমাত্র, যিনি দুটি ম্যাচে পেনাল্টি বাঁচিয়ে দলকে বড় অক্সিজেন দিয়েছেন। তবে মেসির দৌড় আটকাতে গিয়ে পোল্যান্ডের কোচ বেশি ফুটবলারকে লাগিয়ে দিয়েছিলেন এলএম-১০-র সঙ্গে। ফলে মাঠের একটা দিক সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় আকুনহা, ম্যাক অ্যালিস্টার, ওটামেন্ডিরা সহজেই ডি বক্স অবধি পৌঁছে যান। আর এতেই নীল-সাদার মুহুর্মুহু আক্রমণে তটস্থ হয়ে পড়ে পোল্যান্ড।
অতি রক্ষণাত্মক হয়ে প্রথম ৪৫ মিনিট আর্জেন্টিনার টিম গেমকে আটকাতে পারলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ধাক্কা। ৪৬ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার হয়ে প্রতিপক্ষের গোল মুখ ওপেন করেন ম্যাক অ্যালিস্টার। মলিনার বাড়ানো ক্রস ফিনিশ করতে ভুল করেননি অ্যালিস্টার। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল করেই দলকে এগিয়ে দেন ১-০ গোলে। এই গোলের পর আরও ঝাঁজ বাড়ে আর্জেন্টিনার আক্রমণের। ৬৮ মিনিটে ফের পোলিশ ডিফেন্সে ভাঙন। জুলিয়ান আলভারেসের অন্যবদ্য শট বাজ পাখির মতো উড়লেও বাঁচাতে পারেননি স্কেজেনস্কির। একটা সময় মনে হয়েছিল গ্রুপ সি-র গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ পোল্যান্ড বনাম আর্জেন্টিনা নয় বরং স্কেজেনস্কি বনাম আর্জেন্টিনা।
এদিকে, মেসির সঙ্গে ৪ জন ফুটবলার লাগিয়ে রাখলেও তাঁর দৌড় এবং মুভ নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে পোলিশ ডিফেন্সকে। ডি বক্সের বাইরে এলএম-১০-র কয়েকটি ডিফেন্স চেরা পাস হাড় হিম করা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল পোল্যান্ড সাপোর্টারদের মনে। লিওনেল মেসি এই ম্যাচে গোল না পেলেও পুরো ৯০ নব্বই মিনিট নিজের জাত চিনিয়েছেন।
এদিকে, গ্রুপ সি-তে আর্জেন্টিনার কাছে হারের পরেও মেক্সিকো এবং সৌদি আরবের ম্যাচে শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে পোল্যান্ডদের। অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত সৌদির বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল ওচোয়ার দল। এই গোল পার্থক্যে ম্যাচ শেষ হলে গ্রুপ পর্ব থেকে পোল্যান্ডের বিদায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু ৯৪ মিনিটের মাথায় সৌদি, মেক্সিকোকে এক গোল দেওয়ায় জিতেও কাতার থেকে বিদায় নিশ্চিত করে মধ্য আমেরিকার এই দেশ।
প্রি কোয়ার্টারে পোল্যান্ডের মুখোমুখি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ফ্রান্স। যদিও ২০১৮-র চ্যাম্পিয়নকে বুধবার পরাস্ত করেছে তিউনিশিয়া।
হারলেই বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) বাইরে, ড্র করলেও রাউন্ড অফ ১৬ পোক্ত নয়। খানিকটা এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে রবিবার মধ্যরাতে মেক্সিকোর (Argentina versus Mexico) বিরুদ্ধে খেলতে নামছে আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে অবিশ্বাস্য ভালো খেলে দু'বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারিয়েছে সৌদি আরব। তাই রবিবার সাড়ে ১২টার ম্যাচ মেসি (Lionel Messi) -ডিবালা-মার্টিনেজদের কাছে মরণ-বাঁচন লড়াই। যদিও আন্তর্জাতিক ফুটবলের পরিসংখ্যান বলছে, মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ধারে ভারে অনেকটাই এগিয়ে নীল-সাদা ব্রিগেড। অন্তত ফুটবলের এই মহারণে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে তিনবার মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা। প্রতিবারই জয় পকেটে পুড়েছে মারাদোনার দেশ। তবে মেক্সিকোর গোলে শক্ত হাত, গিলেরমো ওচোয়া। আর্জেন্টিনার আক্রমণকে সুচাগ্র মেদিনী ছাড়তে নারাজ এই অভিজ্ঞ গোলরক্ষক।
তবে মেসিদের গ্রুপে সবচেয়ে দুর্বল প্রতিপক্ষ ছিল সৌদি আরব। তাঁদের কাছে হেরে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই তলানিতে দি মারিয়াদের। মনোবল বাড়িয়ে দলকে মাঠে নামাতে মরিয়া লিওনেল স্কালোনি। রবিবারের ম্যাচ আর্জেন্টিনাকে জিততেই হবে, কারণ গ্রুপের শেষ ম্যাচে তাঁদের প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড। লেওয়ানডস্কিরা খুব সহজে ছেড়ে কথা বলবে না নীল-সাদা ব্রিগেডকে। এমনটাই মনে করছেন ফুটবল লিখিয়েরা।
শোনা গিয়েছে, কাতার বিশ্বকাপ লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ। সেখানে গ্রুপ পর্ব থেকে আর্জেন্টিনা বিদায় নিলে সেটা লজ্জাজনক এই ফুটবল তারকার জন্য। তাই নিজের ১০০% এই ম্যাচে দেবেন এলএম-১০। তাঁর সতীর্থরাও চান না কোনও ভুল করতে। ডিফেন্সের যে ফাঁকফোকর সৌদি আরব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, সেই ফাঁক ভরাট করেই মেক্সিকোর বিরুদ্ধে নামবে আর্জেন্টিনা। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছে।
এদিকে, জয়ে ফিরতে মেক্সিকো ম্যাচে প্রথম একাদশে একাধিক বদল করতে পারেন কোচ স্কালোনি। ৪-৩-২-১ এই ছকে সামনে লাউতারো মার্টিনেজকে রাখতে পারেন কোচ। তাঁকে বল বাড়াতে সামান্য পিছনে থাকবেন মেসি এবং ডি মারিয়া। ডিপ ডিফেন্সে অটামান্ডিকে সঙ্গত দিতে থাকবেন আকুনা। এই ছকেই সম্ভবত মেক্সিকো বধে রবিবার মধ্যরাতে লুসেইল স্টেডিয়ামে নামতে চলেছে আর্জেন্টিনা।
প্রসূন গুপ্ত: গত বিশ্বকাপগুলিতে (World Cup) কোনও দু-একটি দলকে বিশ্বজয়ের সম্ভাব্য দাবিদার হিসাবে ধরা হতো। কিন্তু ২০১৮ থেকে ফুটবল রণাঙ্গনে কে কার থেকে বেশি ভালো খেলবে, পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। তবুও অনেকেই বলেছিলো যে বেলজিয়াম অথবা ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে উঠবেই কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সেবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স নিজেদের ছক পালটে নতুন খেলা উপহার দিয়েছিল। এবার (Qatar World Cup 2022) গতিপ্রকৃতি তাও বোঝা যাচ্ছে না। মেসির (Lionel Messi) এটাই শেষ বিশ্বকাপ। অনেকে সংখ্যাতত্ত্বের বিচার করে ভবিষ্যতবাণী করে বলেছে এবার কাপ যাবে আর্জেন্টিনায়। কিন্তু দু'বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন প্রথম খেলতে অখ্যাত সৌদি আরবের (Saudi beats Argentina) কাছে ২-১ গোলে পরাজিত।
পেনাল্টিতে গোল করা ছাড়া মেসিকে প্রথম ম্যাচে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। বুধবার সন্ধ্যায় নেমেছিল ৪ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। প্রথম অর্ধে বল ছুঁতেই দেয়নি জাপানকে, গোলও পেলো তারা পেনাল্টিতে। কিন্তু দ্বিতীয় অর্ধে এ কোন জাপান? স্পিড বল ভাসিয়ে দেওয়া ইত্যাদিতে নাস্তানাবুদ করে জার্মানিকে ২-১ গোলে পরাজিত করলো। এছাড়া বেলজিয়াম কোনওক্রমে ১ গোল দিয়ে জিতলো আরেক অখ্যাত কানাডার বিরুদ্ধে। অসম্ভব ভালো খেলেছে কানাডা। তারা একটি পেনাল্টি আদায় করে ব্যর্থ হলো গোল করতে। কারণ গোলে ছিল বিশ্বের সেরা থিবাউট কোর্তোয়াস, এই গোলরক্ষক বাঁচালেন বহু আক্রমণ। হল্যান্ড-সেনেগালের বিরুদ্ধে তেমন খেলা দেখতে না পারলেও শেষ সময়ে দুটি গোল পেয়েছে।
কিন্তু কিছু ইউরোপিয়ান দল নজর কেড়েছে। ইংল্যান্ড প্রথম খেলায় ইরানকে ৪-২ গোলে হারায়, ঠিক আছে কিন্তু ইরান দুটি গোলও করেছে। ফ্রান্স মোটামুটি এমবাপেকে সামনে রেখে ভালো খেলছে। অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে তারা হারিয়েছে। এশিয়া মহাদেশের দলগুলি যথেষ্ট ভালো খেলছে। এখনও পর্যন্ত সেরা ম্যাচ খেলেছে স্পেন। বুধবার রাতে কোস্টারিকাকে ৭ গোল দিয়ে প্রমাণ করলো তিকিতাকা বা পাসিং ফুটবল এখনও হারিয়ে যায়নি। পাশাপাশি নিশ্চিত করেছে ২০১০-র পর এবারও তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার। বৃহস্পতিবার দুই বিখ্যাত পর্তুগিজ ভাষার দেশ খেলতে নামছে। একটা রোনাল্ডোর পর্তুগাল, অন্যটি বাঙালির আরেক প্রিয় দল ব্রাজিল, রাত জাগার অপেক্ষায় বাঙালি।
বিশ্বকাপে (World Cup 2022) প্রথম ম্যাচে হার। সুপার সৌদিতে বিধ্বস্ত আর্জেন্টিনা (Argentina)। নীল সাদা সমর্থকের মনে আশঙ্কা এখন ক্রমাগত বাড়ছে। বাড়ছে চিন্তাও। এর মাঝেই কাতারের (Qatar World Cup 2022) বাতাসে ডালপালা মেলেছে পিএসজি তত্ত্ব। যা শুনলে খানিকটা আশ্বস্ত হতে পারেন মেসি (Lionel Messi) সমর্থকরা। একটু বিস্তারিতভাবে বলা যাক। লিগ ওয়ানে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন ক্লাবেই খেলেন মেসি। পিএসজি ফরাসি লিগের প্রথম সারির ক্লাব।
২০০১ সালে ওখানে যোগ দিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনাল্ডিনহো।পরের বছর ছিল বিশ্বকাপের আসর। কাপ জিতেছিল ব্রাজিল। রাতারাতি মহাতারকা হয়ে উঠেছিলেন রোনাল্ডিনহো। এরপর ২০১৭, পিএসজি রেকর্ড অর্থে সই করায় এক ফরাসি তারকাকে। এমবাপে। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে কাঁপিয়ে সেরা যুব ফুটবলারের সম্মান পান তিনি। কাপও জেতে ফ্রান্স। এরপর ২০২১, বার্সেলোনা থেকে মেসিকে সই করায় পিএসজি। আর কাকতলীয় হলেও এবারই বিশ্বকাপের আসর বসেছে কাতারে। রোনাল্ডিনহো, এমবাপের মতো মেসি কি পারবেন কাপ ঘরে তুলতে?
প্রসূন গুপ্ত: বুয়েনোস আইরেস থেকে কাতার (Qatar World Cup 2022) যাওয়ার পথে কলকাতায় নেমেছিলেন নাকি মেসি (Lionel Messi)? মজার প্রশ্ন। সৌদি আরব (Saudi Arab) বা ওই গ্রুপের খেলা নিয়ে চিন্তা খুব বেশি নেই আর্জেন্টিনার কঠিন লড়াই তো নক আউটে। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ মহলের একটি অংশ বলতে শুরু করেছে যে এবারে কাপ যাচ্ছে মেসির হাত ধরে তাঁর দেশে। যদিও আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ দেখে হতাশ প্রত্যেকেই।
তবে কোন যুক্তিতে এই দাবি, তা বিশেষ করে ভাঙতে চাইছেনা কেউই। কিন্তু পত্র-পত্রিকাতে ঢালাও লেখা হচ্ছে 'এবার নাকি আর্জেন্টিনা'। গত বিশ্বকাপে এমনটাই হচ্ছিলো বেলজিয়ামকে নিয়ে। রেড ডেভিলসদের ডার্কহর্স বলেই ক্ষান্ত হয়নি কেউ। বরং যুক্তিতে বুঝিয়েছে, তারা যে দলগত সংহতির ফলেই কাপ জিতবে তারা। কিন্তু হলোটা কি? কোনও এক অজানা ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়ামকে সেমিফাইনালে নাস্তানাবুদ করে জিতে ফাইনালে গেলো। এবার দলের পক্ষে আরব দলের বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে প্রথম গোল করে অনেকটাই উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মেসি। কলকাতার মেসি বললো, এটাই তো বলেছিলাম, কাপ আমরা নেবোই।
কিন্তু কে এই পাগল সমর্থক। সোশাল নেটওয়ার্কে গত ১৫ দিন ধরে প্রায় ১৫০ পোস্ট করেছে এই মেসি ভক্ত। কলকাতার কাছেই তার বাড়ি, নাম অমিত নাইয়া। মজার জায়গা এই সোশাল নেট। কত শত পোস্ট ভাইরাল হয় নিয়মিত! শুভেন্দু অধিকারীকে ট্রোল করা অথবা রাহুল গান্ধীকে 'পাপ্পু' বলা সবই চলে। ইদানিং চলছিল প্রয়াত নায়িকা ঐন্দ্রিলা শর্মাকে নিয়ে। পোস্টে হিট চরিত্র রোদ্দুর রায়, কুকথা কথা বলে। এদেরই মতো মেসি পাগল অমিত কোনও পোস্টে লিখছে, ব্রাজিল কাঁপছে-মেসি আসছে। লিখেছেন মোদী থেকে মমতা সবাই নাকি মেসিকেই চাইছে। এমন পোস্টও হচ্ছে যে প্রয়াত জ্যোতি বোস নাকি শেষ সময়ে চেয়েছিলেন মেসির হাতে কাপটা উঠুক। আসলে সবটাই মজার। মানুষের এই নিয়ে মজা পাওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই। অমিতের পোস্টগুলি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। কিন্তু যদি না হয়, ক্রীড়াপ্রেমীরা কিন্তু অমিত নাইয়াকেই সমর্থন করছে।
তবে প্রথম ম্যাচ দেখে আর্জেন্টিনার উপর থেকে ক্রমেই আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা। কতটা ফলবে অমিত নাইয়ার পোস্ট, শুধু সময় বলবে।
কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) জন্য আর্জেন্টিনা দলে (Argentina team) যোগ দিলেন ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। বার্সেলোনার প্রাক্তনী বর্তমানে পিএসজি খেলোয়াড় মেসির সম্ভবত এটাই শেষ বিশ্বকাপ বলে মনে করছে ফুটবল মহল। ফলে মেসি মরিয়া বিশ্বকাপ জিততে।
একই সঙ্গে এঞ্জেল ডি মারিয়া (Angel Di Maria) জাতীয় দলে যোগ দিলেন এদিন। আরেক আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার পাওলো দিবালাকে চোটের কারণে পাওয়া যাবে না বলে ভেবেছিল নীল সাদা ব্রিগেড। কিন্তু আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে জাতীয় দলে যোগ দিলেন এই এসি রোমা স্ট্রাইকার। আগামী ২২ নভেম্বর গ্ৰুপ-সি-তে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ মেসিদের। এই গ্ৰুপে রয়েছে মেক্সিকো এবং পোল্যান্ড।
২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেও অধরা থেকে গিয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া। ফলে কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে অনেকটা আশাবাদী ফুটবলের রাজপুত্রের দেশ।